অভিনন্দন ডঃ মুহাম্মদ ইউনুসকে আর সেই সাথে একজন প্রতিবন্ধীকে যিনি বাংলাদেশের ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস মতো ভিনদেশি হিসাবে মেডেল অব ফ্রীডম পেলেন তাঁর কাজের জন্য। হাঁ আমি ব্রিটিশ বংশদ্ভুতো স্টীফেন হকিং এর কথাই বলছি। যিনি কেমব্রিজ বিশবিদ্যালয়ে লুকাসিয়ানা বিভাগে গনিত ও পদার্থবিদ্যার মতো কঠিন বিষয়ে অধ্যাপনা করছেন, যেখানে একসময় কাজ করেছেন স্যার আইজ্যাক নিউটন।
স্টিফেন হকিং যে রোগটিতে ভুগছেন তার নাম নিওরো মাসকুলার ডিসট্রফি(Neuro Muscular Distrophy) যা এমিওট্রফিক লেটারেল স্ক্লেরোসিস (Amyotrophic lateral sclerosis)ALS নামে পরিচিত। এইটি একটি দুরারোগ্য ব্যধি এই রোগে আস্তে আস্তে পেশিগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। হাত পা নাড়ানো অসাধ্য হয়ে যায়। উনি একজন শারিরীক প্রতিবন্ধী মানুষ। কিন্তু উনার মস্তিস্ক সম্পুর্ন সচল। এই রোগে সাধারনত মানুষ বেশিদিন বাঁচেনা। উনি এই ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। ৬৭ বছর বয়সেও উনি অধ্যাপনা এবং গবেষণা করে যাচ্ছেন,সম্প্রতি অবশ্য উনি অবসরের ঘোষনা দিয়েছেন। কসমোলজি (Cosmology) এবং কোয়ান্টাম গ্রেভিটি(Quantam Gravity) উনার গবেষণার বিষয়বস্তু। উনার সবচেয়ে আলোচিত কাজটি হল ব্ল্যাক হোল থিওরি (Blackhole Theory)।
ভাবছিলাম বাংলাদেশে জন্মালে কি করুণ পরিনতি হতো এই মানুষটির। সবাই শুধু দেখতো উনি কিছুই করতে পারেন না, কে ভাবতো ঐ অসামান্য ব্রেইনটি সদ্বব্যবহারের কথা, যা দিয়ে উনি আজ বিশ্ব দরবারে সুপরিচিত। কে চিন্তা করতো উনাকে স্কুলে পড়ানোর কথা ? তাঁর বাবা মা কে না জানি কত জায়গায় সামাজিকভাবে অপদস্থ করা হত এমন একটি সন্তানের জন্য। সেই লজ্জায় হয়তো তাকে ঘরের বাইরেই বের করা হতো না কে জানে? বাংলাদেশের প্রতিবন্ধীদের জীবন বেশীর ভাগেরই এমন।
হকিং সাহেব ভাগ্যবান তাই উনার বাংলাদেশে জন্ম হয়নি, হলে এই দেশে উনি কি পারেন তার চাইতে বড় করে দেখা হত উনি কিছুই পারেন না। কোন এক গৃহকোনে হয়তো জড় পদার্থের মত পড়ে থাকতেন, কেউ ভাবতোই না উনিও একজন মানুষ, উনারও অধিকার আছে শিক্ষা,বিনোদন বা কারও ভালবাসা পাবার। উনিও কিছু দিতে পারেন এই সমাজ, এই দেশ, এই পৃথিবীকে। শুধু তাঁর কিছু বিশেষ ব্যবস্থার প্রয়োজন যেটি তাঁর সরকার বা সমাজ তাঁর জন্য করে দিয়েছেন। যেমন চলাফেরার জন্য একটি ইলেক্ট্রিক হুইলচেয়ার, কথা বলার জন্য ভয়েস সিন্থেসাইজার ইত্যাদি।
স্টিফেন হকিং যা দিয়েছেন এই বিশ্বকে তাঁর জ্ঞানের মাধ্যমে তা কি একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ হলেই কি দেয়া সম্ভব ছিল? মোটেই না। তেমনি একজন প্রতিবন্ধী মানুষ হলেই তার কিছু করার নেই বা দেবার নেই এই সমাজ বা দেশকে এটা ভাবা মোটেই ঠিক নয়। আমরা তো জানি না কার মাঝে কি ক্ষমতা লুকিয়ে আছে? আর তা ছাড়াও একজন প্রতিবন্ধীরও আছে সকল মৌ্লিক মানবিক অধিকার। সেও চায় না অন্যের উপর নির্ভর করে বাচঁতে তাই সবার মত তাদের প্রতিও সরকারের মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত করা এবং সকল নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করাই সরকারের কাজ। সেই লক্ষ্যে প্রতিবন্ধীদের জন্য চাই একটি সঠিক অবকাঠামো।
- সালমা মাহবুব
৪ সেপ্টেম্বর, ২০০৯, জনকন্ঠ।
0 মন্তব্য(সমূহ):
Post a Comment