
আমরা যারা সম্পূর্ণ শারীরিক ও মানসিক পূর্ণতা নিয়ে জন্ম গ্রহণ করতে পেরেছি এবং আজ অবধি সু্স্থ্য-সবল শরীর ও মন নিয়ে জীবন-যাপন করে চলেছি, তারা যেন মনে রাখি, এটা অবশ্যই সৃষ্টি কর্তার আবদানে। তিনি আমাদের পূর্ণ করে রেখেছেন অপূর্ণতাকে পূরণ করতে। নিজের শরীর আর মনের দিকে তাকিয়ে যেন আমরা অহংকার বোধ না করি। আমার আশে-পাশে আমি যে সব অপূর্ণতা দেখবো, আমার উচিৎ আমার সাধ্য মত সে গুলোতে পূর্ণতা আনা। প্রতিবন্ধকতা নিয়ে যারা জন্ম গ্রহণ করেন বা পরবর্তিতে যে কোন কারণে স্বাভাবিক জীবন-যাপনে প্রতিবন্ধকতার সাথে যুক্ত হয়ে পরে, তাদেরকে আমরা শুধু মাত্র নাম বিশেষণে "প্রতিবন্ধী" বলে চিনি। কিন্তু, এটি তাদের পরিচয় নয়। এটা তাদের "অপূর্ণতার" একটি রূপ মাত্র। কিন্তু, তারা তাদের এই অপূর্ণতা অনেক অংশে নিজেরাই পূরণ করে চলতে পারে। আবার অনেকে হয়তো একা একা পারে না। আমাদের উচিৎ, তাদের পূর্ণ ভাবে চলতে এবং চলার জন্য পথ সুগম করে দেয়া। কেউ যদি তাদের সাহায্য করতে না পারি, তবুও যেন তাদের পথ চলতে কোন রূপ বাঁধা বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করি।
শিক্ষা যে কারোর জন্য অমূল্য সম্পদ। এই সম্পদ থাকলে কেউ অপূর্ণ থাকে না। শারীরিক কিংবা মানসিক অপূর্ণতা গুলোও এই সম্পদের যৌলুসে উজ্জ্বল হয়ে যায়। তাই, প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার অধিকারটি নিশ্চিত করতে দেয়া এবং তাদের শিক্ষা গ্রহণের পূর্ণ সুযোগ প্রদান করা আমাদের যার যার নিজ নিজ অবস্থান থেকে করা মানবিক এবং সামাজিক দায় বন্ধতা থেকে চরম দায়িত্ব রয়েছে। তাই আসুন- আমরা আমাদের সাধ্য মতো চেষ্টা করি আমাদের সমাজের সব অপূর্ণতাকে ঘুঁচিয়ে এগিয়ে যাই এক সাথে।
এরই লক্ষ্যে বাংলাদেশি সিস্টেমস চেইঞ্জ অ্যাডভোকেসি নেটওয়ার্ক (বি-স্ক্যান) একটি সচেতনামূলক লিফলেট ছাড়তে যাচ্ছে। তাই, আপনারাও এর জন্য কাজ করতে পারেন। লিফলেটটি আপনি এবং আপনার পরিচিত জনদের দিতে পারেন। নিজে সচেতন হলেন এবং অন্যদেরও সচেতন করলেন। অতি শীঘ্রই এই লিফলেট ছাপা আকারে দেশে সব বড় শহরে বিলি করা হবে। সবাই যদি এগিয়ে আসেন, তাহলে সারা দেশে এটি ছড়িয়ে অল্প করে হলেও মানুষকে সচেতন করা যেতে পারে।
লিফলেট-টির লেখা গুলো নিচে দেয়া হলো:
প্রতিবন্ধীদের জন্য সম-শিক্ষা অধিকার চাই
প্রতিটি জীবনই মূল্যবান এবং তা প্রস্ফুটিত হওয়ার দাবি রাখে। কোন শিশু যখন প্রতিবন্ধকতা নিয়ে জন্ম নেয়, একটি সাধারণ শিশুর তুলনায় তার জীবনের মুল্য এতোটুকু কমে যায় না। তারা শুধুমাত্র তাদের কাজগুলো একটু ভিন্নভাবে করতে সক্ষম এবং তাদের খানিকটা আলাদা যত্নের প্রয়োজন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীও এ ব্যপারে গুরুত্ত্ব আরোপ করে প্রতিবন্ধী শিশুদের স্কুলে ভর্তি ব্যপারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো উদ্যোগী হতে আহবান জানিয়েছেন।
* প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার জন্য সহায়ক যে কোন ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গুরুত্ত্ব বাড়ানো।
* প্রতিটি স্কুলে হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের জন্য উপযোগী টয়লেট এবং সিঁড়িতে র্যাম্পের ব্যবস্থা করা।
*দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য শ্রুতি লেখক, শ্রেণী শিক্ষকের পাঠ দান বাড়িতে বসে শোনার জন্য টেপ রেকর্ডারের ব্যবস্থা এবং বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের জন্য ইশারা ভাষায় অনুবাদকের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
* দোতলা বা তার বেশি উঁচু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে লিফট না থাকলে দুজন প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সাহায্যকারী নির্ধারণ করা; যারা শিক্ষার্থীকে হুইলচেয়ারসহ সহজেই সিঁড়ি দিয়ে উঠাতে-নামাতে সহায়তা করবেন। আর এ ব্যবস্থা না করা গেলে চলৎ প্রতিবন্ধীদের জন্য শ্রেণীকক্ষটি নীচ তলায় নামিয়ে আনার ব্যবস্থা করা যায় (সম্প্রতি চট্টগ্রাম রেসিডেন্সিয়াল স্কুল ও কলেজ একজন অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রীর জন্য এমনটি করেছে)।
* প্রতিবন্ধী শিশুদের যেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হেয় প্রতিপন্ন করা না হয়, সেদিকে শিক্ষকেরা বিশেষ নজর দিতে সদয় হবেন। ক্লাসে ছাত্র-ছাত্রীদের বিশেষভাবে বোঝানো যেতে পারে, প্রতিবন্ধী সহপাঠিটি তাদেরই ভাইবোন।
* মডেল স্কুল-কলেজসমূহে প্রতিবন্ধীদের ভর্তি করাসহ তাদের পূর্ণ সুযোগ-সুবিধা পেতে কর্তৃপক্ষ বিশেষ সহায়তা প্রদানের চেষ্টা করতে পারেন।
* স্কুল-কলেজগুলোতে নিয়মিত অভিভাবকদের জন্য সভা ডেকে প্রতিবন্ধী শিশু শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করে জনসচেতনতা বাড়ানো যায়। এতে প্রতিবন্ধী শিশুদের স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য উৎসাহ বৃদ্ধি পাবে; আর সুযোগ পেলে প্রতিবন্ধীরাও এ দেশের যোগ্য নাগরিক হিসাবে নিজেদের গড়ে তুলতে পারবে।
* প্রতিবন্ধীদের জন্য আরো যুগপোযুগি সরঞ্জাম সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা যেতে পারে।
সৌজন্যেঃ বাংলাদেশী সিস্টেমস চেইঞ্জ অ্যাডভোকেসি নেটওয়ার্ক (বি-স্ক্যান)
www.b-scan.org
Email: info@b-scan.org
লেখক: অরণ্য আনাম
১ এপ্রিল ২০১০।