হাত বাড়িয়ে দিই

ভুল ধারণা ও সঠিক শিক্ষার অভাবে অটিজম আক্রান্ত শিশু-কিশোরদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে বিলম্ব হচ্ছে। দরকার তাদের মানসিকভাবে সহযোগিতা করা। ২ এপ্রিল বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসকে সামনে রেখে এ প্রতিবেদন। লিখেছেন মাকসুদুল কবীর সোহেল
'কোথাও আমার হারিয়ে যেতে নেই মানা
মনে মনে... '
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের এই গানের মতো শিশুমনও বিচিত্র জগতে হারিয়ে যায়। এই কল্পনার জগৎ শিশুর মধ্যে শুরু হতে থাকে দেড় বছর বয়স থেকে। শিশুরা তাদের অনুভূতির প্রকাশ ঘটায় মিছামিছি খেলার মধ্যে। আগ্রহ দেখায় গল্প শোনার। দুই থেকে আড়াই বছরের শিশু গভীর আগ্রহে মা-বাবা, ভাই-বোন, দাদা-দাদীর কাছে গল্প শোনে, গল্পের ছবিগুলো দেখে। বাড়তে থাকে কল্পনার জগৎ, তৈরি হতে থাকে সৃজনশীলতা। দুঃখজনক হলেও সত্যি, একটি প্রতিবন্ধকতা কিছু শিশুর মধ্যে লক্ষ্য করা যায়, যার নাম অটিজম। ফলে এসব শিশু স্বাভাবিক শিশুর মতো বেড়ে উঠতে পারে না।
বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে শিশুদের একটি বিশাল অংশ অটিজমের শিকার। কিন্তু সে তুলনায় অটিজম সম্পর্কে দেশে ব্যাপক সচেতনতার অভাব রয়েছে। অটিজম শিশুর সংখ্যা বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও প্রতিনিয়ত বেড়ে চলছে। বলা হয়ে থাকে, প্রতি এক হাজার শিশুর মধ্যে একজন শিশু অটিস্টিক হতে পারে। সে হিসাবে, দেশে অটিস্টিক মানুষের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে প্রায় দেড় লাখ।
দেশে ও বিদেশে দীর্ঘদিন ধরে অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে কাজ করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞান বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক ড. শিরিন জামান মুনির। তিনি বলেন, বাংলাদেশে অটিস্টিক শিশুদের চিকিৎসা ও সুশিক্ষার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। ভুল ধারণা ও সঠিক শিক্ষার অভাবে অটিজম আক্রান্ত শিশু-কিশোরদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে বিলম্ব হচ্ছে।
অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ডা. রওনাক হাফিজ শিশুর অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেন, হতাশ হওয়ার কিছুই নেই, সচেতনতার সঙ্গে সাহসী পদক্ষেপে পারিবারিক আঙ্গিকে শিশুদের গড়ে তোলা সম্ভব। পরিবারের অন্য সবার মতো তাদের সফলতায়ও বিশ্বাসী হতে হবে।
সাক্ষর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির চেয়ারপারসন শামসুন নাহার আজিজ লীনা বলেন, অনেক অটিস্টিক শিশু-কিশোর প্রচণ্ড ভালো হয় গানে, ছবি আঁকায়, লেখাপড়ায়, কম্পিউটারে। সুযোগের অভাবে এই প্রতিভাগুলো হারিয়ে যাচ্ছে সবার অজান্তে সচেতনতার অভাবে।


অটিস্টিক শিশুদের ব্যবহারিক সমস্যা কমানোর ক্ষেত্রে নিচের বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখতে হবে :
ষ যোগাযোগের সঠিক কৌশল শেখানো।
ষ পছন্দের প্রাধান্য দেওয়া।
ষ শিশুর উপযোগী শিক্ষণীয় পরিবেশ তৈরি।
ষ ভালো কাজের প্রশংসা/পুরস্কৃত করা।
ষ অর্থপূর্ণ যোগাযোগমূলক কাজে ব্যস্ত রাখা।
ষ আত্মনিয়ন্ত্রণ করার কৌশল বাড়ানো।
ষ ছবির ব্যবহার শেখানো।
ষ স্বাভাবিক ও বিশেষ উভয় শিশুদের মানসিক-দৈহিক বিকাশের উপযুক্ত এবং পরিকল্পিত শিক্ষাদানের পরিবেশ প্রয়োজন। 'বিশ্ববিখ্যাত অটিস্টিক ব্যক্তিত্ব টেম্পল গ্র্যান্ডডিন বলেছেন, অটিস্টিক শিশুদের অন্যান্য বিশেষ শিশুর মতোই তার বিশেষ শিক্ষাকে পাশাপাশি স্বাভাবিক শিশুর সঙ্গে মেশার এবং শিক্ষা লাভের সুযোগ দেওয়া উচিত। কারণ স্বাভাবিক শিশুই তো অনুকরণের সবচেয়ে সেরা মডেল।'


শিক্ষার জন্য যা প্রয়োজন
ষ ভর্তির পূর্বপ্রস্তুতি। যেমন : যোগাযোগ ও নির্দেশনা অনুসরণ দক্ষতা বাড়ানো, ব্যবহারিক সমস্যা কমানো ইত্যাদি।
ষ স্কুলের পরিবেশে যারা থাকেন যেমন_ অন্যান্য শিক্ষার্থী, সহপাঠী, অন্যান্য অভিভাবক, স্কুল কর্তৃপক্ষ, শিক্ষকমণ্ডলীকে অটিস্টিক শিশুটি সম্পর্কে জানানো।
ষ শ্রেণীকক্ষ, শিক্ষা উপকরণ অটিস্টিক শিক্ষাবান্ধব করা।
ষ যে শিক্ষক/শিক্ষিকারা ও শিশু তত্ত্বাবধায়ক যারা শিশুদের শিক্ষায় নিয়োজিত থাকবেন তাদের বিশেষ ট্রেনিং দেওয়া।
ষ প্রয়োজনবোধে বিশেষ শিশুদের শিক্ষা ও চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ এবং শিক্ষা মনোবিজ্ঞানীর পরামর্শ নেওয়ার ব্যবস্থা করা।
ষ অভিভাবকদের প্রত্যাশা বা চাওয়া সম্পর্কে অবগত থাকা।


অটিস্টিক শিশুর অভিভাবকদের প্রতি
ষ নিজেকে অসহায় কিংবা একা ভাববেন না।
ষ শিশুর প্রতিভা কিংবা ভালো দিকগুলো বিকাশে সাহায্য করুন।
ষ শিশুর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করুন।
বাড়িতে শিশুর জন্য গঠনমূলক প্রোগ্রাম তৈরি করুন।
ষ শিশুর যোগাযোগ ও সামাজিক বিকাশে জোর দিন।
ষ পারিবারিক যে কোনো অনুষ্ঠানে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করুন।
ষ বাড়ির বাইরে স্বাভাবিক শিশুদের সঙ্গে নিয়মিত বিভিন্ন পার্ক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গে নিয়ে ঘুরে আসুন।
ষ ধৈর্য হারাবেন না। কারণ এই শিশুদের অনেক উন্নতি সম্ভব।
অটিস্টিক শিশুদের শিক্ষা, গবেষণা, চিকিৎসা ও প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করে এমন কয়েকটি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা নিচে দেওয়া হলো :
অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন, বাড়ি-৩৮/৪০, সড়ক-৪, ব্লক-খ, পিসিকালচার হাউজিং সোসাইটি [শেখেরটেক], মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭।
সাক্ষর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি, বাড়ি-৩৪/১, সড়ক-১১ (নতুন), ধানমণ্ডি, ঢাকা-১২০৫।
ফোন : ৮১২৮৫৩৮, ০১৭১৩০১৪৭০৯
হোপ অটিজম সেন্টার, ৪৬-বি লেক সার্কাস, কলাবাগান, ঢাকা। ফোন : ৯১২৭৭৯১।
মনোবিজ্ঞান বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা-১০০০,
ফোন : ৯৬৬১৯০০।


লেখকঃ মাকসুদুল কবীর সোহেল
৩০ মার্চ,২০১০, সমকাল।
http://www.samakal.com.bd/details.php?news=30&view=archiev&y=2010&m=3&d=30&action=main&menu_type=&option=single&news_id=55840&pub_no=292&type=

2 মন্তব্য(সমূহ):

Unknown said...

Thanks
.............Maksudul Kabir Sohel

Salma Mahbub said...

Welcome.

Post a Comment

 
Design by Oronno Anam | Bloggerized by Salma Mahbub