Daisy makes disabilities not so challenging

In Bangladesh, approximately 14 million people have some kind of disabilities. About 3 million of them are visually impaired. It is difficult to provide books and written information to these people. So, the alternative formats to print are Braille, talking books, e-text and large prints.



Daisy (Digital Accessible Information System) for All, a range of diverse initiatives and interventions have been introduced in the country by an organisation Young Power in Social Action (YPSA), to address the problems and issues associated with disability and the people affected by it.

They cover almost all types of service delivery models and rights based approaches in a multimedia form. The newest trend is the inclusion of information and communication technologies (ICTs). It uses an open international standard for accessible multimedia.

The YPSA ICT & Resource Centre on Disabilities (IRCD), based in Chittagong, has established a digital talking book library using the standard.
At present, there are over 455 publications in Bangla and English including books on primary and reproductive health, HIV & AIDS, disaster preparedness and management, text books and Bangladeshi legislation.

Each book can be accessed in several ways. If a PC has Daisy software installed, the text can be displayed on screen and its font size and colour may be adjusted to aid readers who are visually impaired.

If a user prefers to listen to the book, a voice recording of the text can be played back. These options are managed in such a way that words are highlighted on screen during the playback. If a PC is not available, talking books can also be played on CDs and MP3 players. Talking books may also be printed out in Braille format.

The Talking Library has approximately 500 members from all over Bangladesh. Twenty organisations have also registered to use the library.

Source: The Daily Star, 27 August, 2010 

সিআরপিতে পড়াশোনা

মিরপুর-১৪ থেকে উত্তর দিকে সিআরপি একাডেমিক ইনস্টিটিউট। সেখানকার নিচতলায় চোখে পড়ে হাত-পা ভাঙা আর রোগী নিয়ে হুইলচেয়ারে আসা-যাওয়া করা মানুষ। লিফটের কাছে দেখা হয় একজন ছাত্রের সঙ্গে। সে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। জানতে এসেছে কীভাবে ভর্তি হওয়া যায়। তার শখ তাড়াতাড়ি মেডিকেল কোর্স করে গ্রামের অবহেলিত মানুষের সেবা করবে।

সপ্তম তলায় বাংলাদেশ হেলথ প্রফেশনস ইনস্টিটিউট (বিএইচপিআই)। লিফটের ডান পাশে একটা লাইব্রেরি। দেখতে বেশ বড়ই। বিএইচপিআই সম্পর্কে জানতে চাইলে লাইব্রেরি কর্মকর্তা দেখিয়ে দেন অধ্যক্ষের রুমটি। অধ্যক্ষ তখন সেখানে ছিলেন না। কথা হয় এ প্রতিষ্ঠানের প্রভাষক ও সহসমন্বয়কারী বাসুবি দত্তের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘যাদের ইচ্ছা মেডিকেল পড়ার, তারাই মূলত এখানে আসে।’ তিনি আরও জানান, ‘এখান থেকে ডিপ্লোমা ডিগ্রি নিয়ে বের হওয়ার পর সরকারি হাসপাতালে টেকনোলজিস্ট হিসেবে কাজ করার সুযোগ থাকে।’


কী পড়ানো হয়: ‘ছোটবেলা থেকে ইচ্ছা মেডিকেলে পড়ার। মাঝখানে অসুস্থতার কারণে পরীক্ষার ফল ভালো করতে পারিনি। একদিন এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে কথা হলো যে সিআরপিতে মেডিকেলের ওপর ডিপ্লোমা করা যায়। দেরি না করে এখানে ভর্তির জন্য চলে আসি।’ কথাগুলো বলছিলেন রেডিওলজির প্রথম বর্ষের ছাত্রী হাবিবা কুদ্দুস।


বাংলাদেশ হেলথ প্রফেশনস ইনস্টিটিউটের (বিএইচপিআই) দুটি শাখা রয়েছে। একটি সাভারে, অন্যদিন মিরপুরে। মিরপুরে চারটি বিষয়ের ওপর তিন বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা করা হয়। সে বিষয়গুলো হলো—
১. ল্যাবরেটরি মেডিসিন, ২. রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং, ৩. ফিজিওথেরাপি এবং ৪. অকুপেশনাল থেরাপি।


রতন দাস ল্যাবরেটরি মেডিসিনের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনি বলেন, ‘এখানে এসে জীবনে যে অনেক হতাশা মনের মধ্যে বেঁধে ছিল, সেগুলো দূর হয়। এখন আমি বিশ্বাস করি, ভালো কিছু করতে পারব।’ একই কথা বলেন নার্গিস আক্তার, নাজমুল নাহার ও গোলাম মোবারক। রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিংয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘পড়ালেখা শেষ করে চাকরির ফাঁকে ফাঁকে এলাকায় গিয়ে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করব এবং তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেব।’


ফিজিওথেরাপির প্রথম বর্ষের ছাত্রী তাহমিনা আক্তার। বিয়ে হয়েছে কয়েক বছর আগে। বিয়ের পর পড়াশোনা চুকিয়ে দিয়েছিলেন। ইচ্ছা ছিল মেডিকেলে পড়ার। স্বামী এই ইচ্ছার প্রাধান্য দিয়ে ভর্তি করিয়ে দেন বাংলাদেশ হেলথ প্রফেশনস ইনস্টিটিউটে। সংসার ও পড়াশোনা দুই-ই চালিয়ে যাচ্ছেন তাহমিনা আক্তার। তিনি বলেন, ‘বিয়ের পর স্বামীর উদ্যোগে পড়াশোনা শুরু করি। পড়াশোনা শেষ করে স্বামীর ইচ্ছা এলাকায় প্রতিবন্ধী মানুষের এবং ফিজিওথেরাপির ওপর কাজ করব।’
অনেকের ইচ্ছা, এখান থেকে পড়াশোনা শেষ করে দেশের বাইরে বিসিএম করা।
ভর্তির যোগ্যতা: এখানে ভর্তি হতে হলে ন্যূনতম এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ ২.৫০ থাকতে হবে। আসনসংখ্যা সীমিত হওয়ায় এখানে অনেক বেশি প্রতিযোগিতা হয়। ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে বাছাই করা হয়। চারটি বিষয়ে মোট ২৫২ জন ছাত্রছাত্রীর ভর্তির সুযোগ থাকে।


জুলাই মাসে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। অক্টোবরে ভর্তির কার্যক্রম চলে। এটা নভেম্বর ও ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হয়। জানুয়ারি মাসে ক্লাস পুরোদমে শুরু হয়।
পড়াশোনার পর কী করা যায়: এখান থেকে ডিপ্লোমা ডিগ্রি নিয়ে বের হওয়ার পর যেকোনো সরকারি হাসপাতালে টেকনোলজিস্ট হিসেবে কাজ করা যায়। এ ছাড়া বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারেও টেকনোলজিস্ট হিসেবে কাজ করা যায়।


কী কী সুবিধা: পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ছাত্রীদের জন্য আবাসিক সুবিধা রয়েছে। 

সূত্রঃ প্রথম আলো, ২৫ আগস্ট, ২০১০।

ব্যথিত বেদন বুঝিতে পারে

কোহিনূর বেগমের এবারের ঈদটা নিশ্চয়ই অন্য রকম হবে। নিরানন্দ জীবনের এ পর্যায়ে এসে হঠাৎ তাঁর মনে হচ্ছে, জীবনটা শুধু নিরেট গদ্য নয়, তাতে রয়েছে কবিতার ছন্দ। 


প্রথম আলোর ছুটির দিনে ম্যাগাজিনে ‘তাহার একদিন’ কলামে কোহিনূর বেগমের একটি সাক্ষাৎকার ছাপা হয়েছিল ২০০৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর। মুষলধারে বৃষ্টির পর তিনি তখন তাঁর দুই কন্যাকে নিয়ে ধানমন্ডি লেকের ধারে জীবন-সংগ্রামে ব্যস্ত। শুনিয়েছিলেন সংগ্রামের কাহিনি। দুই সন্তান জন্ম নেওয়ার পর শারীরিক প্রতিবন্ধী কোহিনূরকে ছেড়ে গেছেন স্বামী। এর পর থেকে কামরাঙ্গীর চরের ভাড়াবাড়ি থেকে তিনি ধানমন্ডি লেকের ধারে আসেন ভিক্ষা করতে। ধানমন্ডি-২ নম্বরের স্টার হোটেল থেকে ২৫ টাকার ভাত কিনে সন্তানদের নিয়ে দুই বেলা খান। তখনই বলেছিলেন, কাজ দ্যান না ক্যান? বলেছিলেন, কিছু টাকা পেলে একটি ছোট্ট দোকান দেওয়ার স্বপ্ন আছে তাঁর।


লেখাটি ছাপা হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই বি-স্ক্যান নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে যোগাযোগ করা হয়। হাজার দশেক টাকা দিতে চায় তারা। এই টাকায় কোহিনূরের দোকান হয়ে যাবে। 


কিন্তু বিধি বাম! সে সময় পুরো দুই মাস ধানমন্ডি লেকের পাড়ে গিয়েও কোহিনূর বেগমের দেখা মেলেনি। ওখানে যে ভিক্ষুকেরা থাকে, তাদের বলা হলো, কেউ কোহিনূর বেগমের খোঁজ দিতে পারে কি না, ওঁর জন্য সুখবর আছে। কিন্তু কেউ ওঁর ঠিকানা বলতে পারল না। কেন কোহিনূর এখানে আসেন না, সেটাও কেউ জানে না। সুতরাং যথারীতি তাঁকে ভুলে যাওয়া। যাঁরা টাকা দিতে চেয়েছিলেন, তাঁরাও একসময় খোঁজ নেওয়া বন্ধ করলেন। 


বহুদিন পর এ বছরের জুলাইয়ে আবার তাঁর দেখা মেলে। ধানমন্ডি লেকের পাড়ে আবার যখন যাতায়াত শুরু করেছেন, তখনই ওঁর বন্ধুরা নিশ্চয় ওর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছে।


‘আমারে নাকি সাহায্য করতে চায় মানুষ?’


তাঁর প্রশ্নটি যৌক্তিক, কিন্তু প্রায় এক বছরের ব্যবধানে সাহায্যটা পাওয়া যাবে কি না, সে নিশ্চয়তা ছিল না। প্রথম আলোর আবু হেনা নিল সেটা জানার ভার। আবার যোগাযোগ করল সেই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। জানাল, প্রতিষ্ঠানটি যাঁরা করেছেন, তাঁরা নিজেরা প্রতিবন্ধী বলে অন্য প্রতিবন্ধীর কষ্ট স্পর্শ করে তাঁদের। এ কারণেই তাঁরা একটি তহবিল করেছেন। কোহিনূরের জন্য এখনো টাকা বরাদ্দ আছে। আমরা টাকা হস্তান্তরের জন্য একটি দিন ঠিক করে ফেলি।


জুলাইয়ের শেষে এল দিনটি। ফুটপাতে ঘুমিয়ে থাকা কোহিনূরকে জানানো হলো, আজ তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হবে টাকা। কোহিনূরের চোখ-মুখে যে আলোর দীপ্তি দেখা গেল, তার সঙ্গে কি আর কিছুর তুলনা হয়!


সালমা মাহবুব এসেছিলেন বি-স্ক্যানের পক্ষ থেকে অর্থ হস্তান্তরের জন্য। তিনি বললেন, ‘কোহিনূর, আপনি পরাজিত হতে পারেন না। আপনার পাশে আমরা থাকব।’


কোহিনূরের কাছে গোটা ব্যাপারটাই ছিল অকল্পনীয়। স্বপ্ন হাতের মুঠোয় এসেছে, তাই গড়গড় করে বলতে থাকেন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা। দোকান দেবেন কামরাঙ্গীর চরের ভাড়াবাড়িটির সামনে। বাড়িওয়ালা রাজি। এরপর দোকান থেকে যে লাভ হবে, তা দিয়ে পড়াশোনা করাবেন দুই মেয়েকে। ১১ বছর বয়সী মেয়েটাকে ডাক্তারি পড়াবেন। এখন যদি মেয়েদের বাবা ফিরে আসে, তাকে বাড়িতে ঢুকতে দেবেন না। জীবনের কঠিন বাস্তবতা তাঁকে শিখিয়েছে সংগ্রাম করেই টিকে থাকতে হয়। যে ছেড়ে চলে যায়, তার আর স্থান নেই জীবনে।
এই বাজারে ১০ হাজার টাকা খুব বড় কিছু নয়। কিন্তু যাঁর জীবন কাটে ভিক্ষা করে, তিনি যদি জীবন বদলাতে চান, তাহলে এই টাকা অনেক অনেক বড় কিছু। বহু বছর পর সামনে যে ঈদটি আসছে, তা নিয়ে স্বপ্ন দেখতে পারছেন কোহিনূর বেগম। শর্ত একটাই, দোকানটা চালু করতে হবে দ্রুত, টাকা অকারণে নষ্ট করা চলবে না। 


জুলাই মাসের সেই দিনটির পর থেকে কোহিনূরকে আর ধানমন্ডি লেকের ধারে দেখা যায়নি।


হয়তো, ওর দোকানটি তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ ওর স্বপ্ন বোনার কাজ শুরু হয়ে গেছে। 


- জাহিদ রেজা নূর
সুত্রঃ প্রথম আলো, ২৫ আগস্ট, ২০১০। 
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-08-25/news/89163 

___________________________________________

Hearing Painful Agony
           
This Eid-festival might have passed happily for Kohinoor Begum! This occasion has changed her concept about gloominess of life. She now thinks, life does not mean only struggle; but it could be turned into safe & pleasant journey! 
An interview of Kohinoor was taken, while she was roaming with her babies in Dhanmondi lake; under heavy rain. The interview was published in a holiday Magazine of Prothom Alo on 26 September of 2009, titled as “Her One Day”. Her husband has left her as she got disabled! So, she is struggling alone with her two daughters. She comes to Dhanmondi lake for begging. She used to buy food worth TK 20 from Star Hotel of Dhanmondi- 2 and eats with her two kids two times of day. Then she told “Why don’t anyone get me a job to earn money? I dream of running a shop as soon as I could have some money! ‘’

After couple of days her message was published, a association named B-SCAN came forward with ten thousand taka. Alas! The association could not give her the expected money; with which she can commence her dreamt shop.
But what a misfortune! Kohinoor Begum could not be found at the place for about two months. No body could provide her residual address. Even no other beggars around knows about her! As she could not be found after possible search, the donation willing parties forgot about her. Consequently, all concern about her ceased!

She was seen in July this year; after a long time! She started her journey again at Dhanmondi lake and heard about her search by a donating party, from other beggars.

Was there any party searching for me, in order to help me? A logical question, as donation may not be available after a long lapse! Fortunately; Abu Hana; a reporter of Prothom Alo took the charge and communicated with the B-SCAN association.

He informed Kohinoor that the association runs by  people with disabilities. As they are disabled, pain of other disabled or helpless people touches their conscience. They have made a fund for helping other disabled. The organization decided to donate Kohinoor as well!

One day in July sanctioned to donate the money!  Street living Kohinoor was informed of the receipt message. Nothing can be compared with her happiness with the news. B-SCAN’s general secretary  Salma Mahbub came with the amount. She told her, ‘Kohinur, you cant be defeated.  We will be beside you.’

The entire matter looked unimaginable to her! She has got her dream in hand; started uttering her dreamt plan without break! She would lay a shop in front of her rented house in Kamrangirchar. Her landlord has agreed! Then whatever she can earn, would try to send her daughters to school. She told us, she would send her 11 years old daughter to Medical College in future - - would never allow her husband to enter into their house again. This hard practical life has taught her to struggle! Who has left them, could not be accepted back!

At this period, Tk 10,000/= is nothing! But this amount can change life of a beggar! After long time, she is dreaming of having a good Eid; the coming Eid! The only condition is to ‘’spend the money carefully by commencing the shop; not spending the amount unnecessarily.’’

Kohinoor has not been seen in Dhanmondi lake after that day anymore! Perhaps, she has started the shop! That means her dream has been turned into practical.


-Translated by Dr. Lailun Nahar

 সিলসিলা ও সালমাদের স্বাস্থ্যকুশল - অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী

সিসিলা অনেক দিন ধরেই বলছিল, স্যার, আমাদের নিয়ে কিছু লিখুন।
বলেছিল সালমাও, ঢাকা থেকে।
সিসিলা চট্টগ্রামে থাকে, সালমা ঢাকায়।


মিষ্টি দুটি মেয়ে। হুইলচেয়ারে বসেছিল বাংলা একাডেমীতে বইমেলায় নজরুলমঞ্চের সামনে।
নিজের কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। অন্যের বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করতে হবে। আর বইমেলায় প্রতিবারই আসি, অনেকের সঙ্গে দেখা হয়। সেদিনও এসেছিলাম। সালমা মুঠোফোনে ডাকল, স্যার, এই যে আমরা নজরুলমঞ্চের সামনে। এলাম। দেখলাম, খুব মিষ্টি দুটো মেয়ে। সালমা ও সিসিলা। সালমার নাকি ছোটবেলায় পোলিও হয়েছিল। ক্রমে একদিন অবশ হলো শরীর। প্রতিবন্ধী হতে হলো। কিন্তু কী অসম্ভব মনের জোর। শাণিত বুদ্ধি সালমার। মনে হতাশা নেই। সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য কী প্রবল ইচ্ছা এবং সে এতে জয়ীও হয়েছে।


সিসিলাও কম যায় না। দেহের পেশিতে ব্যাধি ভর করেছে। নিশ্চল শরীর নিচের দিকে, তবু অদ্ভুত সুন্দর মুখশ্রী সিসিলার। পৃথিবী জয়ের হাসি তার ঠোঁটে। সুস্থ থাকা যে কত বড় আশীর্বাদ, তা এদের না দেখলে বোঝা যায় না।


ওরা বেশ কয়েকজন জড়ো হয়েছিল রমনা পার্কে, নিজেদের মধ্যে আলোচনা করার জন্য। প্রতিবন্ধী হলেও এরা নিজের জোরেই উঠে এসেছে অনেকখানি।
আমরা এদের দিকে অবলম্বন ও সাহায্যের হাত বাড়ালে অনেকটা করা হবে। এরা করুণা চায় না। তারা অন্যদের মতো অধিকার চায়।


শিক্ষার অধিকারও চায় তারা অন্যদের মতো। প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েদের জন্য লিফট, র‌্যাম্প নেই অনেক স্কুলে। আলাদা ব্যবস্থা নয় এবং এদের অধিকার রয়েছে শিক্ষাগ্রহণের—একে মর্যাদা দেওয়া।
স্টিফেন হকিংয়ের কথা বলি। তিনিও প্রতিবন্ধী। তাই তো! তবু হকিং অত্যন্ত বড় মাপের বিজ্ঞানী। সমসাময়িক সময়ে তাঁর মতো বড় বিজ্ঞানী একজন দেখান তো! এমন আরও উদাহরণ রয়েছে।
ওদের স্বাস্থ্যের দেখভাল করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা কি করা যায় না?
নিজেরাই করবে, তবু তাদের এগুলো জোগান দেওয়া। একটু পাশে এসে দাঁড়ালেই তারা অনেক খুশি। মনের জোর তাদের এতে আরও বাড়বে।


ওরা আমার কাছে এসেছিল।
ওদের কথা, একটু লিখুন আমাদের জন্য।
আমাদের অধিকার অর্জনের জন্য পাশে এসে দাঁড়ান।


সালমা সেদিন আসেনি, এসেছিল সিসিলা ও জলছবি। প্রতিবন্ধী নয়, এমন আরও দুজন বন্ধুও এসেছিল। তাদের একজন বহ্নি, নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। অন্যজন অরণ্য, সঙ্গে ছিল সাংবাদিকও। এ দুটো ছেলেমেয়ে জীবনকে ভালোবেসে তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। অনেক পরিকল্পনা তাদের।
বিশেষ করে, প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়ে যারা, তাদের জন্য শিক্ষার অধিকারকে আরও জোরালোভাবে সমাজে প্রতিষ্ঠা করা। সমানভাবে তাদের দেখা, তাদের শিক্ষাগ্রহণকে সুগম করার জন্য স্কুলে লিফট, র‌্যাম্প—এসব রাখা। তাদের স্বাস্থ্যের যে সমস্যা, অসুবিধা, সেগুলো দেখভালের জন্য, পরিচর্যার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা চাই।


ওরা ফিরে যাচ্ছে নিজেদের ঘরে। ফটো তুলেছে আমার সঙ্গে।
মুখে তাদের হাসি।
সন্ধ্যা হয় হয় অবস্থা।
তাদের হাসি ছুটে যায় গোধূলির মিছিলে।
এক নতুন সূর্য ওঠা ভোরে তারা দেখবে জয়। প্রতিবন্ধী হলেও স্বাভাবিক মানুষের মতো তারা মর্যাদা পেয়েছে, পেয়েছে ন্যায্য অধিকার।
ওরা ফেসবুকে অনলাইন গ্রুপ করেছে। হয়তো আরও অনেকে এদের পাশে এসে দাঁড়াবে। ছড়িয়ে যাবে তাদের বার্তা আরও ব্যাপকভাবে। অর্জিত হবে তাদের অধিকার। জনপ্রিয় এই সরকার তাদের দেবে অধিকার—সে আশা তাদের সবার।
শেষে কথা বলি।


সিসিলা ও জলছবি যখন বারডেম ছেড়ে যাচ্ছিল, হঠাৎ করে মনে হলো তাদের একটা কথা। স্যার, আমরা সমবেদনা চাই না, সহানুভূতি চাই না, দয়া চাই না। আমরা চাই সমমর্মিতা। তখনই বারডেমের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক ইব্রাহিমের কথা মনে হলো। তিনি বলতেন, একটি কথা: Sympathy নয়, 'Empathy' সমমর্মিতা। অসুখে মানুষ চায় সমমর্মিতা। এমন যে; নিজের যদি এমন কষ্ট হয়, অসুখ হয়, অবস্থা হয়, তাহলে কেমন লাগে—তা উপলব্ধি করলে অন্যের দুঃখটা বোঝা যায়। নিজের মধ্যে অন্যের কষ্টটা বসিয়ে দিলে বোঝা যায় অন্যের কষ্ট কত! সিসিলাকে বলা হয়নি রবিঠাকুরের সেই কথা—বিপদে মোরে রক্ষা করো এ নহে মোর প্রার্থনা/বিপদে আমি না যেন করি ভয়।
ওরা জানে কীভাবে ভয়কে জয় করতে হয় (They will overcome). 


সুত্রঃ প্রথম আলো, ২৫ আগস্ট, ২০১০।

তাহার একদিন ‘কাজ দ্যান না কেন?’

'অনেকক্ষণ বৃষ্টি থেমে গেছে। বৃষ্টি থেমে গেছে অনেকক্ষণ।’
রামবসুর কবিতার পঙিক্ত। পরের পঙিক্তটি ‘খোকাকে শুইয়ে দাও’।
সত্যিই বৃষ্টি থেমে গেছে, কিন্তু কোহিনূর বেগম তাঁর ‘খুকি’দের কোথাও শুইয়ে দেওয়ার কথা ভাবতে পারছেন না। প্রতিবন্ধীরা চালাতে পারে এমন একটি ত্রিচক্রযানের সঙ্গে দুটো রশি আর ধানমন্ডি লেকের রেলিংয়ে দুটো রশি টানিয়ে নীল রঙের একটি পলিথিন রেখেছেন মাথার ওপর। বৃষ্টির ঝাপটা থেকে বাঁচার এই ছিল তাঁর উপায়। সিমেন্টের ফুটপাতে শিশু দুটিকে শুইয়ে দেওয়া যায় না। সুতরাং কোহিনূরের নয় বছরের নিশি আক্তার রুমানা আর সাড়ে তিন বছরের ফাতেমাতুজ জোহরা নামের দুটি মেয়ে ওই নীল চাদোয়ার নিচেই মায়ের সঙ্গে বসে আছে।
‘আপনার কী হয়েছে?’
‘টাইফয়েড হইছিলো পনেরো বছর আগে। পা থেকে মাথা পর্যন্ত সমস্যা।’
শিশু দুটিকে দেখিয়ে বলি, ‘ওদের বাবা কোথায়?’
‘ওগো বাবা আরেকটা বিয়া করছে। আমারে ছাড়ে নাই। কোথায় আছে, বলতে পারব না। এক বছর তার কোনো ঠিকানা নাই।’
ধানমন্ডি লেকের পাড়ে, রুশ বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি কেন্দ্রের কাছে, এটি ওদের অস্থায়ী ঠিকানা। কামরাঙ্গীরচরে বাড়ি। ভোর ছয়টায় দুই শিশুকে ডাল-ভাত খাইয়ে ত্রিচক্রযানটিতে করে তিনজনই এসে পড়ে ধানমন্ডিতে। বড়টা সুরভি স্কুলে পড়ে। কোহিনূর বেগম কী করেন তবে? ‘ভিক্ষা করি। সাহেবরা দান করে।’ বললেন তিনি।
‘রান্না করেন কখন?’
‘রাইতে বাড়ি ফিরা। রান্না করুম না? বাচ্চারা খাইলে রান্না করতে হয় না? দিনের বেলায় হোটেল থিকা ২৫ টাকার ভাত-সবজি আইন্না তিনজন খাইয়া লই। ওই যে দ্যাহেন, টিফিন কারিয়ার। ওইটাতেই ভাত লইয়া আসি।’
‘ভিক্ষা করেন কেন?’
‘কাজ দিবেন? কাজ দ্যান না কেন? আমি তো বইয়া বইয়া সবকিছু করতে পারি। আমারে একটা দোকান দিয়া দিলেই তো হয়। ভিক্ষা কি কোনো পেশা?’
মাঝেমধ্যে ঈদের পর বিক্রমপুরের বাড়িখালীতে পৈতৃক বাড়িতে বেড়াতে যান। কিন্তু বেশি দিন থাকেন না। ‘ওগো নানী আছে ওইখানে। কিন্তু হেরাও তো গরিব। বড়লোকরাই দেখে না! গরিবরে কে দেখব? বেশি দিন থাকন যায় না।’
‘ওদের বাবা যদি ফিরে আসে?’
‘বাবা ফিরা আইলে আসল, না আইলে নাই। বাপের আশা কে করে? আমি স্বপ্ন দেখি, ভবিষ্যতে আমার মাইয়া দুইটা বড় হইব। চাকরি করব। আমারে দেইখ্যা রাখব। আর শোনেন, ওগো বাপে ফিরল কি না-ফিরল, তাতে কিছু আসে-যায় না। কষ্ট কইরা খাইতে পারতাছি। বাকি দিনগুলাও পার কইরা দিতে পারমু।’
এ কথাগুলো যখন বলছিলেন কোহিনূর বেগম, তখন এই পঙ্গু মানুষটিকে অনেক বড় বলে মনে হয়। দুটি সন্তান নিয়ে যানজটের রাস্তা দিয়ে ত্রিচক্রযান চালিয়ে প্রতিটি দিন সংগ্রাম করে চলেছেন জীবনের সঙ্গে।
ফিরে আসতে আসতে দুটি বাক্য মাথায় ঘুরতেই থাকে: ‘কাজ দ্যান না কেন?’ আর ‘বাকি দিনগুলাও পার কইরা দিতে পারমু।’
বাক্য দুটির ভেতরকার শক্তি তাঁকে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়।

-জাহিদ রেজা নূর

সুত্রঃ প্রথম আলো, ছুটির দিনে, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০০৯।

প্রতিবন্ধী কল্যাণ আইন নিয়ে মতবিরোধ

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুন নেসা খানম বলেছেন, ২০০১ সালের প্রতিবন্ধী কল্যাণ আইনে কল্যাণ শব্দটি আছে বলেই সে আইন থেকে মুখ ফিরিয়ে নতুন একটি আইন করতে হবে, তার কোনো মানে নেই। আইনটিকে মূল ধরে প্রয়োজনে বিধি বা নীতিতে সংশোধনী আসতে পারে।

গতকাল বৃহস্পতিবার ‘বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সুরক্ষা আইন ২০১০’ প্রস্তাবিত খসড়া চূড়ান্তকরণের লক্ষ্যে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। 

তবে পার্লামেন্টারিয়ানস ককাস অন ডিজঅ্যাবিলিটির চেয়ারম্যান আইনজীবী আবদুল মতিন বলেন, ২০০১ সালের আইনটি কল্যাণমূলক ছিল। তাই প্রস্তাবিত খসড়াটি ত্রুটিমুক্ত করে আগামী তিন থেকে চার মাসের মধ্যেই জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ মিলনায়তনে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, পার্লামেন্টারিয়ানস ককাস অন ডিজঅ্যাবিলিটি এবং জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরাম। 

সভায় খসড়া প্রণয়নকারীদের একজন সদস্য এ এইচ এম নোমান খান বলেন, ২০০৭ সাল থেকে আইন পরিবর্তনের প্রক্রিয়া চলছে। জাতিসংঘের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার রক্ষা সনদের আলোকেই এ কাজ করা হচ্ছে।

ফোরামের সভাপতি খন্দকার জহুরুল আলম বলেন, সারা দেশের ১০ থেকে ১২ হাজার জনগণের মতামতের ভিত্তিতেই খসড়াটি তৈরি করা হয়েছে। আইনজীবী আমিরুল ইসলাম বলেন, আন্তর্জাতিক আইন ও সনদের আলোকে নতুন আইনের প্রয়োজন আছে।

অনুষ্ঠান শেষে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কর্মরত বিভিন্ন সংগঠনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি প্রথম আলোকে বলেন, মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেই জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরামকে নতুন একটি খসড়া করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তাই সচিবের বক্তব্য নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

আইনজীবী তানিয়া আমীর আইনে প্রতিবন্ধিতা অধিকার কমিশনকে ক্ষমতা দেওয়া (খসড়ায় শুধু সরকারকে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা) এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার লঙ্ঘনকারীর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যবস্থা থাকার ওপর গুরুত্ব দেন।


সচিব কামরুন নেসা তাঁর বক্তব্যে এ ধরনের কমিশন না থাকার পক্ষে মত দেন। তিনি বলেন, দেশে হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট আছে। মানবাধিকার কমিশনও আছে। তাই আলাদা কমিশনের প্রয়োজন নেই।

এ ছাড়া খসড়ায় প্রান্তিক প্রতিবন্ধী শিরোনামে নারী, শিশুসহ বিভিন্ন শ্রেণীকে আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সচিব বলেন, আইনে নারী, শিশু আলাদা আলাদা ভাগ করতে গেলে কাজের চেয়ে অকাজই বেশি হবে।


সভায় প্রস্তাবিত খসড়াটি পড়ে শোনান ফোরামের পরিচালক নাফিসুর রহমান। বক্তব্য দেন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নাছিমা বেগম, সাংসদ মীর শওকত হোসেন, সাংসদ এ বি এম গোলাম মোস্তফা, ফোরামের মহাসচিব জওয়াহেরুল ইসলাম প্রমুখ।

সূত্রঃ ২০ আগস্ট, ২০১০, প্রথম আলো। 

নোমান খানকে জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরামের সম্বর্ধনা

র‍্যামন ম্যাগসাসে পুরস্কার প্রাপ্ত এম নোমান খান কে গতকাল ১২ আগস্ট, ২০১০ জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরামের পক্ষ থেকে সম্বর্ধনা দেয়া হয়। শ্রাবনের সন্ধ্যায় এই আয়োজনটি করা হয় এলজিইডি ভবনে। প্রতিবন্ধী মানুষের উন্নয়নে কর্মরত  বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা এতে বক্তব্য রাখেন।


বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী, জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরামের প্রেসিডেন্ট জহুরুল হক মামুন, ডিসেবিলিটি রাইটস ওয়াচগ্রুপের আহ্বায়ক কাজী রোজী, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের  উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী ও যাঁর জন্য এই আয়োজন এম নোমান খান এবং তাঁর সহধর্মীনি।

সুইড বাংলাদেশ, সিডিডি, এসএআরপিভিসহ আরো বহু সংগঠনের প্রধান ও প্রতিনিধিরা শুভেচ্ছা জানান।

লেখকঃ সালমা মাহবুব, ১১ আগস্ট, ২০১০।

যাদুঘরের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও বি-স্ক্যান

জাতীয় যাদুঘরের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে, গত ৭ আগস্ট, ২০১০, এবারই প্রথম প্রতিবন্ধীদের নিয়ে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যাদুঘরের পক্ষ থেকে বি-স্ক্যানসহ আরো কয়েকটি সংগঠনকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানানো হয়। আমাদের সংগঠন অনুষ্ঠানে রবীন্দ্র সঙ্গীত পরিবেশন করেন তানজিনা এশা ও নিগার সুলতানা সুমি। 

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রী জনাব, আবুল কালাম আজাদ, যাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান জনাব, আজিজুর রহমান ও যাদুঘরের মহাপরিচালক জনাব, প্রকাশ চন্দ্র দাস।



বি-স্ক্যান ছাড়াও অনুষ্ঠানে সোয়াত, ক্রিয়েটিভ ওয়ার্ল্ড অব অটিস্টিক চাইল্ড অংশ নেয়। নাচে গানে মুখর এই সন্ধ্যাটি সবাই উপভোগ করেন। এই উপলক্ষ্যে বি-স্ক্যান এর বেশ কিছু সদস্য একত্রিত হন। তারা হলেন,আমাদের প্রধান উপদেষ্টা প্রোফেসার শুভাগত চৌধুরী, মেজর, জহিরুল ইসলাম, ফারজানা সুলতানা, নাফিজ ইসলাম, মাহমুদুল হাসান রুবেল, নাসিম চৌধুরী, জাহীদুল ইসলাম, নিগার সুলতানা সুমি, তানজিনা এশা, জোর্জিনা, স্বপ্না ফ্রান্সিস, রফিকুল ইসলাম, মোঃ আনোয়ার হোসেন, মোহিত, মুক্তারা বেগম, ইথার, রাজিন ও সালমা মাহবুব।

- সালমা মাহবুব, ১১ আগস্ট, ২০১০।

শারিরিক প্রতিবন্ধকতা বাধা হতে পারেনি ফাল্গুনি ও শাহিনের চলার পথে



পটুয়াখালীর গলাচিপা শহরের জগদিশ চন্দ্র সাহার মেয়ে ফাল্গুনি সাহা। দরিদ্র পিতার ৪ মেয়ের মধ্যে ফাল্গুনি তৃতীয়। ২০০২সালে পাশের বাসার ছাদে গিয়ে বিদ্যুতের লাইনে জড়িয়ে ফাল্গুনির দুটি হাতই পুড়ে যায়। পরে কেটে ফেলতে হয় তার হাত দুটি। কিন্তু মেধাবী ফাল্গুনি সাহা তার লেখা-পড়া চালিয়ে যায়। ৫ম শ্রেনীতে বাহু দিয়ে লিখে সে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে। বর্তমানে সে গলাচিপা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেনীর ছাত্রী। তার ক্রমিক নম্বর এক। শারিরিক প্রতিবন্ধকতা দমাতে পারেনি ফাল্গুনির দুরান্ত পথ চলা। ফাল্গুনি সাহা ভবিষ্যতে একজন বিসিএস কর্মকর্তা হতে চায়। কিন্তু তার পক্ষে সে পর্যন্ত পৌছা সম্ভব হবে কিনা তা তার জানা নেই। তবে সবার আশির্বাদ ও সহযোগিতা পেলে হয়তো ফাল্গুনি একদিন ঠিকই তার লক্ষ্যে পৌছতে পারবে এমনটাই মনে করেন ফাল্গুনির মা ভারতী রানী সাহা।



মা ভারতী রানী সাহা জানান, ২০০২সালে ফাল্গুনি তার বড় বোনের সঙ্গে একদিন পাশের বাসার ছাদে যায়। কিন্তু সেখানেই ঘটে ফাল্গুনির জীবনের বড় বিপর্যায়। ৩৩ হাজার ভোল্টের বিদ্যুতের লাইনে জড়িয়ে ফাল্গুনির দুটি হাত পুড়ে যায়।  তবে জীবনে বেচে গেলেও ফাল্গুনি এখন শারিরিক প্রতিবন্ধি।

তিনি জানান, ৪মেয়ের বড় দুজনকে বিয়ে দেয়া হয়েছে। ফাল্গুনি ও তার ছোট বোন স্কুলে যায়। স্বামী জগদিশ চন্দ্র সাহা ছোট একটি দোকানের মালিক। আর সে বাসায় বসে মিষ্টির প্যাকেট তৈরী করে বিক্রি করেন। এদিয়েই মেয়েদের লেখা-পড়াসহ সংসারের সকল খরচ চলে।

তবে সবার আশির্বাদ ও সহযোগিতা পেলে হয়তো মেয়েদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।

একই এলাকার বাক প্রতিবন্ধি শামীমুর রহমান শাহিন প্রতিবন্ধি বিদ্যালয় লেখাপড়া না করেও এ বছর গলাচিপা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.১৪ পেয়েছে। বর্তমানে সে গলাচিপা ডিগ্রী কলেজে লেখা-পড়া করছে। সে ভবিষ্যতে একজন শিক্ষক হতে চায়।






হারুন অর রশিদের তিন ছেলের মধ্যে শাহিন সবার বড়। তবে ছোট ভাই নিয়াজ উদ্দিন বাপ্পিও বাক প্রতিবন্ধি। বাপ্পি গলাচিপা আইডিয়াল স্কুলের ২য় শ্রেনীর ছাত্র। পিতা হারুন অর রশিদ জানান, গলাচিপা শহরে তার ধান বানা ও চাল গুঁড়া করার মেশিন আছে। এ মেশিন চালিয়ে যা আয় হয় তা দিয়েই চলে তার সংসার। অভাবের পরিবার হলেও সে চায় প্রতিবন্ধি ২ ছেলেসহ ৩ ছেলেকেই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে। সবার সহযোগিতা পেলে তা সহজ হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

গলচিপা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহআলম বলেন, ফাল্গুনির হাত  দুটি নষ্ট হলেও বাহু দিয়ে লিখেই ৫ম শ্রেনীতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে। বর্তমানে সে ১০ম শ্রেনীর ছাত্রী। তার ক্রমিক নম্বর এক। আর শাহিন এ বছর গলাচিপা মধ্যমিক বিদ্যালয়ের কারিগরি শাখা থেকে ৪.১৪ পেয়ে এসএসসি পাশ করেছে। তিনি বলেন, প্রতিবন্ধি বিদ্যালয় লেখা-পড়া না করেও শাহিন যেভাবে  ভাল ফলাফল করেছে তা সত্যিই আশ্চর্যজনক। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, সমাজের বৃত্তবান ব্যাক্তিরা এগিয়ে এলে মেধাবী ফাল্গুনি ও শাহিন প্রতিবন্ধি হয়েও সমাজের মুখ উজ্জল করতে সক্ষম হবে।


লেখকঃ হানজালা শিহাব,

পটুয়াখালী প্রতিনিধি।

তাং ২৫/৭/১০

 
Design by Oronno Anam | Bloggerized by Salma Mahbub