তাদের জানতে-বুঝতে আপনি যা করতে পারেন

অনাদরে, অবহেলায় মরে গেল আমার ভাই, জেমস। তার জন্ম ১৯৪৩ সালে। জেমসের একধরনের বংশগত অস্বাভাবিকতা ছিল, যাকে বলা হয় ডনস সিনড্রোম। গুরুতর শিখনপ্রতিবন্ধিতা ছিল। ১৯৯৯ সালে ব্রিটেনে মারা যাওয়ার আগে সে মারাত্মক নিউমোনিয়া বাঁধিয়ে ফেলেছিল। তার সমস্যাটা খুঁজে পেতে চিকিৎসকেরা যথেষ্ট সময় ও কষ্ট স্বীকার করতে চাননি। ডায়রিয়া হয়েছিল। যে আবাসিক পরিচর্যাকেন্দ্রে সে থাকত, তা যথাযথভাবে যাচাই না করেই তারা শুধু ডায়রিয়ার চিকিৎসা করল। প্রতিবন্ধীদের দেখাশোনার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক ও পরিচর্যাকারীদের সঙ্গে সে যোগাযোগ করতে পারেনি। তাই সে মরে গেল। তার জন্মদিন ৩ ডিসেম্বর। এ দিনটি আমার কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
যেসব মানুষের জীবন এক বা একাধিক প্রতিবন্ধিতার কারণে বেশির ভাগ মানুষের চেয়ে অনেক কঠিন, তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা, অনুভূতি বোঝার চেষ্টা আমরা কি কখনো করেছি? এই প্রশ্ন নিজেকেই করা দরকার। তাদের প্রতি আমাদের আচরণ কেমন হতে পারে, আমরা কী করব বা বলব, তা না জানার কারণে প্রায়ই আমরা বিব্রত ও ক্লেশ বোধ করি। এখানে কিছু প্রায়োগিক পরামর্শ আমি লিখছি, যা হয়তো প্রতিবন্ধীদের অনুভূতি বুঝতে সহায়ক হবে। এগুলো আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে তুলে আনা। আমার বেড়ে ওঠার সময়ে পাশে ছিল গুরুতর শিখনপ্রতিবন্ধী ভাই আর পরবর্তী জীবনে আমার এক ছেলেরও এ ধরনের প্রতিবন্ধিতা ছিল। এর বাইরেও বহু প্রতিবন্ধীর সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুতা আমার জীবন ও কর্মকে সমৃদ্ধ করেছে।
১৯৯০-৯১ সালে বাংলাদেশের জাতীয় প্রতিবন্ধী নীতির প্রথম খসড়া দাঁড় করানোর জন্য আরও কয়েকজনের সঙ্গে যুক্ত থাকা এবং এ ক্ষেত্রে অগ্রগতির ধীরগতি দেখার অভিজ্ঞতা থেকে জানি, প্রতিবন্ধীদের নানা সমস্যার বিষয়ে কর্তাব্যক্তিদের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন। সরকারের বেশির ভাগ বাজেট-পরিকল্পনায় প্রতিবন্ধীদের অধিকার স্থান পায় একদম শেষে। বহু কাজ এখনো করা বাকি। তাই আমি তাগাদা দেব এগুলো সম্পন্ন করুন। আমি বেশ আনন্দিত, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা যেসব বিপদের মুখে পড়ে, সেগুলোর ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার আন্তরিক আগ্রহ দেখাচ্ছে। বাংলাদেশসহ বহু দেশে অনেক প্রতিবন্ধী বন্ধুর সঙ্গে আমি কাজ করেছি। আর সব সময় আমি চেষ্টা করেছি প্রতিবন্ধিতা নয়, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির ওপর মনোযোগ দিতে। আশা করি, নিচে যে পরামর্শগুলো তুলে ধরছি, সেগুলো মন্ত্রী ও সরকারি কর্মী বাহিনীকে প্রতিবন্ধীদের ব্যাপারে করণীয় আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে। অবশ্য সর্বোত্তম পরামর্শ হলো, কোনো প্রতিবন্ধীর সঙ্গে আপনি কেমন সম্পর্ক করবেন, তা নিয়ে দ্বিধা থাকলে তার কাছেই পরামর্শ চান।

কারও যদি এক ধরনের প্রতিবন্ধিতা থাকে, তার সঙ্গে এমন আচরণ করা যাবে না, যাতে মনে হয় সে অন্য অনেকভাবে প্রতিবন্ধী। হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীর সঙ্গে এক সিলেবলের সরল শব্দে কথা বলা, শ্রবণপ্রতিবন্ধীকে চিৎকার করে কিছু বলা এবং দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর সঙ্গে কথা বলার সময় অন্য কারও মাধ্যমে কথা বলার প্রবণতা দেখা যায়।

কোনো ব্যক্তির প্রতিবন্ধিতার ওপর নয়, ব্যক্তিটির ওপরই মনোযোগ দিন। যদি মনে হয় কোনো প্রতিবন্ধীর সাহায্য প্রয়োজন, তবে তাকে জিজ্ঞাসা করুন, আপনি সাহায্য করতে পারেন কি না এবং কীভাবে তা করা যায়। সাহায্য করার কথা বলতে আপনার দ্বিধা থাকতে পারে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরও সাহায্য চাইতে দ্বিধা থাকতে পারে। প্রতিবন্ধীরা সাধারণত যতটা সম্ভব স্বাধীন থাকতে চায়। তাই যদি আপনার সাহায্যের দরকার না লাগে, তাতে অপমানিত বোধ করবেন না এবং অন্য কোনো সময় সাহায্য করতে চাওয়া থেকে বিরত থাকবেন না। কখনো বলবেন না, ‘আমি যদি তুমি হতাম, তাহলে এই চেষ্টা করতাম না’—কোনো প্রতিবন্ধী ব্যক্তি কী করতে পারে বা না পারে, তা সাধারণত সে-ই সবচেয়ে ভালো বিচার করতে পারে। করুণা দেখাবেন না। এমন কথা বলবেন না, ‘তুমি যে কীভাবে চালিয়ে নিচ্ছ; হাঁটতে না পারলে আমি তো মরেই যেতাম।’ এমন কথা প্রায়ই আহত করে এবং প্রশংসার আড়ালে নিজের ভিন্নতার বোধই জাগিয়ে তোলে।

যে শিশুর প্রতিবন্ধিতা আছে, তার সঙ্গে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক আচরণ করুন। অন্য শিশুদের মতোই তাদের কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে দেবেন না। অন্য শিশুর মতোই প্রতিবন্ধী শিশুদেরও সমাজের গ্রহণযোগ্য আচরণের সীমা জানা দরকার।

বিলম্ব না করে আপনার পরিচয় জানিয়ে দিন। ‘হ্যালো’ বা অন্য কোনো সম্ভাষণ শুনেই আপনার অবস্থান সম্পর্কে ধারণা করা একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর জন্য সব সময় সম্ভব হয় না। সে যদি আপনার পরিচয় না বুঝতে পারে, তাহলে তার পক্ষে আন্তরিকভাবে সম্ভাষণের জবাব দেওয়া মুশকিল। সুতরাং, আপনার পরিচয় দিন এবং প্রাসঙ্গিক কোনো ঘটনা বর্ণনা করুন—যেমন, ‘হ্যালো, আমি তাসনিম। গত সপ্তাহে ফরিদার বাড়িতে আপনার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল।’ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তির নাম মনে রাখতে বিশেষ যত্ন নিন। তাকে উদ্দেশ করে কথা বলা হচ্ছে, এটা বোঝানোর জন্য তার নাম বলে কথা শুরু করাই একমাত্র পথ।

কোনো দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর উদ্দেশে ‘আপনাকে দেখে ভালো লাগল’-জাতীয় কথা বলতে দ্বিধা বোধ করবেন না। সেও হয়তো একইভাবে উত্তর দেবে। দেখা-সম্পর্কিত শব্দ পরিহার করা অসম্ভব—দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা এ ধরনের শব্দ ব্যবহারে খুব বেশি আত্মসচেতন নয়, হওয়ার দরকারও নেই।
অপ্রত্যাশিতভাবে কোনো দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর হাত ধরবেন না। তাতে সে ভয়ে চমকে উঠতে পারে। আসলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীকে ধরবেন না, তাকেই সুযোগ দিন আপনার হাত ধরার। তখন সে নিশ্চিন্তে আপনার থেকে অর্ধেক পদক্ষেপ পেছনে থাকবে এবং এভাবে সে বুঝতে পারবে, আপনার পরের পদক্ষেপে কতটা জায়গা বদল হচ্ছে। ‘এই এক কদম’, ‘সামনে পা ফেলুন’, কিংবা ‘একটু পেছনে যান’—এজাতীয় কথা বলবেন না। নিচের দিকে নামার সময় পা শূন্যে দোলাতে থাকা যেমন বিপজ্জনক, তেমনি অস্বস্তিকর। উঁচু-নিচু পথে চলার সময় তা তাকে অবহিত করুন।
দরজা কখনো অর্ধেক খোলা রাখবেন না। পুরোপুরি বন্ধ রাখুন, নয়তো একদম হাট করে খুলে রাখুন। টেলিভিশন দেখা থেকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীকে দূরে সরিয়ে রাখবেন না। তার দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন বন্ধুদের জানা দুনিয়ায় প্রবেশের রাস্তা এই টেলিভিশন। বাইরের কর্মকাণ্ড থেকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বন্ধুকে বাদ দেবেন না। তার বাজার আপনি করে দেওয়ার বদলে তাকে জিজ্ঞাসা করুন আপনার সঙ্গে সেও বাজার করতে চায় কি না।

কোনো শিখনপ্রতিবন্ধীর কাছে কোনো শিশু গেলে তাকে খেদিয়ে দেবেন না। (প্রায়ই ভুলবশত শিখনপ্রতিবন্ধীদের বলা হয় ‘মানসিক প্রতিবন্ধী’)। শিখনপ্রতিবন্ধীদের ভয় পাবেন না। তারা সাধারণত সহিংস হয় না। আর তারা যদি অনেকের মাঝে বাস করে, তাহলে ধরে নিতে পারেন, তারা সহিংস আচরণ করবে না। শিখনপ্রতিবন্ধীদের এড়িয়ে যাওয়া বা প্রত্যাখ্যান করাই সাধারণত তাদের মেজাজ বিগড়ে দেওয়ার প্রধান কারণ। তাদের সঙ্গে সৎ আচরণ করতে হবে, প্রতিশ্রুতি রাখতে হবে। শিখনপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি আপনার প্রতিশ্রুতি বোঝে না কিংবা মনে রাখে না—এমন মনে করবেন না। উদাহরণ হিসেবে বলি, আমার শিখনপ্রতিবন্ধী ছেলে নিলের বয়স এখন ৩২; তার স্মৃতিশক্তি বিস্ময়কর এবং নিজের অবস্থান বা লক্ষ্য সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান তার আছে।
মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তির কথা সময় নিয়ে শুনুন। ভাববেন না, তার কোনো জ্ঞান বা মত নেই।
প্রতিবন্ধী সন্তানের মা-বাবার প্রতি করুণা প্রকাশ করবেন না। মা-বাবার কাছে সব সন্তানই প্রিয়। কাউকে উপদেশ দিতে যাবেন না। তবে যদি পেশাগত দিক থেকে কাউকে কোনো নির্দেশনা না দেওয়া হয় এবং তাকে সাহায্য করা আবশ্যক মনে হয়, তখনই কেবল তাকে উপদেশ দিন। মনে রাখবেন, আপনি কোনো প্রায়োগিক সহায়তা দিতে চাইলে দীর্ঘ সময় ধরে তা দিতে হতে পারে। মানসিকভাবে অসুস্থ কাউকে বলবেন না, ‘সংযত হও’। তারা যদি তা পারত, তাহলে তো করতই।
আপনাকে যদি হুইলচেয়ার না ধরতে বলে, তাহলে ধরবেন না। অনভিজ্ঞ কেউ ধরলে চেয়ারে বসা ব্যক্তি সহজেই ছিটকে পড়তে পারে। দ্রুত চেয়ার ঘোরাতে গেলে তাকে সতর্ক করার কথা মনে রাখতে হবে। আপনার প্রতিটি পদক্ষেপ আগেই তাকে জানানো দরকার। আপনি যে গতিতে চেয়ারে ধাক্কা দিচ্ছেন, তাতে হুইলচেয়ারে বসা ব্যক্তি কতটা স্বস্তি বোধ করছে, তা খেয়াল করতে হবে। হাত রাখার জায়গায় ধরে চেয়ারটি তুলবেন না, তাহলে হয়তো হাতল আপনার হাতে চলে আসবে। মনে রাখবেন, আপনি উৎফুল্ল চিত্তে যা বলছেন, তা চেয়ারে বসা ব্যক্তিটির পক্ষে শোনা কঠিন হতে পারে। কেননা, আপনার কথা পেছন থেকে আসায় যানবাহনের শব্দের সঙ্গে পেরে উঠবে না। তা ছাড়া তার অবস্থান থেকে সে হয়তো দেখবে না, আপনি কোন দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাচ্ছেন।
স্থির হুইলচেয়ারে বসা ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার সময় আপনার মাথা একই স্তরে রাখুন। নিচের দিকে চেয়ে কথা বলা এবং ওপরের দিকে চেয়ে শোনা সব সময় অস্বস্তিদায়ক। সিঁড়ি দিয়ে হুইলচেয়ার কীভাবে নামানো বা ওঠানো যায়, তা চেয়ারে বসা ব্যক্তির কাছে জানতে চান, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সাধারণত সোজা কোনো কৌশল জানে।

শ্রবণপ্রতিবন্ধীর সঙ্গে কথা বলার সময় আপনার চেহারা যেন সে স্পষ্ট দেখতে পায়। আপনি আলো বা জানালার বিপরীতে মুখ করে দাঁড়ালে আপনার ছায়া পড়তে পারে। আপনার ঠোঁটের নড়াচড়া পড়ে বোঝার জন্য যতটা বিস্তারিতভাবে দেখা দরকার, তা তখন সম্ভব হয় না। কথা বলার সময় নড়াচড়া কম করবেন, না হলে কিছু কথা হারিয়ে যাবে। ঠোঁটের নড়াচড়া দেখে কথা বুঝতে সাহায্য করার জন্য মুখ বিকৃত করবেন না। যেসব সূক্ষ্ম চিহ্ন থেকে সে অর্থ তৈরি করে, তা মুখের এমন কসরতের ফলে হারিয়ে যায়। আর চিৎকার দিয়ে কথা বলবেন না। তাতে কাজ হয় না, বরং শ্রুতিসহায় যন্ত্রের ক্ষতি হতে পারে।

মনে রাখবেন, শ্রবণপ্রতিবন্ধী কোনো ব্যক্তি অন্ধকারে বাইরে যেতে ভয় পেতে পারে। ঘরের ভেতরে নিরাপদ আলো পাওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করুন। রাতের বেলা আপনার সঙ্গী যদি কোনো শ্রবণপ্রতিবন্ধী হয়, তাহলে সঙ্গে করে টর্চ নিতে ভুলবেন না। তাকে কিছু বলার সময় আপনার মুখে আলো ফেলবেন। শ্রবণপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি কী বলতে চাচ্ছে, তা যদি না ধরতে পারেন, কিংবা তার শ্রুতিসহায় যদি বাঁশি বাজার মতো শব্দ করতে থাকে, তাহলে চুপ করে থাকবেন না, অকপটে বলুন। নইলে কেমন করে সে বুঝবে?

কাউকে ছোট করে দেখবেন না। শ্রবণপ্রতিবন্ধীর কণ্ঠ অদ্ভুত মনে হতে পারে, কিন্তু এমন ভাব করার দরকার নেই যে তার শিখনপ্রতিবন্ধিতাও আছে।
গান বাজান। শ্রবণপ্রতিবন্ধীরা স্পন্দন অনুভব করে বিট ‘শুনতে’ পারে। শ্রবণপ্রতিবন্ধী কিশোর-কিশোরীরা গানের সঙ্গে নাচতে পছন্দ করে। যত উচ্চ স্বরে গান, তত ভালো।

ইংরেজি থেকে অনুবাদ: আহসান হাবীব
জুলিয়ান ফ্রান্সিস: সমাজকর্মী, দারিদ্র্য বিমোচন নিয়ে কাজ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কিত।

সুত্রঃ প্রথম আলো, ০৩-১২-২০১০
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-12-03/news/112897

আমরা কি ওদের পাশে দাঁড়াতে পারি ?

সাভারে সিআরপি এর কাছে অনেক কষ্টে আল আমিনদের ছোট্ট স্যাঁতস্যাঁতে আধো অন্ধকার ঘরটিতে পৌঁছেছিলাম।বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে থাকা কিশোরটির মুখের হাসি দেখে কে বলবে গলার নীচ থেকে তারসারা শরীর অবশ। রুপালী বেগম ও আকমল হোসেনের প্রথম সন্তান, তাও আবার ছেলে। তাদের যা চাওয়ার ছিল সকলই যেন দিয়েছিলেন বিধাতা। কিন্তু ভাগ্যে সইলো না, ২০০৮ সালে মামারবাড়ী বেড়াতে গিয়ে তাল গাছে উঠেছিল আল আমিন, সেখান থেকে পড়ে গিয়ে মেরুদন্ডে আঘাত লাগে। বাঁচার আশা ছিল না বলতে গেলে কিন্তু সিআরপিতে দীর্ঘ ২ বৎসরের চিকিৎসায় প্রাথমিক আঘাতটি থেকে সেরে উঠেছে আল আমিন, কিন্তু শারীরিকভাবে পঙ্গু হয়ে গেছে সারাজীবনের জন্য। তারপরও আল আমিন পড়তে চায়, সেই কারণেই দেখতে গিয়েছিলাম ওকে, কি করে বি-স্ক্যান থেকে সহায়তা দেয়া যায় যেভাবে আমরা আগেও দিয়েছি। এস এসসি পাশ রুপালী বেগম অন্যের বাসায় কাজ করেন এবং অবসর সময় সেলাই কাজ করে থাকেন। এখানে উল্লেখ্য যে আল আমিনের চিকিৎসায় খরচ হওয়া ৯ লক্ষ টাকার পুরোটাই সিআরপি বহন করেছে। সারা গায়ে ঘা হয়ে গিয়েছিল আল আমিনের, যে চিহ্ন এখনো আছে সারা শরীরে।




বিড়ম্বনারএখানেই শেষ নয় আল আমিনের বাবার চোখে এক সমস্যা দেখা দিয়েছে । ওঁদের ভাষ্য মতে দু
চোখের পাশে মাংস বেড়ে যাচ্ছে। চোখ দু'টো লাল হয়ে আছে। সূর্যের আলো সহ্য করতে পারেন না বলে প্রায়ই কাজে যেতে পারেন না। চোখ অপারেশেন করতে হবে,বারো হাজার টাকার প্রয়োজন। আল আমিন এর পড়াশোনার দায়িত্ব আপাতত তার মা ই নিতে পারবেন যদি আল আমিনের বাবা সংসারটির হাল ঠিক মত ধরতে পারেন। আর তা না হলে আল আমিন, তার উপর তার বাবার চোখের আলোও যদি নিভে যায় তখন কি করে রুপালী এই সংসার চালাবেন এবং একি সাথে দুইজন অসুস্থ মানুষের সেবা করবেন তা ভেবে দিশেহারা। আল আমিনের ৭/৮ বছরের আরো একটি ছোট ভাইও রয়েছে।

আমরা কি দাঁড়াতে পারি আল আমিনের পরিবারটির পাশে? 

- সালমা মাহবুব, ১৫ জানুয়ারী, ২০১১।

আমাদের সাবরিনা, এক অপরাজিতা ফুল

হুইলচেয়ারে বসে ল্যাপটপ কম্পিউটারে খুটখাট করতে করতে জানালার পর্দার ফাঁক দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে একটি মেয়ে। উন্মুক্ত আকাশ দেখার বাসনায় দিনমান জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকে মেয়েটি। কিন্তু মেয়েটির সেই উন্মুক্ত আকাশ দেখার ক্ষণটি আর আসে না কিছুতেই। এভাবেই তার দিন কাটে, রাত যায়। মাস আসে, বছর ঘুরে ঘুরে যুগও পেরিয়ে যায়। কিন্তু মেয়েটির আকাশ দেখার অপেক্ষার প্রহর আর ফুরোয় না। ফুরাবে কী করে! মাসকুলার ডিসট্রোফি নামক ভয়ানক এক রোগ যে বাসা বেঁধেছে মেয়েটির শরীরে। ফলে ধীরে ধীরে শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গই ক্ষয়ে যাচ্ছে। এভাবেই দিন কাটছে চট্টগ্রামের মেয়ে সাবরিনা সুলতানার।

শরীরে ভয়ানক রোগ নিয়েও থেমে নেই সাবরিনা সুলতানা। নিজের দিকে তাকিয়ে অপরের কষ্ট অনুভব করার চেষ্টা করেন তিনি। আর তাই তো নিরলসভাবে প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।


একসময় অন্য সবার মতোই সুস্থ-স্বাভাবিক ছিলেন তিনি। স্কুল থেকে এসেই পাড়াময় দস্যিপনা করে বেড়াতেন। পাতাকুড়ানি খেলার সঙ্গীদের সঙ্গে দুষ্টু প্রজাপতির পেছনে ঘুরে ঘুরে সময় কাটত তাঁর। তারপর বাসায় ফিরে মা আর যমজ ভাইদের সঙ্গে রাজ্যির কথার খই ফুটত তাঁর মুখে। মাঝে মাঝে ভাইদের সঙ্গে এটা-ওটা নিয়ে একটা হল্লাও বাধিয়ে ফেলতেন বাসায়। ছেলেবেলায় এমনই ছিলেন সাবরিনা। কিন্তু সেই সোনারঙা দিনগুলো খুব বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। কারণ, সেই ছেলেবেলায় সাবরিনার জীবনাকাশ ছেয়ে যায় মাসকুলার ডিসট্রোফি নামক ঘন কালো মেঘে। সেই মেঘ সরানোর পথ জানা নেই কারও।
১৯৮৯ সাল। বয়স কেবল সাত। মা আফরোজা আকতার সাবরিনাকে নিয়ে গোসল করাতে ঢুকেছেন গোসলখানায়। গোসল শেষে উঠে দাঁড়াতে গিয়ে সাবরিনা হঠাৎ বুঝতে পারলেন নিজে থেকে আর দাঁড়াতে পারছেন না তিনি। প্রথমে দুষ্টুমি ভাবলেও মেয়ের মুখের ভাব দেখে মা-ও বুঝতে পারলেন, কিছু একটা হয়েছে। এরপর শুরু হলো চিকিৎসার পালা। না, কিছুতেই কিছু হয় না। মেয়েকে সুস্থ করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন বাবা আবদুস সবুর ও মা আফরোজা। অ্যালোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি থেকে শুরু করে তাবিজ-কবজ-ঝাড়ফুঁক কোনো কিছুই বাদ দিলেন না। অতঃপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ শাহাদাৎ হোসেন প্রথম রোগটির নাম আবিষ্কার করলেন—মাসকুলার ডিসট্রোফি। এ রোগে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধীরে ধীরে বিকল হয়ে যায়। সাবরিনার রক্তের সিপিকে (ক্রিয়েটিন ফসফোকাইনেজ) পরীক্ষা করা হলো। সাধারণত একজন সুস্থ মানুষের রক্তে সিপিকের মাত্রা থাকে ১৬৭। কিন্তু সাবরিনার শরীরে তত দিনে তা দাঁড়িয়ে গেছে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি। গোটা বিশ্বে এ রোগের কোনো ওষুধ আজ অবধি আবিষ্কৃত হয়নি।


এরপর সাবরিনার রক্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠানো হলো। কিন্তু কোথাও কোনো সমাধান পাওয়া গেল না। সবচেয়ে মর্মান্তিক ব্যাপার হলো, সে সময় চিকিৎসকেরা সাবরিনার আয়ুষ্কাল বেঁধে দিয়েছিলেন ১৩-১৪ বছর।


১৯৯৭ সালে সাবরিনা এক বছরের জন্য বাবার সঙ্গে পাড়ি জমালেন মালয়েশিয়ায়। কিন্তু সেখানেও হতাশ হতে হলো!
একসময় সাবরিনাও জানতে পারলেন, তিনি আর কোনোদিন অন্যদের মতো স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারবেন না।


সেই ঘাতক ব্যাধির কারণেই একসময় স্কুলে যাওয়াও বন্ধ হয়ে যায় সাবরিনার। ধনুকের মতো শরীর বাঁকা হয়ে যায়। চলল বাসায় বসে পরীক্ষা দেওয়া। কিন্তু সেটাও আর বেশি দিন স্থায়ী হলো না। পঞ্চম শ্রেণীতেই তাঁকে ইস্তফা দিতে হলো পড়ালেখায়। আর কোনোদিন পড়ালেখা করতে পারবেন না ভেবে বুকের ভেতর গুমরে উঠত কান্না। তাই বলে নিজের ইচ্ছাশক্তির কাছে হার মানতে নারাজ সাবরিনা। বাসায় বসে একা একাই শুরু করলেন বিভিন্ন ধরনের বই আর পত্রপত্রিকা পড়া। এভাবেই চার দেয়ালের মধ্যে বসে কেটে গেল কয়েক বছর।


সাবরিনা বললেন, ‘শুনেছি, যেদিন দুই চোখ মেলে প্রথম পৃথিবীর আলো দেখেছিলাম, সেদিনই বাবা আমায় কোলে নিয়ে নাম রেখেছিলেন ‘সাবরিনা’। তবে সাত বছর বাদে সমাজ আমার নতুন নামকরণ করল, ‘প্রতিবন্ধী’। তাই আমার প্রাণবন্ত উচ্ছলতা কোথায় যেন হারিয়ে গেল! বন্দী হয়ে পড়লাম চার দেয়ালের মাঝে।’


এবার আর বসে থাকা নয়। বাঁচার জন্য লড়তে হবে। তাই শুরু করলেন সমাজের প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার নিয়ে স্থানীয় পত্রিকায় লেখালেখি। লেখালেখির মাধ্যমেই পরিচয় চট্টগ্রামের সাংবাদিক রিয়াজ হায়দারের সঙ্গে। পরিচয়ের সূত্র ধরেই প্রণয়, প্রণয় থেকে ঘর বাঁধা। নতুন ঘরে এসে সাবরিনা আরও বেশি স্বাধীনতা পেলেন। ঠিক যেমনটা চেয়েছিলেন তিনি।


তবে হঠাৎ করে আবারও একটি সংবাদ সাবরিনার মনটাকে ভারী করে তোলে। জানতে পারলেন একমাত্র ছোট বোন তাসনীন সুলতানা নীলার শরীরেও বাসা বাঁধছে ওই ভয়ংকর রোগ এবং তাঁর মতোই সমাজের উপেক্ষার শিকার হতে হলো তাঁকে। এ সবকিছু দেখে সাবরিনা আর বসে থাকলেন না। নিজেকে প্রশ্ন করলেন, আর কত পিছিয়ে থাকবে প্রতিবন্ধীরা? তাঁদেরও অধিকার আছে মানুষের মতো বেঁচে থাকার। আর এ জন্য প্রয়োজন মানুষকে সচেতন করে তোলা।
ঠিক এমনি সময় বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে খুঁজে পেলেন ইন্টারনেট। শুরু করলেন বাংলা ব্লগগুলোতে প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার নিয়ে লেখালেখি। এরপর যোগ দিলেন সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুকে। ফেসবুকে প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে উঠেপড়ে লেগে গেলেন তিনি।


২০০৯ সালের ১৭ জুলাই, ফেসবুকে নানা পেশার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করে একটি গ্রুপ খুললেন সাবরিনা। নাম—‘বাংলাদেশ সিস্টেমস চেঞ্জ অ্যাডভোকেসি নেটওয়ার্ক’ (বি-স্ক্যান)। সব ধরনের প্রতিবন্ধীকে নিজস্ব কথা বা তাঁদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরাই এর কাজ। আর সেই গ্রুপে যোগ দিল দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অনেক মানুষ।


এই গ্রুপ চায়, নিজেদের অবস্থান থেকে প্রত্যেকে যেন নিজে সচেতন হয়ে অন্যদের সচেতন করে তোলার কাজটি করে। বহু বছর পর গত ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি ঢাকায় এসেছিলেন বি-স্ক্যানকে আরেকটু এগিয়ে নিয়ে যেতে। প্রতিবন্ধীদের পক্ষে কথা বলতে যোগ দিয়েছিলেন চ্যানেল আইয়ের গ্রামীণফোন তৃতীয়মাত্রার অনুষ্ঠানেও।
এখন আর শুধু মানুষকে সচেতন করে তোলাতেই সীমাবদ্ধ নয় সাবরিনাদের বি-স্ক্যান। যেখানেই কোনো প্রতিবন্ধীর দুঃখের কথা শুনেছেন, সেখানেই ছুটে গেছেন বি-স্ক্যানের প্রতিনিধি। এই সাহসী মানুষটি আমাদের সবার কাছেই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সাবরিনা নিশ্চয়ই থেমে থাকবেন না। তিনি তো অপরাজিতা!


সুত্রঃ আবু হেনা, ২০ ডিসেম্বর, প্রথম আলো
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-12-15/news/115871

আমরা আছি তোমাদের পাশে

আমরা অত্যন্ত আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে বি-স্ক্যান এর পক্ষ থেকে প্রথমবারের মত তিনজন মেধাবী প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। সাংবাদিক হানজালা শিহাবের ২৫ জুলাই ২০১০ এর একটি প্রতিবেদন থেকে আমরা ওদের কথা জানতে পারি।

আপনাদের অনেকেরই হয়তো মনে আছে গলাচিপা শহরের এই তিনজন শিক্ষার্থীর জন্য সাবরিনা সুলতানা সহযোগীতা চেয়ে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন, দেরীতে হলেও সেই আহ্ববানে সাড়া দিয়ে এগিয়ে এসেছেন কানাডার টরোন্টোর বাংলাদেশী এসোসিয়েশেন ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বি-স্ক্যান সদস্য।





মা বাবার সাথে শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী শাহিন (বামে) ও বাপ্পি (ডানে)
টরেন্টোর বাংলাদেশী এসোসিয়েশেনএর সদ্য প্রয়াত সভাপতি রীনা হক এর নামে তাঁর বন্ধু ও সহকর্মীরা মিলে একটি স্কলারশিপ চালু করেছেন। সেই স্কলারশিপ হিসেবেই শাহিন ও বাপ্পি তাদের লেখাপড়ার খরচটি পাবেন। ফাল্গুনী সাহার ব্যয়ভার নিচ্ছেন একজন বি-স্ক্যান সদস্য । আগামী জানুয়ারী, ২০১১ থেকে এই তিনজন শিক্ষার্থীরখরচ দেয়া হবে বি-স্ক্যান এর মাধ্যমে। শাহিন,বাপ্পি ও ফাল্গুনীদের পাশে দাঁড়াতে পেরে আমরা আনন্দিত। বি-স্ক্যান পক্ষ থেকেনির্বাহী সদস্য মোঃ হাসান মিলন ও বি-স্ক্যান সদস্য নাজিরুল ইসলাম গত বৃহস্পতিবার, ৯ ডিসেম্বর , ২০১০ গলাচিপা গিয়ে চেক হস্তান্তর করেন।


ফাল্গুনী সাহা তার বাবা মা এর সাথে
উক্ত অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গলাচিপা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহ আলম, গলাচিপা ডিগ্রী কলেজের সহযোগী অধ্যাপক জনাবআব্দুর, রশিদ জনাব, গলাচিপা মডেল গভঃ প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমসহ এই তিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু শিক্ষকবৃন্দ, সমাজের গন্যমান্য ব্যক্তি ও স্থানীয় সাংবাদিকগণ।

দুই পরিবারের সাথে বি-স্ক্যান নির্বাহী সদস্য (মাঝখানে) ও স্বেচ্ছাসেবী সদস্য নাজিরুল ইসলাম (বামে)

ওদের শিক্ষাখাতের খরচটি আমাদের যেভাবে জানানো হয়েছে আমরা সেভাবেই ব্যবস্থা করেছিঃ

শামীমুর রহমান শাহিনঃ গলাচিপাডিগ্রী কলেজ- বেতন, প্রাইভেট টিউশান ফি, বই-খাতার খরচ সব মিলিয়ে মোট ২৩০০ টাকা।

নিয়াজ উদ্দীন বাপ্পিঃ গলাচিপা আইডিয়াল স্কুলের ২য় শ্রেনীর ছাত্র। স্কুলের বেতন, প্রাইভেট টিউশান ফি, বই-খাতার খরচ সব মিলিয়ে মাসে মোট ৯০০ টাকা।

ফাল্গুনী সাহাঃ প্রাইভেট টিউশান ফি, বই-খাতার খরচ সব মিলিয়ে মাসে মোট ২০০০ টাকা (স্কুলের বেতনফ্রী)।

বি-স্ক্যান এর পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি যারা সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাঁদের প্রতি-

বাংলাদেশী এসোসিয়েশেনের জনাব,হাসান মাহমুদ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বি-স্ক্যান সদ্স্য।

Financial Support for Studies of Three Children with Disability

“Every child with disability has the right to be educated sitting just next to a normal child in a regular school, not in a special one and after finishing education he/she should be considered as a candidate for an appropriate job for him/her”, said Md. Shah Alam, the headmaster of Golachipa Secondary school in a scholarship giving program arranged by the Bangladeshi Systems Change Advocacy Network (B-SCAN) in the Golachipa Secondary school premises on Thursday morning, 9 December, 2010. He also mentioned that, “ People with disabilities are capable enough to do well with success not only in education but also in every sector of life and they are not a burden to the society.” He mentioned about a student named Falguni Saha, a SSC candidatefor 2011 from his school, who lost her both wrist in a tragic accident when she was a student of class three. But, being motivated she didn’t give up her education but continued it and now going to sit for the SSC exam from Humanities group.



Among other invited guests, Abdur Rashid, Asst. Professor of Golachipa Degree College, Abul Kashem, Headmaster of Golachipa Model Govt. Primary School, several teachers from both schools and college, few honorable persons of the society and a few correspondents from different newspaper were present in the program. There was also a scholarship given to two brothers who has hearing impairment by birth. Shamimur Rahman (Shahin) is the elder among them who is a student of 1st year studying in Golachipa Degree College. He paseed SSC lastyear from Technical board with GPA 4.14. The younger one is Niaz Uddin (Bappi)who is a student of class 2 from Golachipa Model Govt. Primary School. Milon Hasan, executive member of B-SCAN and Nazirul Islam (Zico), volunteer member of B-SCAN went to Golachipa, Potuakhali to handover the check of scholarship.




Falguni is going to get 2000/- (Taka Two Thousand)per month from a B-SCAN member (who doesn’t want to disclose his/her name) where an organization named ‘’Bangladeshi Association’’ Toronto, Canada is giving Reena Haq Scholarship to the brothers where Shahin will get 2300/- (Taka TwoThousand Three Hundred) per month and Bappi will get 900/- (Taka Nine Hundred) primarily for 1 (One) year. Their scholarship will be extended based on their performances. Parents from both of the family were present in the program. Md. Shah Alam from Golachipa Secondary School and Md.Hasan Milon on behalf ofB-SCAN handed over the cheaque to the respective students in front of theaudience.

In a short speech Md.Hasan Milon informed the audience about the activities of B-SCAN for disabled people and previous experience working with different cases. He also informed the audience that B-SCAN is working for the rights of people with disability and helping many people to be self dependent. Parents from both family thanked B-SCAN for their support. To be mentioned here that, B-SCAN came to know about these two family from Golachipa by a report of Hanjala Shihab of Daily Naya Diganta.

Written by: Nazirul Islam (Zico)

 
Design by Oronno Anam | Bloggerized by Salma Mahbub