দু'জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে হুইলচেয়ার প্রদান


ফান্ড পেলে আমরা কিছু প্রতিবন্ধী মানুষকে আত্ননির্ভশীল করে তুলতে চাই, সহজ করে তুলতে চাই তাদের চলার পথ। সেই লক্ষ্যেই শনিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১০ রোটারী ক্লাব অব ঢাকা সেন্ট্রালের আর্থিক সহযোগিতায় বি-স্ক্যান এর পক্ষ থেকে দুজনকে হুইলচেয়ার প্রদান করা হয়। 


যাদেরকে হুইলচেয়ারগুলো দেয়া হলো তাদের একজন রাইসুল ইসলাম, বয়স ২২, বাবা আব্দুল আজিজ।  মগবাজার বস্তি নিবাসি রাইসুলের ছোটবেলা টাইফয়েড হয়েছিল তারপর থেকে তিনি একেবারেই হাঁটতে পারেন না। রাইসুল চার ভাইবোনের মাঝে সবার বড় হওয়ায় তার লেখাপড়া সেভাবে হয়নি। ছোটবেলা বাবা তাদেরকে ফেলে চলে যান। তারপর তাদের মাই দেখাশোনা করতেন। আর রাইসুলকেও বিভিন্নভাবে সংসারে সহযোগিতা করতে হতো। কিন্তু রাইসুলের মাও মারা গেছেন সাত/আট বছর আগে। পিতৃমাতৃহীন রাইসুল বর্তমানে বেকার, তবে সে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে চা বিস্কিটের ব্যবসা শুরু করতে চাইছে,  হুইলচেয়ার প্রদানের পাশাপাশি এই ব্যাপারেও আমরা তাকে সহযোগিতা করতে যাচ্ছি। 


 অপরজন  বেলাল হোসেন, বয়স ৩৫, বাবা মরহুম মোজাহার আলী। ডেইলি স্টার এর কংকন কর্মকারের একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে বেলালের কথা জানতে পেরে বি-স্ক্যানের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় সেই সাংবাদিকের সাথে। পোলিও আক্রান্ত বেলাল হোসেন জয়পুরহাটের পিরপাড়া গ্রামের একজন সফল কৃষক। প্রতিবেদন থেকে আরো জানা যায় যে, বেলাল হোসেনের ২০ ডেসিমাল জমি আছে যা তিনি নিজেই চাষাবাদ করেন। কৃষিকাজের জন্য তিনি ঋণও নিয়ে থাকেন এবং সময়মত তা পরিশোধও করেছেন।  আমরা মনে করি একটি হুইলচেয়ার তার চলাচলকে আরো সহজ করবে। সুদূর জয়পুরহাট থেকে হুইলচেয়ারটি গ্রহণ করতে বেলাল হোসেনের পক্ষে আসা সম্ভব হয় নি তাই তার পক্ষ থেকে দিনাজপুরবাসী কংকন কর্মকারের প্রতিনিধি রুবেল আলম চেয়ারটি গ্রহণ করেন। পরে এটি বেলাল হোসেনকে সাংবাদিক নিজে পৌছে দেবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। সেইজন্য আমাদের আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। 





রাইসুল ইসলাম
হুইলচেয়ার দুটো রোটারি ক্লাব অব ঢাকা সেন্ট্রালের প্রেসিডেন্ট রাইসুল ও রুবেল আলমের হাতে তুলে দেন। আমাদের উপদেষ্টামন্ডলী জনাব ডাঃ এ এস কিউ সাদেক ও জনাব ডাঃ শুভাগত চৌধুরীও আমাদের আমন্ত্রণে সেখানে উপস্থিত ছিলেন। 

আয়োজকদের মাঝে যারা উপস্থিত ছিলেন তারা হলেন বি-স্ক্যান সদস্য - অরন্য আনাম, মোঃ হাসান মিলন, জাকির হোসেন  ছিলেন।

"সাদা ছড়ি" ধারন করা,মনের দৃষ্টির মানুষদের সাথে কিছুটা সময়!



''সবচেয়ে দুর্ঘম যে মানুষ আপন অন্তরালে,
তার কোন পরিমাপ নাই বাহিরের দেশে কালে।
সে অন্তরময়,
অন্তর মেশালে তবে তার অন্তরের পরিচয়।''


রবীন্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টি এই ক’টি লাইন এর মতোই যেন অন্তরদৃষ্টি স্বম্পন্ন মানুষের সাহচর্য পাবার জন্যই যাওয়া সে “সাদাছড়ি” ধারন করা মানুষদের অনুষ্ঠানে ,আমার কাছে তা’ই মনে হয়েছে শেষে। বি-স্ক্যান এর সালমা আপার ফোন পেয়ে সানন্দে রাজী হয়ে গেলাম সেখানে যাওয়ার জন্য। কিছুটা সময় আগেই পৌছলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টি,এস,সি অডিটোরিয়াম এ। “সাদাছড়ি” দিবস উপলক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টি প্রতিবন্ধিদের সংগঠন “ বিশেষ শিক্ষার্থী সংঘ” আয়োজিত সাদা ছড়ি বিতরন অনুষ্ঠান।

অডিটোরিয়ামে ঢুকার মুহুর্তেই প্রথম অবাক করা বিষয় ,দৃষ্টি প্রতিবন্ধি আর স্বাভাবিক দৃষ্টিস্বম্পন্ন মানুষজন সবাই একসাথে কাজ করছে প্রোগ্রাম নিয়ে। আমার চারপাশটা জুড়ে সব হৃদয়ের দৃষ্টিতে পথ চলা মানুষ। প্রায় কিছুক্ষনের ভাবনা জুড়ে ছিল আমরা সবাই আসলে এক। হয়ত তার দৃষ্টি নেই,আমার আছে। কিন্তু পরক্ষনেই ভাবনাটা বেশ উদ্দিপক করে তুললো। হ্যা আমি হয়ত দেখি চোখের আলোয়,আর সে মানুষগুলো চোখের অন্ধকারকে সঙ্গি করেই ভেতরের অন্তর-আলোতে যেন উদ্ভাসিত অনেক বেশি। চারিপাশটায় আমার চোখের বিচরন ছিল অনেক বেশি। দেখছিলাম বারবার,বারবার। ওরা সবাই উদ্যমি। বেশিরভাগেরই বয়স সর্বোচ্চ একেকজন যুবক অথবা কিশোর। সবারই খুব হ্যান্ডসাম পদার্পন এবং বসে থাকা,মনে হলো যেন উনারা সবাই আসলে শুনছে না শুধু,দেখছেও প্রানভরে অনুষ্ঠানটি। যেহেতু এই মানুষগুলোর সাথে মিলাতে চাচ্ছি নিজেকে। সে সময়টায় যেন হেরেই যাচ্ছি উনাদের শারিরীক উদ্যমতায়। আহ! সে কি চমৎকার অভাবনীয় মনের শক্তি থাকলেই তা শুধু সম্ভব! তা ভেবেই স্যালুট দিতে হাতটা উঠেছিল। প্রচন্ড ইচ্ছে মেটাতেই নিজেই আড়াল করে হাতটা উঠিয়ে স্যালুটের ভঙ্গি করা সে সময়।

অবহেলা পেতে হয় আমাদেরও অনেক ক্ষেত্রে। কিন্তু এই সব অসাধারন মনের দৃষ্টির কিছু মানূষ যেন পৃথীবিই জয় করছে প্রতিনিয়ত। মনে হয়েছে আমার কাছে- উনারা শুদ্ধ! অসম্ভব মায়াময় একেকজনের চেহারা। কারও কারও হয়ত একটু মুখাবয়ব টা সুন্দর ভয়ঙ্কর। যা আসলে কাউকে ভয় জোগায় না,ভালবাসাই সৃষ্টি করে যেন। কেউ কেউ তার বর্তমান বাহ্যিক দেখতেই পান নাই কোনদিন। দেখলাম উনারাই বেশি আত্ববিশ্বাসি এবং স্মার্ট চলাফেরায় মাঝে মাঝে তাদের কারও কারও সাথে একজন থাকেন শুধু সাবধান করে দেবার জন্য পথটা।




উপস্থাপক একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। ছিলেন প্রধান অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভিসি মহোদয়। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় কোষাধক্ষ্য এবং দি নিউ এজ এর সম্পাদক। বক্তৃতার পালায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাষ্টার্স করা একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি সাবেক ছাত্রের বক্তৃতা ছিল সবচেয়ে উদ্দিপক এবং আশাব্যাঞ্জক সব দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের। তা শুনে এই আমার কাছেও মনে হয়েছে-না আসলে,হয়ত এ হৃদয়ের খেলা আর অন্তদৃষ্টির উৎকৃষ্টতার জীবনমান দেখাই হয়ত মিস করতাম। ছবি তুলতে গিয়ে রেডি না বলেই ভাবলেশহীন মুখগুলোরই প্রতিচ্ছবি পেলাম ক্যামেরার ফ্রেমটায়।

মাঝে মাঝে নিস্তব্ধতায়ও দারুন সঙ্গিনির্ভর মনে হয়। সেরকমই অনুভুতির ছোয়া পৌছে গিয়েছে অন্তরটায়। কি যে একেকজন অসাধারন মনের দৃষ্টির অধিকারি,যারা হয়ত কোণ পৃথিবীর ছবিই দেখেনি,তাদের মধ্যেও অনেক বেশি চেতনা অনেকের চেয়েও বেশি এ পৃথিবীর। সত্যিই চমৎকার সব দৃঢ় মানসিকতার মানুষদের মিলনমেলার মধ্যেই যেন ছিলাম সারাক্ষন।



গান শুনলাম,আবৃত্তি শুনলাম,তাদের আনন্দধনি হৃদয়ে গেথে উপভোগ করলাম প্রতিটি মুহুর্তে। সবাই সেখানে আত্ববিশ্বাসি। একজনের কথা খুব গেথেই থাকবে আজীবন- আমাদেরকে অন্ধ বলবেন না,এতে আমাদের মানসিক আঘাত লাগে।দৃষ্টি প্রতিবন্ধি বললেই খুব ভাল লাগে আমাদের। অনুরোধ দৃষ্টি প্রতিবন্ধি বলেই আমাদের সবজায়গায় সম্ভোধন করবেন আশা করি।

সবই তো আছে তার সাথে আত্বসন্মানবোধও প্রচন্ড! মনে রাখবো ইনশাল্লাহ!

তাহলে কি আমাদের চেয়েও তারা উৎকৃষ্ট? উত্তর তো জানাই ,আমরা খারাপ দৃশ্যপট দেখে ভাল-খারাপ এর মধ্যেই বিচরন করি। আর উনারা মনের দৃষ্টিতে শুধু ভালটা অনুভব করেন।

এ উৎকৃষ্ট মানুষদের মনের আলো যেন স্ফুলিঙ্গের মতো ছড়িয়ে পড়ুক আমাদের মতো দৃষ্টিসম্পন্নদের চোখের দরজায়। তাহলেই তো হতো পৃথিবীটা আসলেই অসম্ভব এক শান্তির আবাস।

অডিটোরিয়াম থেকে বের হওয়ার সময় শুধু মনের ভেতর তাদের সে অন্তদৃষ্টির যে গুন আর শক্তি ভেতরে নেয়ার অভিপ্রায়ে ছিলাম আর ভাবনায় ছিল- আমাদের মধ্যেও যেন সে বিশুদ্ধ মনের জোড় যেন থাকে সবসময়।

সালাম তোমাদের,“সাদাছড়ি” ধারন করা সে সব অসাধারন মনের দৃষ্টির একেকজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি মানুষদের।

এগিয়ে যাও তোমরা তোমাদের মনের দৃষ্টির জোর দিয়ে সব জায়গায়,সবখানে। শুভ কামনা।



 লেখক- ভালবাসার দেয়াল, ১৭/১০/২০১০
http://www.prothom-aloblog.com/posts/7/111665/

ছোট ভাবনার বড় স্বপ্ন

বৃষ্টির ভাবনা
-------------
জানালার পাশে বসে আকাশ দেখছে বৃষ্টি। তার জন্যে নির্ধারিত হুইলচেয়ারটায় বসে বড় বড় দুচোখ মেলে বিশাল আকাশের বুকে কি যেনো খুঁজে বেড়ায়। এতো দেখে তবু বুঝি সাধ মেটে না তার। দেখে আর শুধু ভাবে কোন এক অলৌকিক উপায়ে যদি হারিয়ে যেতে পারতো ঐ দূর দিগন্তে ! নীলিমার নীলে একাকার হয়ে মিশে যেতো, হারিয়ে যেতো ঐ বিশালতার মাঝে! কোলাহল মুখর ব্যস্ত এই পৃথিবীতে অর্থহীনভাবে বেঁচে থাকার কোন মানে খুঁজে পায় না বৃষ্টি। একঘেয়ে ক্লান্তিকর এই বসে থাকাই যেনো তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। এই অসহনীয় জীবনের যন্ত্রণাময় মূহুর্তগুলো আড়াল করে রাখার জন্যেই সারাদিনমান শুধু বসে আকাশ-কুসুম কল্পনায় নিজেকে মাতিয়ে রাখা। সবাই সবার মতোন ব্যস্ত। বাবা রোজ সকালে রাগারাগি করে অফিস যাচ্ছেন। ভাইবোন গুলো স্কুলে যাচ্ছে। ঘরে ফেরার পরেও তাদের ব্যস্ততার সীমা নেই। কেউ গান শিখতে যাচ্ছে, কেউ কোচিং এ যাচ্ছে। এসে আবার ব্যস্ত হয়ে পড়ছে পড়ালেখায়। তীব্র প্রতিযোগীতার এই যুগে নষ্ট করার মতোন সময় কারুর নেই। আর মা তাদের সামলাতেই হিমশিম খেয়ে যান। একমাত্র বৃষ্টিরই বুঝি অখন্ড অবসর। সময় যেনো বা স্থির হয়ে আছে তার জন্যে।

বৃষ্টির বেড়ে ওঠার পরিবেশটা ছিলো এমন- তার চোখের সামনেই ছোট ভাইবোন গুলো স্কুল কলেজে যাবে। বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যাবে কিংবা পারিবারিক অনুষ্ঠানগুলোতে বাবা-মার সাথে স্বাভাবিকভাবেই উপস্থিত থাকবে আর তাকে থাকতে হবে ঘরবন্দী হয়ে। আচমকা যদিবা কখনো বের হতেও হয় রাস্তার মানুষজন হা করে তাকিয়ে থাকবে। চারপাশ থেকে ছিটকে আসা বিরুপ মন্তব্যে যে বাবা মা বিব্রতবোধ করতেন তা বৃষ্টির নজর এড়াতো না। মানুষের নানা মুখী প্রশ্নের তোড়ে আর বাবা মার বিবর্ণ চেহারার দিকে তাকিয়ে বৃষ্টির ঘর থেকে বাইরে বেরুনোর আনন্দে ভাটা পড়তো। ধীরে ধীরে সে নিজের ভেতর গুটিয়ে গেলো। নিজেকে সবার থেকে আলাদা মনে হতে লাগলো। শুধু তো সে একা নয়, এই দেশে তার মতো প্রতিবন্ধকতার স্বীকার যারা তাদের বেশির ভাগেরই বুঝি একই পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। তারা যেনো সাধারণ মানুষের চেয়ে আলাদা। এবং এটাই যেনো স্বাভাবিক। দিনের পর দিন এভাবেই যেনো চলতে থাকবে। কিছুই কি করার নেই! অসহ্য এই জীবন থেকে মুক্তির কি কোন উপায় নেই! এই যে সারাদিনমান সে বসে থাকে। কোন কাজ নেই, বেঁচে থাকার সুনির্দিষ্ট কোন লক্ষ্য নেই। অথচ তার ভাইবোনগুলো কোন একটা লক্ষ্য ধরে ভবিষ্যতের পথে হাঁটছে। তবে সে কেন এই প্রতিযোগীতা থেকে ছিটকে পড়লো! শুধুমাত্র প্রতিবন্ধকতার স্বীকার হওয়াতে!


হঠাৎ টিভির তীব্র আওয়াজে তার ভাবনায় ছেদ পড়ে। ”বাঁচতে হলে জানতে হবে.....” এইচ আইভি এইডস নিয়ে প্রচারণার এই উদ্যোগ বেশ কাজ দিয়েছে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে। মিডিয়া বেশ ভালো ভাবেই তুলে এনেছে বিষয়টি। তবে হিউম্যান রাইটস নিয়ে যারা কাজ করছেন তারা যদি এই প্রশংশণীয় উদ্যেগ না নিতেন তাহলে নিশ্চয় এককভাবে মিডিয়ার পক্ষে বিষয়টি তুলে আনা সম্ভব হতো না। আচমকা বৃষ্টির মাথায় একটা চিন্তা ঢুকে পড়লো, জনসচেতনতা সৃষ্টিতে মিডিয়া তো যুগোপযুগী একটি মাধ্যম। এই মিডিয়ার মাধ্যমেই প্রতিবন্ধী মানুষের জন্যে কি এমন কিছূ করা যায় না, যাতে করে দেশের মানুষ প্রতিবন্ধিদের বিষয়ে সচেতন হয়ে ওঠবে? এইডস নিয়ে এতো প্রচার! প্রতিবন্ধীদের জন্যেও কী এভাবেই আমাদের শক্তিশালী গণমাধ্যমগুলোতে নাটক-বিজ্ঞাপন এবং লেখালেখির মাধ্যমে এমন কিছু প্রচার করা যায় না? যা দেখেশুনে আমাদের দেশের প্রতিটি মানুষই ভাবতে বাধ্য হতেন, তাদের অপ্রতিবন্ধি শিশুটির সাথে প্রতিবন্ধি শিশুটিরও রয়েছে শিক্ষা এবং বিনোদনের সমান অধিকার। সেই সাথে একজন প্রতিবন্ধি ব্যাক্তির সাথে কেমন আচড়ন হওয়া উচিৎ! কেমন করে কথা বলা উচিৎ! আমাদের দেশের মানুষ তো প্রতিবন্ধি ব্যাক্তিদের অধিকার সম্পর্কে একেবারেই সচেতন নন। আর মিডিয়াতেও ঠিক সেভাবে উঠে আসছে না বিষয়টি যেভাবে উঠে আসা উচিৎ। মাঝে মাঝে কিছু সচিত্র প্রতিবেদন দেখা যায় প্রথম আলো, কালের কণ্ঠ, ইত্তেফাক, যুগান্তর, সমকালসহ বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে। এর মধ্যে প্রথম আলো অবশ্য কিছুটা এগিয়ে আছে। প্রায় একদিন দু’দিন পর পরই প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক প্রতিবেদন থাকে। এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে কদাচিৎ একটা দু’টো টক শো ছাড়া প্রতিবন্ধিদের অধিকার সম্বন্ধে তেমন কোন সচেতনতামূলক কিছু চোখে পড়ে না।

আরো ব্যাপক ভাবে তুলে আনা উচিৎ বিষয়টি। যেমন প্রতিবন্ধি মানুষের মধ্যে মেধাবীদের জীবনাচরণ, ব্যতিক্রমীভাবে সফলদের নিয়ে প্রচারণা অন্যদের উৎসাহিত করতে পারে। বিশেষ করে প্রতিবন্ধি শিশুদের শিক্ষার বিষয়ে পারিবারিক সচেতনতা সৃষ্টিতে জোর দেওয়া উচিৎ। শ্রবণ প্রতিবন্ধিদের জন্যে সবক’টি চ্যানেলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ইশারা ভাষার ব্যবস্থা রাখা উচিৎ। অন্তত নিচে সাবটাইটেল থাকলে তাদের জন্যে বুঝতে সুবিধে হয়। কার্টুন, পাপেট শো ইত্যাদি তৈরির মাধ্যমে শিশুদের সচেতন করা যায়। প্রতিবন্ধি মানুষের আবাসন তাদের জীবনধারার ক্ষেত্রে সহায়ক নানা উপকরণ বা ব্যবহার্য জিনিষপত্র প্রাপ্তির স্থান ও যাতায়াত ব্যবস্থা সুবিধে অসুবিধে নিয়ে প্রচারণা রাখা যায়। যেমন- শারীরিক প্রতিবন্ধিদের জন্যে সহায়ক যাতায়াত উপযোগী মুক্ত চলাচল ব্যবস্থা র‌্যাম্প বা ঢালু পথ সম্পর্কে আমাদের দেশের অসচেতন মানুষকে সচেতন করে তোলা যায়। আমাদের দেশে স্থাপত্য, স্থাপনা ও ইমারত নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রকৌশলীরা যাতে প্রতিবন্ধি মানুষের বিষয়টি মাথায় রাখেন সে ব্যাপারেও ব্যাপক প্রচারণা প্রয়োজন।

জনসচেতনতা সৃষ্টিতে মিডিয়ার ভূমিকা
---------------------------------------

বৃষ্টির ভাবনায় উঠে এলো প্রতিবন্ধি মানুষের ভবিষ্যৎ মজবুত করার জন্য যা কিছুই প্রয়োজনীয় তা যে তাদের মানবিক অধিকার এই ভাবনাটি বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে পৌছুতে হলে আমাদের শক্তিশালী গণমাধ্যমের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এ দেশের একজন সাধারণের যা নাগরিক অধিকার - শিক্ষা, কর্মসংস্থানের সুযোগ, সবত্র প্রবেশের সুবিধে এবং সামাজিক মর্যাদা সেই সুযোগ কি একজন প্রতিবন্ধি ব্যক্তি ঠিকমতো পাচ্ছে আমাদের দেশে? ২০১৫ সালে মধ্যে প্রতিবন্ধি অপ্রতিবন্ধি নির্বিশেষে ”সবার জন্যে শিক্ষা” এমন একটি শ্লোগান শোনা যায়। অথচ এখনো এ দেশে শতকরা মাত্র চার জন প্রতিবন্ধি শিশু স্কুলে যাবার সুযোগ পায়। আমাদের দেশের মানুষের মাঝে একটি ধারনা বদ্ধমূল প্রতিবন্ধি শিশুরা বিশেষ স্কুল ছাড়া স্বাভাভিক স্কুলে অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে পড়তে পারবে না। এটি একেবারেই ভুল ধারণা। প্রতিবন্ধিরাও যে শিক্ষা অর্জন করে নিজেকে প্রমান করতে কিম্বা আমাদের সমাজকে কিছু দিতে পারে এ কথা অধিকাংশ পরিবারই ও শিক্ষকগণ বিশ্বাস করতে চান না। এমনতরো বিভিন্ন দিক থেকে বাধাগ্রস্থ হয়ে অভিভাবকগণ ভাবতে শুরু করেন প্রতিবন্ধি শিশুটিকে ঘরেই শিক্ষা দেই কিম্বা শিক্ষিত হয়ে সে করবেটাই বা কি! প্রতিবন্ধিতার স্বীকার হলেই তার প্রতি অনেক বিধি নিষেধ আরোপ করে দেওয়া হয়। করূণা নয় একটু সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিলেই প্রতিবন্ধি ব্যাক্তিরাও পারে রাষ্ট্রের দক্ষ জনশক্তিতে পরিনত হতে। নিজেদের সক্ষমতা প্রমান করতে। আর এরজন্যে প্রয়োজন ব্যাপক জনসচেতনতা। যা একমাত্র ইলেকট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমেই সম্ভব।

উন্নয়ন কর্মী এবং সাংবাদিক আজমল হোসেনের মতে, প্রতিবন্ধিদের কথা প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ইদানিং প্রকাশিত এবং প্রচারিত হলেও তা আশানুরূপ নয়। প্রতিবন্ধি ব্যাক্তিদের সফলতার কাহিনীর পাশাপাশি তৃণমূল পর্যায়ে নিপিড়িত অবহেলিতদের বঞ্চনার কথাও তুলে আনা প্রয়োজন। তাছাড়াও প্রতিবন্ধিদের অধিকার রক্ষায় যারা কাজ করছেন মিডিয়াতে ব্যাপকভাবে প্রচারণার বিষয়টিতে তারা দায়িত্বশীল ভুমিকা রাখতে পারেন বলে অভিমত প্রকাশ করেন তিনি।

দুর্ঘটনা জনিত কারণে প্রতিবন্ধকতার স্বীকার দিগন্ত টিভিতে কর্মরত মামুন মাহফুজ জানান, আমরা যতটা না শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধকতার স্বীকার তার চেয়ে বেশি মানুষের মানসিক প্রতিবন্ধকতার স্বীকার। অনেকের মধ্যেই এমন একটা ধারণা কাজ করে ”তুমি হয়তো এই কাজটা পারবা না।” প্রতিবন্ধিতার বিষয়গুলো মিডিয়াতে প্রচারণা যা হচ্ছে তা এককথায় খুবই সামান্য। আর তাছাড়া প্রতিবন্ধি ব্যাক্তিরা নিজেদের সমস্যার কথা বলবে এমন কোন জায়গা নেই। সরকার সংলিষ্ট একটি তথ্য কেন্দ্র যদি থাকতো যেখানে তারা নিজেদের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরতো। কিম্বা পত্রপত্রিকা গুলোতে বিশেষ কিছু পাতা থাকে। যেমন নারী পাতা, স্বাস্থ্য পাতা তেমনি প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক তথ্যভিত্তিক একটি বিশেষ পাতা যদি রাখা যায় যেখানে তারা নিজেদের সমস্যা সম্ভাবনার কথা বলার একটি মাধ্যম পাবে তাহলে খুব ভালো হতো।

মিডিয়া ব্যাক্তিত্বদের ভাবনা
----------------------------

প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে বাংলাদেশের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া কিভাবে ভূমিকা রাখতে পারে এবং বর্তমান পর্যায়ে মিডিয়ার ভূমিকা যথেষ্ট কিনা এ বিষয়ে আমাদের দেশের ক’জন মিডিয়া ব্যাক্তিত্বের মতামত চাওয়া হয়। তাদের ভাষাতেই নিচে তুলে ধরা হলো তা।

মুহম্মদ জাফর ইকবাল
শিক্ষাবিদ, লেখক
--------------------

আমাদের দেশে যে কোন জায়গাতে যে কোন বিষয়ে জনসচেনতা সৃষ্টিতে একমাত্র প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াই স্বচ্ছ ভূমিকা রাখতে পারে। আমাদের দেশের মানুষের মন মানসিকতা এখনো অনেক পুরনো ধাচের। প্রতিবন্ধি ব্যাক্তিরাও যে সামাজিক উন্নয়নে কার্যকরি ভূমিকা রাখতে পারে সমাজ সেটা জানে না। কাজেই বিষয়টা সমাজকে জানাতে সবচে’ বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাটা এদেরকেই নিতে হবে। সেটা হতে পারে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করে যেমন ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ ইত্যাদি লিখে মানুষকে সচেতন করা যায়। টিভিতে টক শো, নাটক কিম্বা নিউজে ফিচার প্রতিবেদনের মাধ্যমে যে সমস্ত জায়গায় প্রতিবন্ধি মানুষেরা যে কার্যকরি অবদান রাখছে তা তুলে ধরতে পারে।

লুতফুর রাহমান রিটন
ছড়াকার
-----------------------

প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ভূমিকা এক্ষেত্রে খুবই বিশাল এবং গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে চারটি মাধ্যম খুব ভালো কাজ করতে পারে। রেডিও, টেলিভিশন, পত্রিকা ও চলচিত্র। এই চারটা মাধ্যমেই যদি এ বিষয়টার ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করার দায়িত্ব নেওয়া হয়। প্রচারণা চালানো হয় অবিরাম। প্রচারণাটা শুধু একটা বিশেষ দিবস উপলক্ষ্যে করলে হবে না। কারণ বাঙালী হচ্ছে বিস্মরণপ্রিয় জাতি। আমরা খুব দ্রুত ভুলে যাই। যে কারণে নিয়মিতভাবে পত্রিকায় লেখালেখি এবং টেলিভিশনের কোন না কোন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মানুষের সামনে নিয়মিতভাবেই তুলে আনতে হবে। তাদের মস্তিষ্কে বিষয়টি ঢুকিয়ে দিতে হবে। কারণ মানুষ একে প্রথমে নেবে তার দৃষ্টিতে। তারপর মস্তিষ্কে। তারপর সে যদি তার হৃদয়ে এটি ধারণ করে। যেমন বছরজুরে আমাদের যত উৎসব আছে এতে পত্রিকাগুলো বিশেষ সংখ্যা বের করে। চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করে কিন্তু সেসবে প্রতিবন্ধি মানুষের অংশগ্রহণ থাকেই না। অথচ থাকা উচিৎ। আমি মনে করি প্রতিবন্ধি মানুষের প্রতি করুণা নয় সহানুভূতিশীল হওয়া তাদের প্রতি একটা আলাদা যত্নশীল হওয়া, একটু অতিরিক্ত মমতা এটা ওদের প্রাপ্য। যা কিনা সারা পৃথিবীতে এরা এটা পায়। বিভিন্ন শপিং মলে পায়। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পায়। যাতায়াত মাধ্যমগুলোতে পায়। উন্নত দেশগুলো তাদের একজন সাধারণ নাগরিকের মতোই দেখে। এবং এটা তার নাগরিক অধিকার। এই অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করা চলবে না।

আহমেদ মাযহার
শিশু সাহিত্যিক
-----------------

প্রতিবন্ধি মানুষের প্রতি একটু আলাদা যত্নশীলতা প্রয়োজন সাধারণ মানুষের মধ্যে এই সচেতনতাটা অতটা নেই। আসলে আমরা নিজেরা না দেখলে বা ভুক্তভূগি না হলে ঠিক ওভাবে অনুভব করতে পারি না বিষয়টি। আমি অনেক জায়গাতেই দেখেছি লজ্জায় কিম্বা সংকোচে পরিবারের প্রতিবন্ধি সদস্যটিকে ঘরের বাইরে আনেন না। তাকে সমাজের চোখ থেকে আড়াল করে রাখার একটা প্রবণতা কাজ করে। এ বিষয়ে রেডিও টিভিতে সচেতনতামূলক নাটিকা, বিজ্ঞাপন প্রচার করা জরুরী। যারা এসব ব্যাপারে সচেতন আছেন তাদের ভাবনাগুলো আলোচনা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তুলে আনা যায়। এ বিষয়ে যেসব গোল টেবিল বৈঠক বা সেমিনার হয় সেগুলো গুরুত্ব সহকারে নিউজের মাধ্যমে হাইলাইট করা যায়। তবে মিডিয়াই একমাত্র মাধ্যম বলে আমি মনে করি না। বিজ্ঞাপন, নাটক বা নিউজের ম্যাটারগুলো অন্যদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে মিডিয়া শুধু প্রচার করে। প্রতিবন্ধিদের অধিকার রক্ষায় যারা কাজ করছেন তাদের নানা ধরনের সাংগঠনিক কর্মকান্ডে মিডিয়াকে সঙ্গে রাখতে পারেন যাতে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে পারে মিডিয়া।

জিল্লুর রাহমান
টিভি ব্যক্তিত্ব
--------------------

এক কথায় বলা যায় মিডিয়ার ভূমিকা মোটেই যথেষ্ট নয়। আমি মনে করি জনসচেতনতা সৃষ্টিতে প্রথমেই প্রয়োজন প্রতিবন্ধি মানুষের সমস্যাগুলো তুলে ধরা। তারা যে অন্যরকম ভাবে সক্ষম এবং তাদেরও যে একটা সম্ভাবনা আছে সেটিকে বিভিন্ন আলোচনা অনুষ্ঠান এবং নাটক, চলচিত্র নির্মানের মাধ্যমে তুলে আনা অত্যান্ত প্রয়োজনীয়। প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক তথ্য সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া গেলে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিবার ও সমাজ প্রতিবন্ধি ব্যক্তিদের যথাযথ মূল্যায়ন করবে। সমাজ তাদেরকে বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের সুযোগ দেবে। তাদের শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে হবে না। এবং তারা নিজেদের সমাজের বোঝা ভাববে না। এক্ষেত্রে অবশ্যই প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে আরো বেশি সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

আব্দুন নুর তুষার
টিভি ব্যক্তিত্ব
--------------------

দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে এ পর্যন্ত যতটুকু ভূমিকা রেখেছে একমাত্র প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াই রেখেছে। সরকারের তরফ থেকে দৃশ্যমান কোন উদ্যেগই নেওয়া হয়নি।
মানুষের কাছে এই মেসেজটা পৌছে দিতে হবে যে তারা তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী কাজের সুযোগ চায়। এটা তাদের প্রাপ্য নাগরিক অধিকার। রেডিও, টেলিভিশন বা প্রিন্ট মিডিয়াতে বিভিন্নভাবে প্রতিবন্ধিতার স্বীকার এমন মানুষদের অংশগ্রহণ খুব কম। মিডিয়াতে প্রতিবন্ধি ব্যাক্তিদের অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া উচিৎ। যারা লেখালেখি করে, গান গাইতে পারে, বা যে যেমন কাজে সক্ষম তাকে সমাজের চোখের সামনে তুলে আনতে হবে। যেমন ধরা যায় একজন হুইলচেয়ার ব্যবহারকারি খুব সহজেই উপস্থাপনা কিম্বা সংবাদ পাঠ করতে পারেন। তাকে তার যোগ্যতা অনুযায়ী কাজের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। আমাদের দেশে তাদের তেমন সুযোগই দেওয়া হয় না। তাকে যদি চাকুরী দেওয়া না হয় সে তার যোগ্যতাটা প্রমান করবে কিভাবে!
আমাদের দেশে স্কুলগুলোতে এবং সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা, মার্কেট কোথাও র‌্যাম্প নেই। উচুঁ ইমারতগুলোতে যদিবা লিফট থাকে অনেক সময় দেখা যায় সেটি এত ছোট তাতে হুইলচেয়ার প্রবেশ করছে না। তাদের জন্যে সহায়ক ব্যবস্থা সম্পন্ন একটা আলাদা টয়লেট পর্যন্ত নেই। আমাদের দেশে এমন কোন জায়গা নেই যেখানে ব্রেইল পদ্ধতিতে যাকে বলা হয় ”ব্রেইল ব্লক” যার সাহায্যে দৃষ্টি প্রতিবন্ধিরা অন্যের সাহায্য ছাড়া একাকি চলাচল করতে পারে তা আছে। এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে একজন শিক্ষিত প্রকৌশলীকে প্রচারণা করে কিভাবে শেখানো যায় যে তার প্ল্যানের মধ্যে প্রতিবন্ধি মানুষের মুক্ত চলাচলের সুবিধার্তে কিছু সহায়ক ব্যবস্থা নেওয়া অত্যান্ত প্রয়োজনীয়? মিডিয়া সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারে এমন একটা বিষয়ে যেটা সাধারণ মানুষ জানে না। কিন্তু একজন শিক্ষিত ব্যাক্তিকে যদি সচেতন করে তুলতে হয় তাহলে তো সে জাতির অবস্থা খুব খারাপ। বুঝতে হবে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাতেই ত্রুটি আছে। এতে মানুষের প্রতি জনবান্ধব হওয়া বা প্রতিবন্ধিবান্ধব হওয়া শেখায় না।



সাবরিনা সুলতানা,চট্টগ্রাম, ১৩ অক্টোবর, ২০১০।
sabrina@b-scan.org

কোহিনুরের কাংখিত সেই দোকান

রাস্তার পাড়ে কোহিনুরের দোকানটি দেখা যাচ্ছে

গত বছর সেপ্টেম্বরে কোহিনুর বেগমকে নিয়ে প্রথম আলোর ছুটির দিনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, টাইফয়েডে পঙ্গু হয়ে যাওয়া এক অসহায় মা তাঁর দুটি সন্তানকে নিয়ে ভালভাবে বেঁচে থাকার জন্য ভিক্ষা নয়, কাজ চাইছেন। প্রতিবেদনটি আমাদের নজর কাড়লেও আমরা ফান্ডের অভাবে সময়মত তাঁর জন্য কিছু করতে পারি নি। আবার যখন ফান্ড হাতে পেয়েছি তখন তাঁর সন্ধান পাই নি। এভাবে বেশ কিছুদিন চলে যাবার পর ২২ জুলাই, ২০১০ আমরা তাঁর হাতে দশ হাজার টাকা তুলে দিতে সক্ষম হই, গত মাসে সেটি নিয়ে প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে ।কেমন আছেন এখন কোহিনুর? তাঁর সাথে বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে আমাদের। তিনি বারবার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তাঁর দোকানটি দেখতে যেতে, আমাদের বি-স্ক্যান এর পক্ষ থেকে নতুন সদস্য ব্লগার ভালবাসার দেয়াল গিয়েছিলেন দেখতে, ফিরে এসে তিনি জানালেন বেশ ভাল আছেন কোহিনুর, সেই সাথে ছবিও তুলে এনেছেন। অনেক ধন্যবাদ প্রথম আলো ব্লগার ভালবাসার দেয়াল ভাইকে। আপনারাও দেখুন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে সাজানো তাঁর দোকানটি……………………….      


  
নিজের দোকানে বসে আছেন কোহিনুর বেগম।



 
কোহিনুরের বোন যিনি দোকান চালোনায় তাকে সহায়তা করে থাকেন।


 
মিষ্টি মেয়েটি কোহিনুরের ভাতিজি,সেও তার চাচীকে সাহায্য করে।

 
Design by Oronno Anam | Bloggerized by Salma Mahbub