ব্যথিত বেদন বুঝিতে পারে

কোহিনূর বেগমের এবারের ঈদটা নিশ্চয়ই অন্য রকম হবে। নিরানন্দ জীবনের এ পর্যায়ে এসে হঠাৎ তাঁর মনে হচ্ছে, জীবনটা শুধু নিরেট গদ্য নয়, তাতে রয়েছে কবিতার ছন্দ। 


প্রথম আলোর ছুটির দিনে ম্যাগাজিনে ‘তাহার একদিন’ কলামে কোহিনূর বেগমের একটি সাক্ষাৎকার ছাপা হয়েছিল ২০০৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর। মুষলধারে বৃষ্টির পর তিনি তখন তাঁর দুই কন্যাকে নিয়ে ধানমন্ডি লেকের ধারে জীবন-সংগ্রামে ব্যস্ত। শুনিয়েছিলেন সংগ্রামের কাহিনি। দুই সন্তান জন্ম নেওয়ার পর শারীরিক প্রতিবন্ধী কোহিনূরকে ছেড়ে গেছেন স্বামী। এর পর থেকে কামরাঙ্গীর চরের ভাড়াবাড়ি থেকে তিনি ধানমন্ডি লেকের ধারে আসেন ভিক্ষা করতে। ধানমন্ডি-২ নম্বরের স্টার হোটেল থেকে ২৫ টাকার ভাত কিনে সন্তানদের নিয়ে দুই বেলা খান। তখনই বলেছিলেন, কাজ দ্যান না ক্যান? বলেছিলেন, কিছু টাকা পেলে একটি ছোট্ট দোকান দেওয়ার স্বপ্ন আছে তাঁর।


লেখাটি ছাপা হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই বি-স্ক্যান নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে যোগাযোগ করা হয়। হাজার দশেক টাকা দিতে চায় তারা। এই টাকায় কোহিনূরের দোকান হয়ে যাবে। 


কিন্তু বিধি বাম! সে সময় পুরো দুই মাস ধানমন্ডি লেকের পাড়ে গিয়েও কোহিনূর বেগমের দেখা মেলেনি। ওখানে যে ভিক্ষুকেরা থাকে, তাদের বলা হলো, কেউ কোহিনূর বেগমের খোঁজ দিতে পারে কি না, ওঁর জন্য সুখবর আছে। কিন্তু কেউ ওঁর ঠিকানা বলতে পারল না। কেন কোহিনূর এখানে আসেন না, সেটাও কেউ জানে না। সুতরাং যথারীতি তাঁকে ভুলে যাওয়া। যাঁরা টাকা দিতে চেয়েছিলেন, তাঁরাও একসময় খোঁজ নেওয়া বন্ধ করলেন। 


বহুদিন পর এ বছরের জুলাইয়ে আবার তাঁর দেখা মেলে। ধানমন্ডি লেকের পাড়ে আবার যখন যাতায়াত শুরু করেছেন, তখনই ওঁর বন্ধুরা নিশ্চয় ওর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছে।


‘আমারে নাকি সাহায্য করতে চায় মানুষ?’


তাঁর প্রশ্নটি যৌক্তিক, কিন্তু প্রায় এক বছরের ব্যবধানে সাহায্যটা পাওয়া যাবে কি না, সে নিশ্চয়তা ছিল না। প্রথম আলোর আবু হেনা নিল সেটা জানার ভার। আবার যোগাযোগ করল সেই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। জানাল, প্রতিষ্ঠানটি যাঁরা করেছেন, তাঁরা নিজেরা প্রতিবন্ধী বলে অন্য প্রতিবন্ধীর কষ্ট স্পর্শ করে তাঁদের। এ কারণেই তাঁরা একটি তহবিল করেছেন। কোহিনূরের জন্য এখনো টাকা বরাদ্দ আছে। আমরা টাকা হস্তান্তরের জন্য একটি দিন ঠিক করে ফেলি।


জুলাইয়ের শেষে এল দিনটি। ফুটপাতে ঘুমিয়ে থাকা কোহিনূরকে জানানো হলো, আজ তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হবে টাকা। কোহিনূরের চোখ-মুখে যে আলোর দীপ্তি দেখা গেল, তার সঙ্গে কি আর কিছুর তুলনা হয়!


সালমা মাহবুব এসেছিলেন বি-স্ক্যানের পক্ষ থেকে অর্থ হস্তান্তরের জন্য। তিনি বললেন, ‘কোহিনূর, আপনি পরাজিত হতে পারেন না। আপনার পাশে আমরা থাকব।’


কোহিনূরের কাছে গোটা ব্যাপারটাই ছিল অকল্পনীয়। স্বপ্ন হাতের মুঠোয় এসেছে, তাই গড়গড় করে বলতে থাকেন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা। দোকান দেবেন কামরাঙ্গীর চরের ভাড়াবাড়িটির সামনে। বাড়িওয়ালা রাজি। এরপর দোকান থেকে যে লাভ হবে, তা দিয়ে পড়াশোনা করাবেন দুই মেয়েকে। ১১ বছর বয়সী মেয়েটাকে ডাক্তারি পড়াবেন। এখন যদি মেয়েদের বাবা ফিরে আসে, তাকে বাড়িতে ঢুকতে দেবেন না। জীবনের কঠিন বাস্তবতা তাঁকে শিখিয়েছে সংগ্রাম করেই টিকে থাকতে হয়। যে ছেড়ে চলে যায়, তার আর স্থান নেই জীবনে।
এই বাজারে ১০ হাজার টাকা খুব বড় কিছু নয়। কিন্তু যাঁর জীবন কাটে ভিক্ষা করে, তিনি যদি জীবন বদলাতে চান, তাহলে এই টাকা অনেক অনেক বড় কিছু। বহু বছর পর সামনে যে ঈদটি আসছে, তা নিয়ে স্বপ্ন দেখতে পারছেন কোহিনূর বেগম। শর্ত একটাই, দোকানটা চালু করতে হবে দ্রুত, টাকা অকারণে নষ্ট করা চলবে না। 


জুলাই মাসের সেই দিনটির পর থেকে কোহিনূরকে আর ধানমন্ডি লেকের ধারে দেখা যায়নি।


হয়তো, ওর দোকানটি তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ ওর স্বপ্ন বোনার কাজ শুরু হয়ে গেছে। 


- জাহিদ রেজা নূর
সুত্রঃ প্রথম আলো, ২৫ আগস্ট, ২০১০। 
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-08-25/news/89163 

___________________________________________

Hearing Painful Agony
           
This Eid-festival might have passed happily for Kohinoor Begum! This occasion has changed her concept about gloominess of life. She now thinks, life does not mean only struggle; but it could be turned into safe & pleasant journey! 
An interview of Kohinoor was taken, while she was roaming with her babies in Dhanmondi lake; under heavy rain. The interview was published in a holiday Magazine of Prothom Alo on 26 September of 2009, titled as “Her One Day”. Her husband has left her as she got disabled! So, she is struggling alone with her two daughters. She comes to Dhanmondi lake for begging. She used to buy food worth TK 20 from Star Hotel of Dhanmondi- 2 and eats with her two kids two times of day. Then she told “Why don’t anyone get me a job to earn money? I dream of running a shop as soon as I could have some money! ‘’

After couple of days her message was published, a association named B-SCAN came forward with ten thousand taka. Alas! The association could not give her the expected money; with which she can commence her dreamt shop.
But what a misfortune! Kohinoor Begum could not be found at the place for about two months. No body could provide her residual address. Even no other beggars around knows about her! As she could not be found after possible search, the donation willing parties forgot about her. Consequently, all concern about her ceased!

She was seen in July this year; after a long time! She started her journey again at Dhanmondi lake and heard about her search by a donating party, from other beggars.

Was there any party searching for me, in order to help me? A logical question, as donation may not be available after a long lapse! Fortunately; Abu Hana; a reporter of Prothom Alo took the charge and communicated with the B-SCAN association.

He informed Kohinoor that the association runs by  people with disabilities. As they are disabled, pain of other disabled or helpless people touches their conscience. They have made a fund for helping other disabled. The organization decided to donate Kohinoor as well!

One day in July sanctioned to donate the money!  Street living Kohinoor was informed of the receipt message. Nothing can be compared with her happiness with the news. B-SCAN’s general secretary  Salma Mahbub came with the amount. She told her, ‘Kohinur, you cant be defeated.  We will be beside you.’

The entire matter looked unimaginable to her! She has got her dream in hand; started uttering her dreamt plan without break! She would lay a shop in front of her rented house in Kamrangirchar. Her landlord has agreed! Then whatever she can earn, would try to send her daughters to school. She told us, she would send her 11 years old daughter to Medical College in future - - would never allow her husband to enter into their house again. This hard practical life has taught her to struggle! Who has left them, could not be accepted back!

At this period, Tk 10,000/= is nothing! But this amount can change life of a beggar! After long time, she is dreaming of having a good Eid; the coming Eid! The only condition is to ‘’spend the money carefully by commencing the shop; not spending the amount unnecessarily.’’

Kohinoor has not been seen in Dhanmondi lake after that day anymore! Perhaps, she has started the shop! That means her dream has been turned into practical.


-Translated by Dr. Lailun Nahar

0 মন্তব্য(সমূহ):

Post a Comment

 
Design by Oronno Anam | Bloggerized by Salma Mahbub