আমাদের সাবরিনা, এক অপরাজিতা ফুল

হুইলচেয়ারে বসে ল্যাপটপ কম্পিউটারে খুটখাট করতে করতে জানালার পর্দার ফাঁক দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে একটি মেয়ে। উন্মুক্ত আকাশ দেখার বাসনায় দিনমান জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকে মেয়েটি। কিন্তু মেয়েটির সেই উন্মুক্ত আকাশ দেখার ক্ষণটি আর আসে না কিছুতেই। এভাবেই তার দিন কাটে, রাত যায়। মাস আসে, বছর ঘুরে ঘুরে যুগও পেরিয়ে যায়। কিন্তু মেয়েটির আকাশ দেখার অপেক্ষার প্রহর আর ফুরোয় না। ফুরাবে কী করে! মাসকুলার ডিসট্রোফি নামক ভয়ানক এক রোগ যে বাসা বেঁধেছে মেয়েটির শরীরে। ফলে ধীরে ধীরে শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গই ক্ষয়ে যাচ্ছে। এভাবেই দিন কাটছে চট্টগ্রামের মেয়ে সাবরিনা সুলতানার।

শরীরে ভয়ানক রোগ নিয়েও থেমে নেই সাবরিনা সুলতানা। নিজের দিকে তাকিয়ে অপরের কষ্ট অনুভব করার চেষ্টা করেন তিনি। আর তাই তো নিরলসভাবে প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।


একসময় অন্য সবার মতোই সুস্থ-স্বাভাবিক ছিলেন তিনি। স্কুল থেকে এসেই পাড়াময় দস্যিপনা করে বেড়াতেন। পাতাকুড়ানি খেলার সঙ্গীদের সঙ্গে দুষ্টু প্রজাপতির পেছনে ঘুরে ঘুরে সময় কাটত তাঁর। তারপর বাসায় ফিরে মা আর যমজ ভাইদের সঙ্গে রাজ্যির কথার খই ফুটত তাঁর মুখে। মাঝে মাঝে ভাইদের সঙ্গে এটা-ওটা নিয়ে একটা হল্লাও বাধিয়ে ফেলতেন বাসায়। ছেলেবেলায় এমনই ছিলেন সাবরিনা। কিন্তু সেই সোনারঙা দিনগুলো খুব বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। কারণ, সেই ছেলেবেলায় সাবরিনার জীবনাকাশ ছেয়ে যায় মাসকুলার ডিসট্রোফি নামক ঘন কালো মেঘে। সেই মেঘ সরানোর পথ জানা নেই কারও।
১৯৮৯ সাল। বয়স কেবল সাত। মা আফরোজা আকতার সাবরিনাকে নিয়ে গোসল করাতে ঢুকেছেন গোসলখানায়। গোসল শেষে উঠে দাঁড়াতে গিয়ে সাবরিনা হঠাৎ বুঝতে পারলেন নিজে থেকে আর দাঁড়াতে পারছেন না তিনি। প্রথমে দুষ্টুমি ভাবলেও মেয়ের মুখের ভাব দেখে মা-ও বুঝতে পারলেন, কিছু একটা হয়েছে। এরপর শুরু হলো চিকিৎসার পালা। না, কিছুতেই কিছু হয় না। মেয়েকে সুস্থ করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন বাবা আবদুস সবুর ও মা আফরোজা। অ্যালোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি থেকে শুরু করে তাবিজ-কবজ-ঝাড়ফুঁক কোনো কিছুই বাদ দিলেন না। অতঃপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ শাহাদাৎ হোসেন প্রথম রোগটির নাম আবিষ্কার করলেন—মাসকুলার ডিসট্রোফি। এ রোগে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধীরে ধীরে বিকল হয়ে যায়। সাবরিনার রক্তের সিপিকে (ক্রিয়েটিন ফসফোকাইনেজ) পরীক্ষা করা হলো। সাধারণত একজন সুস্থ মানুষের রক্তে সিপিকের মাত্রা থাকে ১৬৭। কিন্তু সাবরিনার শরীরে তত দিনে তা দাঁড়িয়ে গেছে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি। গোটা বিশ্বে এ রোগের কোনো ওষুধ আজ অবধি আবিষ্কৃত হয়নি।


এরপর সাবরিনার রক্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠানো হলো। কিন্তু কোথাও কোনো সমাধান পাওয়া গেল না। সবচেয়ে মর্মান্তিক ব্যাপার হলো, সে সময় চিকিৎসকেরা সাবরিনার আয়ুষ্কাল বেঁধে দিয়েছিলেন ১৩-১৪ বছর।


১৯৯৭ সালে সাবরিনা এক বছরের জন্য বাবার সঙ্গে পাড়ি জমালেন মালয়েশিয়ায়। কিন্তু সেখানেও হতাশ হতে হলো!
একসময় সাবরিনাও জানতে পারলেন, তিনি আর কোনোদিন অন্যদের মতো স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারবেন না।


সেই ঘাতক ব্যাধির কারণেই একসময় স্কুলে যাওয়াও বন্ধ হয়ে যায় সাবরিনার। ধনুকের মতো শরীর বাঁকা হয়ে যায়। চলল বাসায় বসে পরীক্ষা দেওয়া। কিন্তু সেটাও আর বেশি দিন স্থায়ী হলো না। পঞ্চম শ্রেণীতেই তাঁকে ইস্তফা দিতে হলো পড়ালেখায়। আর কোনোদিন পড়ালেখা করতে পারবেন না ভেবে বুকের ভেতর গুমরে উঠত কান্না। তাই বলে নিজের ইচ্ছাশক্তির কাছে হার মানতে নারাজ সাবরিনা। বাসায় বসে একা একাই শুরু করলেন বিভিন্ন ধরনের বই আর পত্রপত্রিকা পড়া। এভাবেই চার দেয়ালের মধ্যে বসে কেটে গেল কয়েক বছর।


সাবরিনা বললেন, ‘শুনেছি, যেদিন দুই চোখ মেলে প্রথম পৃথিবীর আলো দেখেছিলাম, সেদিনই বাবা আমায় কোলে নিয়ে নাম রেখেছিলেন ‘সাবরিনা’। তবে সাত বছর বাদে সমাজ আমার নতুন নামকরণ করল, ‘প্রতিবন্ধী’। তাই আমার প্রাণবন্ত উচ্ছলতা কোথায় যেন হারিয়ে গেল! বন্দী হয়ে পড়লাম চার দেয়ালের মাঝে।’


এবার আর বসে থাকা নয়। বাঁচার জন্য লড়তে হবে। তাই শুরু করলেন সমাজের প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার নিয়ে স্থানীয় পত্রিকায় লেখালেখি। লেখালেখির মাধ্যমেই পরিচয় চট্টগ্রামের সাংবাদিক রিয়াজ হায়দারের সঙ্গে। পরিচয়ের সূত্র ধরেই প্রণয়, প্রণয় থেকে ঘর বাঁধা। নতুন ঘরে এসে সাবরিনা আরও বেশি স্বাধীনতা পেলেন। ঠিক যেমনটা চেয়েছিলেন তিনি।


তবে হঠাৎ করে আবারও একটি সংবাদ সাবরিনার মনটাকে ভারী করে তোলে। জানতে পারলেন একমাত্র ছোট বোন তাসনীন সুলতানা নীলার শরীরেও বাসা বাঁধছে ওই ভয়ংকর রোগ এবং তাঁর মতোই সমাজের উপেক্ষার শিকার হতে হলো তাঁকে। এ সবকিছু দেখে সাবরিনা আর বসে থাকলেন না। নিজেকে প্রশ্ন করলেন, আর কত পিছিয়ে থাকবে প্রতিবন্ধীরা? তাঁদেরও অধিকার আছে মানুষের মতো বেঁচে থাকার। আর এ জন্য প্রয়োজন মানুষকে সচেতন করে তোলা।
ঠিক এমনি সময় বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে খুঁজে পেলেন ইন্টারনেট। শুরু করলেন বাংলা ব্লগগুলোতে প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার নিয়ে লেখালেখি। এরপর যোগ দিলেন সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুকে। ফেসবুকে প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে উঠেপড়ে লেগে গেলেন তিনি।


২০০৯ সালের ১৭ জুলাই, ফেসবুকে নানা পেশার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করে একটি গ্রুপ খুললেন সাবরিনা। নাম—‘বাংলাদেশ সিস্টেমস চেঞ্জ অ্যাডভোকেসি নেটওয়ার্ক’ (বি-স্ক্যান)। সব ধরনের প্রতিবন্ধীকে নিজস্ব কথা বা তাঁদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরাই এর কাজ। আর সেই গ্রুপে যোগ দিল দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অনেক মানুষ।


এই গ্রুপ চায়, নিজেদের অবস্থান থেকে প্রত্যেকে যেন নিজে সচেতন হয়ে অন্যদের সচেতন করে তোলার কাজটি করে। বহু বছর পর গত ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি ঢাকায় এসেছিলেন বি-স্ক্যানকে আরেকটু এগিয়ে নিয়ে যেতে। প্রতিবন্ধীদের পক্ষে কথা বলতে যোগ দিয়েছিলেন চ্যানেল আইয়ের গ্রামীণফোন তৃতীয়মাত্রার অনুষ্ঠানেও।
এখন আর শুধু মানুষকে সচেতন করে তোলাতেই সীমাবদ্ধ নয় সাবরিনাদের বি-স্ক্যান। যেখানেই কোনো প্রতিবন্ধীর দুঃখের কথা শুনেছেন, সেখানেই ছুটে গেছেন বি-স্ক্যানের প্রতিনিধি। এই সাহসী মানুষটি আমাদের সবার কাছেই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সাবরিনা নিশ্চয়ই থেমে থাকবেন না। তিনি তো অপরাজিতা!


সুত্রঃ আবু হেনা, ২০ ডিসেম্বর, প্রথম আলো
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-12-15/news/115871

আমরা আছি তোমাদের পাশে

আমরা অত্যন্ত আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে বি-স্ক্যান এর পক্ষ থেকে প্রথমবারের মত তিনজন মেধাবী প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। সাংবাদিক হানজালা শিহাবের ২৫ জুলাই ২০১০ এর একটি প্রতিবেদন থেকে আমরা ওদের কথা জানতে পারি।

আপনাদের অনেকেরই হয়তো মনে আছে গলাচিপা শহরের এই তিনজন শিক্ষার্থীর জন্য সাবরিনা সুলতানা সহযোগীতা চেয়ে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন, দেরীতে হলেও সেই আহ্ববানে সাড়া দিয়ে এগিয়ে এসেছেন কানাডার টরোন্টোর বাংলাদেশী এসোসিয়েশেন ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বি-স্ক্যান সদস্য।





মা বাবার সাথে শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী শাহিন (বামে) ও বাপ্পি (ডানে)
টরেন্টোর বাংলাদেশী এসোসিয়েশেনএর সদ্য প্রয়াত সভাপতি রীনা হক এর নামে তাঁর বন্ধু ও সহকর্মীরা মিলে একটি স্কলারশিপ চালু করেছেন। সেই স্কলারশিপ হিসেবেই শাহিন ও বাপ্পি তাদের লেখাপড়ার খরচটি পাবেন। ফাল্গুনী সাহার ব্যয়ভার নিচ্ছেন একজন বি-স্ক্যান সদস্য । আগামী জানুয়ারী, ২০১১ থেকে এই তিনজন শিক্ষার্থীরখরচ দেয়া হবে বি-স্ক্যান এর মাধ্যমে। শাহিন,বাপ্পি ও ফাল্গুনীদের পাশে দাঁড়াতে পেরে আমরা আনন্দিত। বি-স্ক্যান পক্ষ থেকেনির্বাহী সদস্য মোঃ হাসান মিলন ও বি-স্ক্যান সদস্য নাজিরুল ইসলাম গত বৃহস্পতিবার, ৯ ডিসেম্বর , ২০১০ গলাচিপা গিয়ে চেক হস্তান্তর করেন।


ফাল্গুনী সাহা তার বাবা মা এর সাথে
উক্ত অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গলাচিপা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহ আলম, গলাচিপা ডিগ্রী কলেজের সহযোগী অধ্যাপক জনাবআব্দুর, রশিদ জনাব, গলাচিপা মডেল গভঃ প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমসহ এই তিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু শিক্ষকবৃন্দ, সমাজের গন্যমান্য ব্যক্তি ও স্থানীয় সাংবাদিকগণ।

দুই পরিবারের সাথে বি-স্ক্যান নির্বাহী সদস্য (মাঝখানে) ও স্বেচ্ছাসেবী সদস্য নাজিরুল ইসলাম (বামে)

ওদের শিক্ষাখাতের খরচটি আমাদের যেভাবে জানানো হয়েছে আমরা সেভাবেই ব্যবস্থা করেছিঃ

শামীমুর রহমান শাহিনঃ গলাচিপাডিগ্রী কলেজ- বেতন, প্রাইভেট টিউশান ফি, বই-খাতার খরচ সব মিলিয়ে মোট ২৩০০ টাকা।

নিয়াজ উদ্দীন বাপ্পিঃ গলাচিপা আইডিয়াল স্কুলের ২য় শ্রেনীর ছাত্র। স্কুলের বেতন, প্রাইভেট টিউশান ফি, বই-খাতার খরচ সব মিলিয়ে মাসে মোট ৯০০ টাকা।

ফাল্গুনী সাহাঃ প্রাইভেট টিউশান ফি, বই-খাতার খরচ সব মিলিয়ে মাসে মোট ২০০০ টাকা (স্কুলের বেতনফ্রী)।

বি-স্ক্যান এর পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি যারা সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাঁদের প্রতি-

বাংলাদেশী এসোসিয়েশেনের জনাব,হাসান মাহমুদ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বি-স্ক্যান সদ্স্য।

Financial Support for Studies of Three Children with Disability

“Every child with disability has the right to be educated sitting just next to a normal child in a regular school, not in a special one and after finishing education he/she should be considered as a candidate for an appropriate job for him/her”, said Md. Shah Alam, the headmaster of Golachipa Secondary school in a scholarship giving program arranged by the Bangladeshi Systems Change Advocacy Network (B-SCAN) in the Golachipa Secondary school premises on Thursday morning, 9 December, 2010. He also mentioned that, “ People with disabilities are capable enough to do well with success not only in education but also in every sector of life and they are not a burden to the society.” He mentioned about a student named Falguni Saha, a SSC candidatefor 2011 from his school, who lost her both wrist in a tragic accident when she was a student of class three. But, being motivated she didn’t give up her education but continued it and now going to sit for the SSC exam from Humanities group.



Among other invited guests, Abdur Rashid, Asst. Professor of Golachipa Degree College, Abul Kashem, Headmaster of Golachipa Model Govt. Primary School, several teachers from both schools and college, few honorable persons of the society and a few correspondents from different newspaper were present in the program. There was also a scholarship given to two brothers who has hearing impairment by birth. Shamimur Rahman (Shahin) is the elder among them who is a student of 1st year studying in Golachipa Degree College. He paseed SSC lastyear from Technical board with GPA 4.14. The younger one is Niaz Uddin (Bappi)who is a student of class 2 from Golachipa Model Govt. Primary School. Milon Hasan, executive member of B-SCAN and Nazirul Islam (Zico), volunteer member of B-SCAN went to Golachipa, Potuakhali to handover the check of scholarship.




Falguni is going to get 2000/- (Taka Two Thousand)per month from a B-SCAN member (who doesn’t want to disclose his/her name) where an organization named ‘’Bangladeshi Association’’ Toronto, Canada is giving Reena Haq Scholarship to the brothers where Shahin will get 2300/- (Taka TwoThousand Three Hundred) per month and Bappi will get 900/- (Taka Nine Hundred) primarily for 1 (One) year. Their scholarship will be extended based on their performances. Parents from both of the family were present in the program. Md. Shah Alam from Golachipa Secondary School and Md.Hasan Milon on behalf ofB-SCAN handed over the cheaque to the respective students in front of theaudience.

In a short speech Md.Hasan Milon informed the audience about the activities of B-SCAN for disabled people and previous experience working with different cases. He also informed the audience that B-SCAN is working for the rights of people with disability and helping many people to be self dependent. Parents from both family thanked B-SCAN for their support. To be mentioned here that, B-SCAN came to know about these two family from Golachipa by a report of Hanjala Shihab of Daily Naya Diganta.

Written by: Nazirul Islam (Zico)

Ramped low-floor buses for Uruguay’s capital

Montevideo moves to accessible buses.In a major step forward, the City of Montevideo has announced plans to progressively replace its current fleet of some 1,500 buses with new low-floor ramped units equipped with securement areas for wheelchair users and new cleaner engines to address air quality concerns. The new buses will be phased in progressively over a period of several years until all buses include the new features. The reports come from Eduardo Alvarez and Nicolás Li Calzi, Uruguayan architects who have actively promoted accessible transportation in the South American republic for many years.

Soucre: Accessible Transportation Around the World,
The Newsletter of Access Exchange International, June 2010

আলো অন্ধকারে যাই

দৌড়ে গিয়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর বাসটিকে ধরতে পেরে আমরা প্রফুল্লমনে বাড়ি ফিরি। কিন্তু জীবনে প্রতিটি পদক্ষেপে যিনি অন্যের সাহায্য ছাড়া হাঁটতেই পারেন না, তাঁর বেলায়? হ্যাঁ, এমনই একজন স্বপ্নসারথির সঙ্গে আমাদের পরিচয় হবে আজ, যাঁর পুরো জীবনটাই প্রতিবন্ধকতাময়।


১৯৯৩ সালের ৫ নভেম্বর গাজীপুর সদর থানার খুনদিয়া গ্রামে রমিজ উদ্দিন ও হনুফা খাতুনের ঘরে জন্ম নেন এই দৃষ্টিহীন বন্ধু। নাম তাঁর আলী হুসাইন। পৃথিবীর আলো না দেখেও যিনি পৃথিবীর বুকে ইতিহাস রচনার স্বপ্ন দেখেন হৃদয়ে। যাঁর জন্ম স্বাভাবিক ছিল না বলে আত্মীয়স্বজন কেউই খুশি হতে পারেননি। প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই আলী বড় হতে থাকেন এবং এখন তিনি অনেক বড়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়ে আলী হুসাইন নিজের যোগ্যতার বড় প্রমাণ দিতে পেরেছেন। আলী হুসাইন বাংলাদেশের ইতিহাসে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম এবং এখন পর্যন্ত জিপিএ-৫ পাওয়া একমাত্র দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী।


জন্মের পর থেকেই ভীষণ প্রতিবন্ধকতা আর রুক্ষ জীবনগতি তাঁকে কিছুতেই রুখতে পারেনি। বড় হতে হতে তিনি অনুভব করতে থাকেন, তিনি চরম নিঃসঙ্গ। বন্ধুরা খেলছে, হইহল্লা করছে, স্কুলে যাচ্ছে, তিনি কিছুই করতে পারছেন না। প্রথম দিকে তাঁর মা-বাবা জানতেনই না যে অন্ধদের শিক্ষার সুযোগ আছে এবং যখন জানলেন, তখন দেখলেন, দরিদ্র পরিবারের জন্য তাঁর ব্যয় বহন অসম্ভব।


কপাল খুলল অন্যভাবে। বিভিন্ন মাধ্যমে তাঁরা খবর পেলেন, গাজীপুরেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের শিক্ষার ব্যবস্থা আছে। আলীর পাঠ শুরু হলো সেখান থেকেই থেকেই।


জানুয়ারি ২০০৩ সাল। আলী হুসাইন বিভিন্নজনের সাহায্য নিয়ে ভর্তি হন সমন্বিত অন্ধশিক্ষা কার্যক্রম নিলের পাড়া উচ্চবিদ্যালয় জয়দেবপুর গাজীপুরে।


লুইস ব্রেইল আবিষ্কৃত ‘ব্রেইল’পদ্ধতিতে শুরু হয় পড়াশোনা। মাত্র ১৫ দিনে এ পদ্ধতি আয়ত্ত করেন তিনি। শেষ করেন স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ শিক্ষা। ২০০৩ সালের মার্চে ভর্তি হন দ্বিতীয় শ্রেণীতে। সেই শ্রেণীতে থাকতেই তাঁর চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত সব বই পড়া হয়ে যায়। দ্রুতগতিতে এগোতে থাকেন আলী। এভাবে ২০০৬ সালে এসে তিনি সরাসরি ভর্তি হয়ে যান নবম শ্রেণীতে। সব চাপ কাটিয়ে ব্রেইল-পদ্ধতিতে ছাপানো সরকারি বই পড়ে এবং অষ্টম শ্রেণীর একজন শ্রুতিলেখক দিয়ে তিনি পরীক্ষা দেন। জিপিএ ৩.৯৪ পেয়ে পাস করেন। এবার বিপত্তি বাধে সামনে এগোনো নিয়ে। কেননা, এবার আর সরকারি বই নেই। আর এ পদ্ধতিতে বই ছাপানোর টাকার পরিমাণ বেশি। সাত ভাইবোনের আলীর পরিবারে তাই বাবাও অসহায়।


আলীও দমার পাত্র নন। বাবার আশা ছেড়ে দিয়ে শুরু করেন অন্যভাবে। বন্ধুদের সাহায্যে ক্যাসেট প্লেয়ারে বই রেকর্ড করে আলী উচ্চমাধ্যমিকের বই মুখস্থ করতে থাকেন এবং আলী শেষে বোর্ডের অনুমতি নিয়ে দশম শ্রেণীর ছাত্রের দিয়ে শ্রুতিলিখন করে উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পান। মাধ্যমিক বিভাগের ছাত্র আলী ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ১৭২১তম স্থান অধিকার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান।


এখনকার গল্পও সহজ নয়। আলী হুসাইনদের গল্প প্রতিনিয়ত কঠিন। প্রতিক্ষণে অনিশ্চয়তা তাঁদের ঘিরে ধরে। আঁধার ফুটে ওঠে বারবার আলীদের চোখে। এটাই যে স্থায়ী সত্য। আলী কী করবেন এবার? এবার টাকা দিয়ে আলীর জন্য বড় বড় বই, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচ বা ব্রেইল-পদ্ধতিতে বই ছাপিয়ে দেবে কে? কে দেবে আলীর ক্যাসেট প্লেয়ার আর খাওয়া খরচ? কে বহন করবে আলীর জীবনের বাড়তি ব্যয়? আলী কি কষ্ট আর লাঞ্ছনা পেতেই থাকবেন? আলী বলেন, ‘আমি আত্মবিশ্বাসী। সবাই আজ পর্যন্ত যেভাবে আমাকে সাহায্য করে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে, সামনের দিনগুলোতে তাঁরা আমার পাশে থাকবেন।’


আলী সংস্কৃতিমনা মানুষ। দারুণ গান ধরতে জানেন। তাঁকে ছেড়ে আশার সময় শোনাচ্ছিলেন—‘আমি অন্ধ হতে পারি, হূদয় আমার অন্ধ নয়/ মনেরই চোখ দিয়ে দেখব তোমায়/ থাকব তোমার ভালোবাসাতে’।


সুত্রঃ মাহমুদ ফাহাদ, তারিখ: ০৮-১২-২০১০, প্রথম আলো।

মুছে যাক কিবরিয়ার চোখের পানি

কত কিছুই না ঘটে মানুষের জীবনে!
জীবনের নানা ঘটনা গল্পের চেয়েও বিস্ময়কর হতে পারে।
কোনো কোনো ঘটনা মনকে আনন্দে ভরে দেয়। কোনো কোনো ঘটনা পৌঁছে দেয় বিষণ্নতার ঠিকানায়।


এই তো, গতকালই প্রথম আলোর ‘ঢাকায় থাকি’ ক্রোড়পত্রে গোলাম কিবরিয়ার কথা ছাপা হয়েছে। মানুষের জীবনসংগ্রামের নানা কাহিনি ছাপা হয় প্রথম আলোয়। এরই ধারাবাহিকতায় গোলাম কিবরিয়াও উঠে এসেছিলেন পত্রিকার পাতায়। একজন খেটে খাওয়া মানুষের অসাধারণ জীবনকাহিনি তুলে আনাই ছিল আমাদের লক্ষ্য। ঢাকার পাঠক সেই কাহিনি পড়েছেন। কিন্তু আজ যখন প্রায় একই কথা জানাতে চাইছি সারা দেশের পাঠককে, তখন আগেই বলে রাখি, এ ধরনের ঘটনার কথা লিখতে ইচ্ছে করে না। কষ্ট হয়। তার পরও লিখতে হয়।
গোলাম কিবরিয়া এসেছিলেন নিজের কথা বলতে। শুধু বলেই ক্ষান্ত হলেন না, হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলেন রাস্তায়, চাক্ষুষ দেখালেন কী করে জীবন চলে তাঁর।
খুব খারাপ কাটছিল না তাঁর জীবন। কিন্তু যে কারখানায় কাজ করতেন, সেখানেই ঘটে এক দুর্ঘটনা। রোলিং মিলে তাঁর একটি হাত কাটা পড়ে। একজন কর্মঠ মানুষ মুহূর্তে পরিণত হন বেকার মানুষে। মালিক বললেন, ‘তোর হাত নাই, তুই এখানে থাইকা কী করবি, অন্য কোথাও কাম দেখ।’


পৃথিবীটা এ রকম নিষ্ঠুর হয়, তা জানা ছিল না গোলাম কিবরিয়ার। কারখানার মালিক কোনো ক্ষতিপূরণও দিলেন না। হাতটা পঙ্গু হওয়ার পর কী করবেন, তা নিয়ে অনেক ভেবেছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত বেছে নিয়েছেন পত্রিকার হকারি। সবাই জানেন, একজন হকারের আয় কত হতে পারে। সংসার তো চালাতে হবে, কিন্তু কী করে বাড়িতে বলবেন তিনি হকারি করেন?
শুধু হকারি করা নয়, কোনো দিন পত্রিকা কম বিক্রি হলে মানুষের কাছে হাতও পাততে হয়। কিন্তু সে কথা তো বলা যায় না বাড়িতে। তাঁর মুক্তিযোদ্ধা বাবা, আত্মসম্মানজ্ঞানসম্পন্ন মানুষটিকে সে কথা বলার সাহস হয়নি গোলাম কিবরিয়ার। স্ত্রী-সন্তানদেরও জানাননি সে কথা। ওরা শুনলে কষ্ট পাবে। তাই এক ধরনের অদ্ভুত লুকোচুরি খেলা শুরু করলেন তিনি। প্রতিদিনই এই লুকোচুরি খেলতে হয়। কিন্তু বাবা ও স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে এই লুকোচুরি খেলতে ভালো লাগে না তাঁর। তার ওপর রয়েছে ভয়। এই বুঝি ধরা পড়ে যেতে হয়। রাস্তায় কেউ যদি তাঁকে দেখে বাড়িতে বলে দেয়! ভিক্ষা করতে ইচ্ছে হয় না তাঁর। কিন্তু বাড়ির মানুষকে অভুক্ত দেখার চেয়ে ভিক্ষা করা ভালো—একেই নিয়তি বলে ধরে নিয়েছেন তিনি।


এই ছিল গোলাম কিবরিয়ার জীবনের কাহিনি কিংবা বলা যায় সংগ্রামের কাহিনি।
এ কথাগুলোই একটু অন্যভাবে ছাপা হয়েছিল গতকালের ‘ঢাকায় থাকি’তে।
শিরোনাম ছিল ‘লোকটা আর ভিক্ষা করতে চান না’।


ছাপা হওয়ার পর প্রথম আলো অফিসে ফোনের পর ফোন আসতে থাকে। গোলাম কিবরিয়ার জীবনসংগ্রাম ঢাকার পাঠকদের যে কী পরিমাণ নাড়া দিয়েছে, তা বোঝা যায় তাঁদের এই অবিশ্রান্ত উৎসাহ দেখে। আমরাও খুশি হই। মুক্তিযোদ্ধা বাবার এই অসহায় সন্তানটির দিকে বুঝি এবার ভাগ্যদেবী মুখ তুলে চাইলেন। তাঁর যে মোবাইল ফোনের নম্বর ছিল, তা আমরা মহা উৎসাহে দিতে লাগলাম পাঠককে। কিন্তু কেউ সেই নম্বরে ফোন করে গোলাম কিবরিয়াকে পাচ্ছিলেন না।


কেন গোলাম কিবরিয়া ফোন ধরছেন না, তা জানা গেল তাঁর চোখের পানিতে। প্রথম আলোর কার্যালয়ে এসে হু হু করে কাঁদছেন গোলাম কিবরিয়া। আমরা যখন তাঁর সঙ্গে কথা বলেছি, তখনো তাঁর মোবাইল ফোন ছিল, পরার যোগ্য দু-একটা জামাকাপড় ছিল। কিন্তু গত ২৯ নভেম্বর এই মানুষটির বাড়িতে চোর ঢুকেছিল। বাড়ির বেড়া কেটে হয়েছে ওই চুরি। মোবাইল ফোন দূরে থাক, পরনের কাপড় ছাড়া আর কিছুই এখন অবশিষ্ট নেই তাঁর।


গোলাম কিবরিয়াকে একটি মোবাইল ফোন কেনার টাকা জোগাড় করে দেওয়া হয়েছে। তিনি একটি সিমও উঠিয়েছেন। ৫ ডিসেম্বর যাঁরা গোলাম কিবরিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন, তাঁদের বলছি, যদি গোলাম কিবরিয়াকে সাহায্য করার ইচ্ছে থাকে আপনাদের, তাহলে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করুন ০১৯২৫১৫২৯৯৬ নম্বরে। আপনার সহমর্মিতা গোলাম কিবরিয়ার চোখের পানি মুছে দিতে পারে।


সুত্রঃ কাওছার শাকিল তারিখ: ০৬-১২-২০১০, প্রথম আলো।
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-12-06/news/113698

Wheelchair Distribution


On Saturday, 27 November,2010 in a simple program Bangladeshi Systems Change Advocacy Network (B-SCAN) distributed wheelchairs to two persons with disability by the financial support of  Rotary Club of  Dhaka Central. Dhaka Central’s president Lt.Gen (rtd) Harun Ar Rashid and the First Lady Mrs. Harun Ar Rashid was the chief guest of the program. As it was the Women’s Day of the club so maximum female member was present on that occasion. Including Rotarian Commodore (rtd) Ataur Rahman , Rotarian  M. Quasim and Lt. Gen (rtd)  Masud Ali khan there were other Rotarians.




Whom the two wheelchairs  were presented, one of them named Zorgina Begum, her Father was Late Mr. Abdul Aziz Akond and Mother Hosneara Begum. Zorgina has physical disability since she had an accident at her 13 years of age. She has to wear brace to her both legs and walks with a stick. But it is difficult to wear those for a longer period of time. So she needed a alternate way for her movement.

Another person was Nigar Sultana Sumi, her Father is Safi Uddin Ahmed and Mother Ayesha Ahmed. Sumi is a polio victim since her childhood. It is not at all possible for her to move without a wheelchair. B-SCAN stood beside these two persons.

On behalf of B-SCAN General Secretary  Salma Mahbub, Treasurer Oronno Anam and Volunteers Kazi Anwar, Koushik and Onirban was present on that program.

আমরা করব জয়...

বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার পাঁচ শতাংশ প্রতিবন্ধী নারী। এ হিসাব মতে, প্রতিবন্ধী নারীর সংখ্যা পঁচাত্তর লাখের বেশি। তাদের মধ্যে ৯৫ শতাংশ প্রতিবন্ধী নারী শারীরিক বা মানসিক অথবা উভয় নির্যাতনের শিকার হয়। বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭ এবং ২৮ ধারায় বাংলাদেশের সব জনগোষ্ঠীকে সমান হিসেবে দেখানো হলেও প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে পঙ্গু হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ জাতীয় সব উন্নয়ন নীতি ও পরিকল্পনায় প্রতিটি প্রতিবন্ধী নারীরও রয়েছে অধিকার। তাই প্রতিবন্ধী নারীকে কৃপা, অনুকম্পা নয়; তাদের সুযোগ ও অধিকার আদায়ের পথটি করে দিতে হবে আমাদেরই। লিখেছেন রীতা ভৌমিক

আশরাফুন নাহার মিষ্টি

লাভলী খাতুন
সমন্বয়কারী, প্রতিবন্ধী নারী উন্নয়ন শাখা
বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ সমিতি
 

একটি দুর্ঘটনা বদলে দিয়েছে আশরাফুন নাহার মিষ্টির জীবনধারা। ভাগ্যকে দায়ী করে থেমে থাকেননি তিনি। অত্যন্ত পরিশ্রম, নিষ্ঠার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে গেছেন জীবন নামের চাকাটিকে। তিনি জন্মগত প্রতিবন্ধী নন। তার শৈশব, কৈশোর কেটেছে অন্য স্বাভাবিক মেয়েদের মতোই দুরন্তপনার মধ্য দিয়ে। স্কুলের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে সুনামও কুড়িয়েছেন। চিকিৎসক বাবা এবং সুগৃহিণী মায়ের নবম সন্তান তিনি। দশ ভাইবোনের সংসারে স্নেহ আদর ভালোবাসায় কেটেছে তার দিনগুলো। যশোরের ঝিকরগাছা থানা সদরে তাদের বাড়ি। ঝিকরগাছা পাইলট গার্লস স্কুল থেকে ১৯৯২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় স্টার মার্ক নিয়ে উপজেলায় মেয়েদের মধ্যে প্রথম হন। মেয়ের এ সাফল্যে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে খুশির বন্যা বয়ে যায়। এ আনন্দ বেশিদিন ধরে রাখতে পারেনি তার পরিবার। বাড়ির তিনতলার ছাদ থেকে পড়ে মিষ্টির মেরুদন্ড ভেঙে যায়। ঝিকরগাছা থেকে তাকে ঢাকার মগবাজারে আরোগ্য নিকেতন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে তাকে চিকিৎসার জন্য সাভারের সিআরপিতে নেয়া হয়। দেড় বছর চিকিৎসাধীন থাকায় পড়াশোনারও প্রচুর ক্ষতি হয়। এরপরও ছয় মাস পড়াশোনা করে ঝিকরগাছায় শহীদ মশিউর রহমান ডিগ্রি কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে এইচএসসি পাস করেন। অনার্সে ভতি হওয়ার জন্য ঢাকা, চিটাগাং এবং কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগে ভর্তি পরীক্ষা দেন। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্লাস দোতলা-তিনতলা হওয়ার কারণে ভর্তি হতে পারেন না।

এ প্রসঙ্গে মিষ্টি জানান, সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে ক্লাস না করার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া হলো না তার। ফিরে এলেন নিজের পৈতৃক ভিটায়। বিকমে ভর্তি হন শহীদ মশিউর রহমান ডিগ্রি কলেজে। এ কলেজ থেকে ১৯৯৬ সালে বিকম পাস করেন। সিএ পড়ার জন্য ঢাকায় হুদা অ্যান্ড কোম্পানিতে ভর্তি হন। কিন্তু বিভিন্ন কোম্পানিতে যাওয়া-আসা এবং যাতায়াতের সমস্যার কারণে সিএ পড়া হলো না তার। মনোবল হারালেন না। একাউন্টিংয়ে এমকমে ভর্তি হলেন মোহাম্মদপুরে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে।


এখানেও সেই পুরনো সমস্যা দেখা দিল। কীভাবে তিনি এ সমস্যা থেকে বেরিয়ে এসে এমকম ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন এ সম্পর্কে মিষ্টি বলেন, অধ্যক্ষ আমাকে ডেকে বললেন, ‘আমাদের ক্লাস হয় দোতলা-তিনতলায়। এজন্য তোমাকে নিতে পারছি না।’ এবার হার মানলাম না। স্যারকে বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করলাম, আমার পরীক্ষার ফলাফলে একাউন্টিংয়ের নাম্বার সবার চেয়ে বেশি। সাতদিন আমি ক্লাস করব। তিন দিনের ক্লাসের তিনটি পরীক্ষা দেব। যদি পরীক্ষায় তিনটিতে হাইয়েস্ট নাম্বার পাই তাহলে আমাকে এখানে পড়ার সুযোগ দিতে হবে। এজন্য ক্লাস একতলায় নিতে হবে। স্যার রাজি হলেন। পরীক্ষায় হাইয়েস্ট নাম্বার পেলাম। স্যার একতলায় ক্লাস নেয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন। সে সঙ্গে ঘোষণা দিলেন দারোয়ান আমাকে যেন নিচতলার সিঁড়িটা তুলে দেন। পরীক্ষার সময় দোতলা-তিনতলায় সিট পড়েছে। শিক্ষকরা হুইলচেয়ারসহ আমাকে উপরে তুলে দিয়েছেন। এভাবে শিক্ষকদের কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় নবম হই এবং ২০০১ সালে এমকম ফাইনাল পরীক্ষায় মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করি। এমকম পরীক্ষার পরই বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ সমিতিতে ২০০১ সালে জুলাই মাসে প্রতিবন্ধী নারী উন্নয়ন শাখার সমন্বয়কারী হিসেবে যোগদান করি। পাশাপাশি এমফিল করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। আবারো একাডেমিক সমস্যার কারণে পড়া চালিয়ে যেতে পারলাম না।
তিনি আরো বলেন, প্রতিবন্ধী বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করছি, প্রতিবন্ধী নারীদের মেধাসত্তাকে কাজে লাগানোর জন্য কাজ করছি। এজন্য বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিবন্ধী নারীদের প্রেরণা জোগাতে বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি। কারণ একজন প্রতিবন্ধী নারী শারীরিক, মানসিক, দৃষ্টি, বুদ্ধি যে প্রতিবন্ধীই হোক না কেন তিনি নির্যাতনের শিকার হলে কখনো বলতে পারেন না। তাদের অধিকার আদায় করার জন্য, সহযোগিতার জন্য আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। এজন্য দরকার শিক্ষার। জার্মানিতে এক বছরের স্কলারশিপ নিয়ে ‘ডিজঅ্যাবিলিটি ওয়েলফেয়ার এক্সবসিবিলিটি পিয়ার কাউন্সিলিংয়ের ওপর গ্র্যাজুয়েশন কোর্স করি। থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, আমেরিকা, কানাডা, ভারত ইত্যাদি দেশে প্রতিবন্ধী বিষয়ক সেমিনার, সিম্পোজিয়ামে অংশ নিই। এখানে প্রতিবন্ধী নারীরই শুধু নয়, সব পেশাজীবী মানুষেরই প্রত্যক্ষ সহযোগিতা থাকতে হবে।’


লাভলী খাতুন

লাভলী খাতুন জন্মগতভাবে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। চোখে না দেখলেও থেমে থাকেনি তার পড়াশোনা। স্বাভাবিক মানুষের মতো তিনিও বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ সমিতিতে জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট কো-অর্ডিনেটর হিসেবে পেশাগত দায়িত্ব পালন করছেন অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে। এ পর্যায়ে আসতে তাকে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে।

লাভলীর জন্ম ১৯৮৬ সালে বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বিহার পশ্চিমপাড়া গ্রামে। পাঁচ বোন চার ভাইয়ের মধ্যে লাভলী ষষ্ঠ। নয় ভাইবোনের মধ্যে ওরা তিন বোনই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। ছয় মাস বয়সে ওর বাবা-মা বুঝতে পারেন তাদের এ মেয়েটিও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। ওর বয়স যখন তিন এবং সেজ বোনের পাঁচ তখন বগুড়ায় চক্ষু শিবিরের ক্যাম্পিং হয়। সেখানে দিনাজপুরের একজন চক্ষুবিশেষজ্ঞ আসেন। তিনি ওদের দুই বোনের চোখ পরীক্ষা করে জানান, ওদের চোখের সমস্যা নয়, অপটিক্যাল নার্ভের সমস্যা। চোখের সমস্যা না থাকায় ওদের চোখ পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। নার্ভগুলো সতেজ হলেই ওরা দেখতে পারবে।
লাভলী জানান, সে সময় বগুড়ার শেরপুরে এবিসি নামে একটি প্রতিষ্ঠান ছিল। এ প্রতিষ্ঠান দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করত। শেরপুর শাখা অফিস জরিপ করে তাদের খুঁজে বের করে। সেখানে তারা দুই বোন ১৯৯১ সালে ১ মাস ১০ দিনব্যাপী একটি মোবিলিটি প্রশিক্ষণ নেন। এ প্রশিক্ষণের মাধমে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের স্বাভাবিক চলাফেরা, দৈনন্দিন কাজকর্ম ইত্যাদি বিষয় শেখানো হতো। এ প্রশিক্ষণ চলাকালে এবিসির একটি নতুন কার্যক্রম শুরু হয়। মেয়েদের শিক্ষার জন্য একটি গার্লস হোস্টেল প্রতিষ্ঠা করে। কারা সেই স্কুলে পড়তে আগ্রহী জিজ্ঞেস করতেই তিনি তার আগ্রহ প্রকাশ করেন। ওই বছরই জুলাই মাসে এবিসি ১০ জন ছাত্রী নিয়ে এর যাত্রা শুরু করে। প্রথম শ্রেণীতে জয়দেবপুর জকি স্মৃতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। হোস্টেল সুপারিনটেনডেন্ট ব্রেইল পদ্ধতিতে সমন্বিত শিক্ষাব্যবস্থায় তাদের শিক্ষা দিতেন। স্কুলের শিক্ষকরা ব্রেইল পদ্ধতি না বোঝার কারণে হোস্টেল সুপারিনটেনডেন্ট তাদের পরীক্ষার খাতাগুলো দেখতেন। ফলে ভালো ফল করার পরও স্কুলের শিক্ষকরা তাদের ২০ জন শিক্ষার্থীর পর মেধা তালিকায় স্থান দিতেন। ষষ্ঠ শ্রেণীতে জয়দেবপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এ স্কুল থেকে ২০০১ সালে এসএসসি পাস করেন। কলেজে পড়ার আগ্রহ জানিয়ে এবিসির কাছে আবেদন করেন। আবেদন মঞ্জুর হলে গাজীপুরে কাজী আজিমুদ্দীন কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি হন। এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় তার চেয়ে দুই বছরের জুনিয়র শিক্ষার্থী তার শ্রুতিলেখক হয়। ভালো শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের শ্রুতিলেখক হতে দিতে রাজি হতেন না। ফলে যে দু’জন মেয়ে শিক্ষার্থীকে শ্রুতিলেখক হওয়ার জন্য রাজি করানো হয়েছিল তাদের একজন বলে এত কষ্ট করে লিখে আপনাকে এ গ্রেড পাইয়ে দিলে আমাদের কী লাভ! বড় প্রশ্নের উত্তর এক পৃষ্ঠার বেশি লিখতে পারব না। বলতে থাকলে লেখা বন্ধ করে দেব। কোনো প্রশ্ন নিয়ে চিন্তা করতে গেলে বলত পরীক্ষা দিতে আসছেন কেন? এ সমস্যার কারণে ফল আশানুরূপ হয়নি। এসব সমস্যার মধ্য দিয়ে ২০০৪ সালে এইচএসসি পাস করেন তিনি।


লাভলী আরো বলেন, এত সমস্যার পরও মনোবল হারাইনি। ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার ফর দ্য ব্লাইন্ডে যোগাযোগ দেই। মিরপুরে এ সংস্থার একটি শাখা রয়েছে। এখানে পিএবিএক্স এবং কম্পিউটার শাখায় প্রশিক্ষণের জন্য ২০০৪ সালে আবেদন করি। জুলাই থেকে প্রশিক্ষণ শুরু হয়। নয় মাসের প্রশিক্ষণ নিই। আমাদের প্রশিক্ষণ দেন দুজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী প্রশিক্ষক। পিএবিএক্সে ছিলেন শিরিন আক্তার এবং কম্পিউটারে রাসেল হাসান। এখানে প্রশিক্ষণ নেয়ার সময় বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ সমিতি কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সমস্যাবিষয়ক একটি সভা করেন। সেখান থেকে ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে তারা আমাকে জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট কোঅর্ডিনেটর হিসেবে মনোনীত করেন ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে। প্রশিক্ষণ শেষ হলে এপ্রিলের ৩ তারিখে কাজে যোগদান করি।



সুত্রঃ ২২ নভেম্বর, ২০১০, যায় যায় দিন।
http://www.jaijaidin.com/archive/2010-11-22/details.php?nid=218924

Distribution of Two Sewing Machines

On Saturday, 21 November, 2010 with the financial help of Rotary Club of Dhaka Central Bangladeshi Systems Change Advocacy Network (B-SCAN) has distributed two sewing machines to the families of two disabled persons through a simple program at Panthapath, Dhaka.



Those Sewing Machines were given to Khairunnesa, mother of a seven years old boy of intellectual disability named Hussain Mia and Ruby, mother of Sunia, thirteen years of age who has physically disability. They are both from the same village Pashchim Gao of Demra.

The members of B-SCAN hope that these Machines will help Hussain and Sunia’sfamily to improve their economic condition.

Sewing Machines were given by Roterian A.Q.Khan as Zakat. In the program those sewing machines were handed over by the Chairman of Faisal Investment Foundation Business andManagement Co.Limited Chairman Rotarian Commodore(rtd) Ataur Rahman and Director, Rotarian M.Quasim .

On behalf of B-SCAN General Secretary Salma Mahbub, Joint Secretary Syeda Farzana Sultana,Treasurer Oronno Anam and Executive Member Mohammad Hasan Milon was also present there.









বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বি-স্ক্যান এর প্রথম সেমিনার

গত ২ নভেম্বর, ২০১০ তথ্যপ্রযুক্তিতে প্রতিবন্ধী মানুষের সম্পৃক্তকরণঃ প্রেক্ষিত বাংলাদেশ শীর্ষক সেমিনারটির উদ্যোক্তা ছিলেন বাংলাদেশী সিস্টেমস চেঞ্জ এ্যাডভোকেসি নেটওয়ার্ক (বি-স্ক্যান)। বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি আয়োজিত বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্টিত এই সেমিনারে সার্বিক তত্তাবধানে ছিলেন ব্লগারস ফোরাম।


দুটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশেনের প্রথমটিতে বি-স্ক্যান এর শুরু ও কার্যক্রম তুলে ধরা হয় এবং অপরটিতে দেখানোর চেষ্টা করা হয় কিভাবে তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে জনশক্তিতে রুপান্তরিত করা যায়। আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি- বাংলাদেশ এর ইংরেজী বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং বি-স্ক্যান এর যুগ্ন সচিব সৈয়দা ফারজানা সুলতানা তাঁর চমৎকার উপস্থাপনায় ‘তথ্যপ্রযুক্তিতে প্রতিবন্ধী মানুষের সম্পৃক্তকরণঃ প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ মুল তথ্য উপস্থাপনসহ অনুষ্টানটি পরিচালনা করেন। এই সময় বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতি ও সেমিনারের প্রধান অতিথি জনাব, মোস্তফা জব্বার ও বি-স্ক্যান এর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ডাঃ শুভাগত চৌধুরী এবং বি-স্ক্যান এর শুভাকাংখীসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে যে বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।


তথ্যপ্রযুক্তির যে সমস্ত খাতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা কাজ করতে পারেন-

ফ্রি-ল্যান্স,ডাটাএন্ট্রি,ওয়েব সাইট ডিজাইন,ওয়েব রিসার্চ, এস ই ও SEO- Search EngineOptimization/Optimizer (the process of improving ranking in searchengine results, it's also used for web marketing.),কল সেন্টারে, কাষ্টমারকেয়ার সার্ভিস সেন্টারে,সাংবাদিক হিসেবে ঘরে বসে কাজ করতে পারে ইন্টারনেটের মাধ্যমে, ফ্যাশন ডিজাইন, ল্যান্ডস্ক্যাপিং,বিল্ডিংড্রয়িং,আর্কিটেকচারাল ড্রয়িং (এসব ট্রেনিং দিলে প্রতিবন্ধীদের জন্য দেশের বাইরে থেকেও অনলাইনভিত্তিক কর্মসংস্থানের ব্যাবস্থা করা সম্ভব) এই সকল উদ্যোগের পূর্বশর্ত হচ্ছে সবার আগে প্রতিবন্ধী মানুষের যাতায়াত ও চলাফেরাকে সহজ করা। তারও আগে প্রয়োজন আমাদের মানসিকতা ও আচরণ পরিবর্তন।



বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি ও অন্যান্য সংগঠন যে সব ভুমিকা রাখতে পারে-

প্রথমতঃ আইটি খাতে প্রতিবন্ধী মানুষের সম্পৃক্তকরণ বিষয়ে তারা ক্যাম্পেইন চালাতে পারে। বিভিন্ন মেয়াদি ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা করতে পারে- যেমন ৩ মাস, ৬ মাস, ১ বছর।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাকুরির ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
বি-স্ক্যান অন্যান্য সংগঠনের সহায়তা পেলে এই ধরণের উদ্যোগ নিতে পারে।


যারা এই কর্মক্ষেত্রটি তৈরী করতে পারেন-
মোবাইল অপারেটরগণ যেমন গ্রামীণ, বাংলালিঙ্ক, ওয়ারিদ, সিটিসেল পারে তাদের জন্য ট্রেনিং ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে।
বিভিন্ন সংবাদপত্র, বিশেষ করে অনলাইন ভিত্তিক সংবাদপত্রগুলো তাদের কর্ম সংস্থান করতে পারে।
বিভিন্ন টিভি চ্যানেল পারে কর্ম সংস্থানের ব্যাবস্থা করতে।
কল সেন্টারগুলো পারে কর্ম সংস্থান করতে। বি-স্ক্যান এর নির্বাহী সদস্য মোঃ মিলন হাসান তার শিক্ষাজীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা সবাইকে শোনান।


এরপর ১৫ মিনিটের জন্য ফ্লোর ছেড়ে দিলে সংক্ষেপে বিভিন্ন দর্শক যা বলেন-


বুদ্ধী প্রতিবন্ধীদের নিয়ে যারা কাজ করেন সেই ধরণের  কোম্পানির জন্য সফটওয়্যার তৈরী করেন এমন একটি আমেরিকান কোম্পানির একজন বলেন, সেমিনারে যে প্রতিবন্ধকতাগুলোর কথা বলা হয়েছে-যেমন র‍্যাম্প, টয়লেট, লিফট, যাতায়াত ব্যাবস্থা ইত্যাদি সেগুলোর কারণে তারা কর্মসংস্থান করতে পারেন নি এই দেশে প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য। তারপরও তাঁরা তাঁদের জন্য নীচতলায় ব্যাবস্থা করে দেবেন। এভাবে যদি অন্যান্য কোম্পানিগুলো এগিয়ে আসে তাহলে অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে।


কম্পিউটার বিজনেস করেন এমন একজন বলেন, প্রতিবন্ধীদের স্কুল পর্যায় থেকে তথ্যপ্রযুক্তিতে আগ্রহী করা তোলা দরকার।  প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের এই বিষয়ে ট্রেনিং দেয়া, এই ক্ষেত্রে সরকার এবং বি-স্ক্যান এর পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।


মিরপুর থেকে আসা একজন দর্শক বলেন- প্রতিবন্ধীরা আমাদেরই একজন এই কথাটি আমরা যদি অনুধাবন করতে পারি তাহলে তাঁদের জন্য সবার পক্ষে কর্মসংস্থানের ব্যাবস্থা করা সম্ভব হবে। সরকার বিভিন্ন কোম্পানিকে প্রতিবন্ধীদের চাকরি দিলে যে ট্যাক্স রিবেটের ব্যাবস্থা করার কথা বলেছেন তা মিডিয়াতে প্রচার করা দরকার বলে তিনি মনে করেন।


ব্লগারস ফোরাম থেকে আগত আবু সায়ীদ বলেন, তাঁরা সবসময় বি-স্ক্যানের পাশে আছেন। বি-স্ক্যান যেই কাজে তাদের ডাকবেন তাঁরা সাধ্যমত সেই কাজে পাশে থাকার চেষ্টা করবেন। ব্যক্তিগতভাবে তিনি একজন রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী এবং তাঁর বর্তমান ৪ চারটি চলমান প্রজেক্টে তিনি র‍্যাম্পের ব্যাবস্থা করতে বলে দিয়েছেন এবং টয়লেটের ব্যাবস্থাও করবেন। এ ব্যাপারে তিনি রাজুক ও রিহেবের সাথেও বসবেন।অন্যান্য দর্শকদের মধ্যে একজন বলেন- প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলোতে ক্যাম্পেইন করতে।


বি-স্ক্যান এর প্রধান উপদেষ্টা জনাব শুভাগত চৌধুরী বলেন, সুযোগ পেলে তথ্যপ্রযুক্তিতে প্রতিবন্ধীরা অবদান রাখতে পারেন। উদাহরণ হিসেবে তিনি বি-স্ক্যান গ্রুপটির কথা উল্লেখ্য করেন যার জন্ম তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে। মানুষের মাঝে আছে অনন্ত সম্ভবনা, সেই সম্ভবনাকে জাগিয়ে তুলতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। দৃষ্টিভংগী পরিবর্তনের জন্য নিজেকে দিয়ে চিন্তা করার আহ্ববান জানান।


অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জনাব মোস্তফা জব্বার তার বক্তব্যে রাসেল ও লিপি নামে দুজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সাফল্যের কথা তুলে ধরে বলেন প্রতিবন্ধীরা কাজ করতে পারেন না এ কথা একেবারেই ভুল। তথ্যপ্রযুক্তি একটি চমৎকার বিষয় হতে পারে তাদের উন্নয়নে। এতে কাজ করাও সহজ। সাবরিনার কন্ঠে রেকর্ডকৃত প্রধানমন্ত্রীর কাছে লেখা চিঠিটি অনুষ্ঠানের প্রথমে শোনানো হয়, পরে জনাব, মোস্তফা জব্বার সাহেব বলেন, সাবরিনার কন্ঠ শুনে তাঁর মনে হয়েছে এখন বিভিন্ন বিখ্যাত বইগুলোর অডিওবুকস তৈরী হচ্ছে, সেখানে তাঁর একটি কাজ হতে পারে। সাবরিনাকে বইটি দেয়া হবে তিনি সেটি রেকর্ডিং সফটওয়্যারের মাধ্যমে রেকর্ড করে ইমেল করে পাঠিয়ে দেবেন। এভাবে সে রেডিও মিডিয়াতেও কাজ করতে পারেন। যিনি কথা বলতে পারেন না কিন্তু ভাল ছবি আঁকতে পারেন তাঁকে সফটওয়্যার ডেভেল্পমেন্টে কাজ দেয়া যেতে পারে। এমনিভাবে তিনি বেশ কয়েকটি বিভাগের কথা বলেন যা জানা থাকলে তিনি চাকরি দিতে পারেন, ফটোশপ ইলাস্টেটার, ওয়েব ডিজাইন, ফ্লাশ ইত্যাদি। তিনি বিভিন্ন কম্পিউটার ট্রেনিং এ সহায়তা করার কথাও বলেন। চমৎকার একটি বিষয় নিয়ে সেমিনারের আয়োজন করায় তিনি বি-স্ক্যানকে ধন্যবাদ জানান। পরবর্তীতে মার্চের বিসিএস মেলায় প্রতিবন্ধীদের কর্মক্ষমতার উপর দিনব্যাপী কর্মশালার আয়োজন করার কথা জানান।


এরপর বি-স্ক্যান সদস্য জাহিদুল ইসলাম ঘরে বসে ইন্টানেটের মাধ্যমে আউট সোর্সিং এর কাজ করছেন। সেই বিষয়ে সবাইকে জানান ও আরো কোন কোন দিকে কাজ করা যেতে পারে তা তুলে ধরেন। বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সেক্রেটারী জেনারেল মুজিবর রহমান স্বপন তাঁর বক্তব্যে বলেন- আমরা সবাই কোন না কোনভাবে সকলেই প্রতিবন্ধী। পৃথিবীতে একটি মানুষও বলতে পারবেন না তিনি নিখুঁত।


সবশেষে বি-স্ক্যান এর সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুব ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ও সুশীল সমাজের নৈতিক দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন- সুশীল সমাজের নৈতিক দায়িত্ব প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আত্মবিশ্বাস তৈরীতে সাহায্য করা এবং তাদের প্রাপ্য অধিকার কে ‘না’ না বলে ‘হাঁ’ বলতে সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তোলা।

প্রেস বিজ্ঞপ্তি ০২/১১/২০১০



গত ২ নভেম্বর ২০১০ বিকাল সাড়ে ৪টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশী সিস্টেমস চেঞ্জ এ্যাডভোকেসি নেটওয়ার্ক (বি-স্ক্যান) এর উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি ও ব্লগার্স ফোরাম এর সহযোগিতায় তথ্যপ্রযুক্তিতে প্রতিবন্ধী মানুষের সম্পৃত্তকরণ: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ শীর্ষক একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতি জনাব মোস্তফা জব্বার, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বি-স্ক্যান এর প্রধান উপদেষ্ঠা ডা: শুভাগত চৌধুরী, পরিচালক লেবরেটারি সার্ভিসেস, বারডেম। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বি-স্ক্যান এর সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুব।
উক্ত সেমিনারে তথ্যপ্রযুক্তিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সম্পৃক্তকরণ নিয়ে মূল তথ্য উপস্থাপন করেন বি-স্ক্যান এর যুগ্ন সম্পাদক এবং আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি- বাংলাদেশ  এর ইংরেজী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক  সৈয়দা ফারজানা সুলতানা। প্রধানমন্ত্রির কাছে লেখা একটি চিঠি পাঠ করেন বি-স্ক্যান এর সভাপতি সাবরিনা সুলতানা। এছাড়া নিজস্ব অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করেন বি-স্ক্যান এর নির্বাহী সদস্য চলৎ প্রতিবন্ধী মোঃ হাসান মিলন এবং মোঃ জাহিদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তথ্য ও প্রযুক্তিখাতে প্রতিবন্ধী মানুষের সম্পৃক্তকরণ বিষয়ে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার কথা বলেন এবং সর্বাত্নক সহযোগীতার আশ্বাস দেন। বিশেষ অতিথি তার বক্তব্যে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তনের আহ্ববান জানান। উপস্থিত দর্শকগণ তাদের নিজেদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা এবং পরামর্শ প্রদান করেন।
অনুষ্ঠানের শেষাংশে ধন্যবাদজ্ঞাপন করে বক্তব্য প্রদান করেন মেলার আয়োজক কমিটির প্রধান  এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সাধারণ সম্পাদক জনাব মজিবুর রহমান স্বপন এবং বি-স্ক্যান এর সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুব।


ধন্যবাদান্তে –
সৈয়দা ফারজানা সুলতানা
যুগ্ন সচিব, বি-স্ক্যান।

দু'জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে হুইলচেয়ার প্রদান


ফান্ড পেলে আমরা কিছু প্রতিবন্ধী মানুষকে আত্ননির্ভশীল করে তুলতে চাই, সহজ করে তুলতে চাই তাদের চলার পথ। সেই লক্ষ্যেই শনিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১০ রোটারী ক্লাব অব ঢাকা সেন্ট্রালের আর্থিক সহযোগিতায় বি-স্ক্যান এর পক্ষ থেকে দুজনকে হুইলচেয়ার প্রদান করা হয়। 


যাদেরকে হুইলচেয়ারগুলো দেয়া হলো তাদের একজন রাইসুল ইসলাম, বয়স ২২, বাবা আব্দুল আজিজ।  মগবাজার বস্তি নিবাসি রাইসুলের ছোটবেলা টাইফয়েড হয়েছিল তারপর থেকে তিনি একেবারেই হাঁটতে পারেন না। রাইসুল চার ভাইবোনের মাঝে সবার বড় হওয়ায় তার লেখাপড়া সেভাবে হয়নি। ছোটবেলা বাবা তাদেরকে ফেলে চলে যান। তারপর তাদের মাই দেখাশোনা করতেন। আর রাইসুলকেও বিভিন্নভাবে সংসারে সহযোগিতা করতে হতো। কিন্তু রাইসুলের মাও মারা গেছেন সাত/আট বছর আগে। পিতৃমাতৃহীন রাইসুল বর্তমানে বেকার, তবে সে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে চা বিস্কিটের ব্যবসা শুরু করতে চাইছে,  হুইলচেয়ার প্রদানের পাশাপাশি এই ব্যাপারেও আমরা তাকে সহযোগিতা করতে যাচ্ছি। 


 অপরজন  বেলাল হোসেন, বয়স ৩৫, বাবা মরহুম মোজাহার আলী। ডেইলি স্টার এর কংকন কর্মকারের একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে বেলালের কথা জানতে পেরে বি-স্ক্যানের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় সেই সাংবাদিকের সাথে। পোলিও আক্রান্ত বেলাল হোসেন জয়পুরহাটের পিরপাড়া গ্রামের একজন সফল কৃষক। প্রতিবেদন থেকে আরো জানা যায় যে, বেলাল হোসেনের ২০ ডেসিমাল জমি আছে যা তিনি নিজেই চাষাবাদ করেন। কৃষিকাজের জন্য তিনি ঋণও নিয়ে থাকেন এবং সময়মত তা পরিশোধও করেছেন।  আমরা মনে করি একটি হুইলচেয়ার তার চলাচলকে আরো সহজ করবে। সুদূর জয়পুরহাট থেকে হুইলচেয়ারটি গ্রহণ করতে বেলাল হোসেনের পক্ষে আসা সম্ভব হয় নি তাই তার পক্ষ থেকে দিনাজপুরবাসী কংকন কর্মকারের প্রতিনিধি রুবেল আলম চেয়ারটি গ্রহণ করেন। পরে এটি বেলাল হোসেনকে সাংবাদিক নিজে পৌছে দেবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। সেইজন্য আমাদের আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। 





রাইসুল ইসলাম
হুইলচেয়ার দুটো রোটারি ক্লাব অব ঢাকা সেন্ট্রালের প্রেসিডেন্ট রাইসুল ও রুবেল আলমের হাতে তুলে দেন। আমাদের উপদেষ্টামন্ডলী জনাব ডাঃ এ এস কিউ সাদেক ও জনাব ডাঃ শুভাগত চৌধুরীও আমাদের আমন্ত্রণে সেখানে উপস্থিত ছিলেন। 

আয়োজকদের মাঝে যারা উপস্থিত ছিলেন তারা হলেন বি-স্ক্যান সদস্য - অরন্য আনাম, মোঃ হাসান মিলন, জাকির হোসেন  ছিলেন।

"সাদা ছড়ি" ধারন করা,মনের দৃষ্টির মানুষদের সাথে কিছুটা সময়!



''সবচেয়ে দুর্ঘম যে মানুষ আপন অন্তরালে,
তার কোন পরিমাপ নাই বাহিরের দেশে কালে।
সে অন্তরময়,
অন্তর মেশালে তবে তার অন্তরের পরিচয়।''


রবীন্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টি এই ক’টি লাইন এর মতোই যেন অন্তরদৃষ্টি স্বম্পন্ন মানুষের সাহচর্য পাবার জন্যই যাওয়া সে “সাদাছড়ি” ধারন করা মানুষদের অনুষ্ঠানে ,আমার কাছে তা’ই মনে হয়েছে শেষে। বি-স্ক্যান এর সালমা আপার ফোন পেয়ে সানন্দে রাজী হয়ে গেলাম সেখানে যাওয়ার জন্য। কিছুটা সময় আগেই পৌছলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টি,এস,সি অডিটোরিয়াম এ। “সাদাছড়ি” দিবস উপলক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টি প্রতিবন্ধিদের সংগঠন “ বিশেষ শিক্ষার্থী সংঘ” আয়োজিত সাদা ছড়ি বিতরন অনুষ্ঠান।

অডিটোরিয়ামে ঢুকার মুহুর্তেই প্রথম অবাক করা বিষয় ,দৃষ্টি প্রতিবন্ধি আর স্বাভাবিক দৃষ্টিস্বম্পন্ন মানুষজন সবাই একসাথে কাজ করছে প্রোগ্রাম নিয়ে। আমার চারপাশটা জুড়ে সব হৃদয়ের দৃষ্টিতে পথ চলা মানুষ। প্রায় কিছুক্ষনের ভাবনা জুড়ে ছিল আমরা সবাই আসলে এক। হয়ত তার দৃষ্টি নেই,আমার আছে। কিন্তু পরক্ষনেই ভাবনাটা বেশ উদ্দিপক করে তুললো। হ্যা আমি হয়ত দেখি চোখের আলোয়,আর সে মানুষগুলো চোখের অন্ধকারকে সঙ্গি করেই ভেতরের অন্তর-আলোতে যেন উদ্ভাসিত অনেক বেশি। চারিপাশটায় আমার চোখের বিচরন ছিল অনেক বেশি। দেখছিলাম বারবার,বারবার। ওরা সবাই উদ্যমি। বেশিরভাগেরই বয়স সর্বোচ্চ একেকজন যুবক অথবা কিশোর। সবারই খুব হ্যান্ডসাম পদার্পন এবং বসে থাকা,মনে হলো যেন উনারা সবাই আসলে শুনছে না শুধু,দেখছেও প্রানভরে অনুষ্ঠানটি। যেহেতু এই মানুষগুলোর সাথে মিলাতে চাচ্ছি নিজেকে। সে সময়টায় যেন হেরেই যাচ্ছি উনাদের শারিরীক উদ্যমতায়। আহ! সে কি চমৎকার অভাবনীয় মনের শক্তি থাকলেই তা শুধু সম্ভব! তা ভেবেই স্যালুট দিতে হাতটা উঠেছিল। প্রচন্ড ইচ্ছে মেটাতেই নিজেই আড়াল করে হাতটা উঠিয়ে স্যালুটের ভঙ্গি করা সে সময়।

অবহেলা পেতে হয় আমাদেরও অনেক ক্ষেত্রে। কিন্তু এই সব অসাধারন মনের দৃষ্টির কিছু মানূষ যেন পৃথীবিই জয় করছে প্রতিনিয়ত। মনে হয়েছে আমার কাছে- উনারা শুদ্ধ! অসম্ভব মায়াময় একেকজনের চেহারা। কারও কারও হয়ত একটু মুখাবয়ব টা সুন্দর ভয়ঙ্কর। যা আসলে কাউকে ভয় জোগায় না,ভালবাসাই সৃষ্টি করে যেন। কেউ কেউ তার বর্তমান বাহ্যিক দেখতেই পান নাই কোনদিন। দেখলাম উনারাই বেশি আত্ববিশ্বাসি এবং স্মার্ট চলাফেরায় মাঝে মাঝে তাদের কারও কারও সাথে একজন থাকেন শুধু সাবধান করে দেবার জন্য পথটা।




উপস্থাপক একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। ছিলেন প্রধান অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভিসি মহোদয়। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় কোষাধক্ষ্য এবং দি নিউ এজ এর সম্পাদক। বক্তৃতার পালায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাষ্টার্স করা একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি সাবেক ছাত্রের বক্তৃতা ছিল সবচেয়ে উদ্দিপক এবং আশাব্যাঞ্জক সব দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের। তা শুনে এই আমার কাছেও মনে হয়েছে-না আসলে,হয়ত এ হৃদয়ের খেলা আর অন্তদৃষ্টির উৎকৃষ্টতার জীবনমান দেখাই হয়ত মিস করতাম। ছবি তুলতে গিয়ে রেডি না বলেই ভাবলেশহীন মুখগুলোরই প্রতিচ্ছবি পেলাম ক্যামেরার ফ্রেমটায়।

মাঝে মাঝে নিস্তব্ধতায়ও দারুন সঙ্গিনির্ভর মনে হয়। সেরকমই অনুভুতির ছোয়া পৌছে গিয়েছে অন্তরটায়। কি যে একেকজন অসাধারন মনের দৃষ্টির অধিকারি,যারা হয়ত কোণ পৃথিবীর ছবিই দেখেনি,তাদের মধ্যেও অনেক বেশি চেতনা অনেকের চেয়েও বেশি এ পৃথিবীর। সত্যিই চমৎকার সব দৃঢ় মানসিকতার মানুষদের মিলনমেলার মধ্যেই যেন ছিলাম সারাক্ষন।



গান শুনলাম,আবৃত্তি শুনলাম,তাদের আনন্দধনি হৃদয়ে গেথে উপভোগ করলাম প্রতিটি মুহুর্তে। সবাই সেখানে আত্ববিশ্বাসি। একজনের কথা খুব গেথেই থাকবে আজীবন- আমাদেরকে অন্ধ বলবেন না,এতে আমাদের মানসিক আঘাত লাগে।দৃষ্টি প্রতিবন্ধি বললেই খুব ভাল লাগে আমাদের। অনুরোধ দৃষ্টি প্রতিবন্ধি বলেই আমাদের সবজায়গায় সম্ভোধন করবেন আশা করি।

সবই তো আছে তার সাথে আত্বসন্মানবোধও প্রচন্ড! মনে রাখবো ইনশাল্লাহ!

তাহলে কি আমাদের চেয়েও তারা উৎকৃষ্ট? উত্তর তো জানাই ,আমরা খারাপ দৃশ্যপট দেখে ভাল-খারাপ এর মধ্যেই বিচরন করি। আর উনারা মনের দৃষ্টিতে শুধু ভালটা অনুভব করেন।

এ উৎকৃষ্ট মানুষদের মনের আলো যেন স্ফুলিঙ্গের মতো ছড়িয়ে পড়ুক আমাদের মতো দৃষ্টিসম্পন্নদের চোখের দরজায়। তাহলেই তো হতো পৃথিবীটা আসলেই অসম্ভব এক শান্তির আবাস।

অডিটোরিয়াম থেকে বের হওয়ার সময় শুধু মনের ভেতর তাদের সে অন্তদৃষ্টির যে গুন আর শক্তি ভেতরে নেয়ার অভিপ্রায়ে ছিলাম আর ভাবনায় ছিল- আমাদের মধ্যেও যেন সে বিশুদ্ধ মনের জোড় যেন থাকে সবসময়।

সালাম তোমাদের,“সাদাছড়ি” ধারন করা সে সব অসাধারন মনের দৃষ্টির একেকজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি মানুষদের।

এগিয়ে যাও তোমরা তোমাদের মনের দৃষ্টির জোর দিয়ে সব জায়গায়,সবখানে। শুভ কামনা।



 লেখক- ভালবাসার দেয়াল, ১৭/১০/২০১০
http://www.prothom-aloblog.com/posts/7/111665/

ছোট ভাবনার বড় স্বপ্ন

বৃষ্টির ভাবনা
-------------
জানালার পাশে বসে আকাশ দেখছে বৃষ্টি। তার জন্যে নির্ধারিত হুইলচেয়ারটায় বসে বড় বড় দুচোখ মেলে বিশাল আকাশের বুকে কি যেনো খুঁজে বেড়ায়। এতো দেখে তবু বুঝি সাধ মেটে না তার। দেখে আর শুধু ভাবে কোন এক অলৌকিক উপায়ে যদি হারিয়ে যেতে পারতো ঐ দূর দিগন্তে ! নীলিমার নীলে একাকার হয়ে মিশে যেতো, হারিয়ে যেতো ঐ বিশালতার মাঝে! কোলাহল মুখর ব্যস্ত এই পৃথিবীতে অর্থহীনভাবে বেঁচে থাকার কোন মানে খুঁজে পায় না বৃষ্টি। একঘেয়ে ক্লান্তিকর এই বসে থাকাই যেনো তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। এই অসহনীয় জীবনের যন্ত্রণাময় মূহুর্তগুলো আড়াল করে রাখার জন্যেই সারাদিনমান শুধু বসে আকাশ-কুসুম কল্পনায় নিজেকে মাতিয়ে রাখা। সবাই সবার মতোন ব্যস্ত। বাবা রোজ সকালে রাগারাগি করে অফিস যাচ্ছেন। ভাইবোন গুলো স্কুলে যাচ্ছে। ঘরে ফেরার পরেও তাদের ব্যস্ততার সীমা নেই। কেউ গান শিখতে যাচ্ছে, কেউ কোচিং এ যাচ্ছে। এসে আবার ব্যস্ত হয়ে পড়ছে পড়ালেখায়। তীব্র প্রতিযোগীতার এই যুগে নষ্ট করার মতোন সময় কারুর নেই। আর মা তাদের সামলাতেই হিমশিম খেয়ে যান। একমাত্র বৃষ্টিরই বুঝি অখন্ড অবসর। সময় যেনো বা স্থির হয়ে আছে তার জন্যে।

বৃষ্টির বেড়ে ওঠার পরিবেশটা ছিলো এমন- তার চোখের সামনেই ছোট ভাইবোন গুলো স্কুল কলেজে যাবে। বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যাবে কিংবা পারিবারিক অনুষ্ঠানগুলোতে বাবা-মার সাথে স্বাভাবিকভাবেই উপস্থিত থাকবে আর তাকে থাকতে হবে ঘরবন্দী হয়ে। আচমকা যদিবা কখনো বের হতেও হয় রাস্তার মানুষজন হা করে তাকিয়ে থাকবে। চারপাশ থেকে ছিটকে আসা বিরুপ মন্তব্যে যে বাবা মা বিব্রতবোধ করতেন তা বৃষ্টির নজর এড়াতো না। মানুষের নানা মুখী প্রশ্নের তোড়ে আর বাবা মার বিবর্ণ চেহারার দিকে তাকিয়ে বৃষ্টির ঘর থেকে বাইরে বেরুনোর আনন্দে ভাটা পড়তো। ধীরে ধীরে সে নিজের ভেতর গুটিয়ে গেলো। নিজেকে সবার থেকে আলাদা মনে হতে লাগলো। শুধু তো সে একা নয়, এই দেশে তার মতো প্রতিবন্ধকতার স্বীকার যারা তাদের বেশির ভাগেরই বুঝি একই পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। তারা যেনো সাধারণ মানুষের চেয়ে আলাদা। এবং এটাই যেনো স্বাভাবিক। দিনের পর দিন এভাবেই যেনো চলতে থাকবে। কিছুই কি করার নেই! অসহ্য এই জীবন থেকে মুক্তির কি কোন উপায় নেই! এই যে সারাদিনমান সে বসে থাকে। কোন কাজ নেই, বেঁচে থাকার সুনির্দিষ্ট কোন লক্ষ্য নেই। অথচ তার ভাইবোনগুলো কোন একটা লক্ষ্য ধরে ভবিষ্যতের পথে হাঁটছে। তবে সে কেন এই প্রতিযোগীতা থেকে ছিটকে পড়লো! শুধুমাত্র প্রতিবন্ধকতার স্বীকার হওয়াতে!


হঠাৎ টিভির তীব্র আওয়াজে তার ভাবনায় ছেদ পড়ে। ”বাঁচতে হলে জানতে হবে.....” এইচ আইভি এইডস নিয়ে প্রচারণার এই উদ্যোগ বেশ কাজ দিয়েছে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে। মিডিয়া বেশ ভালো ভাবেই তুলে এনেছে বিষয়টি। তবে হিউম্যান রাইটস নিয়ে যারা কাজ করছেন তারা যদি এই প্রশংশণীয় উদ্যেগ না নিতেন তাহলে নিশ্চয় এককভাবে মিডিয়ার পক্ষে বিষয়টি তুলে আনা সম্ভব হতো না। আচমকা বৃষ্টির মাথায় একটা চিন্তা ঢুকে পড়লো, জনসচেতনতা সৃষ্টিতে মিডিয়া তো যুগোপযুগী একটি মাধ্যম। এই মিডিয়ার মাধ্যমেই প্রতিবন্ধী মানুষের জন্যে কি এমন কিছূ করা যায় না, যাতে করে দেশের মানুষ প্রতিবন্ধিদের বিষয়ে সচেতন হয়ে ওঠবে? এইডস নিয়ে এতো প্রচার! প্রতিবন্ধীদের জন্যেও কী এভাবেই আমাদের শক্তিশালী গণমাধ্যমগুলোতে নাটক-বিজ্ঞাপন এবং লেখালেখির মাধ্যমে এমন কিছু প্রচার করা যায় না? যা দেখেশুনে আমাদের দেশের প্রতিটি মানুষই ভাবতে বাধ্য হতেন, তাদের অপ্রতিবন্ধি শিশুটির সাথে প্রতিবন্ধি শিশুটিরও রয়েছে শিক্ষা এবং বিনোদনের সমান অধিকার। সেই সাথে একজন প্রতিবন্ধি ব্যাক্তির সাথে কেমন আচড়ন হওয়া উচিৎ! কেমন করে কথা বলা উচিৎ! আমাদের দেশের মানুষ তো প্রতিবন্ধি ব্যাক্তিদের অধিকার সম্পর্কে একেবারেই সচেতন নন। আর মিডিয়াতেও ঠিক সেভাবে উঠে আসছে না বিষয়টি যেভাবে উঠে আসা উচিৎ। মাঝে মাঝে কিছু সচিত্র প্রতিবেদন দেখা যায় প্রথম আলো, কালের কণ্ঠ, ইত্তেফাক, যুগান্তর, সমকালসহ বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে। এর মধ্যে প্রথম আলো অবশ্য কিছুটা এগিয়ে আছে। প্রায় একদিন দু’দিন পর পরই প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক প্রতিবেদন থাকে। এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে কদাচিৎ একটা দু’টো টক শো ছাড়া প্রতিবন্ধিদের অধিকার সম্বন্ধে তেমন কোন সচেতনতামূলক কিছু চোখে পড়ে না।

আরো ব্যাপক ভাবে তুলে আনা উচিৎ বিষয়টি। যেমন প্রতিবন্ধি মানুষের মধ্যে মেধাবীদের জীবনাচরণ, ব্যতিক্রমীভাবে সফলদের নিয়ে প্রচারণা অন্যদের উৎসাহিত করতে পারে। বিশেষ করে প্রতিবন্ধি শিশুদের শিক্ষার বিষয়ে পারিবারিক সচেতনতা সৃষ্টিতে জোর দেওয়া উচিৎ। শ্রবণ প্রতিবন্ধিদের জন্যে সবক’টি চ্যানেলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ইশারা ভাষার ব্যবস্থা রাখা উচিৎ। অন্তত নিচে সাবটাইটেল থাকলে তাদের জন্যে বুঝতে সুবিধে হয়। কার্টুন, পাপেট শো ইত্যাদি তৈরির মাধ্যমে শিশুদের সচেতন করা যায়। প্রতিবন্ধি মানুষের আবাসন তাদের জীবনধারার ক্ষেত্রে সহায়ক নানা উপকরণ বা ব্যবহার্য জিনিষপত্র প্রাপ্তির স্থান ও যাতায়াত ব্যবস্থা সুবিধে অসুবিধে নিয়ে প্রচারণা রাখা যায়। যেমন- শারীরিক প্রতিবন্ধিদের জন্যে সহায়ক যাতায়াত উপযোগী মুক্ত চলাচল ব্যবস্থা র‌্যাম্প বা ঢালু পথ সম্পর্কে আমাদের দেশের অসচেতন মানুষকে সচেতন করে তোলা যায়। আমাদের দেশে স্থাপত্য, স্থাপনা ও ইমারত নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রকৌশলীরা যাতে প্রতিবন্ধি মানুষের বিষয়টি মাথায় রাখেন সে ব্যাপারেও ব্যাপক প্রচারণা প্রয়োজন।

জনসচেতনতা সৃষ্টিতে মিডিয়ার ভূমিকা
---------------------------------------

বৃষ্টির ভাবনায় উঠে এলো প্রতিবন্ধি মানুষের ভবিষ্যৎ মজবুত করার জন্য যা কিছুই প্রয়োজনীয় তা যে তাদের মানবিক অধিকার এই ভাবনাটি বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে পৌছুতে হলে আমাদের শক্তিশালী গণমাধ্যমের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এ দেশের একজন সাধারণের যা নাগরিক অধিকার - শিক্ষা, কর্মসংস্থানের সুযোগ, সবত্র প্রবেশের সুবিধে এবং সামাজিক মর্যাদা সেই সুযোগ কি একজন প্রতিবন্ধি ব্যক্তি ঠিকমতো পাচ্ছে আমাদের দেশে? ২০১৫ সালে মধ্যে প্রতিবন্ধি অপ্রতিবন্ধি নির্বিশেষে ”সবার জন্যে শিক্ষা” এমন একটি শ্লোগান শোনা যায়। অথচ এখনো এ দেশে শতকরা মাত্র চার জন প্রতিবন্ধি শিশু স্কুলে যাবার সুযোগ পায়। আমাদের দেশের মানুষের মাঝে একটি ধারনা বদ্ধমূল প্রতিবন্ধি শিশুরা বিশেষ স্কুল ছাড়া স্বাভাভিক স্কুলে অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে পড়তে পারবে না। এটি একেবারেই ভুল ধারণা। প্রতিবন্ধিরাও যে শিক্ষা অর্জন করে নিজেকে প্রমান করতে কিম্বা আমাদের সমাজকে কিছু দিতে পারে এ কথা অধিকাংশ পরিবারই ও শিক্ষকগণ বিশ্বাস করতে চান না। এমনতরো বিভিন্ন দিক থেকে বাধাগ্রস্থ হয়ে অভিভাবকগণ ভাবতে শুরু করেন প্রতিবন্ধি শিশুটিকে ঘরেই শিক্ষা দেই কিম্বা শিক্ষিত হয়ে সে করবেটাই বা কি! প্রতিবন্ধিতার স্বীকার হলেই তার প্রতি অনেক বিধি নিষেধ আরোপ করে দেওয়া হয়। করূণা নয় একটু সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিলেই প্রতিবন্ধি ব্যাক্তিরাও পারে রাষ্ট্রের দক্ষ জনশক্তিতে পরিনত হতে। নিজেদের সক্ষমতা প্রমান করতে। আর এরজন্যে প্রয়োজন ব্যাপক জনসচেতনতা। যা একমাত্র ইলেকট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমেই সম্ভব।

উন্নয়ন কর্মী এবং সাংবাদিক আজমল হোসেনের মতে, প্রতিবন্ধিদের কথা প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ইদানিং প্রকাশিত এবং প্রচারিত হলেও তা আশানুরূপ নয়। প্রতিবন্ধি ব্যাক্তিদের সফলতার কাহিনীর পাশাপাশি তৃণমূল পর্যায়ে নিপিড়িত অবহেলিতদের বঞ্চনার কথাও তুলে আনা প্রয়োজন। তাছাড়াও প্রতিবন্ধিদের অধিকার রক্ষায় যারা কাজ করছেন মিডিয়াতে ব্যাপকভাবে প্রচারণার বিষয়টিতে তারা দায়িত্বশীল ভুমিকা রাখতে পারেন বলে অভিমত প্রকাশ করেন তিনি।

দুর্ঘটনা জনিত কারণে প্রতিবন্ধকতার স্বীকার দিগন্ত টিভিতে কর্মরত মামুন মাহফুজ জানান, আমরা যতটা না শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধকতার স্বীকার তার চেয়ে বেশি মানুষের মানসিক প্রতিবন্ধকতার স্বীকার। অনেকের মধ্যেই এমন একটা ধারণা কাজ করে ”তুমি হয়তো এই কাজটা পারবা না।” প্রতিবন্ধিতার বিষয়গুলো মিডিয়াতে প্রচারণা যা হচ্ছে তা এককথায় খুবই সামান্য। আর তাছাড়া প্রতিবন্ধি ব্যাক্তিরা নিজেদের সমস্যার কথা বলবে এমন কোন জায়গা নেই। সরকার সংলিষ্ট একটি তথ্য কেন্দ্র যদি থাকতো যেখানে তারা নিজেদের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরতো। কিম্বা পত্রপত্রিকা গুলোতে বিশেষ কিছু পাতা থাকে। যেমন নারী পাতা, স্বাস্থ্য পাতা তেমনি প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক তথ্যভিত্তিক একটি বিশেষ পাতা যদি রাখা যায় যেখানে তারা নিজেদের সমস্যা সম্ভাবনার কথা বলার একটি মাধ্যম পাবে তাহলে খুব ভালো হতো।

মিডিয়া ব্যাক্তিত্বদের ভাবনা
----------------------------

প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে বাংলাদেশের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া কিভাবে ভূমিকা রাখতে পারে এবং বর্তমান পর্যায়ে মিডিয়ার ভূমিকা যথেষ্ট কিনা এ বিষয়ে আমাদের দেশের ক’জন মিডিয়া ব্যাক্তিত্বের মতামত চাওয়া হয়। তাদের ভাষাতেই নিচে তুলে ধরা হলো তা।

মুহম্মদ জাফর ইকবাল
শিক্ষাবিদ, লেখক
--------------------

আমাদের দেশে যে কোন জায়গাতে যে কোন বিষয়ে জনসচেনতা সৃষ্টিতে একমাত্র প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াই স্বচ্ছ ভূমিকা রাখতে পারে। আমাদের দেশের মানুষের মন মানসিকতা এখনো অনেক পুরনো ধাচের। প্রতিবন্ধি ব্যাক্তিরাও যে সামাজিক উন্নয়নে কার্যকরি ভূমিকা রাখতে পারে সমাজ সেটা জানে না। কাজেই বিষয়টা সমাজকে জানাতে সবচে’ বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাটা এদেরকেই নিতে হবে। সেটা হতে পারে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করে যেমন ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ ইত্যাদি লিখে মানুষকে সচেতন করা যায়। টিভিতে টক শো, নাটক কিম্বা নিউজে ফিচার প্রতিবেদনের মাধ্যমে যে সমস্ত জায়গায় প্রতিবন্ধি মানুষেরা যে কার্যকরি অবদান রাখছে তা তুলে ধরতে পারে।

লুতফুর রাহমান রিটন
ছড়াকার
-----------------------

প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ভূমিকা এক্ষেত্রে খুবই বিশাল এবং গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে চারটি মাধ্যম খুব ভালো কাজ করতে পারে। রেডিও, টেলিভিশন, পত্রিকা ও চলচিত্র। এই চারটা মাধ্যমেই যদি এ বিষয়টার ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করার দায়িত্ব নেওয়া হয়। প্রচারণা চালানো হয় অবিরাম। প্রচারণাটা শুধু একটা বিশেষ দিবস উপলক্ষ্যে করলে হবে না। কারণ বাঙালী হচ্ছে বিস্মরণপ্রিয় জাতি। আমরা খুব দ্রুত ভুলে যাই। যে কারণে নিয়মিতভাবে পত্রিকায় লেখালেখি এবং টেলিভিশনের কোন না কোন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মানুষের সামনে নিয়মিতভাবেই তুলে আনতে হবে। তাদের মস্তিষ্কে বিষয়টি ঢুকিয়ে দিতে হবে। কারণ মানুষ একে প্রথমে নেবে তার দৃষ্টিতে। তারপর মস্তিষ্কে। তারপর সে যদি তার হৃদয়ে এটি ধারণ করে। যেমন বছরজুরে আমাদের যত উৎসব আছে এতে পত্রিকাগুলো বিশেষ সংখ্যা বের করে। চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করে কিন্তু সেসবে প্রতিবন্ধি মানুষের অংশগ্রহণ থাকেই না। অথচ থাকা উচিৎ। আমি মনে করি প্রতিবন্ধি মানুষের প্রতি করুণা নয় সহানুভূতিশীল হওয়া তাদের প্রতি একটা আলাদা যত্নশীল হওয়া, একটু অতিরিক্ত মমতা এটা ওদের প্রাপ্য। যা কিনা সারা পৃথিবীতে এরা এটা পায়। বিভিন্ন শপিং মলে পায়। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পায়। যাতায়াত মাধ্যমগুলোতে পায়। উন্নত দেশগুলো তাদের একজন সাধারণ নাগরিকের মতোই দেখে। এবং এটা তার নাগরিক অধিকার। এই অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করা চলবে না।

আহমেদ মাযহার
শিশু সাহিত্যিক
-----------------

প্রতিবন্ধি মানুষের প্রতি একটু আলাদা যত্নশীলতা প্রয়োজন সাধারণ মানুষের মধ্যে এই সচেতনতাটা অতটা নেই। আসলে আমরা নিজেরা না দেখলে বা ভুক্তভূগি না হলে ঠিক ওভাবে অনুভব করতে পারি না বিষয়টি। আমি অনেক জায়গাতেই দেখেছি লজ্জায় কিম্বা সংকোচে পরিবারের প্রতিবন্ধি সদস্যটিকে ঘরের বাইরে আনেন না। তাকে সমাজের চোখ থেকে আড়াল করে রাখার একটা প্রবণতা কাজ করে। এ বিষয়ে রেডিও টিভিতে সচেতনতামূলক নাটিকা, বিজ্ঞাপন প্রচার করা জরুরী। যারা এসব ব্যাপারে সচেতন আছেন তাদের ভাবনাগুলো আলোচনা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তুলে আনা যায়। এ বিষয়ে যেসব গোল টেবিল বৈঠক বা সেমিনার হয় সেগুলো গুরুত্ব সহকারে নিউজের মাধ্যমে হাইলাইট করা যায়। তবে মিডিয়াই একমাত্র মাধ্যম বলে আমি মনে করি না। বিজ্ঞাপন, নাটক বা নিউজের ম্যাটারগুলো অন্যদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে মিডিয়া শুধু প্রচার করে। প্রতিবন্ধিদের অধিকার রক্ষায় যারা কাজ করছেন তাদের নানা ধরনের সাংগঠনিক কর্মকান্ডে মিডিয়াকে সঙ্গে রাখতে পারেন যাতে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে পারে মিডিয়া।

জিল্লুর রাহমান
টিভি ব্যক্তিত্ব
--------------------

এক কথায় বলা যায় মিডিয়ার ভূমিকা মোটেই যথেষ্ট নয়। আমি মনে করি জনসচেতনতা সৃষ্টিতে প্রথমেই প্রয়োজন প্রতিবন্ধি মানুষের সমস্যাগুলো তুলে ধরা। তারা যে অন্যরকম ভাবে সক্ষম এবং তাদেরও যে একটা সম্ভাবনা আছে সেটিকে বিভিন্ন আলোচনা অনুষ্ঠান এবং নাটক, চলচিত্র নির্মানের মাধ্যমে তুলে আনা অত্যান্ত প্রয়োজনীয়। প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক তথ্য সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া গেলে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিবার ও সমাজ প্রতিবন্ধি ব্যক্তিদের যথাযথ মূল্যায়ন করবে। সমাজ তাদেরকে বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের সুযোগ দেবে। তাদের শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে হবে না। এবং তারা নিজেদের সমাজের বোঝা ভাববে না। এক্ষেত্রে অবশ্যই প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে আরো বেশি সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

আব্দুন নুর তুষার
টিভি ব্যক্তিত্ব
--------------------

দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে এ পর্যন্ত যতটুকু ভূমিকা রেখেছে একমাত্র প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াই রেখেছে। সরকারের তরফ থেকে দৃশ্যমান কোন উদ্যেগই নেওয়া হয়নি।
মানুষের কাছে এই মেসেজটা পৌছে দিতে হবে যে তারা তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী কাজের সুযোগ চায়। এটা তাদের প্রাপ্য নাগরিক অধিকার। রেডিও, টেলিভিশন বা প্রিন্ট মিডিয়াতে বিভিন্নভাবে প্রতিবন্ধিতার স্বীকার এমন মানুষদের অংশগ্রহণ খুব কম। মিডিয়াতে প্রতিবন্ধি ব্যাক্তিদের অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া উচিৎ। যারা লেখালেখি করে, গান গাইতে পারে, বা যে যেমন কাজে সক্ষম তাকে সমাজের চোখের সামনে তুলে আনতে হবে। যেমন ধরা যায় একজন হুইলচেয়ার ব্যবহারকারি খুব সহজেই উপস্থাপনা কিম্বা সংবাদ পাঠ করতে পারেন। তাকে তার যোগ্যতা অনুযায়ী কাজের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। আমাদের দেশে তাদের তেমন সুযোগই দেওয়া হয় না। তাকে যদি চাকুরী দেওয়া না হয় সে তার যোগ্যতাটা প্রমান করবে কিভাবে!
আমাদের দেশে স্কুলগুলোতে এবং সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা, মার্কেট কোথাও র‌্যাম্প নেই। উচুঁ ইমারতগুলোতে যদিবা লিফট থাকে অনেক সময় দেখা যায় সেটি এত ছোট তাতে হুইলচেয়ার প্রবেশ করছে না। তাদের জন্যে সহায়ক ব্যবস্থা সম্পন্ন একটা আলাদা টয়লেট পর্যন্ত নেই। আমাদের দেশে এমন কোন জায়গা নেই যেখানে ব্রেইল পদ্ধতিতে যাকে বলা হয় ”ব্রেইল ব্লক” যার সাহায্যে দৃষ্টি প্রতিবন্ধিরা অন্যের সাহায্য ছাড়া একাকি চলাচল করতে পারে তা আছে। এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে একজন শিক্ষিত প্রকৌশলীকে প্রচারণা করে কিভাবে শেখানো যায় যে তার প্ল্যানের মধ্যে প্রতিবন্ধি মানুষের মুক্ত চলাচলের সুবিধার্তে কিছু সহায়ক ব্যবস্থা নেওয়া অত্যান্ত প্রয়োজনীয়? মিডিয়া সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারে এমন একটা বিষয়ে যেটা সাধারণ মানুষ জানে না। কিন্তু একজন শিক্ষিত ব্যাক্তিকে যদি সচেতন করে তুলতে হয় তাহলে তো সে জাতির অবস্থা খুব খারাপ। বুঝতে হবে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাতেই ত্রুটি আছে। এতে মানুষের প্রতি জনবান্ধব হওয়া বা প্রতিবন্ধিবান্ধব হওয়া শেখায় না।



সাবরিনা সুলতানা,চট্টগ্রাম, ১৩ অক্টোবর, ২০১০।
sabrina@b-scan.org

কোহিনুরের কাংখিত সেই দোকান

রাস্তার পাড়ে কোহিনুরের দোকানটি দেখা যাচ্ছে

গত বছর সেপ্টেম্বরে কোহিনুর বেগমকে নিয়ে প্রথম আলোর ছুটির দিনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, টাইফয়েডে পঙ্গু হয়ে যাওয়া এক অসহায় মা তাঁর দুটি সন্তানকে নিয়ে ভালভাবে বেঁচে থাকার জন্য ভিক্ষা নয়, কাজ চাইছেন। প্রতিবেদনটি আমাদের নজর কাড়লেও আমরা ফান্ডের অভাবে সময়মত তাঁর জন্য কিছু করতে পারি নি। আবার যখন ফান্ড হাতে পেয়েছি তখন তাঁর সন্ধান পাই নি। এভাবে বেশ কিছুদিন চলে যাবার পর ২২ জুলাই, ২০১০ আমরা তাঁর হাতে দশ হাজার টাকা তুলে দিতে সক্ষম হই, গত মাসে সেটি নিয়ে প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে ।কেমন আছেন এখন কোহিনুর? তাঁর সাথে বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে আমাদের। তিনি বারবার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তাঁর দোকানটি দেখতে যেতে, আমাদের বি-স্ক্যান এর পক্ষ থেকে নতুন সদস্য ব্লগার ভালবাসার দেয়াল গিয়েছিলেন দেখতে, ফিরে এসে তিনি জানালেন বেশ ভাল আছেন কোহিনুর, সেই সাথে ছবিও তুলে এনেছেন। অনেক ধন্যবাদ প্রথম আলো ব্লগার ভালবাসার দেয়াল ভাইকে। আপনারাও দেখুন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে সাজানো তাঁর দোকানটি……………………….      


  
নিজের দোকানে বসে আছেন কোহিনুর বেগম।



 
কোহিনুরের বোন যিনি দোকান চালোনায় তাকে সহায়তা করে থাকেন।


 
মিষ্টি মেয়েটি কোহিনুরের ভাতিজি,সেও তার চাচীকে সাহায্য করে।

FACEBOOK FACEBOOK AMARBLOG

 
Design by Oronno Anam | Bloggerized by Salma Mahbub