শারিরিক প্রতিবন্ধকতা বাধা হতে পারেনি ফাল্গুনি ও শাহিনের চলার পথে



পটুয়াখালীর গলাচিপা শহরের জগদিশ চন্দ্র সাহার মেয়ে ফাল্গুনি সাহা। দরিদ্র পিতার ৪ মেয়ের মধ্যে ফাল্গুনি তৃতীয়। ২০০২সালে পাশের বাসার ছাদে গিয়ে বিদ্যুতের লাইনে জড়িয়ে ফাল্গুনির দুটি হাতই পুড়ে যায়। পরে কেটে ফেলতে হয় তার হাত দুটি। কিন্তু মেধাবী ফাল্গুনি সাহা তার লেখা-পড়া চালিয়ে যায়। ৫ম শ্রেনীতে বাহু দিয়ে লিখে সে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে। বর্তমানে সে গলাচিপা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেনীর ছাত্রী। তার ক্রমিক নম্বর এক। শারিরিক প্রতিবন্ধকতা দমাতে পারেনি ফাল্গুনির দুরান্ত পথ চলা। ফাল্গুনি সাহা ভবিষ্যতে একজন বিসিএস কর্মকর্তা হতে চায়। কিন্তু তার পক্ষে সে পর্যন্ত পৌছা সম্ভব হবে কিনা তা তার জানা নেই। তবে সবার আশির্বাদ ও সহযোগিতা পেলে হয়তো ফাল্গুনি একদিন ঠিকই তার লক্ষ্যে পৌছতে পারবে এমনটাই মনে করেন ফাল্গুনির মা ভারতী রানী সাহা।



মা ভারতী রানী সাহা জানান, ২০০২সালে ফাল্গুনি তার বড় বোনের সঙ্গে একদিন পাশের বাসার ছাদে যায়। কিন্তু সেখানেই ঘটে ফাল্গুনির জীবনের বড় বিপর্যায়। ৩৩ হাজার ভোল্টের বিদ্যুতের লাইনে জড়িয়ে ফাল্গুনির দুটি হাত পুড়ে যায়।  তবে জীবনে বেচে গেলেও ফাল্গুনি এখন শারিরিক প্রতিবন্ধি।

তিনি জানান, ৪মেয়ের বড় দুজনকে বিয়ে দেয়া হয়েছে। ফাল্গুনি ও তার ছোট বোন স্কুলে যায়। স্বামী জগদিশ চন্দ্র সাহা ছোট একটি দোকানের মালিক। আর সে বাসায় বসে মিষ্টির প্যাকেট তৈরী করে বিক্রি করেন। এদিয়েই মেয়েদের লেখা-পড়াসহ সংসারের সকল খরচ চলে।

তবে সবার আশির্বাদ ও সহযোগিতা পেলে হয়তো মেয়েদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।

একই এলাকার বাক প্রতিবন্ধি শামীমুর রহমান শাহিন প্রতিবন্ধি বিদ্যালয় লেখাপড়া না করেও এ বছর গলাচিপা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.১৪ পেয়েছে। বর্তমানে সে গলাচিপা ডিগ্রী কলেজে লেখা-পড়া করছে। সে ভবিষ্যতে একজন শিক্ষক হতে চায়।






হারুন অর রশিদের তিন ছেলের মধ্যে শাহিন সবার বড়। তবে ছোট ভাই নিয়াজ উদ্দিন বাপ্পিও বাক প্রতিবন্ধি। বাপ্পি গলাচিপা আইডিয়াল স্কুলের ২য় শ্রেনীর ছাত্র। পিতা হারুন অর রশিদ জানান, গলাচিপা শহরে তার ধান বানা ও চাল গুঁড়া করার মেশিন আছে। এ মেশিন চালিয়ে যা আয় হয় তা দিয়েই চলে তার সংসার। অভাবের পরিবার হলেও সে চায় প্রতিবন্ধি ২ ছেলেসহ ৩ ছেলেকেই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে। সবার সহযোগিতা পেলে তা সহজ হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

গলচিপা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহআলম বলেন, ফাল্গুনির হাত  দুটি নষ্ট হলেও বাহু দিয়ে লিখেই ৫ম শ্রেনীতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে। বর্তমানে সে ১০ম শ্রেনীর ছাত্রী। তার ক্রমিক নম্বর এক। আর শাহিন এ বছর গলাচিপা মধ্যমিক বিদ্যালয়ের কারিগরি শাখা থেকে ৪.১৪ পেয়ে এসএসসি পাশ করেছে। তিনি বলেন, প্রতিবন্ধি বিদ্যালয় লেখা-পড়া না করেও শাহিন যেভাবে  ভাল ফলাফল করেছে তা সত্যিই আশ্চর্যজনক। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, সমাজের বৃত্তবান ব্যাক্তিরা এগিয়ে এলে মেধাবী ফাল্গুনি ও শাহিন প্রতিবন্ধি হয়েও সমাজের মুখ উজ্জল করতে সক্ষম হবে।


লেখকঃ হানজালা শিহাব,

পটুয়াখালী প্রতিনিধি।

তাং ২৫/৭/১০

0 মন্তব্য(সমূহ):

Post a Comment

 
Design by Oronno Anam | Bloggerized by Salma Mahbub