আমাদের সাবরিনা, এক অপরাজিতা ফুল

হুইলচেয়ারে বসে ল্যাপটপ কম্পিউটারে খুটখাট করতে করতে জানালার পর্দার ফাঁক দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে একটি মেয়ে। উন্মুক্ত আকাশ দেখার বাসনায় দিনমান জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকে মেয়েটি। কিন্তু মেয়েটির সেই উন্মুক্ত আকাশ দেখার ক্ষণটি আর আসে না কিছুতেই। এভাবেই তার দিন কাটে, রাত যায়। মাস আসে, বছর ঘুরে ঘুরে যুগও পেরিয়ে যায়। কিন্তু মেয়েটির আকাশ দেখার অপেক্ষার প্রহর আর ফুরোয় না। ফুরাবে কী করে! মাসকুলার ডিসট্রোফি নামক ভয়ানক এক রোগ যে বাসা বেঁধেছে মেয়েটির শরীরে। ফলে ধীরে ধীরে শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গই ক্ষয়ে যাচ্ছে। এভাবেই দিন কাটছে চট্টগ্রামের মেয়ে সাবরিনা সুলতানার।

শরীরে ভয়ানক রোগ নিয়েও থেমে নেই সাবরিনা সুলতানা। নিজের দিকে তাকিয়ে অপরের কষ্ট অনুভব করার চেষ্টা করেন তিনি। আর তাই তো নিরলসভাবে প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।


একসময় অন্য সবার মতোই সুস্থ-স্বাভাবিক ছিলেন তিনি। স্কুল থেকে এসেই পাড়াময় দস্যিপনা করে বেড়াতেন। পাতাকুড়ানি খেলার সঙ্গীদের সঙ্গে দুষ্টু প্রজাপতির পেছনে ঘুরে ঘুরে সময় কাটত তাঁর। তারপর বাসায় ফিরে মা আর যমজ ভাইদের সঙ্গে রাজ্যির কথার খই ফুটত তাঁর মুখে। মাঝে মাঝে ভাইদের সঙ্গে এটা-ওটা নিয়ে একটা হল্লাও বাধিয়ে ফেলতেন বাসায়। ছেলেবেলায় এমনই ছিলেন সাবরিনা। কিন্তু সেই সোনারঙা দিনগুলো খুব বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। কারণ, সেই ছেলেবেলায় সাবরিনার জীবনাকাশ ছেয়ে যায় মাসকুলার ডিসট্রোফি নামক ঘন কালো মেঘে। সেই মেঘ সরানোর পথ জানা নেই কারও।
১৯৮৯ সাল। বয়স কেবল সাত। মা আফরোজা আকতার সাবরিনাকে নিয়ে গোসল করাতে ঢুকেছেন গোসলখানায়। গোসল শেষে উঠে দাঁড়াতে গিয়ে সাবরিনা হঠাৎ বুঝতে পারলেন নিজে থেকে আর দাঁড়াতে পারছেন না তিনি। প্রথমে দুষ্টুমি ভাবলেও মেয়ের মুখের ভাব দেখে মা-ও বুঝতে পারলেন, কিছু একটা হয়েছে। এরপর শুরু হলো চিকিৎসার পালা। না, কিছুতেই কিছু হয় না। মেয়েকে সুস্থ করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন বাবা আবদুস সবুর ও মা আফরোজা। অ্যালোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি থেকে শুরু করে তাবিজ-কবজ-ঝাড়ফুঁক কোনো কিছুই বাদ দিলেন না। অতঃপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ শাহাদাৎ হোসেন প্রথম রোগটির নাম আবিষ্কার করলেন—মাসকুলার ডিসট্রোফি। এ রোগে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধীরে ধীরে বিকল হয়ে যায়। সাবরিনার রক্তের সিপিকে (ক্রিয়েটিন ফসফোকাইনেজ) পরীক্ষা করা হলো। সাধারণত একজন সুস্থ মানুষের রক্তে সিপিকের মাত্রা থাকে ১৬৭। কিন্তু সাবরিনার শরীরে তত দিনে তা দাঁড়িয়ে গেছে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি। গোটা বিশ্বে এ রোগের কোনো ওষুধ আজ অবধি আবিষ্কৃত হয়নি।


এরপর সাবরিনার রক্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠানো হলো। কিন্তু কোথাও কোনো সমাধান পাওয়া গেল না। সবচেয়ে মর্মান্তিক ব্যাপার হলো, সে সময় চিকিৎসকেরা সাবরিনার আয়ুষ্কাল বেঁধে দিয়েছিলেন ১৩-১৪ বছর।


১৯৯৭ সালে সাবরিনা এক বছরের জন্য বাবার সঙ্গে পাড়ি জমালেন মালয়েশিয়ায়। কিন্তু সেখানেও হতাশ হতে হলো!
একসময় সাবরিনাও জানতে পারলেন, তিনি আর কোনোদিন অন্যদের মতো স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারবেন না।


সেই ঘাতক ব্যাধির কারণেই একসময় স্কুলে যাওয়াও বন্ধ হয়ে যায় সাবরিনার। ধনুকের মতো শরীর বাঁকা হয়ে যায়। চলল বাসায় বসে পরীক্ষা দেওয়া। কিন্তু সেটাও আর বেশি দিন স্থায়ী হলো না। পঞ্চম শ্রেণীতেই তাঁকে ইস্তফা দিতে হলো পড়ালেখায়। আর কোনোদিন পড়ালেখা করতে পারবেন না ভেবে বুকের ভেতর গুমরে উঠত কান্না। তাই বলে নিজের ইচ্ছাশক্তির কাছে হার মানতে নারাজ সাবরিনা। বাসায় বসে একা একাই শুরু করলেন বিভিন্ন ধরনের বই আর পত্রপত্রিকা পড়া। এভাবেই চার দেয়ালের মধ্যে বসে কেটে গেল কয়েক বছর।


সাবরিনা বললেন, ‘শুনেছি, যেদিন দুই চোখ মেলে প্রথম পৃথিবীর আলো দেখেছিলাম, সেদিনই বাবা আমায় কোলে নিয়ে নাম রেখেছিলেন ‘সাবরিনা’। তবে সাত বছর বাদে সমাজ আমার নতুন নামকরণ করল, ‘প্রতিবন্ধী’। তাই আমার প্রাণবন্ত উচ্ছলতা কোথায় যেন হারিয়ে গেল! বন্দী হয়ে পড়লাম চার দেয়ালের মাঝে।’


এবার আর বসে থাকা নয়। বাঁচার জন্য লড়তে হবে। তাই শুরু করলেন সমাজের প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার নিয়ে স্থানীয় পত্রিকায় লেখালেখি। লেখালেখির মাধ্যমেই পরিচয় চট্টগ্রামের সাংবাদিক রিয়াজ হায়দারের সঙ্গে। পরিচয়ের সূত্র ধরেই প্রণয়, প্রণয় থেকে ঘর বাঁধা। নতুন ঘরে এসে সাবরিনা আরও বেশি স্বাধীনতা পেলেন। ঠিক যেমনটা চেয়েছিলেন তিনি।


তবে হঠাৎ করে আবারও একটি সংবাদ সাবরিনার মনটাকে ভারী করে তোলে। জানতে পারলেন একমাত্র ছোট বোন তাসনীন সুলতানা নীলার শরীরেও বাসা বাঁধছে ওই ভয়ংকর রোগ এবং তাঁর মতোই সমাজের উপেক্ষার শিকার হতে হলো তাঁকে। এ সবকিছু দেখে সাবরিনা আর বসে থাকলেন না। নিজেকে প্রশ্ন করলেন, আর কত পিছিয়ে থাকবে প্রতিবন্ধীরা? তাঁদেরও অধিকার আছে মানুষের মতো বেঁচে থাকার। আর এ জন্য প্রয়োজন মানুষকে সচেতন করে তোলা।
ঠিক এমনি সময় বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে খুঁজে পেলেন ইন্টারনেট। শুরু করলেন বাংলা ব্লগগুলোতে প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার নিয়ে লেখালেখি। এরপর যোগ দিলেন সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুকে। ফেসবুকে প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে উঠেপড়ে লেগে গেলেন তিনি।


২০০৯ সালের ১৭ জুলাই, ফেসবুকে নানা পেশার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করে একটি গ্রুপ খুললেন সাবরিনা। নাম—‘বাংলাদেশ সিস্টেমস চেঞ্জ অ্যাডভোকেসি নেটওয়ার্ক’ (বি-স্ক্যান)। সব ধরনের প্রতিবন্ধীকে নিজস্ব কথা বা তাঁদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরাই এর কাজ। আর সেই গ্রুপে যোগ দিল দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অনেক মানুষ।


এই গ্রুপ চায়, নিজেদের অবস্থান থেকে প্রত্যেকে যেন নিজে সচেতন হয়ে অন্যদের সচেতন করে তোলার কাজটি করে। বহু বছর পর গত ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি ঢাকায় এসেছিলেন বি-স্ক্যানকে আরেকটু এগিয়ে নিয়ে যেতে। প্রতিবন্ধীদের পক্ষে কথা বলতে যোগ দিয়েছিলেন চ্যানেল আইয়ের গ্রামীণফোন তৃতীয়মাত্রার অনুষ্ঠানেও।
এখন আর শুধু মানুষকে সচেতন করে তোলাতেই সীমাবদ্ধ নয় সাবরিনাদের বি-স্ক্যান। যেখানেই কোনো প্রতিবন্ধীর দুঃখের কথা শুনেছেন, সেখানেই ছুটে গেছেন বি-স্ক্যানের প্রতিনিধি। এই সাহসী মানুষটি আমাদের সবার কাছেই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সাবরিনা নিশ্চয়ই থেমে থাকবেন না। তিনি তো অপরাজিতা!


সুত্রঃ আবু হেনা, ২০ ডিসেম্বর, প্রথম আলো
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-12-15/news/115871

আমরা আছি তোমাদের পাশে

আমরা অত্যন্ত আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে বি-স্ক্যান এর পক্ষ থেকে প্রথমবারের মত তিনজন মেধাবী প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। সাংবাদিক হানজালা শিহাবের ২৫ জুলাই ২০১০ এর একটি প্রতিবেদন থেকে আমরা ওদের কথা জানতে পারি।

আপনাদের অনেকেরই হয়তো মনে আছে গলাচিপা শহরের এই তিনজন শিক্ষার্থীর জন্য সাবরিনা সুলতানা সহযোগীতা চেয়ে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন, দেরীতে হলেও সেই আহ্ববানে সাড়া দিয়ে এগিয়ে এসেছেন কানাডার টরোন্টোর বাংলাদেশী এসোসিয়েশেন ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বি-স্ক্যান সদস্য।





মা বাবার সাথে শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী শাহিন (বামে) ও বাপ্পি (ডানে)
টরেন্টোর বাংলাদেশী এসোসিয়েশেনএর সদ্য প্রয়াত সভাপতি রীনা হক এর নামে তাঁর বন্ধু ও সহকর্মীরা মিলে একটি স্কলারশিপ চালু করেছেন। সেই স্কলারশিপ হিসেবেই শাহিন ও বাপ্পি তাদের লেখাপড়ার খরচটি পাবেন। ফাল্গুনী সাহার ব্যয়ভার নিচ্ছেন একজন বি-স্ক্যান সদস্য । আগামী জানুয়ারী, ২০১১ থেকে এই তিনজন শিক্ষার্থীরখরচ দেয়া হবে বি-স্ক্যান এর মাধ্যমে। শাহিন,বাপ্পি ও ফাল্গুনীদের পাশে দাঁড়াতে পেরে আমরা আনন্দিত। বি-স্ক্যান পক্ষ থেকেনির্বাহী সদস্য মোঃ হাসান মিলন ও বি-স্ক্যান সদস্য নাজিরুল ইসলাম গত বৃহস্পতিবার, ৯ ডিসেম্বর , ২০১০ গলাচিপা গিয়ে চেক হস্তান্তর করেন।


ফাল্গুনী সাহা তার বাবা মা এর সাথে
উক্ত অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গলাচিপা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহ আলম, গলাচিপা ডিগ্রী কলেজের সহযোগী অধ্যাপক জনাবআব্দুর, রশিদ জনাব, গলাচিপা মডেল গভঃ প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমসহ এই তিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু শিক্ষকবৃন্দ, সমাজের গন্যমান্য ব্যক্তি ও স্থানীয় সাংবাদিকগণ।

দুই পরিবারের সাথে বি-স্ক্যান নির্বাহী সদস্য (মাঝখানে) ও স্বেচ্ছাসেবী সদস্য নাজিরুল ইসলাম (বামে)

ওদের শিক্ষাখাতের খরচটি আমাদের যেভাবে জানানো হয়েছে আমরা সেভাবেই ব্যবস্থা করেছিঃ

শামীমুর রহমান শাহিনঃ গলাচিপাডিগ্রী কলেজ- বেতন, প্রাইভেট টিউশান ফি, বই-খাতার খরচ সব মিলিয়ে মোট ২৩০০ টাকা।

নিয়াজ উদ্দীন বাপ্পিঃ গলাচিপা আইডিয়াল স্কুলের ২য় শ্রেনীর ছাত্র। স্কুলের বেতন, প্রাইভেট টিউশান ফি, বই-খাতার খরচ সব মিলিয়ে মাসে মোট ৯০০ টাকা।

ফাল্গুনী সাহাঃ প্রাইভেট টিউশান ফি, বই-খাতার খরচ সব মিলিয়ে মাসে মোট ২০০০ টাকা (স্কুলের বেতনফ্রী)।

বি-স্ক্যান এর পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি যারা সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাঁদের প্রতি-

বাংলাদেশী এসোসিয়েশেনের জনাব,হাসান মাহমুদ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বি-স্ক্যান সদ্স্য।

Financial Support for Studies of Three Children with Disability

“Every child with disability has the right to be educated sitting just next to a normal child in a regular school, not in a special one and after finishing education he/she should be considered as a candidate for an appropriate job for him/her”, said Md. Shah Alam, the headmaster of Golachipa Secondary school in a scholarship giving program arranged by the Bangladeshi Systems Change Advocacy Network (B-SCAN) in the Golachipa Secondary school premises on Thursday morning, 9 December, 2010. He also mentioned that, “ People with disabilities are capable enough to do well with success not only in education but also in every sector of life and they are not a burden to the society.” He mentioned about a student named Falguni Saha, a SSC candidatefor 2011 from his school, who lost her both wrist in a tragic accident when she was a student of class three. But, being motivated she didn’t give up her education but continued it and now going to sit for the SSC exam from Humanities group.



Among other invited guests, Abdur Rashid, Asst. Professor of Golachipa Degree College, Abul Kashem, Headmaster of Golachipa Model Govt. Primary School, several teachers from both schools and college, few honorable persons of the society and a few correspondents from different newspaper were present in the program. There was also a scholarship given to two brothers who has hearing impairment by birth. Shamimur Rahman (Shahin) is the elder among them who is a student of 1st year studying in Golachipa Degree College. He paseed SSC lastyear from Technical board with GPA 4.14. The younger one is Niaz Uddin (Bappi)who is a student of class 2 from Golachipa Model Govt. Primary School. Milon Hasan, executive member of B-SCAN and Nazirul Islam (Zico), volunteer member of B-SCAN went to Golachipa, Potuakhali to handover the check of scholarship.




Falguni is going to get 2000/- (Taka Two Thousand)per month from a B-SCAN member (who doesn’t want to disclose his/her name) where an organization named ‘’Bangladeshi Association’’ Toronto, Canada is giving Reena Haq Scholarship to the brothers where Shahin will get 2300/- (Taka TwoThousand Three Hundred) per month and Bappi will get 900/- (Taka Nine Hundred) primarily for 1 (One) year. Their scholarship will be extended based on their performances. Parents from both of the family were present in the program. Md. Shah Alam from Golachipa Secondary School and Md.Hasan Milon on behalf ofB-SCAN handed over the cheaque to the respective students in front of theaudience.

In a short speech Md.Hasan Milon informed the audience about the activities of B-SCAN for disabled people and previous experience working with different cases. He also informed the audience that B-SCAN is working for the rights of people with disability and helping many people to be self dependent. Parents from both family thanked B-SCAN for their support. To be mentioned here that, B-SCAN came to know about these two family from Golachipa by a report of Hanjala Shihab of Daily Naya Diganta.

Written by: Nazirul Islam (Zico)

Ramped low-floor buses for Uruguay’s capital

Montevideo moves to accessible buses.In a major step forward, the City of Montevideo has announced plans to progressively replace its current fleet of some 1,500 buses with new low-floor ramped units equipped with securement areas for wheelchair users and new cleaner engines to address air quality concerns. The new buses will be phased in progressively over a period of several years until all buses include the new features. The reports come from Eduardo Alvarez and Nicolás Li Calzi, Uruguayan architects who have actively promoted accessible transportation in the South American republic for many years.

Soucre: Accessible Transportation Around the World,
The Newsletter of Access Exchange International, June 2010

আলো অন্ধকারে যাই

দৌড়ে গিয়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর বাসটিকে ধরতে পেরে আমরা প্রফুল্লমনে বাড়ি ফিরি। কিন্তু জীবনে প্রতিটি পদক্ষেপে যিনি অন্যের সাহায্য ছাড়া হাঁটতেই পারেন না, তাঁর বেলায়? হ্যাঁ, এমনই একজন স্বপ্নসারথির সঙ্গে আমাদের পরিচয় হবে আজ, যাঁর পুরো জীবনটাই প্রতিবন্ধকতাময়।


১৯৯৩ সালের ৫ নভেম্বর গাজীপুর সদর থানার খুনদিয়া গ্রামে রমিজ উদ্দিন ও হনুফা খাতুনের ঘরে জন্ম নেন এই দৃষ্টিহীন বন্ধু। নাম তাঁর আলী হুসাইন। পৃথিবীর আলো না দেখেও যিনি পৃথিবীর বুকে ইতিহাস রচনার স্বপ্ন দেখেন হৃদয়ে। যাঁর জন্ম স্বাভাবিক ছিল না বলে আত্মীয়স্বজন কেউই খুশি হতে পারেননি। প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই আলী বড় হতে থাকেন এবং এখন তিনি অনেক বড়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়ে আলী হুসাইন নিজের যোগ্যতার বড় প্রমাণ দিতে পেরেছেন। আলী হুসাইন বাংলাদেশের ইতিহাসে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম এবং এখন পর্যন্ত জিপিএ-৫ পাওয়া একমাত্র দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী।


জন্মের পর থেকেই ভীষণ প্রতিবন্ধকতা আর রুক্ষ জীবনগতি তাঁকে কিছুতেই রুখতে পারেনি। বড় হতে হতে তিনি অনুভব করতে থাকেন, তিনি চরম নিঃসঙ্গ। বন্ধুরা খেলছে, হইহল্লা করছে, স্কুলে যাচ্ছে, তিনি কিছুই করতে পারছেন না। প্রথম দিকে তাঁর মা-বাবা জানতেনই না যে অন্ধদের শিক্ষার সুযোগ আছে এবং যখন জানলেন, তখন দেখলেন, দরিদ্র পরিবারের জন্য তাঁর ব্যয় বহন অসম্ভব।


কপাল খুলল অন্যভাবে। বিভিন্ন মাধ্যমে তাঁরা খবর পেলেন, গাজীপুরেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের শিক্ষার ব্যবস্থা আছে। আলীর পাঠ শুরু হলো সেখান থেকেই থেকেই।


জানুয়ারি ২০০৩ সাল। আলী হুসাইন বিভিন্নজনের সাহায্য নিয়ে ভর্তি হন সমন্বিত অন্ধশিক্ষা কার্যক্রম নিলের পাড়া উচ্চবিদ্যালয় জয়দেবপুর গাজীপুরে।


লুইস ব্রেইল আবিষ্কৃত ‘ব্রেইল’পদ্ধতিতে শুরু হয় পড়াশোনা। মাত্র ১৫ দিনে এ পদ্ধতি আয়ত্ত করেন তিনি। শেষ করেন স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ শিক্ষা। ২০০৩ সালের মার্চে ভর্তি হন দ্বিতীয় শ্রেণীতে। সেই শ্রেণীতে থাকতেই তাঁর চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত সব বই পড়া হয়ে যায়। দ্রুতগতিতে এগোতে থাকেন আলী। এভাবে ২০০৬ সালে এসে তিনি সরাসরি ভর্তি হয়ে যান নবম শ্রেণীতে। সব চাপ কাটিয়ে ব্রেইল-পদ্ধতিতে ছাপানো সরকারি বই পড়ে এবং অষ্টম শ্রেণীর একজন শ্রুতিলেখক দিয়ে তিনি পরীক্ষা দেন। জিপিএ ৩.৯৪ পেয়ে পাস করেন। এবার বিপত্তি বাধে সামনে এগোনো নিয়ে। কেননা, এবার আর সরকারি বই নেই। আর এ পদ্ধতিতে বই ছাপানোর টাকার পরিমাণ বেশি। সাত ভাইবোনের আলীর পরিবারে তাই বাবাও অসহায়।


আলীও দমার পাত্র নন। বাবার আশা ছেড়ে দিয়ে শুরু করেন অন্যভাবে। বন্ধুদের সাহায্যে ক্যাসেট প্লেয়ারে বই রেকর্ড করে আলী উচ্চমাধ্যমিকের বই মুখস্থ করতে থাকেন এবং আলী শেষে বোর্ডের অনুমতি নিয়ে দশম শ্রেণীর ছাত্রের দিয়ে শ্রুতিলিখন করে উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পান। মাধ্যমিক বিভাগের ছাত্র আলী ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ১৭২১তম স্থান অধিকার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান।


এখনকার গল্পও সহজ নয়। আলী হুসাইনদের গল্প প্রতিনিয়ত কঠিন। প্রতিক্ষণে অনিশ্চয়তা তাঁদের ঘিরে ধরে। আঁধার ফুটে ওঠে বারবার আলীদের চোখে। এটাই যে স্থায়ী সত্য। আলী কী করবেন এবার? এবার টাকা দিয়ে আলীর জন্য বড় বড় বই, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচ বা ব্রেইল-পদ্ধতিতে বই ছাপিয়ে দেবে কে? কে দেবে আলীর ক্যাসেট প্লেয়ার আর খাওয়া খরচ? কে বহন করবে আলীর জীবনের বাড়তি ব্যয়? আলী কি কষ্ট আর লাঞ্ছনা পেতেই থাকবেন? আলী বলেন, ‘আমি আত্মবিশ্বাসী। সবাই আজ পর্যন্ত যেভাবে আমাকে সাহায্য করে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে, সামনের দিনগুলোতে তাঁরা আমার পাশে থাকবেন।’


আলী সংস্কৃতিমনা মানুষ। দারুণ গান ধরতে জানেন। তাঁকে ছেড়ে আশার সময় শোনাচ্ছিলেন—‘আমি অন্ধ হতে পারি, হূদয় আমার অন্ধ নয়/ মনেরই চোখ দিয়ে দেখব তোমায়/ থাকব তোমার ভালোবাসাতে’।


সুত্রঃ মাহমুদ ফাহাদ, তারিখ: ০৮-১২-২০১০, প্রথম আলো।

মুছে যাক কিবরিয়ার চোখের পানি

কত কিছুই না ঘটে মানুষের জীবনে!
জীবনের নানা ঘটনা গল্পের চেয়েও বিস্ময়কর হতে পারে।
কোনো কোনো ঘটনা মনকে আনন্দে ভরে দেয়। কোনো কোনো ঘটনা পৌঁছে দেয় বিষণ্নতার ঠিকানায়।


এই তো, গতকালই প্রথম আলোর ‘ঢাকায় থাকি’ ক্রোড়পত্রে গোলাম কিবরিয়ার কথা ছাপা হয়েছে। মানুষের জীবনসংগ্রামের নানা কাহিনি ছাপা হয় প্রথম আলোয়। এরই ধারাবাহিকতায় গোলাম কিবরিয়াও উঠে এসেছিলেন পত্রিকার পাতায়। একজন খেটে খাওয়া মানুষের অসাধারণ জীবনকাহিনি তুলে আনাই ছিল আমাদের লক্ষ্য। ঢাকার পাঠক সেই কাহিনি পড়েছেন। কিন্তু আজ যখন প্রায় একই কথা জানাতে চাইছি সারা দেশের পাঠককে, তখন আগেই বলে রাখি, এ ধরনের ঘটনার কথা লিখতে ইচ্ছে করে না। কষ্ট হয়। তার পরও লিখতে হয়।
গোলাম কিবরিয়া এসেছিলেন নিজের কথা বলতে। শুধু বলেই ক্ষান্ত হলেন না, হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলেন রাস্তায়, চাক্ষুষ দেখালেন কী করে জীবন চলে তাঁর।
খুব খারাপ কাটছিল না তাঁর জীবন। কিন্তু যে কারখানায় কাজ করতেন, সেখানেই ঘটে এক দুর্ঘটনা। রোলিং মিলে তাঁর একটি হাত কাটা পড়ে। একজন কর্মঠ মানুষ মুহূর্তে পরিণত হন বেকার মানুষে। মালিক বললেন, ‘তোর হাত নাই, তুই এখানে থাইকা কী করবি, অন্য কোথাও কাম দেখ।’


পৃথিবীটা এ রকম নিষ্ঠুর হয়, তা জানা ছিল না গোলাম কিবরিয়ার। কারখানার মালিক কোনো ক্ষতিপূরণও দিলেন না। হাতটা পঙ্গু হওয়ার পর কী করবেন, তা নিয়ে অনেক ভেবেছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত বেছে নিয়েছেন পত্রিকার হকারি। সবাই জানেন, একজন হকারের আয় কত হতে পারে। সংসার তো চালাতে হবে, কিন্তু কী করে বাড়িতে বলবেন তিনি হকারি করেন?
শুধু হকারি করা নয়, কোনো দিন পত্রিকা কম বিক্রি হলে মানুষের কাছে হাতও পাততে হয়। কিন্তু সে কথা তো বলা যায় না বাড়িতে। তাঁর মুক্তিযোদ্ধা বাবা, আত্মসম্মানজ্ঞানসম্পন্ন মানুষটিকে সে কথা বলার সাহস হয়নি গোলাম কিবরিয়ার। স্ত্রী-সন্তানদেরও জানাননি সে কথা। ওরা শুনলে কষ্ট পাবে। তাই এক ধরনের অদ্ভুত লুকোচুরি খেলা শুরু করলেন তিনি। প্রতিদিনই এই লুকোচুরি খেলতে হয়। কিন্তু বাবা ও স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে এই লুকোচুরি খেলতে ভালো লাগে না তাঁর। তার ওপর রয়েছে ভয়। এই বুঝি ধরা পড়ে যেতে হয়। রাস্তায় কেউ যদি তাঁকে দেখে বাড়িতে বলে দেয়! ভিক্ষা করতে ইচ্ছে হয় না তাঁর। কিন্তু বাড়ির মানুষকে অভুক্ত দেখার চেয়ে ভিক্ষা করা ভালো—একেই নিয়তি বলে ধরে নিয়েছেন তিনি।


এই ছিল গোলাম কিবরিয়ার জীবনের কাহিনি কিংবা বলা যায় সংগ্রামের কাহিনি।
এ কথাগুলোই একটু অন্যভাবে ছাপা হয়েছিল গতকালের ‘ঢাকায় থাকি’তে।
শিরোনাম ছিল ‘লোকটা আর ভিক্ষা করতে চান না’।


ছাপা হওয়ার পর প্রথম আলো অফিসে ফোনের পর ফোন আসতে থাকে। গোলাম কিবরিয়ার জীবনসংগ্রাম ঢাকার পাঠকদের যে কী পরিমাণ নাড়া দিয়েছে, তা বোঝা যায় তাঁদের এই অবিশ্রান্ত উৎসাহ দেখে। আমরাও খুশি হই। মুক্তিযোদ্ধা বাবার এই অসহায় সন্তানটির দিকে বুঝি এবার ভাগ্যদেবী মুখ তুলে চাইলেন। তাঁর যে মোবাইল ফোনের নম্বর ছিল, তা আমরা মহা উৎসাহে দিতে লাগলাম পাঠককে। কিন্তু কেউ সেই নম্বরে ফোন করে গোলাম কিবরিয়াকে পাচ্ছিলেন না।


কেন গোলাম কিবরিয়া ফোন ধরছেন না, তা জানা গেল তাঁর চোখের পানিতে। প্রথম আলোর কার্যালয়ে এসে হু হু করে কাঁদছেন গোলাম কিবরিয়া। আমরা যখন তাঁর সঙ্গে কথা বলেছি, তখনো তাঁর মোবাইল ফোন ছিল, পরার যোগ্য দু-একটা জামাকাপড় ছিল। কিন্তু গত ২৯ নভেম্বর এই মানুষটির বাড়িতে চোর ঢুকেছিল। বাড়ির বেড়া কেটে হয়েছে ওই চুরি। মোবাইল ফোন দূরে থাক, পরনের কাপড় ছাড়া আর কিছুই এখন অবশিষ্ট নেই তাঁর।


গোলাম কিবরিয়াকে একটি মোবাইল ফোন কেনার টাকা জোগাড় করে দেওয়া হয়েছে। তিনি একটি সিমও উঠিয়েছেন। ৫ ডিসেম্বর যাঁরা গোলাম কিবরিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন, তাঁদের বলছি, যদি গোলাম কিবরিয়াকে সাহায্য করার ইচ্ছে থাকে আপনাদের, তাহলে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করুন ০১৯২৫১৫২৯৯৬ নম্বরে। আপনার সহমর্মিতা গোলাম কিবরিয়ার চোখের পানি মুছে দিতে পারে।


সুত্রঃ কাওছার শাকিল তারিখ: ০৬-১২-২০১০, প্রথম আলো।
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-12-06/news/113698

 
Design by Oronno Anam | Bloggerized by Salma Mahbub