BSA Motors launches electric scooter


New Delhi, 8 Jan: While luxury sedans, small cars and hybrid vehicles have hogged the limelight at the Auto Expo, it was also the platform for the launch of an electric scooter designed in India especially for disabled people.

BSA Motors, a recently formed division of the Chennai–based Tube Investments of India Ltd, promoted by the Murugappa Group, unveiled its four–wheel scooter, Roamer Able, on Thursday.

"After extensive market research, we saw that there is a burning need to come out with a scooter which would help the mobility of the physically challenged," said K.B. Srinivasan, vice–president, BSA Motors, which only makes electric scooters. "So long, people have been buying scooters from the market and modifying them, but those vehicles are not very safe."

The Roamer Able has thoughtful touches such as a holder for crutches and a rear break lock so that the scooter does not roll back on a slope. The rider can also engage reverse with a flick of a switch.

"We have been developing the technology for this vehicle since the last eight months along with a Japanese design consultancy firm, which has advised us on the design of the scooter," said Srinivasan.

The scooter is priced at Rs35,300 before taxes and other charges in Delhi, but the state government has extended BSA Motors a subsidy so it can sell the scooters at a 30% discount. The company is talking with other states as well for similar subsidies.

BSA Motors, formed in July 2008, is targeting a 20% share of the electric scooters market, currently pegged at Rs1.1 lakh, by the end of fiscal 2011. The company sells around 1,500 scooters a month and expects to end 2010–11 at around 15,000 units.

Hero Electric Ltd, a subsidiary of the Hero Group, is the largest firm in India's highly disorganized electric scooters market, which has around 80 firms importing containers of Chinese electric scooters and selling them locally. BSA Motors also faces competition from Electrotherm India Ltd, which sells its electric two–wheelers under the Yobykes brand.

There were the good old bicycles on display as well, although some had a Rs3 lakh price tag.

A range of cross–country, mountaineering and racing bicycles were introduced in India around six months back by BSA Motors, which has secured exclusive rights for marketing bicycle brands such as Ducati, Cannondale, Bianchi and Schwinn in the country.

Abhishek P. Sareen, manager, performance bikes division, BSA Motors, says the company sells around 100 of these imported bicycles every month. "Ninety per cent of the sales have come from bikes ranging between Rs20,000 and Rs50,000 and we are expecting to sell around 7,000 bicycles this fiscal," said Sareen.

আমার চলার পথ


২০০৪ সালে আমরা যখন মগবাজারে ভাড়া বাসায় থাকতাম তখন সিদ্ধেশ্বরীতে আমাদের এপার্টমেন্টের কাজ শুরু হয়। হুইলচেয়ার ব্যবহার করতে গিয়ে আমাকে বেশ কিছু সমস্যায় পড়তে হতো, র‌্যাম্পের অভাবে সব জায়গায় যেতে না পারা, নিজে নিজে এক সিট থেকে অন্য সিটে, যেমন বিছানা থেকে চেয়ারে বা চেয়ার থেকে বিছানায় কারো সাহায্য ছাড়া উঠতে বা নামতে না পারা, বাথরুমের দরজা চাপা হওয়ার কারণে চেয়ারটি নিয়ে ঢুকতে না পারা ইত্যাদি। প্রতি মুহুর্তেই অনেক সাহায্য লাগতো আমার। আর সবসময় ভাবতাম ভাড়া বাসায় আমার যে প্রতিবন্ধকতাগুলো আছে তা নিজের বাড়ীতে থাকবে না। সেখানে আমি একাই টয়লেটে যেতে পারবো, কারও সাহায্য লাগবে না শুধু দরজাটি চওড়া হতে হবে আমার হুইলচেয়ারটি ঢুকবার জন্য, আর চৌকাঠটি হতে হবে নিচু, ব্যস। আরও সহজভাবে টয়লেটের সমস্যাটি সমাধান করা যায় দরজা চওড়া করার পাশাপাশি, যদি চৌকাঠ না দিয়ে ঘরের মেঝে থেকে বাথরুমের মেঝেটি এক থেকে দেড় ইঞ্চি নামিয়ে দেয়া যায়, যা ঐ সময় আমার জানা ছিল না। বাইরের দেশগুলোতে তাই করা হয়।
 

যাই হোক, এপার্টমেন্টে আমার রুমের সাথেই বারান্দা, যার ওপাশে বিশাল খেলার মাঠ, বারান্দাটাও বেশ বড়। ভেবেছিলাম যখন তখন চলে যাব বারান্দায়, ছেলেদের খেলা দেখবো কিংবা একটু মুক্ত হাওয়ার স্বাদ নেব অথবা মন খুব খারাপ হলে চলে যাব ছাদে খোলা বিশাল আকাশের নীচে বুক ভরে শ্বাস নিতে, কারণ সেখানে তো লিফট থাকবে। সেই সময়টায় আমার বাইরের জগতটা তখনও তৈরী হয়নি, তখন আমি ঘর থেকে বের হতাম খুবই কম, হয়তো বছরে দুইবার কি তিনবার। তাই এই সামান্য চাওয়াগুলো আমার কাছে অনেক বড় ছিল। দুঃখের বিষয় এর কোনটিই পূরণ হয় নি।


এপার্টমেন্টে আমার বাথরুমের চৌকাঠ ঘরের মেঝে থেকে ৩ ইঞ্চি উঁচু, দরজা যথেষ্ট চওড়া নয়, আমার ঘর থেকে বারান্দা যাবার পথে ৪ ইঞ্চি চৌকাঠ, যদিও স্লাডিং গ্লাস ডোর দেয়া, যার ট্র্যাকটি সাধারণত মাটির সাথে মেশানো বা ১ ইঞ্চির বেশী উঁচু হয় না। আমাদের ডেভেলপাররা কেন এমন করলেন তা তারাই ভাল জানেন, অনেক বলেও তাদের মত পালটানো গেল না। বারান্দার দেয়ালটিও তৈরী করা হলো মাটি থেকে আড়াই ফিট উচ্চতায়, তাই আমার ঘরে বসেও সেই খেলার মাঠটি দেখা যায় না, শুধু ছেলেদের হৈ চৈ এর আওয়াজ ভেসে আসে। আর ছাদ, সে তো সোনার হরিণ! আমাদের বিল্ডিংটি দশতলা আর লিফট শেষ গেছে নয়তলায় এসে। বাকি একতলা পায়ে হেঁটে উঠতে হয়, নিরাপত্তার কারণে। নিজ গৃহেও তাই নিজের চলাচলের স্বাধীনতা তৈরী হলো না, রয়ে গেলাম সেই বন্দী জীবনেই।
 

সব সময়ই ভাবতাম এই অসুবিধাগুলো কি করে দূর করতে পারি। বাসায় ইন্টানেট সংযোগ নেবার পর শুরু হলো নতুন জীবন, নিজে কে নিয়ে নতুন করে ভাবনা। এই দেশের কোন কিছু আমাদের জন্য তৈরী হবে না, হলেও কবে হবে তা জানা নেই, তাই যা আছে তার মাঝেই খুঁজে নিতে হবে নিজের পথ। তাই প্রথমে নিজের হুইলচেয়ারটি নতুন করে তৈরী করে নিলাম নিজের সুবিধা মত সিআরপি থেকে। নিজেদের অজ্ঞতাও অনেকটা আমাদের চলার পথকে কঠিন করে রাখে। যেমন আমি জানতাম না কি করে বাথরুমের দরজার সামনে একটি বহনযোগ্য র‌্যাম্প আমার এই সমস্যার সমাধান দিতে পারে। যা কাঠ দিয়ে নিজেরাও তৈরী করে নেয়া যায়। বাইরের দেশে আমাদের চলাচলের বিভিন্ন সহায়ক ব্যবস্থা দেখে উদ্যোগী হলাম সেই রকম কিছু ব্যবস্থা নিজের জন্য তৈরী করে নিতে।

লিফটের সামনের সিঁড়ি দুটি দিয়ে শুরু আমার এই যাত্রা। খুব সামান্য একটু উদ্যোগ, কিছু মানুষকে এর উপকারিতা বুঝানো, অল্প কিছু টাকা.........একটি র‌্যাম্প। হাঁ, আমার এপার্টমেন্টে লিফট পর্যন্ত পৌঁছুতে বা লিফট থেকে বের হয়ে ঐ সিঁড়ি দু’টো পাড় হতে হয়। মাত্র দুটো করে সিঁড়ি, একটি সম্মুখে আর একটি পাশে। পাশেরটিতে এপার্টমেন্ট নির্মানকারী প্রতিষ্ঠানটি খুব সহজেই একটি র‌্যাম্প সেখানে করে দিতে পারতেন কিন্তু করেন নি। এখন যেমন বলা হচ্ছে লিফট পর্যন্ত পৌছুতে র‌্যাম্প থাকতে হবে, ২০০৪ সালে তখন বিল্ডিং কোডে এটা ছিল কি না, জানা নেই, থাকলেও তারা সেটা মানতেন কি না সন্দেহ।
 

যাই হোক, সেখানে র‌্যাম্প তৈরীর উদ্যোগ নিলাম। সেই লক্ষ্যে আমার বিল্ডিং এর সবার মতামত নেবার জন্য এক এক করে তাদের ফ্ল্যাটে গেলাম, সাথে কিছু লিফলেট আমাদের সংগঠনের, জনকণ্ঠে ছাপা হওয়া আমার একটি লেখা ‘একজন জীবনযোদ্ধা’(একজন প্রতিবন্ধী মানুষের দৈনন্দিন জীবন চিত্র)র ফটোকপি, তাদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করলাম র‌্যাম্প কি জিনিস, এর উপকারিতা কি এবং এটা শুধু একজন হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী জন্য নয়, একজন বয়স্ক মানুষ, গর্ভবতী মহিলা সবার জন্য এটা কাজে লাগবে। আমার ভাল লেগেছিল তাঁরা কেউ আমার কাজে ‘না’ বলেন নি, বরং উৎসাহ দিয়েছেন, একজন তো বললেন, একবার উনাকে হাসপাতাল থেকে হুইলচেয়ারে ফিরতে হয়েছিল, তখন কি যে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিলে হুইলচেয়ারসহ তাকে সিঁড়ি দিয়ে তুলতে, তা বলার নয়। সকলের সহায়তায় ১৫ই ডিসেম্বর আমার র‌্যাম্প তৈরী হলো। যাঁরা আমায় এই কাজে সহযোগীতা করেছেন আমি তাদের সকলের কাছে কৃতজ্ঞ।

এখন আমার বাথরুমের সামনেও একটি বহনযোগ্য র‌্যাম্প তৈরী হয়েছে মুক্ত চলাচলের উদ্দেশ্যে। তবে বারান্দায় যাওয়ার র‌্যাম্পটি আমি তৈরী করতে পারি নি ঘরে যথেষ্ট জায়গা না থাকায়। আমরা (যারা বাংলাদেশী সিস্টেমস চেঞ্জ এ্যাডভোকেসি নেটওয়ার্ক, বি-স্ক্যান এর সেচ্ছ্বাসেবী সংগঠনের সাথে জড়িত) মনে করি সামান্য সচেতনতা, কিছু সম্মিলিত উদ্যোগ পালটে দিতে পারে প্রতিবন্ধী মানুষের পথের প্রতিবন্ধকতা।
লেখকঃ সালমা মাহবুব, আমারব্লগ ডটকম।
১৫ জানুয়ারী, ২০১০।

তাসনিনের শ্রেণীকক্ষ

তাসনিন সুলতানা। বছর দুয়েক ধরে সে দুরারোগ্য 'মাসকুলার ডিসট্রফি' রোগে আক্রান্ত। তবে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাও তার লেখাপড়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। হুইলচেয়ারে করেই সে স্কুলে যায়, পাঠে অংশ নেয়। চট্টগ্রাম রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী তাসনিন এবার সপ্তম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণীতে উঠলে তার মা-বাবা খুবই খুশি হন। একই সঙ্গে তাঁরা উদ্বিগ্ন হন মেয়ের লেখাপড়ার ভবিষ্যৎ নিয়েও। কারণ, সুলতানার নতুন শ্রেণীকক্ষটি দোতলায়। সেখানে হুইল চেয়ার নিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। আবার নতুন শ্রেণীতে ভর্তি হওয়াও জরুরি।

সমস্যাটি নিয়ে তাসনিনের মা আফরোজা আখতার স্কুলের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে হতাশই হন। কারণ, একজন ছাত্রীর জন্য তো আর পুরো ক্লাস দ্বিতীয় তলা থেকে একতলায় আনা যায় না। আফরোজা আখতার একপর্যায়ে দেখা করেন প্রতিষ্ঠানের উপাধ্যক্ষ রওশন ইয়াসিনের কাছে। উপাধ্যক্ষ সব শুনে আশ্বাস দেন, 'আমাদের এ ছাত্রীটি এখানেই পড়বে। তাসনিনের শ্রেণীকক্ষটি নিচতলায়ই থাকবে!' এ খবরে খুশিতে কেঁদে ফেলে তাসনিন। আবেগে জড়িয়ে ধরে মাকে। তাহলে তার লেখাপড়া আর বন্ধ হচ্ছে না! আনন্দিত চট্টগ্রাম বন্দরের অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী বাবা আব্দুস সবুরও।

নতুন শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে গত সপ্তাহে স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে তাসনিন। সহপাঠীকে ফিরে পেয়ে তার বন্ধুরাও খুশি। তাসনিন কালের কণ্ঠকে বলে, 'শিক্ষকদের সিদ্ধান্তে আমি খুবই খুশি। আমি আরো পড়ালেখা করে একজন আদর্শ শিক্ষক হতে চাই। সবাইকে দেখিয়ে দিতে চাই, সুযোগ পেলে আমরা প্রতিবন্ধীরাও সবকিছু পারি।' আফরোজা আখতার বলেন, 'আমি স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞ। তার শ্রেণীকক্ষই নিচতলায় নামিয়ে আনেননি, শ্রেণীকক্ষের পাশের স্টোর রুমটি সংস্কার করে নতুন বাথরুমও বানিয়ে দিয়েছে। অন্য অভিভাবকরাও আমাকে যথেষ্ট মানসিক সাহস জুগিয়েছেন।'

তাসনিনের প্রতিষ্ঠানের উপাধ্যক্ষ রওশন ইয়াসিন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ছাত্রীটি খুবই সম্ভাবনাময়। তার লেখাপড়া যাতে অব্যাহত থাকে, সে জন্য আমরা সহায়তার চেষ্টা করেছি মাত্র। আমরা চাই, দেশের অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও একইভাবে প্রতিবন্ধীদের পাশে দাঁড়াবে।' প্রতিবন্ধীদের জন্য কাজ করে থাকে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বি-স্ক্যান (বাংলাদেশি সিস্টেমস চেঞ্জ এ্যাডভোকেসি নেটওয়ার্ক)। বি-স্ক্যানের সহকারী প্রশাসক সালমা মাহবুব বলেন, প্রতিবন্ধী এক শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি যে উদাহরণ রেখেছে, তা অনন্য। তিনি জানান, বি-স্ক্যান স্কুল কর্তৃপক্ষকে অভিনন্দন জানিয়ে চিঠি দেবে।


সুত্রঃ কালের কন্ঠ, বিপ্লব রহমান, ১৩ জানুয়ারী, ২০১০।

 তবুও বেলালের এগিয়ে চলা...

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের উমেদপুর গ্রামের দরিদ্র পরিবারের সন্তান মো. বেলাল হোসেন। জন্মগতভাবেই তার দুটি হাত নেই। তার বাবা খলিল আকন অন্যের জমিতে কাজ করেন। মা হোসনেয়ারা বেগম গৃহিণী। এ ছাড়া রাহিমা বেগম নামে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এক বোন রয়েছে তার। একদিকে দারিদ্র্য, অন্যদিকে দুই ছেলেমেয়ের এ অবস্থায় হতাশাগ্রস্ত তার বাবা-মা।
খলিল আকন ও হোসনেয়ারা বেগম জানান, বেলালের জন্মের পর গ্রামের লোকজন নানা রকমের কুসংস্কার ছড়াতে থাকে। এলাকার মানুষ তখন তাদের তাচ্ছিল্য করত। এসব কারণে তাঁরা প্রথমদিকে বেলালকে লুকিয়ে রাখতেন। বেসরকারি সংস্থা এসএসডিপির সিবিআর কর্মী সমীর হালদারের পরামর্শে বেলালকে ২০০৭ সালে ভর্তি করা হয় উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের উমেদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রথমদিকে বিদ্যালয়ের অন্য ছাত্রছাত্রীরা বেলালকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি। তাদের ভেতর ছিল এক অজানা ভয়—পাছে অন্যদের কোনো ক্ষতি হয় কি না? বিদ্যালয়ের সবার অসহনীয় মনোভাব আর অসহযোগিতার কারণে বেলালকে বিদ্যালয়ে যাওয়া এক পর্যায়ে বন্ধ করে দিতে হয়।
এমন অবস্থায় বেসরকারি সংস্থা এসএসডিপি তার পাশে এসে দাঁড়ায়। এসএসডিপি সিডিডি ডার্ক অ্যান্ড লাইট ব্লাইন্ড কেয়ার প্রকল্প ও এইচএসবিসি ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় আয়োজন করে প্রতিবন্ধী শিশুদের সমন্বিত শিক্ষা সুযোগ তৈরি করার স্কুল সেশন। বেলালের সহপাঠীদের নিয়ে ওই স্কুলে গঠন করা হয় প্রতিবন্ধী শিশুদের একটি দল। পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত আয়োজন করা হয় কাউন্সেলিং। আবার বেলাল বিদ্যালয়ে যেতে শুরু করে। নিয়মিত ক্লাস আর পড়াশোনায় তার আগ্রহ দেখে শিক্ষকেরাও আন্তরিক হন। প্রথম, দ্বিতীয় শ্রেণী উত্তীর্ণ হয়ে এখন সে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র। ব্যতিক্রম হলো, তার দুটি হাত না থাকায় ডান পা দিয়ে তাকে লিখতে হয়। সে এখন সুন্দর করে লিখতে পারে। উমেদপুর বিদ্যালয়ে বেলাল এক পরিচিত মুখ, সবার বন্ধু। মুখে স্পষ্ট কথা, ‘মুই আগে পড়তে পারলেও লেখতে পারতাম না। এ্যাহন লেখতেও পারি।’ বাবা খলিল আকন বলেন, অর তো হাত নাই। পা দিয়াই তো সব করতে অইবে। ও যাতে সব কাম কাইজ করতে পারে হেই কৌশলও শেখতে চেষ্টা করছে।
উমেদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহ সুজা উদ্দিন বলেন, স্কুলের শিক্ষকেরা ওর শিখনে সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছে। যে কারণে শোনা, বলা, পড়া ও লেখা—এ চারটিতেই সে দক্ষতা অর্জন করেছে। তবে তার পরিবারের আর্থিক দৈন্যতা থাকায় খাওয়া-পড়ায় কষ্ট হয়। এসএসডিপির নির্বাহী পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, প্রতিবন্ধীরাও অক্ষম নয়, বেলাল তাই প্রমাণ করেছে।

তথ্যসূত্রঃ http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-01-10/news/33621

আসুন বাড়িয়ে দেই সহযোগীতার স্পর্শ

শ্যামলা বরণের মিষ্টি এক মেয়ে ফাল্গুনী। তাকে সরাসরি দেখার সৌভাগ্য আমার আজ অবদি হয়নি। কিন্তু প্রথম যেদিন তার ছবিটি অনলাইনে দেখতে পেলাম, সেদিনের পর থেকে কিছুতেই মন থেকে তাড়াতে পারছি না কিশোরী এই মেয়েটির মুখছবি। শৈশবের দুরন্ত দিনগুলোতে যখন তার দস্যিপনায় মেতে উঠার কথা তখন ছোট্ট অবোধ শিশু ফাল্গুনী ৩৩ হাজার ভোল্টের বিদ্যুতের লাইনে জড়িয়ে হাসপাতালের বেডে শুয়ে কাতরেছে। মর্মান্তিক সে দুর্ঘটনায় একেবারে হুট করেই তার জীবন পথের মোড় ঘুরে যায়। ডাক্তাররা জানান তার দু'টি হাত এমনভাবে পুড়েছে শরীর থেকে কেটে বাদ দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। তখন কতো হবে তার বয়স! বড় জোড় সাত কি আট ...এটুকুন বয়সেই তাকে প্রতিবন্ধীতার অভিশাপে জর্জরিত হতে হয়েছে । কিন্তু মনের জোড় সে এতটুকুও হারায়নি। বাহু দিয়ে লিখেই সব পরীক্ষায় বরাবর-ই প্রথম হয়েছে। ৫ম শ্রেণীতে টেলেন্টপুলে পেয়েছে বৃত্তিও ।




পটুয়াখালীর গলাচিপা শহরেই থাকে ফাল্গুনীরা। চার বোনের মাঝে সেঝ ফাল্গুনী। বড় দু'বোনের বিয়ে হয়ে গেছে আগেই। ফাল্গুনী ও তার ছোট বোন পটুয়াখালীর গলাচিপা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ে। মা ভারতী রাণী সাহা মিষ্টির প্যাকেট বানিয়ে বিক্রি করে আর বাবা জগদিশ চন্দ্র সাহা ছোটখাটো একটি দোকান চালায়। এই আয়েই তাদের সংসার ও দুই মেয়ের পড়ালেখার খরচ চলে। বর্তমানে ফাল্গুনী ১০ম শ্রেণীতে পড়ছে। জানে না, আদৌ কোনোদিন তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে কিনা তবুও নিরন্তর স্বপ্নের জ্বাল বুনে চলে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বি সি এস কর্মকর্তা হবার।
এ তো গেলো একজন ফাল্গুণীর গল্প। একই এলাকার হারুন অর রশীদের কাহিনী আরো করুণ। তার তিন ছেলের মধ্যে দুই ছেলেই বাক প্রতিবন্ধি। বড় ছেলে শামীমুর রহমান শাহিন প্রতিবন্ধি বিদ্যালয় লেখাপড়া না করেও এ বছর গলাচিপা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.১৪ পেয়েছে। এখন সে গলাচিপা ডিগ্রি কলেজে পড়ছে। আর ছোট ছেলে নিয়াজ উদ্দিন বাপ্পি গলাচিপা আইডিয়াল স্কুলের ২য় শ্রেনীর ছাত্র। পিতা হারুন অর রশিদ জানান, গলাচিপা শহরে তার ধান বানা ও চাল গুঁড়া করার মেশিন আছে। এ মেশিন চালিয়ে যা আয় হয় তা দিয়েই চলে তার সংসার।



কিছুদিন আগেই পটুয়াখালীর একজন সাংবাদিক হানজালা শিহাবের সাথে আমাদের পরিচয় হয়। তার কাছেই এই দুই পরিবারের করুণ কাহিনী শুনতে পাই। তিনি জানালেন, মানবজমিন পত্রিকায় এ বিষয়ে একটি সচিত্র প্রতিবেদনও লিখেছিলেন বেশ কিছুদিন আগে। তখন থেকেই ভাবছিলাম আমরা ফাল্গুনি, শাহিন এবং বাপ্পির পড়ালেখার খরচ দিয়ে যদি কোনভাবে সহযোগীতা করা যেতো এই হতদরিদ্র দুটি পরিবারকে ! সিদ্ধান্ত নেই গতবার যেমন করে রিমা ও রিম্পাকে সাহায্য করা হয়েছিলো বি-স্ক্যান থেকে, ঠিক সেভাবেই এবারো ইনশাল্লাহ সকলের সহযোগীতার মাধ্যমে সেটি সম্ভব হবে। খুব বেশি নয় অল্প অল্প করেই যদি আমরা যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসি, বাড়িয়ে দেই সহযোগীতার হাত এ দুটি পরিবারের প্রতি, তাহলে আশা করি পড়ালেখা শেষ করে এদের স্বনির্ভর হয়ে উঠার পথে আর কোন বাঁধাই থাকবে না।


লেখক- সাবরিনা সুলতানা, প্রথম আলোব্লগ, ৩১ আগস্ট ২০১০,

 
Design by Oronno Anam | Bloggerized by Salma Mahbub