সিআরপিতে পড়াশোনা

মিরপুর-১৪ থেকে উত্তর দিকে সিআরপি একাডেমিক ইনস্টিটিউট। সেখানকার নিচতলায় চোখে পড়ে হাত-পা ভাঙা আর রোগী নিয়ে হুইলচেয়ারে আসা-যাওয়া করা মানুষ। লিফটের কাছে দেখা হয় একজন ছাত্রের সঙ্গে। সে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। জানতে এসেছে কীভাবে ভর্তি হওয়া যায়। তার শখ তাড়াতাড়ি মেডিকেল কোর্স করে গ্রামের অবহেলিত মানুষের সেবা করবে।

সপ্তম তলায় বাংলাদেশ হেলথ প্রফেশনস ইনস্টিটিউট (বিএইচপিআই)। লিফটের ডান পাশে একটা লাইব্রেরি। দেখতে বেশ বড়ই। বিএইচপিআই সম্পর্কে জানতে চাইলে লাইব্রেরি কর্মকর্তা দেখিয়ে দেন অধ্যক্ষের রুমটি। অধ্যক্ষ তখন সেখানে ছিলেন না। কথা হয় এ প্রতিষ্ঠানের প্রভাষক ও সহসমন্বয়কারী বাসুবি দত্তের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘যাদের ইচ্ছা মেডিকেল পড়ার, তারাই মূলত এখানে আসে।’ তিনি আরও জানান, ‘এখান থেকে ডিপ্লোমা ডিগ্রি নিয়ে বের হওয়ার পর সরকারি হাসপাতালে টেকনোলজিস্ট হিসেবে কাজ করার সুযোগ থাকে।’


কী পড়ানো হয়: ‘ছোটবেলা থেকে ইচ্ছা মেডিকেলে পড়ার। মাঝখানে অসুস্থতার কারণে পরীক্ষার ফল ভালো করতে পারিনি। একদিন এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে কথা হলো যে সিআরপিতে মেডিকেলের ওপর ডিপ্লোমা করা যায়। দেরি না করে এখানে ভর্তির জন্য চলে আসি।’ কথাগুলো বলছিলেন রেডিওলজির প্রথম বর্ষের ছাত্রী হাবিবা কুদ্দুস।


বাংলাদেশ হেলথ প্রফেশনস ইনস্টিটিউটের (বিএইচপিআই) দুটি শাখা রয়েছে। একটি সাভারে, অন্যদিন মিরপুরে। মিরপুরে চারটি বিষয়ের ওপর তিন বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা করা হয়। সে বিষয়গুলো হলো—
১. ল্যাবরেটরি মেডিসিন, ২. রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং, ৩. ফিজিওথেরাপি এবং ৪. অকুপেশনাল থেরাপি।


রতন দাস ল্যাবরেটরি মেডিসিনের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনি বলেন, ‘এখানে এসে জীবনে যে অনেক হতাশা মনের মধ্যে বেঁধে ছিল, সেগুলো দূর হয়। এখন আমি বিশ্বাস করি, ভালো কিছু করতে পারব।’ একই কথা বলেন নার্গিস আক্তার, নাজমুল নাহার ও গোলাম মোবারক। রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিংয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘পড়ালেখা শেষ করে চাকরির ফাঁকে ফাঁকে এলাকায় গিয়ে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করব এবং তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেব।’


ফিজিওথেরাপির প্রথম বর্ষের ছাত্রী তাহমিনা আক্তার। বিয়ে হয়েছে কয়েক বছর আগে। বিয়ের পর পড়াশোনা চুকিয়ে দিয়েছিলেন। ইচ্ছা ছিল মেডিকেলে পড়ার। স্বামী এই ইচ্ছার প্রাধান্য দিয়ে ভর্তি করিয়ে দেন বাংলাদেশ হেলথ প্রফেশনস ইনস্টিটিউটে। সংসার ও পড়াশোনা দুই-ই চালিয়ে যাচ্ছেন তাহমিনা আক্তার। তিনি বলেন, ‘বিয়ের পর স্বামীর উদ্যোগে পড়াশোনা শুরু করি। পড়াশোনা শেষ করে স্বামীর ইচ্ছা এলাকায় প্রতিবন্ধী মানুষের এবং ফিজিওথেরাপির ওপর কাজ করব।’
অনেকের ইচ্ছা, এখান থেকে পড়াশোনা শেষ করে দেশের বাইরে বিসিএম করা।
ভর্তির যোগ্যতা: এখানে ভর্তি হতে হলে ন্যূনতম এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ ২.৫০ থাকতে হবে। আসনসংখ্যা সীমিত হওয়ায় এখানে অনেক বেশি প্রতিযোগিতা হয়। ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে বাছাই করা হয়। চারটি বিষয়ে মোট ২৫২ জন ছাত্রছাত্রীর ভর্তির সুযোগ থাকে।


জুলাই মাসে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। অক্টোবরে ভর্তির কার্যক্রম চলে। এটা নভেম্বর ও ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হয়। জানুয়ারি মাসে ক্লাস পুরোদমে শুরু হয়।
পড়াশোনার পর কী করা যায়: এখান থেকে ডিপ্লোমা ডিগ্রি নিয়ে বের হওয়ার পর যেকোনো সরকারি হাসপাতালে টেকনোলজিস্ট হিসেবে কাজ করা যায়। এ ছাড়া বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারেও টেকনোলজিস্ট হিসেবে কাজ করা যায়।


কী কী সুবিধা: পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ছাত্রীদের জন্য আবাসিক সুবিধা রয়েছে। 

সূত্রঃ প্রথম আলো, ২৫ আগস্ট, ২০১০।

1 মন্তব্য(সমূহ):

Anonymous said...

লেখা পড়ার খরচ কত

Post a Comment

 
Design by Oronno Anam | Bloggerized by Salma Mahbub