আসুন বাড়িয়ে দেই সহযোগীতার স্পর্শ

শ্যামলা বরণের মিষ্টি এক মেয়ে ফাল্গুনী। তাকে সরাসরি দেখার সৌভাগ্য আমার আজ অবদি হয়নি। কিন্তু প্রথম যেদিন তার ছবিটি অনলাইনে দেখতে পেলাম, সেদিনের পর থেকে কিছুতেই মন থেকে তাড়াতে পারছি না কিশোরী এই মেয়েটির মুখছবি। শৈশবের দুরন্ত দিনগুলোতে যখন তার দস্যিপনায় মেতে উঠার কথা তখন ছোট্ট অবোধ শিশু ফাল্গুনী ৩৩ হাজার ভোল্টের বিদ্যুতের লাইনে জড়িয়ে হাসপাতালের বেডে শুয়ে কাতরেছে। মর্মান্তিক সে দুর্ঘটনায় একেবারে হুট করেই তার জীবন পথের মোড় ঘুরে যায়। ডাক্তাররা জানান তার দু'টি হাত এমনভাবে পুড়েছে শরীর থেকে কেটে বাদ দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। তখন কতো হবে তার বয়স! বড় জোড় সাত কি আট ...এটুকুন বয়সেই তাকে প্রতিবন্ধীতার অভিশাপে জর্জরিত হতে হয়েছে । কিন্তু মনের জোড় সে এতটুকুও হারায়নি। বাহু দিয়ে লিখেই সব পরীক্ষায় বরাবর-ই প্রথম হয়েছে। ৫ম শ্রেণীতে টেলেন্টপুলে পেয়েছে বৃত্তিও ।




পটুয়াখালীর গলাচিপা শহরেই থাকে ফাল্গুনীরা। চার বোনের মাঝে সেঝ ফাল্গুনী। বড় দু'বোনের বিয়ে হয়ে গেছে আগেই। ফাল্গুনী ও তার ছোট বোন পটুয়াখালীর গলাচিপা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ে। মা ভারতী রাণী সাহা মিষ্টির প্যাকেট বানিয়ে বিক্রি করে আর বাবা জগদিশ চন্দ্র সাহা ছোটখাটো একটি দোকান চালায়। এই আয়েই তাদের সংসার ও দুই মেয়ের পড়ালেখার খরচ চলে। বর্তমানে ফাল্গুনী ১০ম শ্রেণীতে পড়ছে। জানে না, আদৌ কোনোদিন তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে কিনা তবুও নিরন্তর স্বপ্নের জ্বাল বুনে চলে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বি সি এস কর্মকর্তা হবার।
এ তো গেলো একজন ফাল্গুণীর গল্প। একই এলাকার হারুন অর রশীদের কাহিনী আরো করুণ। তার তিন ছেলের মধ্যে দুই ছেলেই বাক প্রতিবন্ধি। বড় ছেলে শামীমুর রহমান শাহিন প্রতিবন্ধি বিদ্যালয় লেখাপড়া না করেও এ বছর গলাচিপা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.১৪ পেয়েছে। এখন সে গলাচিপা ডিগ্রি কলেজে পড়ছে। আর ছোট ছেলে নিয়াজ উদ্দিন বাপ্পি গলাচিপা আইডিয়াল স্কুলের ২য় শ্রেনীর ছাত্র। পিতা হারুন অর রশিদ জানান, গলাচিপা শহরে তার ধান বানা ও চাল গুঁড়া করার মেশিন আছে। এ মেশিন চালিয়ে যা আয় হয় তা দিয়েই চলে তার সংসার।



কিছুদিন আগেই পটুয়াখালীর একজন সাংবাদিক হানজালা শিহাবের সাথে আমাদের পরিচয় হয়। তার কাছেই এই দুই পরিবারের করুণ কাহিনী শুনতে পাই। তিনি জানালেন, মানবজমিন পত্রিকায় এ বিষয়ে একটি সচিত্র প্রতিবেদনও লিখেছিলেন বেশ কিছুদিন আগে। তখন থেকেই ভাবছিলাম আমরা ফাল্গুনি, শাহিন এবং বাপ্পির পড়ালেখার খরচ দিয়ে যদি কোনভাবে সহযোগীতা করা যেতো এই হতদরিদ্র দুটি পরিবারকে ! সিদ্ধান্ত নেই গতবার যেমন করে রিমা ও রিম্পাকে সাহায্য করা হয়েছিলো বি-স্ক্যান থেকে, ঠিক সেভাবেই এবারো ইনশাল্লাহ সকলের সহযোগীতার মাধ্যমে সেটি সম্ভব হবে। খুব বেশি নয় অল্প অল্প করেই যদি আমরা যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসি, বাড়িয়ে দেই সহযোগীতার হাত এ দুটি পরিবারের প্রতি, তাহলে আশা করি পড়ালেখা শেষ করে এদের স্বনির্ভর হয়ে উঠার পথে আর কোন বাঁধাই থাকবে না।


লেখক- সাবরিনা সুলতানা, প্রথম আলোব্লগ, ৩১ আগস্ট ২০১০,

0 মন্তব্য(সমূহ):

Post a Comment

FACEBOOK FACEBOOK AMARBLOG

 
Design by Oronno Anam | Bloggerized by Salma Mahbub