নীরব স্তবনে তারুণ্যের বন্দনাগান ছড়ায় প্রভাত পবনে


"বেজে উঠো - ফড়িঙের রঙে, দোয়েলের জীবনে...দুর্জয় তারুণ্যে দুর্নীতি প্রতিরোধে" এই স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছিলো চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গন। গত ১২, ১৩, ১৪ই মে১১ আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সাথে নিয়ে জমজমাট এক তারুণ্য উৎসবের আয়োজন করেছিলো চুয়েট ডিবেটিং সোসাইটি। জীবনে কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনা মাড়ানো হবে ভাবিনি। নিতান্ত কাকতালীয়ভাবেই সেদিন চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে তারুণ্যের এই উৎসবে যাওয়ার আমন্ত্রণ পেয়ে গেলাম।


                                    


ইদানিং ব্যস্ততার চাপ এতো বেড়েছে যে ব্লগে ব্লগে ঘুরে বেড়ানোর সময় একেবারেই হয়ে উঠছে না। কম্পিউটারে বসা মানেই ইমেইলের ভিড়ে হারিয়ে ফেলি নিজেকে, এরি ফাঁকে টুকটাক- অল্পস্বল্প... চতুর্মাত্রিক ব্লগে দেখলাম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করছে চুয়েট ডিবেটিং সোসাইটি। এই সংগঠনের কথা আগেই শুনেছিলাম ছোটভাই অন্তুর কাছে। ছেলেটা বেশ ভালো। ডাকসাইটে পরিবারের ছেলেরা কিছুটা অহংকারী হয়। তার মধ্যে সেসবের কিছুই নেই। তারচেবড় কথা সে করতে পারে না এমন কিছুই বোধহয় নেই। চুয়েটেই পড়াশোনা করেছে। ফোন দিলাম তাকে...বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র না হয়েও যদি এ আয়োজনে অংশ নেওয়া যায় তাহলে বি-স্ক্যান নির্মিত তথ্যচিত্র র‍্যাম্পপ্রদর্শন করার অনুরোধ জানালাম তার মাধ্যমে। কদিন পরেই অন্তু জানালো তারা আপনাকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে তথ্যচিত্রটি প্রদর্শন করবে তারা এবং তাদের সাংস্কৃতিক আয়োজনে আমি উপস্থিত হলে তারা খুব খুশি হবে। একটু বেকায়দায় পড়লাম বটে। কারণ আমার সহযোগী মেয়েটি তখন ছুটিতে। একার পক্ষে বাইরে যাওয়া সম্ভব নয় কিছুতেই। অনুষ্ঠানের আয়োজক তন্ময় ফোন দিলো। ঠিক কথা দিতে পারলাম না। তবে খুব চেষ্টা করবো জানালাম। এমনিতেই শহুরে যান্ত্রিকতার চাপে অতিষ্ঠ প্রায়। তার উপরে প্রকৃতির এতো কাছে যাওয়ার সুযোগ! এমন সুযোগ কে হাতছাড়া করতে চায়...সেদিন যাওয়ার সুযোগ হয়েছিলো আমার! নচেৎ ফড়িঙের ডানায় চড়ে দোয়েলের কুহু কুহু ডাক শুনার অভাবনীয় আনন্দ থেকে সত্যিই বঞ্চিত হতাম আমি! দেখে এলাম এই তরুণেরা যথেষ্ট সচেতন দেশ আর দেশের মানুষগুলো নিয়ে। গান, আবৃত্তি, মুকাভিনয় সব মিলিয়ে সাংস্কৃতিক আয়োজনে স্বল্প যেটুকু সময়ই ছিলাম খুব অনুভব করেছি কিছু উদ্দ্যমী তরুণ এই মতাদর্শে এক হলে কি বিপ্লবই না ঘটিয়ে দিতে পারে। বদলে দিতে পারে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি।



গাড়ি থেকে নামার আগেই ছুটে এলো সহযোগীতার হাত। মৌসুমী, রুমি, তন্ময়, আরিফ নাম না জানা আরো একঝাক টগবগে তরুণের মাঝে কিছুটা গুটিয়ে গেলাম। তাছাড়া জানতাম না মঞ্চে আহ্ববান জানানো হবে আমাকে। তাই কোন প্রস্তুতিও ছিলো না। এমনিতেই মাইক হাতে এলে গলায় কাঁপুনি ছুটে যায় আমার। কিছুটা অস্বস্তিতে ছিলাম বটে। একমানুষ সম এই মঞ্চে এরা আমাকে তুলবে কিভাবে এই ভাবনাও দোলা দিয়ে যাচ্ছিলো ক্ষনে ক্ষনে। মঞ্চের কাছে গিয়ে বুঝলাম ছেলেগুলো সত্যিই কাজের।       
  
         


যাবত যাওয়া যে কোন আয়োজনে অংশগ্রহন করেই অনুভব করেছি আমাদের সহায়ক যাতায়াত ব্যবস্থা কিম্বা শিক্ষার অধিকার নিয়ে নতুন করে বোঝাতে হয় প্রতি পদে পদে। প্রাণপনে নিজের অধিকার আদায়ের যুদ্ধে নামতে হয়। ভিন্নভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের সম্পর্কে অসচেতন মনোভাবই এর প্রধান কারণ। যার ফলে প্রতি পদক্ষেপে নাশুনতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি প্রায়। কিন্তু এই প্রথম অন্য কিছু দেখলাম। মাত্র কিছু সময়ের পরিচিত এই তরুনেরা আমাকে আগে কখনো দেখেনি । কিছুই জানে না আমার সম্পর্কে। শুধু শুনেছে আমি একজন হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী। এইটুকু শোনার ভিত্তিতেই তারা আমার জন্যে অস্থায়ী কাঠের র‍্যাম্প তৈরি করেছে। সত্যিই অভাবনীয়!!! এসবই আমি কিংবা আমাদের অধিকার। তবুও অপ্রাপ্ত এই অধিকার না পেতে পেতে আমাদের কাছে যা হয়ে উঠেছে অনেকটা আদায়ের মতোই প্রতিবাদী সংগ্রাম। অন্তত একটি জায়গায় তো নিজের অধিকার চেয়ে ফিরতে হয়নি আমাকে! আর তাই আমি কৃতজ্ঞ, যারা আমাকে তথা আমাদের অধিকারের যথার্থই সম্মান দিয়েছে। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম রেখেছে ছেলেগুলো। এমন ছেলেই তো আমাদের দেশে চাই, যারা কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে... এই তরুণদের নিয়ে "স্বপ্ন দেখা যায় আগামীর বাংলাদেশ", অবকাঠামোগত উন্নয়নে এই তরুণরাই বিরাট ভূমিকা রাখবে।


লেখকঃ সাবরিনা সুলতানা


0 মন্তব্য(সমূহ):

Post a Comment

 
Design by Oronno Anam | Bloggerized by Salma Mahbub