সচেতন হই, সচেতন করি :: প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার অধিকার পূর্ণ প্রতিষ্ঠা করি

হাতের পাঁচটি আঙুল সমান নয় মানুষও সমান যোগ্যতা নিয়ে জন্মায় না মানুষের মেধা ও বুদ্ধিও সমান থাকে না আবার অনেকে পাঁচটি আঙুল নিয়েও জন্ম গ্রহণ করতে পারে না সৃষ্টি কর্তা কাউকে পূর্ণতা দিয়ে পাঠিয়েছেন, আবার কাউকে অপূর্ণ করে পাঠিয়েছেন হয়তো তিনি চেয়েছেন, পূর্ণ মানুষটি অপূর্ণ মানুষের পাশে দাঁড়ায় কিনা তবে, করুণা করে নয়

আমরা যারা সম্পূর্ণ শারীরিক ও মানসিক পূর্ণতা নিয়ে জন্ম গ্রহণ করতে পেরেছি এবং আজ অবধি সু্স্থ্য-সবল শরীর ও মন নিয়ে জীবন-যাপন করে চলেছি, তারা যেন মনে রাখি, এটা অবশ্যই সৃষ্টি কর্তার আবদানে
তিনি আমাদের পূর্ণ করে রেখেছেন অপূর্ণতাকে পূরণ করতে নিজের শরীর আর মনের দিকে তাকিয়ে যেন আমরা অহংকার বোধ না করি আমার আশে-পাশে আমি যে সব অপূর্ণতা দেখবো, আমার উচিৎ আমার সাধ্য মত সে গুলোতে পূর্ণতা আনা প্রতিবন্ধকতা নিয়ে যারা জন্ম গ্রহণ করেন বা পরবর্তিতে যে কোন কারণে স্বাভাবিক জীবন-যাপনে প্রতিবন্ধকতার সাথে যুক্ত হয়ে পরে, তাদেরকে আমরা শুধু মাত্র নাম বিশেষণে "প্রতিবন্ধী" বলে চিনি কিন্তু, এটি তাদের পরিচয় নয় এটা তাদের "অপূর্ণতার" একটি রূপ মাত্র কিন্তু, তারা তাদের এই অপূর্ণতা অনেক অংশে নিজেরাই পূরণ করে চলতে পারে আবার অনেকে হয়তো একা একা পারে না আমাদের উচিৎ, তাদের পূর্ণ ভাবে চলতে এবং চলার জন্য পথ সুগম করে দেয়া কেউ যদি তাদের সাহায্য করতে না পারি, তবুও যেন তাদের পথ চলতে কোন রূপ বাঁধা বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করি।

শিক্ষা যে কারোর জন্য অমূল্য সম্পদ
এই সম্পদ থাকলে কেউ অপূর্ণ থাকে না শারীরিক কিংবা মানসিক অপূর্ণতা গুলোও এই সম্পদের যৌলুসে উজ্জ্বল হয়ে যায় তাই, প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার অধিকারটি নিশ্চিত করতে দেয়া এবং তাদের শিক্ষা গ্রহণের পূর্ণ সুযোগ প্রদান করা আমাদের যার যার নিজ নিজ অবস্থান থেকে করা মানবিক এবং সামাজিক দায় বন্ধতা থেকে চরম দায়িত্ব রয়েছে তাই আসুন- আমরা আমাদের সাধ্য মতো চেষ্টা করি আমাদের সমাজের সব অপূর্ণতাকে ঘুঁচিয়ে এগিয়ে যাই এক সাথে

এরই লক্ষ্যে বাংলাদেশি সিস্টেমস চেইঞ্জ অ্যাডভোকেসি নেটওয়ার্ক (বি-স্ক্যান) একটি সচেতনামূলক লিফলেট ছাড়তে যাচ্ছে
তাই, আপনারাও এর জন্য কাজ করতে পারেন লিফলেটটি আপনি এবং আপনার পরিচিত জনদের দিতে পারেন নিজে সচেতন হলেন এবং অন্যদেরও সচেতন করলেন অতি শীঘ্রই এই লিফলেট ছাপা আকারে দেশে সব বড় শহরে বিলি করা হবে সবাই যদি এগিয়ে আসেন, তাহলে সারা দেশে এটি ছড়িয়ে অল্প করে হলেও মানুষকে সচেতন করা যেতে পারে

লিফলেট-টির লেখা গুলো নিচে দেয়া হলো:
প্রতিবন্ধীদের জন্য সম-শিক্ষা অধিকার চাই


প্রতিটি জীবনই মূল্যবান এবং তা প্রস্ফুটিত হওয়ার দাবি রাখে। কোন শিশু যখন প্রতিবন্ধকতা নিয়ে জন্ম নেয়, একটি সাধারণ শিশুর তুলনায় তার জীবনের মুল্য এতোটুকু কমে যায় না। তারা শুধুমাত্র তাদের কাজগুলো একটু ভিন্নভাবে করতে সক্ষম এবং তাদের খানিকটা আলাদা যত্নের প্রয়োজন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীও এ ব্যপারে গুরুত্ত্ব আরোপ করে প্রতিবন্ধী শিশুদের স্কুলে ভর্তি ব্যপারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো উদ্যোগী হতে আহবান জানিয়েছেন।

স্বল্প থেকে মাঝারি মাত্রার প্রতিবন্ধী শিশুরা, ( যেমন: হুইলচেয়ার, ক্র্যাচ, ছড়ি ইত্যাদি ব্যবহারকারী চল এবং দৃষ্টি, বাক্ ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী) সাধারণ শিশুর সাথে একই স্কুলে পড়াশোনা করতে পারে। তাদের জন্য যে ব্যবস্থাগুলো স্কুল কর্তৃপক্ষ বিবেচনায় আনতে পারেন:

* প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার জন্য সহায়ক যে কোন ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গুরুত্ত্ব বাড়ানো।
* প্রতিটি স্কুলে হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের জন্য উপযোগী টয়লেট এবং সিঁড়িতে র‌্যাম্পের ব্যবস্থা করা।
*দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য শ্রুতি লেখক, শ্রেণী শিক্ষকের পাঠ দান বাড়িতে বসে শোনার জন্য টেপ রেকর্ডারের ব্যবস্থা এবং বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের জন্য ইশারা ভাষায় অনুবাদকের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
* দোতলা বা তার বেশি উঁচু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে লিফট না থাকলে দুজন প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সাহায্যকারী নির্ধারণ করা; যারা শিক্ষার্থীকে হুইলচেয়ারসহ সহজেই সিঁড়ি দিয়ে উঠাতে-নামাতে সহায়তা করবেন। আর এ ব্যবস্থা না করা গেলে চল প্রতিবন্ধীদের জন্য শ্রেণীকক্ষটি নীচ তলায় নামিয়ে আনার ব্যবস্থা করা যায় (সম্প্রতি চট্টগ্রাম রেসিডেন্সিয়াল স্কুল ও কলেজ একজন অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রীর জন্য এমনটি করেছে)।
* প্রতিবন্ধী শিশুদের যেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হেয় প্রতিপন্ন করা না হয়, সেদিকে শিক্ষকেরা বিশেষ নজর দিতে সদয় হবেন। ক্লাসে ছাত্র-ছাত্রীদের বিশেষভাবে বোঝানো যেতে পারে, প্রতিবন্ধী সহপাঠিটি তাদেরই ভাইবোন।
* মডেল স্কুল-কলেজসমূহে প্রতিবন্ধীদের ভর্তি করাসহ তাদের পূর্ণ সুযোগ-সুবিধা পেতে কর্তৃপক্ষ বিশেষ সহায়তা প্রদানের চেষ্টা করতে পারেন।
* স্কুল-কলেজগুলোতে নিয়মিত অভিভাবকদের জন্য সভা ডেকে প্রতিবন্ধী শিশু শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করে জনসচেতনতা বাড়ানো যায়। এতে প্রতিবন্ধী শিশুদের স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য উসাহ বৃদ্ধি পাবে; আর সুযোগ পেলে প্রতিবন্ধীরাও এ দেশের যোগ্য নাগরিক হিসাবে নিজেদের গড়ে তুলতে পারবে।
* প্রতিবন্ধীদের জন্য আরো যুগপোযুগি সরঞ্জাম সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা যেতে পারে।

সৌজন্যেঃ বাংলাদেশী সিস্টেমস চেইঞ্জ অ্যাডভোকেসি নেটওয়ার্ক (বি-স্ক্যান)
www.b-scan.org
Email: info@b-scan.org


লেখক: অরণ্য আনাম 

১ এপ্রিল ২০১০।

আলোহীন চোখে সাফল্যের ঝিলিক


পৃথিবীর আলো দেখার সৌভাগ্য তাদের হয়নি। মায়ের ভাষার বর্ণমালা বা ইংরেজি অক্ষর কিছুই চোখে দেখেনি তারা। জন্ম থেকেই তারা তিনজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী।। তিনবেলা দুমুঠো ভাতও ঠিকমতো খেতে পায়নি তারা। সাফল্যের পথে আলোহীন চোখ বা দারিদ্র্য কোনো কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছেলে তিনটি এবার শিশুদের এসএসসি খ্যাত প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছে।

জয়নাল, জাকারিয়া ও মফিদুল সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পুনটে সমন্বিত অন্ধশিক্ষা সম্প্রসারণ কার্যক্রমের রিসোর্স সেন্টারে থাকে। পাশাপাশি তারা পুনট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের কাছ থেকে পড়া শোনে। আর রিসোর্স সেন্টারে গিয়ে ব্রেইল পদ্ধতিতে একধরনের মুদ্রণপ্রণালী, যা স্পর্শ করেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা পড়তে পারে।

মফিদুলের বাড়ি বগুড়ার গাবতলী উপজেলার তেলীহাটা গ্রামে। শৈশবেই বাবা কলিম উদ্দিনকে হারায় সে। চার ছেলেমেয়েকে মানুষ করার দায়িত্ব এসে পড়ে মা মাজেদা বিবির কাঁধে। মাজেদা বিবি কখনো ভিক্ষা করে, কখনো অন্যের বাড়ি থেকে চেয়েচিন্তে সংসার চালিয়েছেন। কিন্তু ভিক্ষার পয়সায় পাঁচজনের সংসার চলত না। মফিদুলকে সমাজসেবা অধিদপ্তরের শিশুসদনে রাখার সিদ্ধান্ত নেন মাজেদা। পরে প্রতিবেশী এক শিক্ষকের পরামর্শে শিশুসদনের বদলে জয়পুরহাটের রিসোর্স সেন্টারে ভর্তি করে দেন ছেলেকে।

মাজেদা বিবি বলেন, ‘পরিবারে অন্ধ ছেলে থাকাটা কত কষ্টের, তা যে পরিবারে আছে, সেই পরিবারের মা-বাবাই ভালো বুঝবেন। আর সেটা যদি হয় ভিখারির পরিবার, তাহলে তো কষ্টের শেষ নাই।’

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী জয়নাল আবেদীনের বাড়ি বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার ঘাটমাগুড়া দক্ষিণপাড়া গ্রামে। পাঁচ ছেলেমেয়ে রেখে বাবা আজিজার রহমান মারা গেছেন অনেক আগে। জয়নাল বড় হয়েছে মা জহুরা বিবির কাছে। জহুরা বিবি বিধবা-ভাতার টাকায় ছেলেমেয়েদের লালন-পালন করছেন।

জহুরা বিবি বলেন, ‘গরিব হওয়ার কারণে সুস্থ হওয়া সত্ত্বেও অন্য ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা করাতে পারিনি। অথচ অন্ধ স্কুলে ফ্রি থাকা-খাওয়া ও পড়ালেখার খরচ দেওয়ায় জয়নালকে পড়ালেখা করাতে পারছি। ডাক্তার না হোক ওকে মাস্টার বানানোর ইচ্ছা আছে আমার।’ ফলাফলে উচ্ছ্বসিত জয়নাল বলে, ‘চোখের আলোয় যদি দেখতে পারতাম! তাহলে এই খুশি আর সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করতে পারতাম।’

দৃষ্টিহীন অপর মেধাবী জাকারিয়া শেখের বাড়ি বগুড়ার শেরপুর উপজেলার জয়লাজুয়ান গ্রামে। তারা চার ভাই। বাবা শেখ মো. আবু বক্কর সিদ্দিক ভূমিহীন দিনমজুর। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। আবু বক্কর বলেন, ‘জাকারিয়া ভালো ফল করেছে, এতে খুব খুশি হয়েছি। আরও খুশি হব যদি সে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হতে পারে।’

রিসোর্স সেন্টারের শিক্ষক জেল হোসেন বলেন, প্রতিবন্ধী হলেও তারা অদম্য, জীবনে একটা কিছু হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে তারা এগিয়ে চলেছে। তারা শুধু পড়ালেখায় নয়, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, খেলাধুলাতেও পারদর্শী। মফিদুল আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবসে কোরআন তেলাওয়াত করে জেলা পর্যায়ে প্রথম পুরস্কার লাভ করেছে।
পুনট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোখলেছার রহমান বলেন, দৃষ্টি নেই, অর্থ নেই, পড়ালেখা করার মতো সামর্থ্যও নেই তাদের। কিন্তু সব বাধা পেরিয়ে ওই তিন অদম্য মেধাবী প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছে। কালাই উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল হান্নান, দৃষ্টিহীন হয়েও তারা অসাধ্যকে সাধন করেছে। তাদের এ প্রশংসনীয় ফলাফল অন্যদেরও প্রেরণা জোগাবে।

তথ্যসূত্রঃ প্রথম আলো
http://prothom-alo.com/detail/date/2010-01-03/news/32285



IBM says Disability No Barrier to career in Tech

Dec 17: IBM has held an open day at its UK research lab to show young people that having disabilities shouldn't be a barrier to a future in the tech industry.

Earlier this month, the tech giant hosted an event at its Hursley Lab, in Hampshire, for fourteen 16 to 22 year olds with a wide range of disabilities. The young people met with a group of IBM employees, also with disabilities, in an attempt to show that a career in technology is open to everyone.

"Recruiting the next generation of talent is top of mind for many UK companies" said Jan Gower, executive sponsor, People with Disabilities Council, IBM UK. "At IBM, being inclusive is part of our DNA and we are passionate about ensuring our workforce reflects the market we serve. We are committed to being an employer of choice and to recruiting based on the best people, regardless of age, gender, ethnic background, sexual orientation, gender expression or disability".

But despite its apparent commitment to being inclusive, IBM has run foul of anti–disability discrimination rules in the past. In 2000, IBM and a technology partner faced a damages claim for failing to make a website they developed for the Sydney Olympic and Paralympic games accessible to disabled users. In 2006, a US federal appeals court ruled in favor of IBM in an age discrimination suit over a change to pension plans.

The Hursley event – organised in cooperation with Treloar's, a college in Alton for young people with physical disabilities, and disability work charity Enham – saw the young people meet with IBM staff including Ben Fletcher, a master inventor and a RADAR award winner 2008, who has Ushers syndrome.

"The objective of the day was to offer young people with disabilities the chance to meet IBM employees with disabilities", said Jeremy Knox, Treloar College tutor. "It was a truly inspiring day, in which our young learners were exposed to the latest cutting–edge technologies in an environment that valued the diversity and potential creativity of disabled employees."

Also present was software engineer and an international basketball player Emlyn Whittick who is also a wheelchair user, and Bob Williams who IBM describes as having "a client relationship role" and is registered blind.

"I was impressed by the assistive technology that IBM provided to it's disabled employees, it really made it easier for them to do their jobs, despite their disabilities", stated James Hinks, one of the students who attended the day from Treloar College.

The event was part of IBM's On Demand Community Challenges where IBM employees volunteer their time for deserving causes.

Reblog this post [with Zemanta]

সাতক্ষীরায় প্রতিবন্ধীদের জন্য ইতালীয় দম্পতির মমতার জাল


রাজধানীর কোনো এক ডাস্টবিনের পাশে পড়ে ছিল এক নবজাতক। গর্ভধারিণী মা তাকে ফেলে গেলেও ভাগ্যহত প্রতিবন্ধী শিশুর জন্য বিপুলা পৃথিবী কোল পেতে দিল। ভিনদেশি এক নারী ডাস্টবিনের পাশ থেকে কুড়িয়ে নিলেন তাকে। তারপর সাভারের সিআরপিতে ঠাঁই হয় তার। সেখান থেকে তাকে সাতক্ষীরায় নিয়ে এসে মায়াডোরে বাঁধলেন ইতালীয় দম্পতি এনসো আর লাওরা। কবি যেমন বলেন, 'সেই ছেলে আজ কেমন বড়টি!' কুড়িয়ে পাওয়া সেই শিশু এখন ২৪ বছরের নির্ঝর। অপত্যস্নেহের ঝরনাধারায় স্থায়ী আশ্রয় পেয়েছে সে। নির্ঝর জানে, এনসো আর লাওরাই তার বাবা-মা।

একা নির্ঝর নয়, তার মতো অসংখ্য অসহায় আর প্রতিবন্ধী শিশুর মা-বাবা এখন এনসো দম্পতি। আশ্রিত এসব শিশু পাচ্ছে মমতা আর ভালোবাসা। সমাজের উপেক্ষিত এই প্রতিবন্ধীদের আশ্রয়, চিকিৎসা আর পুনর্বাসনের জন্য সাভার সিআরপির আদলে সাতক্ষীরা শহরের উপকণ্ঠে গোপীনাথপুর গ্রামে এই দুই ভিনদেশি গড়ে তুলেছেন রিশিল্পি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট। অসহায় মানুষের সেবা করতে গিয়ে দু'জন জড়িয়ে পড়েছেন এদেশের মায়ায়। নিবিড়ভাবে মিশে গেছেন এদেশের মাটি আর মানুষের সঙ্গে। এ মায়ার বাঁধন ছিঁড়ে কোনোদিন তারা আর ফিরে যাবেন না ইতালিতে। '...তোমরা যেখানে সাধ চলে যাও আমি এই বাংলার পাড়ে রয়ে যাবো'_ এখন এনসো দম্পতির শেষ চাওয়া এটাই। মৃত্যুর পর এখানেই সমাধিস্থ হতে চান বলে রিশিল্পির অভ্যন্তরে সমাধির জন্য জায়গাও ঠিক করে রেখেছেন। তারা কথাও বলেন শুদ্ধ বাংলায়। সাতক্ষীরার মানুষ তাদের এনসো-লাওরা বলে চেনে। তাদের একমাত্র পুত্রসন্তান আন্দ্রিয়া ফালকোনে ঢাকায় পড়াশোনা করেন। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পরপরই ভিনসেনজো ফালকোনে ওরফে এনসো স্ত্রী লাওরা মেলানোকে সঙ্গে নিয়ে সুদূর ইতালি থেকে চলে আসেন সাতক্ষীরা শহরে। সমাজের হৃতদরিদ্র মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করতে করতে এক সময় এদেশের মানুষ আর প্রকৃতির মায়ায় জড়িয়ে পড়েন। এক সময় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন সাতক্ষীরায়। শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে খুলনা-সাতক্ষীরা সড়কের পাশে গোপীনাথপুর গ্রামে রিশিল্পি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট এখন স্নেহবঞ্চিত প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য বিছিয়ে রেখেছে নিশ্চিত আশ্রয়ের ছায়া।


বুধবার দুপুরে রিশিল্পি গেটে পা রাখতেই হুইল চেয়ারে বসা এক প্রতিবন্ধী যুবকের ওপর চোখ পড়ল। সেই হুইল চেয়ারটি ঠেলছেন প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার স্বয়ং ভিনসেনজো ফালকোনে এনসো। 'নাম কী?'_ যুবকের কাছে জানতে চাই। শিশুর মতো আধো আধো বোলে হুইল চেয়ারে বসা শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী যুবকের উত্তর : 'নির্ঝর। বাড়ি এখানে। বাবার নাম এনসো। মায়ের নাম লাওরা।' নির্ঝর তাকে পিতা বলে পরিচয় দিচ্ছে দেখে আনন্দের ঝিলিক খেলে গেল এনসোর মুখে। গর্বে। বুকটা ভরে গেছে তার। গলা জড়িয়ে ধরে আবেগাপ্লুত এনসো তার কুড়িয়ে পাওয়া ছেলেকে আদর বোলালেন। এ সময় এগিয়ে এলেন নার্স দিপালি মণ্ডল। নির্ঝরের জীবনের মর্মন্তুদ কাহিনী জানা গেল তার মুখে। ২৪ বছর আগে ঢাকা শহরে এক ডাস্টবিনের পাশে পড়ে ছিল নবজাতক নির্ঝর। পাশেই ফুটপাত ধরে হাঁটছিলেন এক মার্কিন নারী। এ সময় শিশুর কান্না কানে গেল তার। এগিয়ে গিয়ে দেখলেন ছোট্ট শিশুকে কেউ ফেলে গেছে ডাস্টবিনে। সঙ্গে সঙ্গে কোলে তুলে নিলেন ওকে। ওই মার্কিন নারীর সঙ্গে সাভার সিআরপিতে পরিচয় হয় এনসোর। তারই অনুরোধে ১৯৯৬ সালে এনসো নির্ঝরকে নিয়ে আসেন রিশিল্পি প্রতিবন্ধী শেল্টার হোমে।


নির্ঝরকে বিশেষ পদ্ধতিতে লেখাপড়া শেখানো হয়। নিয়মিত দেওয়া হয় থেরাপি। নির্ঝরের মতো ৮৬ জন প্রতিবন্ধী শিশুকে বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে লেখাপড়া শেখানো হয়। একই শেল্টার হোমে আশ্রিত আবিরের বয়স ১৩। বাড়ি খুলনা শহরের টুটপাড়ায়। সাধারণ শাখায় সে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে সে। যথেষ্ট চটপটে। সে জানায়, তার বাবা নেই, মা আছে। শারীরিক প্রতিবন্ধী বলে তার মা তাকে এখানে রেখে গেছে। ৯ বছর ধরে এনসো আর লাওরার স্নেহে বড় হচ্ছে সে। ১২ বছরের আরেক অভাগা শিশু সোহান। প্রতিবন্ধী সন্তান প্রসব করায় সোহানের মায়ের সঙ্গে তার বাবার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। মায়ের সঙ্গে সোহান শহরতলির বিনেরপোতা গ্রামে নানীর বাড়িতে চলে আসে। কিন্তু বিধিবাম। প্রতিবন্ধী সোহানকে ফেলে রেখে তার মা অন্য এক পুরুষের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। নানীর বাড়ির আশ্রয়টুকুও এক সময় টলে যেতে থাকে। এমনই সময় তার ঠাঁই হয় রিশিল্পি শেল্টার হোমে।
শহরের ইটাগাছার জাহিদের মা ঝিয়ের কাজ করে সংসার চালান। প্রতিবন্ধী সন্তানের চিকিৎসার খরচ জোগানোর সাধ্য তার নেই। জাহিদেরও আশ্রয় মিলেছে এখানে। আরও এক হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান ৮ বছরের রানা। সে কথা বলতে পারে না। কমিউনিকেশন বোর্ডের মাধ্যমে তাকে কথা বলানো হয়। এই প্রতিবন্ধী শিশুদের চিকিৎসার পাশাপাশি লেখাপড়া শেখানোর দায়িত্বে আছেন কয়েকজন শিক্ষক। তাদেরই একজন প্রভা মণ্ডল। তিনি নিজেও একজন প্রতিবন্ধী। স্বামী শ্যামল মণ্ডলও ছিলেন শারীরিক প্রতিবন্ধী। দিন কয়েক আগে প্রভা মণ্ডল বিধবা হয়েছেন। কিন্তু এই প্রতিবন্ধী শিশুদের সানি্নধ্যে তিনি স্বামী শোক কাটিয়ে উঠেছেন।


রিশিল্পি ছাড়াও একই প্রতিষ্ঠান তালা, কলারোয়া, খুলনা ও আশাশুনিতে প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসা ও শিক্ষা নিশ্চিত করেছে। ফিজিওথেরাপিস্ট শংকর কুমার ঢালী জানালেন, প্রতিবন্ধীদের ম্যানুয়ালি ও ইলেক্ট্রোথেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর রয়েছে তাদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা। কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে এই প্রতিবন্ধীদের জীবিকা অর্জনে সক্ষম ও স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলছেন এনসো। প্রতিবন্ধী শিশু সাথীকে দেখিয়ে নার্স পূর্ণিমা বললেন, তার নিজের কোনো একাডেমিক শিক্ষা না থাকলেও বিশেষ প্রশিক্ষণের সুবাদে তিনি এই প্রতিবন্ধী শিশুদের সেবা করতে পারছেন। দিপালি বললেন, সাথী যেদিন কথা বলতে ও হাঁটতে পারবে, সেদিনই তার শ্রম সার্থক হবে।


১৯৭২ সালে শহরের সুলতানপুর মিশনারি চার্র্চে এনসোর সঙ্গে পরিচয় হয় নির্মল দাসের। এনসোর সঙ্গে নির্মলের সম্পর্ক আজও অটুট। তিনি জানালেন, সাদা চামড়ার মানুষ এনসোকে দেখে তার কাছে অগণিত মানুষ প্রতিদিন ভিক্ষার জন্য ভিড় করত। এনসো তার সাধ্যমতো ভিক্ষা দিত। কিন্তু তার উপলব্ধি হলো, এভাবে ভিক্ষা দিয়ে তো মানুষকে বাঁচানো যায় না। তাই এসব হতদরিদ্র মানুষকে কারিগরি জ্ঞান ও হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণ দিয়ে জীবিকার বিকল্প সন্ধান করে দিতে শুরু করলেন। ১৯৭৭ সালে গড়ে তুললেন রিশিল্পি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট। শেল্টার হোমে প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসার পর তাদের টেইলারিং, লেদার ও উড সেকশনে কাজের সুযোগ করে দেওয়া হয়। তাদের হাতে তৈরি পণ্য রফতানি করা হয় উন্নত বিশ্বে। প্রচারবিমুখ এনসো বলেন, 'অসহায় মানুষের সেবা করে তৃপ্তি পাই। জীবনের বাকি দিনগুলো ওদের নিয়েই কাটাতে চাই। স্ত্রী লাওরা কিছুটা অসুস্থ। তাই সে বিশ্রাম নিচ্ছে। মৃত্যুর পর এখানেই সমাহিত হতে চাই।' এদেশের মাটি আর মানুষের চোখের আলোয়, বুকের কাছাকাছি থাকার আতীব্র আকাঙ্ক্ষা তার মনকে হাওয়া দেয় নিয়ত। বুঝিবা এটাই তার দেশ, তার দ্বিতীয় জন্মভূমি! বুঝিবা তার মনেও ঘুরছে এই দুর্মর ইচ্ছা : 'তোমরা যেখানে সাধ চলে যাও/আমি এই বাংলার পাড়ে রয়ে যাব।'
 

তথ্যসূত্রঃ রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী, সাতক্ষীরা  দৈনিক সমকাল।
http://www.samakal.com.bd/details.php?news=14&action=main&menu_type=&option=single&news_id=37646&pub_no=206&type=

কিছু সচেতনতা সবার জন্য

কোনো দুর্ঘটনা বা অসুস্থতা জনিত কারণে যে কেউ যখন-তখন প্রতিবন্ধিতার স্বীকার হতে পারেন!

একজন প্রতিবন্ধী মানুষেরও রয়েছে শিক্ষা, চাকরি, চিকিৎসা, বাসস্থান, বিনোদনসহ সব ধরণের মৌলিক-মানবিক অধিকার। জাতিসংঘ প্রতিবন্ধী অধিকার রক্ষা সনদ তৈরী হয়েছে। বাংলাদেশও ২০০৭ সালের ৩০ নভেম্বর এই সনদে সাক্ষর করেছে।

প্রতিবন্ধী মানুষেরা এই সমাজেরই একজন। তাদেরকে মূল জনস্রোত থেকে আলাদা করে দেবেন না। তাদেরও অধিকার রয়েছে এ দেশের শিক্ষা, রাজনীতি, অর্থনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার। দয়া বা করুণা নয়, তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হোন। ভেবে দেখুন, আজ আপনার ঘরেও একজন প্রতিবন্ধী মানুষ থাকতে পারতো।। কে বলতে পারে, কোনো দুর্ঘটনা বা অসুস্থতার কারণে যে কোনো সময় আপনি বা আপনার নিকট কোনো স্বজন যে তাদেরই একজন হবেন না?

তাই সময় থাকতে আসুন, আমরা দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন ঘটিয়ে প্রতিবন্ধী মানুষের পাশে এসে দাঁড়াই। তাদের মৌলিক মানবিক অধিকার আদায়ে সোচ্চার হই।

প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য কিছু প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার নিশ্চিত করলে তারা একাই সহজ-স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবেন। উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালেই আমরা এর প্রমাণ পাই। এমন কোন কাজ নেই যা তারা করছেন না। আমাদের দেশে উন্নত সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হলে প্রতিবন্ধীদের জন্য জীবন যাপন অনেক সহজ হবে। কিন্তু তাই বলে বসে থাকলে চলবে না।

আমরা যা করতে পারি, তা হচ্ছে-- প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে সাধ্যমত প্রতিবন্ধী মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি। আর আমাদের দেশের অনেক আইনও এ বিষয়টি সমর্থণ করে। এসব আইনি অধিকার বাস্তবায়িত হলে প্রতিবন্ধীদের আজকের এই পরনির্ভরশীল জীবন কাটাতে হয় না।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার সুরক্ষা আইন ২০১০ তৈরীর জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। আমাদের আশা, এই আইনটির যথাযথ বাস্তবায়ন।

বাংলাদেশের ’স্যোশাল অ্যাসিসটেন্স অ্যান্ড রিহ্যাবিলেটেশন্স ফর দা ফিজিক্যালি ভারনারেবল’ (এসএআরপিভি)-এর চীফ এক্সিকিউটিভ জনাব শহিদুল হকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর সংখ্যাই সবচেয়ে বেশী ৩৩.৭%, তারপরই শারীরিক প্রতিবন্ধীদের অবস্থান ২৪.৪%। এছাড়া অন্যান্যদের মাঝে আছে কুষ্ঠ

অটিজেম বা বুদ্ধি-প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য বিশেষ ধরণের স্কুলের প্রয়োজন হয়। এ দেশে অল্প কয়েকটি এ ধরণের বিশেষ স্কুল আছে। কিন্তু যারা শারীরিক প্রতিবন্ধী, তারাই রয়েছেন সবচেয়ে সমস্যা-সঙ্কুল অবস্থায়। কারণ তারা না পারছে প্রতিবন্ধীদের বিশেষ স্কুলে যেতে; আবার না পারছে সাধারণ স্কুলে পড়তে।।

কী করলে এ ধরণের মানুষগুলো ঘর থেকে বের হয়ে মিশতে পারবে সমাজে, আসুন, আমরা তাই দেখি:

*প্রথমেই যা প্রয়োজন, তা হল পরিবারের সহযোগিতা। অন্য স্বাভাবিক সন্তানটির মত প্রতিবন্ধী সন্তানটিরও রয়েছে শিক্ষা, চিকিৎসা, বিনোদন, ভালবাসাসহ সব ধরণের পারিবারিক অধিকার--এ কথা অভিভাবক ও পরিবারের সদস্যদের বুঝতে হবে।

*আপনি অভিভাবক হলে, পরিবারের প্রত্যেক সন্তানকে শিক্ষা দিন, ওদের বন্ধু হতে। ওদের সাথে খারাপ ব্যবহার না করতে। তাদের ব্যাঙ্গ,কটুক্তি বা টিটকারি না করতে। কারণ এতে ওরা দুঃখ পায়। তাদের বোঝাতে হবে, প্রতিবন্ধীরাও তোমারই মতো মানুষ।

*বাড়ি তৈরী করার সময় একবার ভাবুন, আপনার একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী সন্তান থাকলে, আপনি তার জন্য কী ব্যবস্থা নিতেন? কারণ, কোনো দুর্ঘটনা বা অসুস্থ্যতা জনিত কারণে যে কেউ যখন-তখন প্রতিবন্ধী হয়ে যেতে পারেন! তাই বাড়ি তৈরির সময় একটু খেয়াল রাখুন, বাথরুমসহ এর ঘরগুলোর দরজা কী হুইলচেয়ার চলাচলের জন্য যথেষ্ট চওড়া? এ দিকগুলো খেয়াল রেখে ভাড়াটিয়ার জন্যও বাড়ি তৈরি করুন।

*সমস্ত সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে প্রতিবন্ধী মানুষের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ও সুলভে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা। তাদের জন্য যথেষ্ট সংখ্যক র‌্যাম্প, হুইলচেয়ারসহ অন্যান্য সহকারী সরঞ্জামের ব্যবস্থা করা। প্রতিবন্ধীদের ব্যবহার উপযোগী বাথরুম বা টয়লেটের ব্যবস্থা করা।

*প্রতিটি স্কুলে র‌্যাম্প রাখুন যাতে একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী মানুষ সহজেই তার হুইলচেয়ারটি নিয়ে স্কুলে প্রবেশ করতে পারে।প্রতিবন্ধীদের কর্মক্ষেত্রে যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা চাই। তাই প্রতিটি বাস, ট্রেনসহ অন্যান্য পাবলিক যানবাহনে আসন সংরক্ষণ, শারীরিক প্রতিবন্ধী মানুষ বিশেষ করে হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী যাতে সে সব যান-বাহনে সহজেই উঠতে পারেন, সে জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। একইভাবে অন্যান্য প্রতিবন্ধীর জন্যও তাদের উপযোগী ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন।

*বাংলাদেশের কোনো বড় শপিং মল, বিপনী বিতান, এমন কী মার্কেট, সিনেমা হলসহ বিনোদন কেন্দ্রে প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য র‌্যাম্পের ব্যবস্থা নেই। তাই সেটিও নিশ্চিত করতে হবে।

*দেশে রয়েছে নানা ধরনের প্রতিবন্ধী মানুষ। তাদের জীবন-যাপন সহজ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের সহকারী সরঞ্জাম প্রয়োজন হয়, যেমন সাদা ছড়ি, বিভিন্ন ধরণের হুইল চেয়ার, হিয়ারিং এইড, ভয়েস সিন্থেসাইজার, ব্রেইল পদ্ধতি, ব্রেইল ব্লক--ইত্যাদি প্রয়োজন। সুলভে এগুলোর সহজ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।

*প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য কিছু বাথরুমের সরঞ্জামেরও প্রয়োজন হয়, যা এ দেশে বিরলই বলা যায়। তাদের জন্য পাবলিক টয়লেটগুলোতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

সবশেষে, আমরা বলতে চাই, যে দিকগুলোর কথা তুলে ধরা হলো, এর কোনটিই খুব ব্যয়-বহুল নয়, বরং প্রয়োজন প্রতিবন্ধীদের চাহিদার দিকে নজর দেওয়া।

আপনার প্রতিটি সন্তানই আপনার প্রিয়। আমরা যারা প্রতিবন্ধী, তারাও এ দেশেরই সন্তান। তাই রাষ্ট্রের দায়িত্ব আমাদের মৌলিক মানবিক দিকটিও নিশ্চিত করা, যাতে আমরা এ দেশের বোঝা হয়ে না থেকে, প্রত্যেকে এ দেশের একজন যোগ্য নাগরিক হতে পারি, দেশের সেবায় নিজেকে কাজে লাগাতে পারি। এই দায়িত্ব শুধু যাদের পরিবারে একজন প্রতিবন্ধী আছে তাদের নয়, আপনারও কারণ বাড়ীর বাইরে যাওয়াই তাদের জন্য খুবই দুঃসাধ্য কাজ।

লেখকঃ সালমা মাহবুব, ২ জানুয়ারী, ২০১০।

 
Design by Oronno Anam | Bloggerized by Salma Mahbub