বি-স্ক্যান এর লিফলেট পড়ছেন দর্শক। |
অরন্য কথা বলছেন অটিস্টিক বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করেন এমন একজন ভদ্রমহিলার সাথে। |
যথারীতি বিশেষ অতিথিদের বক্তৃতা দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়, তাদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন, ডিসঅ্যাবিলিটি রাইটস ওয়াচ গ্রুপের আহ্বায়ক কাজী রোজী,সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নাছিমা বেগম, জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরামের সভাপতি খন্দকার জহুরুল আলম ও ফোরামের মহাসচিব জওয়াহেরুল ইসলাম মামুন প্রমুখ। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুন নেসা খানম। বক্তারা প্রতিবন্ধী মানুষকে স্বাগত জানিয়ে বিভিন্ন কথা বলেন। প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি কমপ্লেক্স তৈরি করে দেয়াসহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বিভিন্ন ঘোষণা বাস্তবায়ন করা হবে বলেও উল্লেখ করা হয়। অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ত্ব করেন ফোরামের সভাপতি খন্দকার জহুরুল আলম।
বিশিষ্ট অতিথিবৃন্দ। |
অনেক ধরনের প্রতিবন্ধী মানুষ, সাথে তাদের স্বজন। বাবার সাথে আসা একটি মেয়েকে দেখে ভীষণ ভাল লাগলো, এতো মিষ্টি দেখতে, খুব সুন্দর করে সেজেছে, পায়ে ছিল নুপুর। মেয়েটি বুদ্ধী প্রতিবন্ধী। ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো দর্শক, এই সাথে চা, ঝালমুড়ি, চানাচুরওয়ালাদের হাক ডাক।
সেই মিষ্টি মেয়েটি। |
এই ধরণের অনুষ্ঠানগুলোয় গেলে মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। কত রকম শিশু, কত রকম তাদের প্রতিবন্ধিতা। কিন্তু চমৎকৃত হই যখন তারাই মঞ্চে উঠে পরিবেশন করে বিভিন্ন নাচ, গান অভিনয়। যেই মিষ্টি মেয়েটির কথা বলেছিলাম। অনুষ্ঠানের প্রথমেই সেই মেয়েটি একটি দ্বৈত নাচে অংশ নিল। এরপর একে একে বিভিন্ন প্রতিবন্ধী শিশুর নাচ, গান, ফ্যাশেন শো ইত্যাদি পরিবেশিত হলো। এদের মাঝে বাক ও শ্রবন প্রতিবন্ধী শিশুদের ফ্যাশন শোটি সবার নজর কাড়ে। করতালিতে মুখর হয়ে উঠে জায়গাটি। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী একজন গান গাইতে মঞ্চে আসেন সাথে ছোট্ট দুটি শিশু, বয়স কতোই বা হবে ৪ কি ৫। কিন্ত এতো সতস্ফুর্তভাবে তারা মানুষের সামনে নাচছিল দেখে অবাক হয়ে গেলাম। অটিজম আক্রান্ত একটি ফুটফুটে শিশু গান গেয়ে শোনায় আমাদের। ধীরে ধীরে সন্ধ্যা নেমে আসে।
ওরা বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী, বাজনার তালে তালে পা ফেলা দেখে সেটা বুঝতেই পারবেন না। |
মঞ্চে যখন ক্ষীণ দৃষ্টি সম্পন্ন আব্দুর রহমান গান গাইতে এলেন .........পিড়িতী কাঠালের আঠা গানটি ধরলেন তখন সব দর্শক খুব মজা পেলেন, আরো জমে উঠলো যখন দুই মহিলা সেই সাথে মঞ্চে ফোরামের প্রেসিডেন্ট আলম সাহেবকে নিয়ে গানের তালে নাচতে উঠলেন, কিন্ত আযান শুরু হয়ে যাওয়ায় ঐ মুহুর্তে থেমে গেলে পরে আর সেভাবে জমে নি। এরপর আরো কিছু গান, নাচ পরিবেশিত হয়। আব্দুর রহমান সাহেবের সাধের লাউ বানাইলো মোরে...... গানটি দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়। অনুষ্ঠান চমৎকার হয়েছে কোন সন্দেহ নেই, তবে প্রতিবন্ধী মানুষের দাবী, ভাবনা এবং কষ্ট নিয়ে কিছু ছোট ছোট নাটিকা থাকলে ভাল হতো। অনেক মানুষ তাতে ভাবনার খোরাপ পেতেন। দৃষ্টভংগী পাল্টাতে সহায়ক ভুমিকা রাখতো বলে মনে হয়েছে। যেমনটি জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরামের পাব্লিক লাইব্রেরী মিলানায়তনে দেখেছিলাম। আমি সেই অনুষ্ঠানটি নিয়ে 'আমরা তোমাদেরই একজন' নামে একটি পোস্টও দিয়েছিলাম।
গান গাইছেন আব্দুর রহমান সাথে সভাপতি জনাব, জহুরুল আলম ও অন্যান্যরা সঙ্গ দিচ্ছেন।
কালকের দর্শকদের ব্যবহার আমাকে সত্যি মুগ্ধ করেছে। অনুষ্ঠান শেষ হতে রাত আটটা বেজেছে। মুক্ত একটি জায়গায় আয়োজনটি হওয়া সত্যেও তাদের মাঝে কোন ধরণের খারাপ আচরণ দেখি নি। অনুষ্ঠান চলা কালে দু’বার বিদ্যুৎ চলে গেলেও মৃদু কিছু আওয়াজ ছাড়া তেমন কোন মন্তব্য তারা করেন নি, ছিলেন অনেক সংযত। বাংলাদেশের মানুষ কি তবে শিখছে প্রতিবন্ধী মানুষকে সম্মান করতে? তাই যেন হয়।
- সালমা মাহবুব, ৯/৪/২০১০।
0 মন্তব্য(সমূহ):
Post a Comment