তবুও বেলালের এগিয়ে চলা...

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের উমেদপুর গ্রামের দরিদ্র পরিবারের সন্তান মো. বেলাল হোসেন। জন্মগতভাবেই তার দুটি হাত নেই। তার বাবা খলিল আকন অন্যের জমিতে কাজ করেন। মা হোসনেয়ারা বেগম গৃহিণী। এ ছাড়া রাহিমা বেগম নামে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এক বোন রয়েছে তার। একদিকে দারিদ্র্য, অন্যদিকে দুই ছেলেমেয়ের এ অবস্থায় হতাশাগ্রস্ত তার বাবা-মা।
খলিল আকন ও হোসনেয়ারা বেগম জানান, বেলালের জন্মের পর গ্রামের লোকজন নানা রকমের কুসংস্কার ছড়াতে থাকে। এলাকার মানুষ তখন তাদের তাচ্ছিল্য করত। এসব কারণে তাঁরা প্রথমদিকে বেলালকে লুকিয়ে রাখতেন। বেসরকারি সংস্থা এসএসডিপির সিবিআর কর্মী সমীর হালদারের পরামর্শে বেলালকে ২০০৭ সালে ভর্তি করা হয় উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের উমেদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রথমদিকে বিদ্যালয়ের অন্য ছাত্রছাত্রীরা বেলালকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি। তাদের ভেতর ছিল এক অজানা ভয়—পাছে অন্যদের কোনো ক্ষতি হয় কি না? বিদ্যালয়ের সবার অসহনীয় মনোভাব আর অসহযোগিতার কারণে বেলালকে বিদ্যালয়ে যাওয়া এক পর্যায়ে বন্ধ করে দিতে হয়।
এমন অবস্থায় বেসরকারি সংস্থা এসএসডিপি তার পাশে এসে দাঁড়ায়। এসএসডিপি সিডিডি ডার্ক অ্যান্ড লাইট ব্লাইন্ড কেয়ার প্রকল্প ও এইচএসবিসি ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় আয়োজন করে প্রতিবন্ধী শিশুদের সমন্বিত শিক্ষা সুযোগ তৈরি করার স্কুল সেশন। বেলালের সহপাঠীদের নিয়ে ওই স্কুলে গঠন করা হয় প্রতিবন্ধী শিশুদের একটি দল। পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত আয়োজন করা হয় কাউন্সেলিং। আবার বেলাল বিদ্যালয়ে যেতে শুরু করে। নিয়মিত ক্লাস আর পড়াশোনায় তার আগ্রহ দেখে শিক্ষকেরাও আন্তরিক হন। প্রথম, দ্বিতীয় শ্রেণী উত্তীর্ণ হয়ে এখন সে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র। ব্যতিক্রম হলো, তার দুটি হাত না থাকায় ডান পা দিয়ে তাকে লিখতে হয়। সে এখন সুন্দর করে লিখতে পারে। উমেদপুর বিদ্যালয়ে বেলাল এক পরিচিত মুখ, সবার বন্ধু। মুখে স্পষ্ট কথা, ‘মুই আগে পড়তে পারলেও লেখতে পারতাম না। এ্যাহন লেখতেও পারি।’ বাবা খলিল আকন বলেন, অর তো হাত নাই। পা দিয়াই তো সব করতে অইবে। ও যাতে সব কাম কাইজ করতে পারে হেই কৌশলও শেখতে চেষ্টা করছে।
উমেদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহ সুজা উদ্দিন বলেন, স্কুলের শিক্ষকেরা ওর শিখনে সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছে। যে কারণে শোনা, বলা, পড়া ও লেখা—এ চারটিতেই সে দক্ষতা অর্জন করেছে। তবে তার পরিবারের আর্থিক দৈন্যতা থাকায় খাওয়া-পড়ায় কষ্ট হয়। এসএসডিপির নির্বাহী পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, প্রতিবন্ধীরাও অক্ষম নয়, বেলাল তাই প্রমাণ করেছে।

তথ্যসূত্রঃ http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-01-10/news/33621

1 মন্তব্য(সমূহ):

Biplob Rahman said...

এসএসডিপি সিডিডি ডার্ক অ্যান্ড লাইট ব্লাইন্ড কেয়ার প্রকল্প ও এইচএসবিসি ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় আয়োজন করে প্রতিবন্ধী শিশুদের সমন্বিত শিক্ষা সুযোগ তৈরি করার স্কুল সেশন। বেলালের সহপাঠীদের নিয়ে ওই স্কুলে গঠন করা হয় প্রতিবন্ধী শিশুদের একটি দল। পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত আয়োজন করা হয় কাউন্সেলিং। আবার বেলাল বিদ্যালয়ে যেতে শুরু করে। নিয়মিত ক্লাস আর পড়াশোনায় তার আগ্রহ দেখে শিক্ষকেরাও আন্তরিক হন। ...
---
evabi hote hobe, shudhu chai, hat barano...

Post a Comment

FACEBOOK FACEBOOK AMARBLOG

 
Design by Oronno Anam | Bloggerized by Salma Mahbub