তাসনিনের শ্রেণীকক্ষ

তাসনিন সুলতানা। বছর দুয়েক ধরে সে দুরারোগ্য 'মাসকুলার ডিসট্রফি' রোগে আক্রান্ত। তবে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাও তার লেখাপড়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। হুইলচেয়ারে করেই সে স্কুলে যায়, পাঠে অংশ নেয়। চট্টগ্রাম রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী তাসনিন এবার সপ্তম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণীতে উঠলে তার মা-বাবা খুবই খুশি হন। একই সঙ্গে তাঁরা উদ্বিগ্ন হন মেয়ের লেখাপড়ার ভবিষ্যৎ নিয়েও। কারণ, সুলতানার নতুন শ্রেণীকক্ষটি দোতলায়। সেখানে হুইল চেয়ার নিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। আবার নতুন শ্রেণীতে ভর্তি হওয়াও জরুরি।

সমস্যাটি নিয়ে তাসনিনের মা আফরোজা আখতার স্কুলের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে হতাশই হন। কারণ, একজন ছাত্রীর জন্য তো আর পুরো ক্লাস দ্বিতীয় তলা থেকে একতলায় আনা যায় না। আফরোজা আখতার একপর্যায়ে দেখা করেন প্রতিষ্ঠানের উপাধ্যক্ষ রওশন ইয়াসিনের কাছে। উপাধ্যক্ষ সব শুনে আশ্বাস দেন, 'আমাদের এ ছাত্রীটি এখানেই পড়বে। তাসনিনের শ্রেণীকক্ষটি নিচতলায়ই থাকবে!' এ খবরে খুশিতে কেঁদে ফেলে তাসনিন। আবেগে জড়িয়ে ধরে মাকে। তাহলে তার লেখাপড়া আর বন্ধ হচ্ছে না! আনন্দিত চট্টগ্রাম বন্দরের অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী বাবা আব্দুস সবুরও।

নতুন শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে গত সপ্তাহে স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে তাসনিন। সহপাঠীকে ফিরে পেয়ে তার বন্ধুরাও খুশি। তাসনিন কালের কণ্ঠকে বলে, 'শিক্ষকদের সিদ্ধান্তে আমি খুবই খুশি। আমি আরো পড়ালেখা করে একজন আদর্শ শিক্ষক হতে চাই। সবাইকে দেখিয়ে দিতে চাই, সুযোগ পেলে আমরা প্রতিবন্ধীরাও সবকিছু পারি।' আফরোজা আখতার বলেন, 'আমি স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞ। তার শ্রেণীকক্ষই নিচতলায় নামিয়ে আনেননি, শ্রেণীকক্ষের পাশের স্টোর রুমটি সংস্কার করে নতুন বাথরুমও বানিয়ে দিয়েছে। অন্য অভিভাবকরাও আমাকে যথেষ্ট মানসিক সাহস জুগিয়েছেন।'

তাসনিনের প্রতিষ্ঠানের উপাধ্যক্ষ রওশন ইয়াসিন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ছাত্রীটি খুবই সম্ভাবনাময়। তার লেখাপড়া যাতে অব্যাহত থাকে, সে জন্য আমরা সহায়তার চেষ্টা করেছি মাত্র। আমরা চাই, দেশের অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও একইভাবে প্রতিবন্ধীদের পাশে দাঁড়াবে।' প্রতিবন্ধীদের জন্য কাজ করে থাকে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বি-স্ক্যান (বাংলাদেশি সিস্টেমস চেঞ্জ এ্যাডভোকেসি নেটওয়ার্ক)। বি-স্ক্যানের সহকারী প্রশাসক সালমা মাহবুব বলেন, প্রতিবন্ধী এক শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি যে উদাহরণ রেখেছে, তা অনন্য। তিনি জানান, বি-স্ক্যান স্কুল কর্তৃপক্ষকে অভিনন্দন জানিয়ে চিঠি দেবে।


সুত্রঃ কালের কন্ঠ, বিপ্লব রহমান, ১৩ জানুয়ারী, ২০১০।

0 মন্তব্য(সমূহ):

Post a Comment

FACEBOOK FACEBOOK AMARBLOG

 
Design by Oronno Anam | Bloggerized by Salma Mahbub