Empowerment of the disabled

Although in theory a quota for disabled persons in school and government service exists, its implementation runs into endless difficulties. Seldom does one find a disabled person holding some important office. The government has announced that the secondary schools must enrol 10 per cent students from among the disabled but it has not been enforced vigorously. Ten per cent of the population is indeed the number of people labouring under various degrees of disability, according to a WHO estimate. The first-ever government survey conducted sometime ago revealed that 10,380 disabled girls and boys have been enrolled in the secondary schools and madrassahs of the country excluding those enrolled in the specialised schools for the physically challenged, like blind school, deaf and dumb school. Obviously, if the 10 per cent quota were seriously enforced the number of disabled students in secondary schools would have been much larger. This shows that even when the physically challenged girls and boys are being educated, they are mostly outside the educational mainstream. Needless to say, mainstreaming of their education is a prerequisite for bringing them in the mainstream of the economy. The move to bring the specialised schools under education ministry instead of social welfare ministry we regard as a positive step.

When nothing moves on the prescribed lines or moves very slowly, the intervention of the law court has to be sought. This is an unfortunate tradition currently crystallising in India and Bangladesh – the courts being dragged into matters of day-to-day governance due to failure of the executive. Same is this case. The High Court on Sunday asked the government to inform it in a month about the steps taken so far for employment of persons with disabilities in line with the Disabled Welfare Act 2000 (we think the act should have been titled not Disabled Welfare but Disabled Rights Act), which stipulates equal right to work for such persons. The court order came after hearing two writ petitions filed by a visually impaired person and four rights organisations. Even when the government acts despite its characteristic apathy and sloth, for proper rehabilitation of the disabled much will depend on social attitude. We often learn of physically challenged girls and boys with legendary perseverance taking public examinations and even qualifying at the tertiary-level examinations. But we do not find such bold spirits at top echelons of any profession. Are we then to conclude that even when their environment is helpful to them in pursuing education, it is no longer so when they go to join some profession? Even as arguments were going on in the court in connection with the two writ petitions, Attorney General Mahbubey Alam said the disabled persons ‘are not fit for work in the public service and the judiciary.’ He did not explain why. If a disabled person is fit to surmount the heaviest odds to complete their education, if they can learn and assimilate the lessons of the voluminous tomes of law and jurisprudence and let themselves be examined on their success in it, then why are they not fit to sit on the bench. We find here a regressive mindset on the part of an eminent professional which is indicative of the mindset of society at large. This mindset must change. 
Source: 27 April, 2010, New Age.
Reblog this post [with Zemanta]

রোটারি ক্লাবের সাথে মিটিং

আমরা ২৪ এপ্রিল, ২০১০ শনিবার ঢাকা ক্লাবে আয়োজিত ''রোটারী ক্লাব অব ঢাকা সেন্ট্রাল'' এর মিটিং এ কমোডর আতাউর রহমান সাহেবের আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে যোগ দেয়। 




আমাদের পক্ষ থেকে বি-স্ক্যানের শুরুর ভুমিকাটিসহ আরো যা বলা হয়েছে -
*জাতীয় টিকা দিবসের সময় রোটারীর ভলান্টিয়ারগন যখন বিভিন্ন বাড়িতে বাড়িতে যান তখন আমাদের ছোট একটা প্রশ্নপত্র যা আমরা তৈরী করে দেব) পুরণ করে দেয়া ।

*অনেক রোটারীয়ান এর নিজস্ব বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানকে প্রতিবন্ধী বান্ধব করা যায় কিনা এবং যোগ্যতা সম্পন্ন প্রতিবন্ধীদের জন্য চাকরী/কাজের সুযোগ সৃষ্টি করা।

*রোটারী ক্লাব যখন কোথাও হুইলচেয়ার বিতরণ করবে তখন যেন সেখানে একটি র‌্যাম্প তৈরীর ব্যবস্থা করে দেন। একটি র‌্যাম্প ১০টি হুইলচেয়ারের চলার পথ তৈরী করে দেবে।



এরপর আমাদের বক্তব্যের উপর অন্যান্য সদস্যদের মতামত চাওয়া হয়।

রোটারী সদস্যরা যা বলেন তা হলো-

*যে সকল বিল্ডিং এর প্ল্যান এ র‌্যাম্প থাকবে না, সেগুলোর যেন অনুমোদন দেয়া না হয়। সকল স্থাপনায় এই সুবিধা রাখার জন্য রাজুক এর সাথে একটি গোল টেবিল বৈঠক হতে পারে।

*বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়, ব্লগে এই ব্যাপারটি জনসচেতনতা বাড়াতে লেখালেখি হওয়া দরকার। যানবাহনে তাদের জন্য সংরক্ষিত আসন রাখা দরকার।

*এবারের পহেলা বৈশাখ নববর্ষ উপলক্ষে আরটিভি তে প্রথমবারের মত বুদ্ধি প্রতিবন্ধীদের নিয়ে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সরাসরি দেখানোর আয়োজন করা হয়। মিডিয়াতে এই ধরণের আরো প্রচার হওয়া দরকার।

*বাইরের দেশগুলোতে যেমন সিংগাপুর, মালেয়শিয়ায় সেলিব্রাল পালসি, মাস্কুলার ডিস্ট্রফী আক্রান্ত প্রতিবন্ধীদের আলাদা সংস্থার মাধ্যমে সরকার দায়িত্ব নিয়ে নেন। কারণ তাদের পরিচর্যার জন্য যে ব্যবস্থার দরকার পরিবার সেটা ইচ্ছে থাকলেও সবসময় দিতে পারে না। সব ধরণের প্রতিবন্ধী মানুষের কথাই বিবেচনায় নিতে হবে। 

 

মিটিং শেষে অনেকেই আমাদের সাহসী পদক্ষেপের জন্য ধন্যবাদ জানান এবং যোগাযোগ রাখতে বলেন। আমাদের এজেন্ডাটি পাঠালে তারা পরবর্তী মিটিং এ ব্যপারে কিভাবে এগুনো যায় তা আলাপ করবেন। রোটারি সদস্যদের একজন তাঁর বিল্ডিং এ অবশ্যই র‌্যাম্প থাকবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন এবং ব্যক্তিগত ভাবে এই কাজটি অনেকেই করতে পারেন বলে তিনি মন্তব্য করেন। প্রতিবন্ধী মানুষের মৌলিক অধিকার চাওয়া সেটা ন্যায্য দাবী, তাই অধিকার চাওয়ার সময় ব্যাপারটি যেন করুনা বা সাহায্য চাওয়ার মত হয়ে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে বলেন।

জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস ও বি-স্ক্যান

বি-স্ক্যান এর লিফলেট পড়ছেন দর্শক।
গত বুধবার বিকেলে আবার গেলাম ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে প্রত্যেক বছর এপ্রিল মাসের প্রথম বুধবার জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস পালন করা হয় এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল ‘’প্রতিবন্ধিতা ও অটিজমের পাশে আমরা সবাই’’ ১২তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরাম, পার্লামেন্টারিয়ানস ককাস অন ডিসঅ্যাবিলিটি ও ডিসঅ্যাবিলিটি রাইটস ওয়াচ গ্রুপ যৌথভাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যখন পৌছলাম তখন পড়ন্ত বিকেল মাথার উপর খোলা নীল আকাশটা যেন ছাতি হয়ে ছায়া দিয়ে আছে এর আগেও কয়েকবার এধরনের অনুষ্ঠানে আসার সৌভাগ্য আমার হয়েছে, তখন একাই আসতাম বি-স্ক্যানের হয়ে কাল সাথে ছিল বহ্নি, অরন্য, রুমা, নাসিম, সুমি ও কৌশিক দল ভারী হওয়ায় অনুষ্ঠান উপভোগ করলাম আরো বেশী আমি আর বহ্নি এক সাথে গিয়েছিলাম, ওখানে আমাদের অপেক্ষায় থাকা রুমা ও সুমিকে দেখলাম লেইকের পাড়ে বসে অপেক্ষা করছে, নাসিম ব্যস্ত ছিল ওর হ্যান্ডিক্যামে ভিডিও করতে আমাদের দেখে সবাই খুশী হয়ে উঠলো একটু পর আমাদের সাথে যোগ দিল অরন্য ও কৌশিক বেশ কিছু ছবি তোলা হলো, সেইসাথে ভিডিও বি-স্ক্যান এর কিছু লিফলেট ও স্টিকার সেখানে বিতরন করা হলো অনেকেই অনেক কিছু জানতে চাইলেন বি-স্ক্যান সম্পর্কে আলাপ হলো বিভিন্ন সংগঠন থেকে আসা মানুষের সাথে
অরন্য কথা বলছেন অটিস্টিক বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করেন এমন একজন ভদ্রমহিলার সাথে।

যথারীতি বিশেষ অতিথিদের বক্তৃতা দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়, তাদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন, ডিসঅ্যাবিলিটি রাইটস ওয়াচ গ্রুপের আহ্বায়ক কাজী রোজী,সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নাছিমা বেগম, জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরামের সভাপতি খন্দকার জহুরুল আলম ও ফোরামের মহাসচিব জওয়াহেরুল ইসলাম মামুন প্রমুখ বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুন নেসা খানম বক্তারা প্রতিবন্ধী মানুষকে স্বাগত জানিয়ে বিভিন্ন কথা বলেন প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি কমপ্লেক্স তৈরি করে দেয়াসহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বিভিন্ন ঘোষণা বাস্তবায়ন করা হবে বলেও উল্লেখ করা হয় অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ত্ব করেন ফোরামের সভাপতি খন্দকার জহুরুল আলম
বিশিষ্ট অতিথিবৃন্দ।

অনেক ধরনের প্রতিবন্ধী মানুষ, সাথে তাদের স্বজন বাবার সাথে আসা একটি মেয়েকে দেখে ভীষণ ভাল লাগলো, এতো মিষ্টি দেখতে, খুব সুন্দর করে সেজেছে, পায়ে ছিল নুপুর মেয়েটি বুদ্ধী প্রতিবন্ধী ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো দর্শক, এই সাথে চা, ঝালমুড়ি, চানাচুরওয়ালাদের হাক ডাক
সেই মিষ্টি মেয়েটি।


এই ধরণের অনুষ্ঠানগুলোয় গেলে মনটা খুব খারাপ হয়ে যায় কত রকম শিশু, কত রকম তাদের প্রতিবন্ধিতা কিন্তু চমৎকৃত হই যখন তারাই মঞ্চে উঠে পরিবেশন করে বিভিন্ন নাচ, গান অভিনয় যেই মিষ্টি মেয়েটির কথা বলেছিলাম অনুষ্ঠানের প্রথমেই সেই মেয়েটি একটি দ্বৈত নাচে অংশ নিল এরপর একে একে বিভিন্ন প্রতিবন্ধী শিশুর নাচ, গান, ফ্যাশেন শো ইত্যাদি পরিবেশিত হলো এদের মাঝে বাক ও শ্রবন প্রতিবন্ধী শিশুদের ফ্যাশন শোটি সবার নজর কাড়ে করতালিতে মুখর হয়ে উঠে জায়গাটি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী একজন গান গাইতে মঞ্চে আসেন সাথে ছোট্ট দুটি শিশু, বয়স কতোই বা হবে ৪ কি ৫ কিন্ত এতো সতস্ফুর্তভাবে তারা মানুষের সামনে নাচছিল দেখে অবাক হয়ে গেলাম অটিজম আক্রান্ত একটি ফুটফুটে শিশু গান গেয়ে শোনায় আমাদের ধীরে ধীরে সন্ধ্যা নেমে আসে
ওরা বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী, বাজনার তালে তালে পা ফেলা দেখে সেটা বুঝতেই পারবেন না।

মঞ্চে যখন ক্ষীণ দৃষ্টি সম্পন্ন আব্দুর রহমান গান গাইতে এলেন .........পিড়িতী কাঠালের আঠা গানটি ধরলেন তখন সব দর্শক খুব মজা পেলেন, আরো জমে উঠলো যখন দুই মহিলা সেই সাথে মঞ্চে ফোরামের প্রেসিডেন্ট আলম সাহেবকে নিয়ে গানের তালে নাচতে উঠলেন, কিন্ত আযান শুরু হয়ে যাওয়ায় ঐ মুহুর্তে থেমে গেলে পরে আর সেভাবে জমে নি এরপর আরো কিছু গান, নাচ পরিবেশিত হয় আব্দুর রহমান সাহেবের সাধের লাউ বানাইলো মোরে...... গানটি দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয় অনুষ্ঠান চমৎকার হয়েছে কোন সন্দেহ নেই, তবে প্রতিবন্ধী মানুষের দাবী, ভাবনা এবং কষ্ট নিয়ে কিছু ছোট ছোট নাটিকা থাকলে ভাল হতো অনেক মানুষ তাতে ভাবনার খোরাপ পেতেন দৃষ্টভংগী পাল্টাতে সহায়ক ভুমিকা রাখতো বলে মনে হয়েছে যেমনটি জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরামের পাব্লিক লাইব্রেরী মিলানায়তনে দেখেছিলাম আমি সেই অনুষ্ঠানটি নিয়ে 'আমরা তোমাদেরই একজন' নামে একটি পোস্টও দিয়েছিলাম
               গান গাইছেন আব্দুর রহমান সাথে সভাপতি জনাব, জহুরুল আলম ও অন্যান্যরা সঙ্গ দিচ্ছেন।

কালকের দর্শকদের ব্যবহার আমাকে সত্যি মুগ্ধ করেছে অনুষ্ঠান শেষ হতে রাত আটটা বেজেছে মুক্ত একটি জায়গায় আয়োজনটি হওয়া সত্যেও তাদের মাঝে কোন ধরণের খারাপ আচরণ দেখি নি অনুষ্ঠান চলা কালে দু’বার বিদ্যুৎ চলে গেলেও মৃদু কিছু আওয়াজ ছাড়া তেমন কোন মন্তব্য তারা করেন নি, ছিলেন অনেক সংযত বাংলাদেশের মানুষ কি তবে শিখছে প্রতিবন্ধী মানুষকে সম্মান করতে? তাই যেন হয়


- সালমা  মাহবুব, ৯/৪/২০১০।

New Treatment For Cerebral Palsy

For the first time ever, the FDA has approved a study that will attempt to test the effectiveness of adult umbilical cord stem cells in the treatment of cerebral palsy.
For the first time ever, the FDA has approved a study out of the Medical College of Georgia that will attempt to test the effectiveness of adult umbilical cord stem cells in the treatment of the symptoms of cerebral palsy. For sufferers of cerebral palsy, this could be the first step toward alleviating the outward symptoms, if not necessarily an outright cure.

Anecdotal evidence suggests this treatment has a chance of working. For more than 20 years, doctors have used stem cells from umbilical blood, and these tests have showed increased mobility in patients suffering from cerebral palsy.

Cerebral palsy is generally caused either by a brain injury or by a lack of oxygen making its way to the brain. Blood from the umbilical cord is rich in stem cells, which are able to divide and multiply, and then transform into other types of cells. In animal studies, stem cells have been able to help injured brain cells recover, as well as replace dead brain cells.

In an interview with the Medical College of Georgia News, Dr. James Carroll, the head researcher on the study, said the study itself could be groundbreaking for sufferers of not only cerebral palsy, but also of all brain injuries. "Evidence up to this point has been purely anecdotal. While a variety of cord blood stem cell therapies have been used successfully for more than 20 years, this study is breaking new ground in advancing therapies for brain injury -- a condition for which there is currently no cure."

During the study, 40 children ages 2-12 will be tested. Half will initially receive stem cells, while the other half will receive a placebo. After three months -- the point at which, anecdotally, the patients should show significant improvement -- the children will be tested by doctors. After this, the half of the study group that initially received the placebo will receive stem cells. All groups will be viewed again three and six months later.

Source: http://www.disabilitynewsarticles.com/disability_articles/2010/04/new-treatment-for-cerebral-palsy-144871.htm
Reblog this post [with Zemanta]

রবীন্দ্র সরোবরঃ প্রথম আলো আয়োজন

অনেকদিন পর বিশাল খোলা আকাশটাকে দেখলাম। চারদেয়ালের মাঝে থেকে সহজে বের হওয়া আমার হয়ে উঠে না। পারিপার্শিক অবস্থাগুলো আমাদের অনুকুল নয় বলে, বের হতে ভাল লাগে না সেই ছোটবেলা থেকেই, কিন্তু আজ ভাবি বের না হলেও এই অবস্থা কোনদিন পাল্টাবে না। প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল রবীন্দ্র সরোবরে। পত্রিকায় দেখে ভাললাম, যাব এই অনুষ্ঠানে, কিন্তু চিন্তায় ছিলাম নিজের এই হুইলচেয়ারটিকে নিয়ে। আমরা তো কোথাও আমন্ত্রিত নই, তাই আমাদের কথা মাথায় রেখে কোন কিছু এই দেশে তৈরী হ্য় না। আরও একবার এখানে যাবার প্রস্তুতি নিয়ে পিছিয়ে গিয়েছি। এবার যাবই ঠিক করলাম, টিভিতে যখন রবীন্দ্র সরোবর দেখেছি তখন ভেবেছি মঞ্চের কাছে না যেতে পারলেও, বসার স্থানগুলোর উপর থেকে হলেও আমি দেখতে পাব অনুষ্ঠান। সেই ভেবেই যাবার প্রস্তুতি।

সকাল বেলা ফেইসবুক অনলাইন এ আব্দুন নুর তুষার ভাই কে পেয়ে গেলাম। উনি প্রথম আলোর অনুষ্ঠানে যাবেন ধরে নিয়ে উনার কাছে জানতে চাইলাম, আমি কিভাবে যেতে পারি। উনি বললেন, লেইকের পাশ দিয়ে নৌকায় চড়ার যে পথটি আছে সেই পথে যেতে। সত্যি এই পথটি ভাল,ধন্যবাদ তুষার ভাইকে। তবে এই প্রবেশ পথটিতে যদি কর্তৃপক্ষ একটি সাইনবোর্ড যুক্ত করেন যে এখান দিয়ে হুইলচেয়ার নিয়ে প্রবেশ করা যাবে, তাহলে খুবই ভাল কাজ হবে বলে আমি মনে করি। একদিকে যখন র‌্যাম্প তৈরীর কথা বলা হচ্ছে আমাদের মুক্ত চলাচলের জন্য তখন রবীন্দ্র সরোবর শুধু একটি সাইনবোর্ড ব্যবহার করে সবাইকে জানিয়ে দিতে পারে তাদের একটি পথ আছে, আর অন্যদিকে আমার মত সমস্যাগ্রস্থরা পথটি খুঁজে পাবে খুব সহজে।


অনুষ্ঠান চারটায় শুরু, আমি মা কে সাথে নিয়ে বের হলাম সাড়ে চারটায়, এই প্রথম বলে রবীন্দ্র সরোবর খুঁজে তার প্রবেশ পথগুলো পেতে একটু দেরী হয়ে গেল। ধানমন্ডি ব্রীজের উপর যখন উঠলাম দূর থেকে জায়গাটা দেখা যাচ্ছিল, আর ভেসে আসছিল গান ‘নিথুয়া পাথারে নেমেছি বন্ধুরে.........’। ইস মিস হয়ে গেল, গানটি কাছ থেকে শোনা হলো না। মিস করেছি প্রথম দিকের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের কথাগুলো,যার মাঝে তুষার ভাইও ছিলেন।


আমার কাংখিত পথটি খুঁজে পেলাম অবশেষে, চলতে লাগলাম লেইকের পাশ দিয়ে, পথ কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তখনো জানি না। মঞ্চের কাছাকাছি এসে দেখলাম অনেক মানুষ, ভীড় ঠেলে এগুতে লাগলাম সামনে, অবাক হয়ে একসময় দেখলাম পৌঁছে গেছি একদম মঞ্চের পাশে। প্রিয় লেখক আনিসুল হক তখন ভাস্কর বন্দোপাধ্যায়ের কবিতা আবৃত্তির ঘোষনা দিচ্ছেন। শুনলাম তার কবিতা, ‘নন্দলাল তো একদা একটা করিলো ভীষণ পণ.........’। যে মানুষগুলোকে শুধু টিভি পর্দাতেই দেখেছি, তাদের সামনা সামনি দেখতে পেয়ে মনে হচ্ছিল একি সত্যি না কি, স্বপ্ন দেখছি। তারাও রক্তমাংসের মানুষ জানি, তারপরও পথে ঘাটে যারা চলেন তারা নিশ্চয়ই তাঁদের দেখা পান। কিন্তু আমার জন্য ব্যপারটি বড়, কারণ এই সুযোগ আমার কোনদিন হয়নি। অনেক মানুষ ছিল মঞ্চ ঘিরে রাস্তা পর্যন্ত। অনেকের চোখেই দেখেছি বিস্ময়, একজন হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী এসেছেন অনুষ্ঠান দেখতে, তাও আবার মেয়ে। হয়তো ভেবেছেন দিন বদলের স্লোগান তাহলে সার্থক। গতবছর যখন প্রথম আলো বদলে দাও বদলেও যাও অনুষ্ঠানটি করেছিল এইখানে, তখনও ভাবি নি, সেই প্রিয় শিল্পী শাকিলা জাফর, ফাহমিদা নবী, এস আই টুটুল তাঁদের গাওয়া ‘বদলে দাও বদলে যাও’ গানটি তাদের কন্ঠেই সামনাসামনি সেই একই মঞ্চে কোনদিন শুনতে পাবো, একই সাথে তাঁরাও দেখতে পাবেন আমাকে। আসিফ, শুভ্র দেব, মমতাজ আরো অনেক শিল্পীর পরিবেশনায় মুখর হয়ে উঠেছিল প্রাঙ্গনটি। নিরাপত্তার কথা ভেবে সন্ধ্যা নামার আগেই শেষ হলো আয়োজন।


ফেরার পথে ভাবছিলাম অনেক অপূর্ণতা রয়ে গেছে জীবন জুড়ে, ভাবছি এখন থেকে কিছুটা হলেও তা পুরণের চেষ্টা থাকবে এই দিন বদলের পালায়। যাবার চেষ্টা করবো এই ধরনের বিভিন্ন আয়োজনে। তবে একটা ব্যপার, চারিদিকে যখন প্রতিবন্ধী মানুষেরা তাদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার, ভেবেছিলাম তাদের নিয়ে কিছু কথা থাকবে এই আয়োজনে। অন্তত তাদের প্রতি দৃষ্ট ভংগী পরিবর্তনের আহ্বানটুকু করা যেতে পারতো। পরের বছর এই অনুষ্ঠানে এই দেশে আমাদের মত বঞ্চিতদের অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পরিবর্তনের কথাও বলবে প্রথম আলো, সেই প্রত্যাশা রইলো।


লেখকঃ সালমা মাহবুব, ১৪ এপ্রিল, ২০১০।
salma@b-scan.org

হাত বাড়িয়ে দিই

ভুল ধারণা ও সঠিক শিক্ষার অভাবে অটিজম আক্রান্ত শিশু-কিশোরদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে বিলম্ব হচ্ছে। দরকার তাদের মানসিকভাবে সহযোগিতা করা। ২ এপ্রিল বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসকে সামনে রেখে এ প্রতিবেদন। লিখেছেন মাকসুদুল কবীর সোহেল
'কোথাও আমার হারিয়ে যেতে নেই মানা
মনে মনে... '
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের এই গানের মতো শিশুমনও বিচিত্র জগতে হারিয়ে যায়। এই কল্পনার জগৎ শিশুর মধ্যে শুরু হতে থাকে দেড় বছর বয়স থেকে। শিশুরা তাদের অনুভূতির প্রকাশ ঘটায় মিছামিছি খেলার মধ্যে। আগ্রহ দেখায় গল্প শোনার। দুই থেকে আড়াই বছরের শিশু গভীর আগ্রহে মা-বাবা, ভাই-বোন, দাদা-দাদীর কাছে গল্প শোনে, গল্পের ছবিগুলো দেখে। বাড়তে থাকে কল্পনার জগৎ, তৈরি হতে থাকে সৃজনশীলতা। দুঃখজনক হলেও সত্যি, একটি প্রতিবন্ধকতা কিছু শিশুর মধ্যে লক্ষ্য করা যায়, যার নাম অটিজম। ফলে এসব শিশু স্বাভাবিক শিশুর মতো বেড়ে উঠতে পারে না।
বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে শিশুদের একটি বিশাল অংশ অটিজমের শিকার। কিন্তু সে তুলনায় অটিজম সম্পর্কে দেশে ব্যাপক সচেতনতার অভাব রয়েছে। অটিজম শিশুর সংখ্যা বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও প্রতিনিয়ত বেড়ে চলছে। বলা হয়ে থাকে, প্রতি এক হাজার শিশুর মধ্যে একজন শিশু অটিস্টিক হতে পারে। সে হিসাবে, দেশে অটিস্টিক মানুষের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে প্রায় দেড় লাখ।
দেশে ও বিদেশে দীর্ঘদিন ধরে অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে কাজ করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞান বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক ড. শিরিন জামান মুনির। তিনি বলেন, বাংলাদেশে অটিস্টিক শিশুদের চিকিৎসা ও সুশিক্ষার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। ভুল ধারণা ও সঠিক শিক্ষার অভাবে অটিজম আক্রান্ত শিশু-কিশোরদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে বিলম্ব হচ্ছে।
অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ডা. রওনাক হাফিজ শিশুর অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেন, হতাশ হওয়ার কিছুই নেই, সচেতনতার সঙ্গে সাহসী পদক্ষেপে পারিবারিক আঙ্গিকে শিশুদের গড়ে তোলা সম্ভব। পরিবারের অন্য সবার মতো তাদের সফলতায়ও বিশ্বাসী হতে হবে।
সাক্ষর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির চেয়ারপারসন শামসুন নাহার আজিজ লীনা বলেন, অনেক অটিস্টিক শিশু-কিশোর প্রচণ্ড ভালো হয় গানে, ছবি আঁকায়, লেখাপড়ায়, কম্পিউটারে। সুযোগের অভাবে এই প্রতিভাগুলো হারিয়ে যাচ্ছে সবার অজান্তে সচেতনতার অভাবে।


অটিস্টিক শিশুদের ব্যবহারিক সমস্যা কমানোর ক্ষেত্রে নিচের বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখতে হবে :
ষ যোগাযোগের সঠিক কৌশল শেখানো।
ষ পছন্দের প্রাধান্য দেওয়া।
ষ শিশুর উপযোগী শিক্ষণীয় পরিবেশ তৈরি।
ষ ভালো কাজের প্রশংসা/পুরস্কৃত করা।
ষ অর্থপূর্ণ যোগাযোগমূলক কাজে ব্যস্ত রাখা।
ষ আত্মনিয়ন্ত্রণ করার কৌশল বাড়ানো।
ষ ছবির ব্যবহার শেখানো।
ষ স্বাভাবিক ও বিশেষ উভয় শিশুদের মানসিক-দৈহিক বিকাশের উপযুক্ত এবং পরিকল্পিত শিক্ষাদানের পরিবেশ প্রয়োজন। 'বিশ্ববিখ্যাত অটিস্টিক ব্যক্তিত্ব টেম্পল গ্র্যান্ডডিন বলেছেন, অটিস্টিক শিশুদের অন্যান্য বিশেষ শিশুর মতোই তার বিশেষ শিক্ষাকে পাশাপাশি স্বাভাবিক শিশুর সঙ্গে মেশার এবং শিক্ষা লাভের সুযোগ দেওয়া উচিত। কারণ স্বাভাবিক শিশুই তো অনুকরণের সবচেয়ে সেরা মডেল।'


শিক্ষার জন্য যা প্রয়োজন
ষ ভর্তির পূর্বপ্রস্তুতি। যেমন : যোগাযোগ ও নির্দেশনা অনুসরণ দক্ষতা বাড়ানো, ব্যবহারিক সমস্যা কমানো ইত্যাদি।
ষ স্কুলের পরিবেশে যারা থাকেন যেমন_ অন্যান্য শিক্ষার্থী, সহপাঠী, অন্যান্য অভিভাবক, স্কুল কর্তৃপক্ষ, শিক্ষকমণ্ডলীকে অটিস্টিক শিশুটি সম্পর্কে জানানো।
ষ শ্রেণীকক্ষ, শিক্ষা উপকরণ অটিস্টিক শিক্ষাবান্ধব করা।
ষ যে শিক্ষক/শিক্ষিকারা ও শিশু তত্ত্বাবধায়ক যারা শিশুদের শিক্ষায় নিয়োজিত থাকবেন তাদের বিশেষ ট্রেনিং দেওয়া।
ষ প্রয়োজনবোধে বিশেষ শিশুদের শিক্ষা ও চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ এবং শিক্ষা মনোবিজ্ঞানীর পরামর্শ নেওয়ার ব্যবস্থা করা।
ষ অভিভাবকদের প্রত্যাশা বা চাওয়া সম্পর্কে অবগত থাকা।


অটিস্টিক শিশুর অভিভাবকদের প্রতি
ষ নিজেকে অসহায় কিংবা একা ভাববেন না।
ষ শিশুর প্রতিভা কিংবা ভালো দিকগুলো বিকাশে সাহায্য করুন।
ষ শিশুর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করুন।
বাড়িতে শিশুর জন্য গঠনমূলক প্রোগ্রাম তৈরি করুন।
ষ শিশুর যোগাযোগ ও সামাজিক বিকাশে জোর দিন।
ষ পারিবারিক যে কোনো অনুষ্ঠানে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করুন।
ষ বাড়ির বাইরে স্বাভাবিক শিশুদের সঙ্গে নিয়মিত বিভিন্ন পার্ক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গে নিয়ে ঘুরে আসুন।
ষ ধৈর্য হারাবেন না। কারণ এই শিশুদের অনেক উন্নতি সম্ভব।
অটিস্টিক শিশুদের শিক্ষা, গবেষণা, চিকিৎসা ও প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করে এমন কয়েকটি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা নিচে দেওয়া হলো :
অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন, বাড়ি-৩৮/৪০, সড়ক-৪, ব্লক-খ, পিসিকালচার হাউজিং সোসাইটি [শেখেরটেক], মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭।
সাক্ষর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি, বাড়ি-৩৪/১, সড়ক-১১ (নতুন), ধানমণ্ডি, ঢাকা-১২০৫।
ফোন : ৮১২৮৫৩৮, ০১৭১৩০১৪৭০৯
হোপ অটিজম সেন্টার, ৪৬-বি লেক সার্কাস, কলাবাগান, ঢাকা। ফোন : ৯১২৭৭৯১।
মনোবিজ্ঞান বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা-১০০০,
ফোন : ৯৬৬১৯০০।


লেখকঃ মাকসুদুল কবীর সোহেল
৩০ মার্চ,২০১০, সমকাল।
http://www.samakal.com.bd/details.php?news=30&view=archiev&y=2010&m=3&d=30&action=main&menu_type=&option=single&news_id=55840&pub_no=292&type=

প্রতিবন্ধিত্ব দমাতে পারেনি দু’বোনকে

ওরা দু’জন সহোদর। ঘাড়ে স্কুলব্যাগ ঝুলিয়ে প্রতিদিন স্কুলে যায়। কিন্তু আর ১০ স্বাভাবিক শিশুর মতো ওরা বেড়ে ওঠেনি। দুই হাঁটুর ওপর ভর করেই তারা স্কুল ও প্রাইভেট স্যারের বাসায় যায়। শারীরিক পঙ্গুত্ব তাদের লেখাপড়ার অদম্য ইচ্ছাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। প্রকৃতির কি নিষ্ঠুর খেলা, বড় বোনের জন্মের দুই বছর পর ছোট বোনের জন্মের পরও দেখা গেল তাদের হাঁটুর স্বাভাবিক গঠন নেই। বাড়ির বাইরে বের হলেই তাদের নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। কিন্তু সবকিছুকে জয় করে আজ তারা প্রতিবন্ধী হয়েও প্রতিদিন আধা কিলোমিটার দূরে স্কুলে যাতায়াত করছে। তারা নিজেরা স্কুলের বেঞ্চে উঠে বসতে পারে না। তাই সহপাঠীরা তাদের প্রতি সহযোগিতা ও সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। তারা ঘোড়াঘাট পৌর এলাকার খন্দকার টোলার ওয়াজেদ আলীর মেয়ে রিমা (১৫) ও রিম্পা (১৩)। রিমা শাহ ইসলাম গাজী (র.) বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী আর রিম্পা ঘোড়াঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী। জানা গেছে, জন্মের পর ওদের হাঁটু থেকে পায়ের অসুখ ধরা পড়ে। মেয়েদের সুস্থ করার জন্য তার বাবা চিকিত্সা করেও কোনো ফল পাননি। তার দুটি সন্তানই শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় তিনি আর কোনো সন্তানও নেননি। রিমা ও রিম্পা জানায়, লেখাপড়া করে তারা দু’জনেই উচ্চশিক্ষিত হবে। কিন্তু মাঝে মধ্যেই তাদের হোঁচট খেতে হয়, যখন আর্থিক দিক দিয়ে অসচ্ছল বাবা-মা তাদের বই-খাতা ও শিক্ষা উপকরণ ঠিকমতো দিতে পারেন না।


সুত্রঃ মঙ্গলবার ৬ এপ্রিল ২০১০, আমারদেশ।

বাংলাদেশে অটিজমসহ প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য নীতিমালা প্রণয়নের সময় এসেছে


আমেরিকা থেকে চাইল্ড সাইকোলজিতে মার্স্টাস ডিগ্রিধারী, কানাডায় বসবাসরত সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অটিজম শিশুদের চিকিৎসা সম্পর্কে বলেন, বাংলাদেশে অটিজমসহ প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য পলিসি নির্ধারণের সময় এসেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশে এডুকেশন পলিসিতে প্রতিবন্ধী শিশুদের মানষিক উন্নয়নের পদক্ষেপ ও প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। লার্নিং, হিয়ারিং,ভিজুয়াল, ফিজিক্যাল ডিজাবিলিটি,অটিজম শিশুরা যেন মেইন ষ্ট্রিম শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। কোন ভাবেই যেন এ সুযোগ থেকে ডিজ্যাবল শিশুরা বঞ্চিত না হয়।
গত ৩১ মার্চ বুধবার ম্যানহাটনের গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে অটিজম স্পিকস সংগঠনের পক্ষ থেকে বিশ্ব অটিজম এওয়্যারনেস ডে সেমিনার এবং রিশেপশনে অংশ নিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একমাত্র কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল কানাডা থেকে বুধবার নিউইয়র্কে আসেন। খবর নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক আজকাল।
তিনি এই প্রতিনিধিসহ বাংলা পত্রিকার সম্পাদক আবু তাহের এর সঙ্গে আলোচনায় এ কথা বলেন। সেমিনারে অংশ নেয়ার ফাঁেক এ প্রতিবেদকের কাছে দেয়া সাক্ষাৎকারে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল তার নিজের ৫ বছর বয়সী মেয়ের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানান, সামান্য ‘হুইল চেয়ার কি?’ এটা সে স্কুলে টিচারের কাছে শিখেছে, আর আমি বাসায় শিখিয়েছি। তাই আজ আমার মেয়ে বিষয়টি পরিপূর্ণভাবে জানে। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তার মাঝে গ্রহণ যোগ্যতা বৃদ্ধি করেছে। সুতরাং ডিজ্যাবল শিশুরা সমাজ থেকে নিজেদের যেন আইসোলেটেড করে রাখার সুযোগ না পায় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। স্কুলের আধুনিক এডুকেশন এবং সামাজিক ও পারিবারিক রিহ্যাবিলিটেশনই পারবে ৫০ ভাগ ডিজ্যাবল শিশুকে রোগমুক্তি দিয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্টের অটিজম স্পিকস সংগঠনটি ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বিশ্বব্যাপী শিশুদের অটিজম রোগ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। বব রাইট এবং সুজান রাইট প্রতিষ্ঠিত সংগঠনের প্রচেষ্টায় জাতিসংঘ ২০০৭ সালে ২ এপ্রিলকে বিশ্ব অটিজম বা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী সচেতনতা দিবস ঘোষণা করে। এবছর ১ ও ২ এপ্রিল নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন দেশের সুউচ্চ বিল্ডিংয়ে ব্লু লাইট জালিয়ে ওয়ার্ল্ড অটিজম এওয়্যারনেস ডে পালন করা হয়।
গত বুধবার মিড টাউনের গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে অটিজম স্পিকস এর পক্ষ থেকে ওয়ার্ল্ড অটিজম এওয়্যারনেস ডে সেমিনার এবং রিসিভশন এর আয়োজন করা হয়। সেমিনারের আলোচনায় দীর্ঘদিন যাবৎ এ বিষয়ে কাজ করে যাওয়া ব্যক্তি ও সংগঠনের সমন্বিত প্রচেষ্টায় ভবিষ্যতে এগিয়ে চলার দিক নির্দেশনা প্রণয়ন করা হয়। এ বছরে জাতিসংঘকে ওয়ার্ল্ড অটিজম এওয়্যারনেস সম্পর্কিত তার ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ প্রদান করা হয়। জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধি ড.একে আব্দুল মোমেন রিসিভশনে অংশ নিয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে আসা বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলার ডাঃ প্রাণ গোপাল দত্তও এই সেমিনারে অংশ নেন।
তিনি কীভাবে অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে কাজ করেছেন- এ প্রসঙ্গে সায়মা ওয়াজেদ শিশুর মত সারলতার হাসি বিলিয়ে দিয়ে বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি একজন স্কুল চাইল্ড সাইকোলজিষ্ট। আমার এ্যাসেসম্যান্ট করার জন্য গত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্রের শিশুদের নিয়ে স্কুলে, হাসপাতালে কাজ করেছি। স্পেসালাইজড ট্রেনিংয়ে শিশুদের ইনটেভেনশনের ডিজাইনিংয়ে সহযোগিতা করতে গিয়ে দেখেছি অকুপেশনাল, ফিজিক্যাল থেরাপি সবই আমেরিকায় পাবলিক স্কুলগুলোতে রেগুলার শিশুদের মাঝে রেখেই তাদের মটিভেশন ও শিক্ষা দেয়া হয়। ডিজ্যাবল শিশুদেরকে আলাদা ভাবার সুযোগই দেয়া হয় না।
বাংলাদেশে অটিজম শিশুদের সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দিয়ে তিনি বলেন, জানা যায় বর্তমানে দেশে শতকরা ১ ভাগ অটিজম শিশু রয়েছে। পরিবারে শিক্ষা থাকার কারনে শহরে মোটামুটি এই শিশুদের আইডিন্টিফাই করা গেলেও গ্রামে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। অনেকে ‘জ্বিন ভূতের আছর’ বলে ভুল চিকিৎসা করিয়ে শিশুদের ক্ষতি করেন। রোগটি আসলে একটি নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার, যা শিশুর তিন বছর হবার পূর্বেই প্রকাশ পায়। শিশুরা সামাজিক অচরণে দুর্বল হয়, পারস্পরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে কম সক্ষম হয়। মানসিক সীমাবদ্ধতা ও একই কাজ বারবার করার প্রবণতা থেকে তাদের সনাক্ত করা যায়। প্রবাসে থাকলেও দেশের সব খবরই রাখতে হয় আমাকে। আমার অবস্থান থেকেই আমি প্রতিবন্ধীদের সহযোগিতা করে যাব।
আরেক প্রশ্নের জবাবে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বলেন, প্রতিবন্ধী রোগের কারণ সম্পর্কে এখনো কোন পরিস্কার ধারণা পাওয়া যায়নি। জেনেটিক কারণে এটি হয় বলে কথিত থাকলেও এখনো তা প্রমাণিত নয়। ১৯৪৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের বাল্টিমোরে অবস্থিত জন হপকিন হাসাপাতালের মনোচিকিৎসক ড.লিও ক্যানার সর্বপ্রথম ১১টি মানসিক ব্যাধিগ্রস্থ শিশুর আক্রমণাত্মক ব্যবহারের সামঞ্জস্যতা লক্ষ্য করে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন করেন এবং এ ধরণের ব্যাধির নাম দেন ‘আরলি ইনফ্যান্টাইল অটিজম’ বলে তিনি জানান।
তিনি এই রোগ নির্ণয় সম্পর্কে বলেন, এক বা দুই বছর বয়সে শিশুর আচরণে এ রোগের লক্ষণ দেখা দিতে থাকে। অভিভাবকরাই সাধারণত প্রথমে এ রোগের লক্ষণ বুঝতে শুরু করেন। লক্ষণ প্রকাশ পেলে দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া দরকার বলে তিনি জানান। প্রাথমিকভাবে এসেসম্যান্ট করে সঠিক ডায়াগনসিস করার পর, চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে, শিশুদের স্পিচ ডিলে,ল্যাংগুয়েজ থেরাপি, অকটুপেশনাল থেরাপি বা আঙ্গুলের ব্যবহার, দৌড়ানো, হাঁটার থেরাপি ব্যবহার করে অনেক পরিবার উপকার পেতে পারেন বলেও মন্তব্য করেন।
এ রোগের গভীরতা সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটার কোন কিউর নাই, সর্দি কাশীর মত কোন রোগ না যে, মেডিসিন খেলেই ভাল হয়ে যাবে। আসলে অন্যান্য শিশুদের যদি একবার কোন কিছু দেখাতে হয় তবে অটিজম শিশুদের বারবার তা দেখিয়ে শেখাতে হয়। এই শিশুদের ইন্ডিপেন্ডন্ট কিভাবে হতে হয় তা শিখাতে হবে ধৈর্য নিয়ে। কাপড় পড়া, জামার বোতাম লাগানো শেখাতে হয়তো দশ বা বিশবার।
তিনি বলেন, শিশুরাই আমাদের ভবিষ্যত, অটিজম আক্রান্ত শিশুরা সঠিক পরিচর্যা, সামাজিক সচেতনতায় অকটু ভালবাসা, স্নেহ পেলে হয়তো দেখা যাবে, একদিন তারা আমাদের দেশ ও জাতির জন্যে গৌরব বয়ে নিয়ে আসবে।

লেখকঃ মোহাম্মদ সাঈদ, নতুন দেশ
http://www.notundesh.com/onnoghor_news1.html

স্টিফেন হকিং স্বপ্ন দেখার ডাক দিয়ে যান যিনি

‘বস ঘুমোচ্ছেন’ (Boss asleep)। দরজার ওপর এমন লেখা দেখলে ভেতরে ঢোকাটা মুশকিল। কিন্তু যদি ঠিকঠাকমতো খোঁজ নিয়ে যাও, তাহলে তুমি সাহস করে ভেতরে ঢুকতে চাইবে এবং ঢুকবেও। রুমটা এলোমেলো, ছড়ানো-ছিটানো বই, একটা হোয়াইট বোর্ড! রুমের বাসিন্দাকে দেখতে তোমাকে ইতিউতি তাকাতে হবে। প্রথম দর্শনেই যদি দেখতে না পাও, তাহলে হয়তো পেছন ফিরে দরজার দিকে তাকালেই বুঝবে, তুমি ভুল ঘরে এসেছ। দরজাজোড়া মেরিলিন মনরোর এক বিরাট ছবি! নিজের ভুল বুঝে তুমি যখন বাইরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াবে, তখন শুনবে একটি অদ্ভুত ধাতব কণ্ঠস্বর—স্বাগতম। তুমি ভুল করোনি!
কণ্ঠস্বর শুনে, ঠিকমতো খুঁজে টেবিলের পেছনে, হুইল চেয়ারে বসা বিজ্ঞানীকে দেখতে পাবে। মুখে এক ধরনের হাসি, ‘কী, কেমন চমকে দিলাম।’ ততক্ষণে তুমি সামনাসামনি হয়ে পড়বে এক জীবন্ত কিংবদন্তির! স্টিফেন উইলিয়াম হকিং! হকিংকে বলা হয় আইনস্টাইনের পর সবচেয়ে প্রতিভাবান বিজ্ঞানী। কতটা প্রতিভাবান? স্বীকৃতি দিয়েই শুরু করা যাক। কেমব্রিজে যেহেতু তুমি তাঁর রুমে পৌঁছেছ কাজে, নিশ্চয়ই গনভিল ও ফেবুস কলেজের স্টিফেন হকিং ভবন পার হয়েই এসেছ। এবং আসার সময় নিশ্চয়ই তাঁর মূর্তিটিও দেখেছ! দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনেও তাঁর একটি মূর্তি আছে। সান সালভাদরের বিজ্ঞান জাদুঘরটির নাম স্টিফেন হকিং বিজ্ঞান জাদুঘর।
রয়েল সায়েন্স সোসাইটি যখন নতুন ফেলো নির্বাচন করে, তখন তিনি সবার সামনে দিয়ে হেঁটে সভাপতির সামনে রাখা খাতায় সই করেন। কিন্তু ১৯৭৪ সালে হকিং যখন ফেলো হন, তখন সভাপতি ওই খাতা নিয়ে একেবারে শেষের সারিতে বসা হকিংয়ের কাছে হেঁটে আসেন। অনেক কষ্ট করে সেদিন হকিং সই করেছেন। কারণ তত দিনে মোটর নিউরন রোগে তাঁর শরীর অসার হতে শুরু হয়েছে! তাঁর পুরস্কারের তালিকা এবার দেখা যাক: এডিংটন মেডেল, হিউজেস মেডেল, তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানের সর্বোচ্চ পুরস্কার আলবার্ট আইনস্টাইন মেডেল, রয়াল অ্যাসট্রোনমিক্যালা সোসাইটির স্বর্ণপদক, কপলে মেডেল—এসব পদার্থবিজ্ঞানের সব পুরস্কার তো আছেই, এই সঙ্গে আছে আমেরিকার সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম। মনে হতে পারে, তাঁকে সম্মানিত করার জন্য সবাই যেন উঠেপড়ে লেগেছে! কেন? হকিং কাজ করেন এমন একটা বিষয় নিয়ে, যা সৃষ্টির শুরু থেকে মানুষকে ভাবিত করেছে—দুনিয়ার জন্ম-মৃত্যু! বিশ্বজগতের নিয়মকানুনের রাজা আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব আর ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জগতের খবর দেয় কোয়ান্টাম বিজ্ঞান। এই দুইকে ছাতনাতলে নিয়ে যান প্রথম এই হকিংই। রজার পেনরোজের সঙ্গে মিলে তিনি দেখালেন বিগব্যাং থেকেই এই মহাবিশ্বের (universe) শুরু! অবিশ্বাসীরা চোখ তুলে বলল, ‘সে কী, বিগব্যাংয়ের আগে তাহলে কী ছিল।’ হেসে জবাব দেন হকিং, ‘তার আগে বলো উত্তর মেরুর উত্তরে কী আছে?’

শুধু শুরুতে নয়, কোয়ান্টাম জগতের অনিশ্চয়তা নীতিকে তিনি নিয়ে গেলেন কৃষ্ণবিবরের (ব্ল্যাকহোলের) কাছে এবং আশ্চর্য হয়ে দেখলেন কৃষ্ণবিবর কালো নয়! ওর থেকে বের হয়ে আসছে কণাস্রোত! তার মানে, কণা বের হয়ে একসময় কৃষ্ণবিবরও লয় পাবে! কী ভয়ানক! তাহলে তো সবই বিকিরণ হয়ে যাবে শেষ বিচারে!
১৯৭৩ সালে হকিং যখন কৃষ্ণবিবরের কণাস্রোতের কথা বললেন, তখন অনেকেই ভ্রূ কুঁচকেছেন। এখন এই কণাস্রোতের নাম হকিং বিকিরণ! হকিং চেষ্টা করেছেন কালভ্রমণের (Time travel) একটা উপায় বের করার। দেখলেন ওয়ার্মহোল দিয়ে চলে যাওয়া যায় অতীতে কিংবা ভবিষ্যতে!
পদার্থবিজ্ঞানীদের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য এমন একটা তত্ত্ব বের করা, যাতে সবকিছু ব্যাখ্যা করা যায়। এমন একটি তত্ত্বের সন্ধানে এখন হকিং ব্যস্ত! কখনো স্ট্রিং থিউরি, কখনো ভিন্ন কিছু। ১৯৪২ সালে যেদিন ইংল্যান্ডে হকিংয়ের জন্ম, ঠিক এর ৩০০ বছর আগে ইতালিতে মারা যান গ্যালিলিও গ্যালিলি। ২১ বছর বয়সে হকিং আক্রান্ত হন স্নায়ুরোগে, যা এএলএস ডিজিজ নামে পরিচিত। ২০০৯ সালের দিকে এসে তিনি পুরোপুরি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে গেছেন। তবে, তাঁর স্বপ্ন রচনা থেমে নেই। জ্যামিতিক চিত্রের মাধ্যমে তিনি নিজের চিন্তাকে বিকশিত করেন। বর্তমান স্ত্রীর আগের স্বামীর বানানো কম্পিউটার সফটওয়্যার দিয়ে কথাও বলতে পারেন! তা নিয়ে তিনি ছুটে যান দেশ থেকে দেশে, লোকেদের শোনান বিজ্ঞানের কথা। বলেন, বিজ্ঞান আর গবেষণাকে ভালোবাসতে, যাতে মানবজাতি এগোতে পারে।
কেবল বক্তৃতা নয়, লিখে ফেলেছেন বিজ্ঞানকে সহজ করে বলা বই। এ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম, ইউনিভার্স ইন এ নাটশেল, ব্রিফার হিস্টরি অব টাইম, ব্ল্যাকহোল অ্যান্ড বেবি ইউনিভার্স প্রভৃতি বই। মেয়ে লুসির কাছে সর্বশেষ লিখেছেন, জর্জ’স সিক্রেট কি টু ইউনিভার্স, যেখানে হ্যারি পটারের স্টাইলে বিজ্ঞানের জটিল বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।

হকিং অভিনয় করেছেন স্টারট্রেকের ডিসেন্ট এপিসোডে। যারা তোমরা পিঙ্ক ফ্লয়েডের ডিভিশন বেল অ্যালবামের ‘কিপ টকিং’ গানটা শুনেছ, তারা সবাই কিন্তু হকিংয়ের সিনথেসাইজড শব্দও শুনেছ! সেখানে তাঁর সিনথেসাইজড ভয়েস ব্যবহার করা হয়েছে।
হকিং যদি বিজ্ঞানী নাও হতেন, তাহলেও তিনি বিখ্যাত হতেন। কারণ ৪৫ বছর ধরে এএলএস রোগে আক্রান্ত কেউ বেঁচে আছেন, এমন কোনো রেকর্ড নেই!
তবে আমাদের সৌভাগ্য যে রোগ তাঁর চলত্শক্তি কেড়ে নিলেও তাঁর মেধা, মনন, দৃষ্টিকে কেড়ে নিতে পারেনি। সে জন্য তিনি স্বপ্ন দেখার ডাক দিয়ে যান।

প্রথম আলো
http://prothom-alo.com/detail/date/2010-04-07/news/54683

মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজ এর প্রধান শিক্ষকের সাথে সাক্ষাৎ

প্রতিবন্ধী শিশুদের একীভুত শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করতে স্কুলগুলোকে উৎসাহিত করার উদ্যোগ হিসেবে আমরা যে লিফলেট ছাপিয়ে ছিলাম, সেই কাজের অংশ হিসেবে, গত ৩ এপ্রিল, ২০১০ আমরা মাইলস্টোন স্কুল এ্যান্ড কলেজ, ঊত্তরা গিয়েছিলাম প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলতে।

তিনি বললেন, তার স্কুলে প্রতিবন্ধী শিশুদের ভর্তি হতে কোন বাধা নেই এবং এমন বেশ কিছু শিশু তার প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছে। তবে তিনি স্বীকার করলেন, তাদের প্রতি সহপাঠী ও কখনো কখনো কিছু শিক্ষকের আচরণও শোভন নয়। উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি ক্লাস ফাইভের একটি ছাত্রের কথা বললেন, যে বয়স অনুযায়ী স্বাভাবিকভাবে বাড়েনি। লম্বায় তার সহপাঠীদের তুলনায় সে অনেক খাটো, সেই কারনে ক্লাসের কেউ তার সাথে মেশে না, ছেলেটি সব সময় মুখ কালো করে বসে থাকে, কিন্ত সে খুব ভাল ছাত্র। প্রধান অধ্যক্ষ খুবই স্নেহশীল একজন মানুষ, তিনি প্রায়ই ঐ ক্লাসের ছেলেদের বোঝানো চেষ্টা করেন, ওর এই অবস্থা জন্য ও নিজে দায়ী নন। আল্লাহ যা কে যেমন বানিয়েছেন তা নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করতে নেই।


আমরা বললাম, স্যার, ক্লাসে ও একা বলেই বাকীরা এমন করে, আরো কিছু প্রতিবন্ধী শিশু যদি ঐ ক্লাসে থাকতো তাহলে এমন আচরণ সহপাঠীরা করতো না এবং ঐ ছেলেটিও একা বোধ করতো না। উনি আমাদের সাথে একমত পোষন করলেন। তবে প্রতিবন্ধী মানুষের প্রতি আচরণের শিক্ষাটি পরিবার থেকে দেয়ার উপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করলেন।

তিনি আমাদের কোন এলাকায় কতজন কি ধরনের প্রতিবন্ধী শিশু রয়েছে সেরকম একটি সার্ভে করতে বললেন যেটা নিয়ে আমরা বিভিন্ন স্কুলে কথা বলতে পারবো। কিন্তু এ ব্যপারে বি-স্ক্যানে এর সীমাবদ্ধতার কথাও জানানো হয়। শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার তা চাইতে হবে কেন? আমরা বাংলাদেশে মাত্র ৪% প্রতিবন্ধী শিশু স্কুলে যেতে পারে এবং আনুমানিক সাড়ে ৩ লাখ প্রতিবন্ধী শিশু আছে তা জানালাম। বাংলাদেশে দেড় কোটি প্রতিবন্ধী মানুষ আছে জেনে তিনি অবাক হলেন।

প্রতিবন্ধী মানুষের প্রতি আচরণ পরিবর্তনে মিডিয়ার আরো গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করা উচিত বলে তিনি আমাদের সাথে একমত পোষন করলেন। ধর্মীয় বিবেচনায়ও যে এমন মানুষের সাথে খারাপ আচরণ মারাত্নক গুনাহর কাজ তিনি তাও উল্ল্যেখ করলেন।

তিনি বিভিন্ন এসেম্বিলিতে প্রতিবন্ধীদের ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করে থাকেন। বি-স্ক্যান তার কাছে যাওয়াতে তিনি বিষয়টি আরো বেশী গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করবেন বলে আমাদের জানালেন।


সবশেষে আমরা তাদের স্কুলে শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের সামনে কিছু সচেতনতামুলক বক্তব্য তুলে ধরার সুযোগ চাইলে উনি তাতে সম্মতি প্রদান করেন। আমরা বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি কর্নেল (অবঃ) নুরুন নবী সাহেবের কাছে তার শত ব্যস্ততার মাঝেও আমাদের সময় দেবার জন্য। আমরা আশা করি তার মত আরো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এভাবে তাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন আমাদের দিকে।

অটিজম: প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ

২ এপ্রিল বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। অটিজম হচ্ছে শিশুর বিকাশজনিত এমন একটি সমস্যা যেখানে তার ভাবের আদান-প্রদান ও সামাজিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। এ সমস্যায় আক্রান্ত শিশুদের আচরণে সমস্যা থাকে, তারা নিজেদের মধ্যে গুটিয়ে থাকে আর কখনো বা একই আচরণ বারবার করতে থাকে। সারা বিশ্বে বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতি হাজারে এক থেকে ১৫ জন শিশু অটিজমে ভুগছে। বাংলাদেশে অটিজম নিয়ে জাতীয় পর্যায়ের কোনো জরিপ না হলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় পরিচালিত ঢাকা বিভাগে শিশু-কিশোরদের মানসিক রোগবিষয়ক এক গবেষণায় দেখা যায়, এতে অংশ নেওয়া শিশুদের মধ্যে ০.৮৪ শতাংশ শিশুর অটিজম আছে। শিশুর বয়স তিন বছর হওয়ার আগেই অটিজমের লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। মেয়েশিশুদের তুলনায় ছেলেশিশুদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় চার গুণ বেশি।
সচেতনতা দিবস এই জন্য যে বিশ্বব্যাপী অটিজম নিয়ে রয়েছে নানা বিভ্রান্তি, অসচেতনতা ও অপপ্রচার—‘অটিজম সমস্যার কোনো চিকিত্সা নেই’, ‘অটিজমে আক্রান্ত শিশুরা বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী’, ‘অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের কোনো চিকিত্সকের কাছে নেওয়ার দরকার নেই’, ‘টিকার কারণে অটিজম হয়’, ‘অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের অঙ্কের জ্ঞান খুব ভালো’ ইত্যাদি। এগুলোর কোনোটাই সত্য নয়। একসময় অটিজম কী, তা-ই আমাদের দেশে অজানা ছিল। প্রচারমাধ্যমগুলোর ইতিবাচক ভূমিকা, কিছু উদ্যোগী মানুষের উদ্যম আর ইন্টারনেটের কল্যাণে আমাদের দেশে এখন অটিজম নিয়ে যথেষ্ট সচেতনতা তৈরি হয়েছে। কিন্তু তার পরও বাকি রয়ে গেছে অনেক কিছু। অটিজম নিয়ে সচেতনতার প্রথম ধাপটি শুরু করতে হবে পরিবারের মধ্য থেকে। পরিবারের একজন শিশুর মধ্যে যখন প্রথম অটিজমের লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে থাকে তখন বেশির ভাগ মা-বাবা প্রথমে বিষয়টি আমলে নেন না। এরপর একপর্যায়ে চিকিত্সকের কাছে নিয়ে গেলে কয়েকটি বিষয় ঘটতে পারে—চিকিত্সক যথাযথভাবে অটিজম নির্ণয় ও তার পরিচর্যা ব্যাখা করেন; অথবা চিকিত্সক অটিজম নির্ণয় করেন ঠিকই কিন্তু এর পরিচর্যা ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে কোনো ব্যাখ্যা দেন না; অথবা চিকিত্সক অটিজম নির্ণয়ই করতে পারেন না। প্রতি ক্ষেত্রেই মা-বাবারা বিভ্রান্তিতে পড়তে পারেন। প্রথম ক্ষেত্রে অটিজমের সঠিক ব্যাখ্যা শোনার পর বেশির ভাগ সময়ই তাঁরা মেনে নিতে চান না যে তাঁদের সন্তানের এমন একটি সমস্যা রয়েছে। এরপর তাঁরা চিকিত্সকের পর চিকিত্সক পাল্টান কিন্তু সন্তানের তাতে কোনো মঙ্গল হয় না। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে অটিজম নিয়ে ব্যাখ্যা না জানায় তাঁরা ভুলপথে সন্তানের পরিচর্যা করেন, আর তৃতীয় ক্ষেত্রে মা-বাবাসহ অটিজমে আক্রান্ত শিশুর যে প্রভূত হয়রানি হবে তা বলাই বাহুল্য। এখন মা-বাবারা কী করবেন? তাঁরা অটিজম নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের মতামত জানবেন এবং তাঁরা জানবেন যে অটিজম কোনো একক চিকিত্সকের বিষয় নয়। অটিজম আক্রান্ত শিশুর পরিচর্যার জন্য মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, শিশু স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ, সাইকিয়াট্রিক সোশ্যাল ওয়ার্কার, সাইকোলজিস্ট, বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক, বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মা-বাবা সবার সমন্বিত ও কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন। অটিজম আক্রান্ত বেশির ভাগ শিশুর জন্য প্রয়োজন বিশেষায়িত স্কুল। অনেক সময় সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সামাজিক লোকলজ্জার ভয়ে অটিজম আছে এমন শিশুর মা-বাবা তাদের সন্তানকে বিশেষায়িত স্কুলে ভর্তি করাতে চান না। সন্তানকে প্রায় লুকিয়ে রাখেন সব সামাজিকতা পরিহার করে। অথচ অটিজম আছে এমন শিশুর জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সামাজিক মিথস্ক্রিয়া করানো, তাকে মনের ভাব প্রকাশের নানাবিধ উপায় শেখানো।
অটিজম নিয়ে লেখালেখি, টিভি অনুষ্ঠান নেহাত কম হয় না। প্রতিবছর ২ এপ্রিলকে ঘিরে তো বটেই, এমনকি অন্যান্য সময়েও অটিজম নিয়ে সেমিনার-সিম্পোজিয়াম হয়ে থাকে। কখনো বা বিদেশি বিশেষজ্ঞরাও অংশ নেন নানা কর্মশালায়। কিন্তু অটিজমের ক্ষেত্রে একটি বিষয় উল্লেখযোগ্য যে অটিজম কোনো ভৌগোলিক সীমারেখা, ধর্ম, জাতি, অর্থনৈতিক অবস্থা মানে না। অর্থাত্ শহরে-গ্রামে যেকোনো জায়গায় অটিজম হওয়ার আশঙ্কা প্রায় সমান। কিন্তু আমাদের দেশের সচেতনতামূলক সব কর্মকাণ্ড এবং অটিজমের পরিচর্যা পাওয়ার সুযোগ-সুবিধাগুলো শহরকেন্দ্রিক, নির্দিষ্ট করে বললে কেবল রাজধানীকেন্দ্রিক। ফলে গ্রামাঞ্চলের বৃহত্ জনগোষ্ঠী রয়ে যায় পুরোপুরি সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডের আওতার বাইরে।
আমাদের সব কার্যকারিতা বিশ্লেষণ করলে ঘুরে-ফিরে যে বিষয়টি চলে আসে তা হলো—অটিজম নিয়ে আমাদের তাবত্ কর্মকাণ্ড, পত্রিকায় লেখা, বেসরকারি টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠান, অটিজম নিয়ে কাজ করছেন এমন বেসরকারি সংগঠনের কার্যক্রম—কোনোটাই তেমনভাবে গ্রামীণ জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে পারছে না। অটিজম আছে এমন শিশুদের জন্য কেবল সহানুভূতিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেই আমরা যেন আমাদের দায় না সারি। অটিজম-বিষয়ক প্রকৃত তথ্য শহরে-গ্রামে, ধনী-দরিদ্র সবার কাছে নিয়ে যেতে হবে আমাদের সবাইকে। রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যমগুলোতে (বিটিভি, বাংলাদেশ বেতার) কেবল এই ২ এপ্রিলকে ঘিরে নয়, বরং নিয়মিতভাবে অটিজম-বিষয়ক অনুষ্ঠান প্রচার করা প্রয়োজন। স্বাস্থ্য বিভাগের আওতাধীন সব জেলা শহর ও উপজেলায় অটিজম-বিষয়ক বিলবোর্ড থাকা উচিত। অটিজমের সাধারণ পরিচর্যার দিকে এবং এ বিষয়ে বিভ্রান্তিমূলক কোনো তথ্য যাতে কেউ প্রচার করতে না পারে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নজর দিতে হবে। প্রতিটি গ্রাম এবং শহরের প্রাথমিক স্কুলসহ সমমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের এ বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ দিতে হবে। অটিজম আছে এমন শিশুদের মা-বাবারা প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রয়োজনে নিজ এলাকায় এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি ও অন্যান্য মা-বাবাকেও প্রশিক্ষণ দিতে পারেন।
মনে রাখতে হবে, অটিজমের পরিচর্যা ও অটিজমে আক্রান্ত শিশুকে সমাজের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত রাখার প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হচ্ছে দ্রুততম সময়ে তার অটিজম শনাক্তকরণ। এরপর সঠিকভাবে, বিশেষায়িত শিক্ষায়তনের মাধ্যমে তাকে সমাজে টিকে থাকার উপযোগী করে গড়ে তোলা। আমরা জানি, আমাদের সম্পদ সীমিত। উন্নত দেশের মতো করে অটিজমের পরিচর্যা এ মুহূর্তে হয়তো আমরা করতে পারব না, কিন্তু আমরা স্বপ্ন দেখি ভবিষ্যতের। আমরা বিশ্বাস করি, এ মুহূর্তে আমরা যদি দেশব্যাপী কেবল সচেতনতা তৈরি করতে পারি তবে ভবিষ্যতে অবশ্যই অন্যান্য দেশের মতো আমরাও এই একটু পিছিয়ে থাকা অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে আসতে পারব সামনের সারিতে। এর জন্য প্রয়োজন সমন্বিত ও কার্যকর উদ্যোগ এবং তা এখনই।
আহমেদ হেলাল: চিকিত্সক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

২ এপ্রিল, ২০১০, প্রথম আলো।
http://prothom-alo.com/detail/date/2010-04-02/news/53293

 
Design by Oronno Anam | Bloggerized by Salma Mahbub