জাতীয় শিক্ষানীতিতে প্রতিবন্ধীদের জন্য কিছু গুরুত্ত্বপূর্ণ বিষয়


গত ১৭ই অক্টোবার জাতীয় শিক্ষানীতি ২০০৯ খসড়া প্রতিবেদনের উপর প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার বিষয়টি নিয়ে প্রথম আলো তে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল ‘’প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা নিয়ে ভাবনা’’। যাতে খসড়া নীতিমালায় কিছু পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। ধন্যবাদ দীবা হোসেন ও শাহরিয়ার হায়দার কে। আমি সকলের সুবিধার্থে নিবন্ধের মুল কথাগুলো তুলে ধরলাম।

বাংলাদেশের প্রতিবন্ধীদের মূলত দুইভাগে ভাগ করা হয়।
১।মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার প্রতিবন্ধী এবং
২।গুরুতর প্রতিবন্ধী

মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার প্রতিবন্ধী (যেমন,শারীরিক প্রতিবন্ধী,দৃষ্টি প্রতিবন্ধী,বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী)রা সাধারন স্কুলেই পড়াশোনা করতে পারবে,যদিও বেশীর ভাগ মানুষই মনে করেন প্রতিবন্ধী মানেই তাদের আলাদা স্কুলে পড়তে হবে। বাংলাদেশের কয়টি স্কুল এই ব্যপারে উদ্যোগ নিচ্ছেন? কয়জন অভিভাবকই বা সচেতন এই ব্যপারে?
একই স্কুলে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের সংগে প্রতিবন্ধী শিশুদের পড়াশোনা করার জন্য কিছু ব্যবস্থার প্রয়োজন। যেগুলো হল-

ক. প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সমান অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করা এবং শিক্ষার জন্য উপযোগী অবকাঠামো উপকরণ ও শিক্ষক প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা।

খ.গবেষণালব্ধ তথ্য থেকে জানা যায়, প্রতিবন্ধী শিশুদের একটি বড় অংশ শিক্ষার মূলধারায় সম্পৃক্ত হতে পারে, যদি সঠিক সময়ে শনাক্তকরণ ও প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়। ৫+ বছর বয়সী শিশুদের জন্য এক বছর মেয়াদী প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা যেতে পারে, যাতে এই এক বছরে প্রাথমিক অবস্থায় শিশুটির প্রতিবন্ধীতা সনাক্ত করে,চিহ্নিত করা যায়। তবে এই ক্ষেত্রে যথাযথ শিক্ষক প্রশিক্ষণ অত্যন্ত জরুরী।

গ. প্রাথমিক শিক্ষা অংশে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির বয়স ৬+ বাধ্যতামুলক করা হয়েছে । প্রতিবন্ধী শিশুর প্রতিবন্ধীতার মাত্রা অনুযায়ী তাদের বিকাশে বিলম্ব হতে পারে তাই,তাদের ক্ষেত্রে বয়সের ব্যপারটি প্রয়োজনবোধে নমনীয় করা যেতে পারে।

ঘ. প্রতিবেদনে পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা অভিন্ন প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু দৃষ্টি ও অন্যান্য প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা সাধারণ বিদ্যালয়ে পড়ছে, তারা এ পরীক্ষায় পিছিয়ে পড়তে পারে। দৃষ্টিগত সমস্যার কারণে তারা অনেক প্রশ্নের উত্তর (যেমন জ্যামিতিবিষয়ক প্রশ্ন) করতে পারবে না।তাই নিবন্ধে, পাবলিক পরীক্ষায় কতজন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে, এর একটি রেকর্ড বোর্ডের কাছে রাখতে বলা হয়েছে এবং সে সংখ্যা অনুযায়ী বোর্ড প্রশ্নপত্রে ওই নির্দিষ্ট শিক্ষার্থীর জন্য বিকল্প প্রশ্ন করতে বলা হয়েছে।

ঙ. নীতিমালায় অধ্যায় ১৮-তে রয়েছে—‘বিশেষ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও শারীরিক শিক্ষা, স্কাউট ও গার্ল গাইড এবং ব্রতচারী’। নিবন্ধে বলা হয়েছে এ অধ্যায়টি সম্পূর্ণ আলাদাভাবে ‘বিশেষ শিক্ষা’ শিরোনামে আসতে হবে। কারণ, বিশেষ শিক্ষা সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী শিক্ষাপদ্ধতি। এটা কখনোই অন্য কোনো কিছুর সঙ্গে আসতে পারে না। এখানে তারাই অংশ নেবে, যারা গুরুতর প্রতিবন্ধিতার কারণে সাধারণ বিদ্যালয়ে অংশ নিতে পারছে না। এদের শিক্ষাব্যবস্থাটি হবে একই সঙ্গে আধুনিক ও প্রায়োগিক। ফলে স্বতন্ত্র একটি অধ্যায় হিসেবে এটিকে বিবেচনা করাই যুক্তিযুক্ত।

বিশেষ শিক্ষার সঙ্গে একীভূত শিক্ষাকে সমন্বয় করেও ১৮ নম্বর অধ্যায়ের শিরোনাম হতে পারে ‘একীভূত শিক্ষা ও বিশেষ শিক্ষা’।

চ.১৮ অধ্যায়ের আরো একটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনীর প্রয়োজনের কথা বলা হয়েছে। ওখানে অনেকবার ‘মানসিক সমস্যা’ কথাটি ব্যবহূত হয়েছে। ‘বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতা’ ও ‘মানসিক সমস্যা’ কখনোই এক কথা নয়। এ কারণে ‘মানসিক সমস্যা’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতা’ ব্যবহার করার প্রস্তাব করা হয়েছে নিবন্ধে। এ ছাড়া এ অধ্যায়ে ‘সমন্বিত শিক্ষাব্যবস্থা চালু’ করার কথা বলা হয়েছে; এর বদলে ‘একীভূত শিক্ষা’ শব্দগুলো ব্যবহার করাই শ্রেয়। ৫ নম্বর কৌশলে ‘বচন ও মানসিক প্রতিবন্ধী’ বলা হয়েছে; এর পরিবর্তে ‘ভাব প্রকাশ বা যোগাযোগ অক্ষমতা ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতা’ ব্যবহারের প্রস্তাব করেছেন।

তবে গুরুতর মাত্রার প্রতিবন্ধীদের(যেমন, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী, অটিস্টিক) জন্য অবশ্যই বিশেষ স্কুল প্রয়োজন হবে।

জাতীয় শিক্ষা ২০০৯ খসড়া নীতি মালাটি সর্বসাধারণের সুপারিশের জন্য উন্মুক্ত রাখায় সরকারকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি,আশা করছি সুচিন্তিত মতামতের যথাযথ মূল্যায়ন হবে।

তথ্যসূত্রঃ প্রথম আলো 

0 মন্তব্য(সমূহ):

Post a Comment

 
Design by Oronno Anam | Bloggerized by Salma Mahbub