বদলে যাওয়ার অভিযাত্রায় প্রতিবন্ধী স্কাউটরাও প্রত্যয়ী


‘আমরা যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলি না। আমরা চাই অন্যরাও যেন যেখানে-সেখানে ময়লা না ফেলে। আর এভাবেই আমরা সবাই বদলে যাব।’ অষ্টম জাতীয় স্কাউট জাম্বুরিতে অংশ নেওয়া বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী স্কাউট শিউলি আক্তার গোছানো বাক্যে কথাগুলো বলছিল।
লক্ষ্মণাবন্দ ভিলেজে অন্য স্কাউটদের সঙ্গে নিয়মিত কার্যক্রমে অংশ নেওয়া রাজশাহীর পঙ্গু শিশু নিকেতনের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মো. রুবেল বলে, ‘আমি চোখে দেখি না, তবু আমি থেমে যাব না। পড়াশোনা করে মর্যাদা নিয়ে এগিয়ে যাব। স্কাউটিং থেকে সেই আত্মমর্যাদার দীক্ষা পেয়েছি। যা সবার জীবনে দরকার।’ কনকনে শীতের মধ্যেও হাসি ছিল তার মুখে। সে বন্ধুত্ব করতে এসেছে। তার অনেক বন্ধু দরকার।
গতকাল মঙ্গলবার ছিল অষ্টম জাতীয় স্কাউট জাম্বুরির ষষ্ঠ দিন। গজারি বন সারা দিনই ছিল কুয়াশাচ্ছন্ন। এতে বিন্দুমাত্র কমে যায়নি স্কাউটদের উদ্যম। নিয়মিত কার্যসূচিতে বনে অভিযাত্রা স্কাউটদের উত্সাহে যোগ করে নতুন মাত্রা।
অভিযাত্রা, সমাজ চেতনা, আমার লক্ষ্য, তাঁবু সজ্জার মতো প্রায় সব চ্যালেঞ্জেই অংশ নিচ্ছে প্রতিবন্ধী স্কাউটরা। তাদের উদ্যম আর আনন্দের সামনে সব বাধাই যেন তুচ্ছ। জাম্বুরিতে তারাও বদলে দেওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে এসেছে। তবে এ ব্যাপারে সমাজের সবার সহযোগিতা চেয়েছে তারা। এবারের জাম্বুরিতে ১৩০ জন প্রতিবন্ধী স্কাউট অংশ নিচ্ছে।
সুইড বাংলাদেশের স্কাউট বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী প্রজ্ঞা পারমিতার শখ নৃত্য করা। নতুন কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব হলেই সে নেচে তাদের আনন্দ দিচ্ছিল। প্রজ্ঞা জানাল, এখানে আসার পর তার অনেক বন্ধু হয়েছে। সে সারা জীবন এসব বন্ধুকে কাছে পেতে চায়। একই প্রতিষ্ঠানের স্কাউট রাশিদা খাতুনও জানিয়েছে তার শখ নাচ করা। এখানে এসে তার কেবল নাচতেই ইচ্ছে করছে। বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী মোহসেনা আক্তার জানাল, এখানে এসে সে অনেক কাজ করতে শিখেছে। দেশের মঙ্গলের জন্য সে এখন থেকে কাজ করবে।
লক্ষ্মণাবন্দ ভিলেজে নিয়মিত কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছিল ওই ভিলেজের স্কাউটরা। মাঠে সারি বেঁধে বসেছিল তারা। এর মধ্যে ছিল রাজশাহীর পঙ্গু শিশু নিকেতনের সোহেল রানা। পোলিওর কারণে তার একটি পা ও একটি হাত অকেজো। তবু তার উদ্যম থেমে নেই। বার বার হাত উঁচিয়ে কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছিল। সোহেল রানা বলে, ‘আমি অনেক দূর যেতে চাই। অনেক বড় পৃথিবী দেখতে চাই। স্কাউটিং আমাকে সে পৃথিবী দেখাবে। আমি চাই, যারা সুস্থ স্বাভাবিক আছে, তারা যেন আমাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে।’ সড়ক দুর্ঘটনায় আট বছর আগে শিশু বয়সে শারীরিক প্রতিবন্ধী হয় হায়দার আলী। এখন সে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ছে। সে আত্মমর্যাদায় বলীয়ান হতে প্রত্যয়ী। এ ব্যাপারে সমাজের সবার সহযোগিতা চায় সে।
সুইড বাংলাদেশের স্কাউট বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিউলি আক্তার, রায়হান কবীর, নাজমুল ইসলাম, শাহীন, সারমিন লিপিরা এখানেই থেমে যেতে চায় না। ওরা স্পেশাল অলিম্পিকে অংশ নিয়ে দেশের জন্য সম্মান নিয়ে এসেছে। সারমিন ১০০ মিটার দৌড়ে স্বর্ণপদক জিতেছে চীনে। আর শাহীন বিজয়ী ফুটবল দলে খেলেছে। ওরা চায় দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ। কথার ফাঁকেই তারা জানাল, সরকার চাকরির আশ্বাস দিলেও তারা চাকরি পাচ্ছে না। সারমিন লিপি প্রথম আলোকে বলে, আমরা কাজ করতে পারব, আমরা চাই সরকার আমাদের চাকরির ব্যবস্থা করুক। আর এ ব্যাপারে সমাজের সব মানুষকে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
সুইড বাংলাদেশের শিক্ষক হাসিনা হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, প্রথমে আশঙ্কা ছিল ওরা পারবে না। আর এখন ওরা বাড়ি যেতে চাইছে না। ওদের সামাজিক করে তোলার জন্য এ ধরনের অনুষ্ঠান বেশ কার্যকর।
সকালে ‘সমাজ চেতনা’ কার্যক্রমে জাম্বুরি এলাকার দক্ষিণ মৌচাক, লোহাকৈর ও কামরাঙ্গাচালা এলাকায় স্কাউটরা মাটির রাস্তা সম্মিলিতভাবে মেরামত ও দুটি বাঁশের সাঁকো তৈরি করে। স্কাউটরা ওই এলাকার দরিদ্র পরিবারের বাড়ির আঙিনায় সবজি বাগান করে দেয়, গর্ভবতী মায়েদের চিকিত্সা পরামর্শ, বাড়ির গবাদি পশুর যত্ন ও চিকিত্সার নিয়ম, ওরস্যালাইন তৈরি করাসহ নানা বিষয়ে ধারণা দেয়।
সন্ধ্যায় জাম্বুরির ১৫টি সাব ক্যাম্পফায়ারে প্রধান অতিথি ছিলেন বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব মিহির কান্তি মজুমদার, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, জাতীয় ফাউন্ডেশনের ম্যানেজমেন্টের সভাপতি ফয়জুর রহমান চৌধুরী, বাংলাদেশ স্কাউটসের কোষাধ্যক্ষ আব্দুল কাইয়ুম ঠাকুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক প্রমুখ।

তথ্যসূত্রঃ প্রথম আলো
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-01-25/news/36318

1 মন্তব্য(সমূহ):

Biplob Rahman said...

Carry On!!

Post a Comment

FACEBOOK FACEBOOK AMARBLOG

 
Design by Oronno Anam | Bloggerized by Salma Mahbub