শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বি-স্ক্যানের সেমিনার


বাঁ দিক থেকে অধ্যাপক এ কে এম মাজহারুল ইসলাম,অধ্যাপক জায়েদা শারমিন স্বাতী, উপাচার্য ড. মোঃ সালেহ উদ্দিন, অধ্যাপক ড. তুলসী কুমার দাস এবং বি-স্ক্যান সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুব।

মাস দুয়েক আগে সকলের সহযোগিতা চেয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম বিভিন্ন স্কুল, কলেজে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মূলধারার শিক্ষায় সম্পৃক্ততার উদ্দ্যেশ্যে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে চায় বি-স্ক্যান। তখনই শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম ব্যাচের ছাত্র খুরশিদুল আলম হিটু ভাই আগ্রহ প্রকাশ করলেন তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিনারের আয়োজন করে দেওয়ার। তার মধ্যে সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মিনি অডিটোরিয়ামে প্রথম সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল গত ২৩শে জুন’১১ তারিখে বিকেল ৫ টা ৩০ মিনিটে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ড. মোঃ সালেহ উদ্দিন এবং প্রধান বক্তা ছিলেন সমাজ কর্ম বিভাগের প্রফেসর ড. তুলসী কুমার দাস। শাবি’র স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “কিন” এর উদ্দ্যেগ্যে আয়োজিত এই সেমিনারে শাবি’র ছাত্র-শিক্ষকদের উদ্দ্যেশ্যে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে সচেতনতা তৈরিতে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্ববান জানিয়ে, বাংলাদেশের অবহেলিত প্রতিবন্ধী মানুষের বঞ্চনার কথা তুলে ধরে বি-স্ক্যানের পেছনের ইতিহাস নিয়ে সূচনা বক্তব্য রাখেন বি-স্ক্যান সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুব। “প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরও আছে শিক্ষার সম অধিকার” এই স্লোগানে বি-স্ক্যান এর মূল প্রেজেন্টশন উপস্থাপন করেন বি-স্ক্যান সদস্য  রুদ্র-অক্ষর। 

একীভূত শিক্ষার উপর প্রেজেন্টেশেন করছেন রুদ্র-অক্ষর।

মূল প্রেজেন্টশনটিতে বিভিন্ন স্লাইড শোতে নানান প্রতিবন্ধকতা পেড়িয়ে সফল প্রতিবন্ধী মানুষের কথা তুলে ধরা হয়। এছাড়াও কি কি কারণে একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির শিক্ষা, কর্মসংস্থান, সহায়ক যাতায়াত ব্যবস্থা ও সর্বক্ষেত্রে প্রবেশের সুবিধা বঞ্চিত হতে হয় এবং এ বিষয়ে জাতিসংঘ সনদ সহ বাংলাদেশের আইন কি বলছে তা উল্ল্যেখ করা হয়। 
বিশিষ্ট অতিথিদের সাথে বি-স্ক্যান সভাপতি সাবরিনা সুলতানা (সর্বডানে)।
এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যা যা ভূমিকা রাখতে পারে, তা হলো- প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ভর্তি ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দেখার জন্যে আলাদা সেল গঠন করা সহ নাটক, বিতর্ক ইত্যাদি নানান সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম হাতে নেওয়া যাতে করে ছাত্র ছাত্রীরা প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার রক্ষায় সরকার গঠিত আইন সম্পর্কে জানতে পারে এবং তা মেনে চলতে উৎসাহিত হয়। এছাড়াও সেমিনারের মূল আকর্ষণ ছিলো ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে উন্মুক্ত প্রশ্ন-উত্তর পর্ব। 

প্রশ্ন উত্তর পর্ব
অধ্যাপক ড. তুলসী কুমার দাস বলেন, প্রতিবন্ধিতা কোন ভিন্নতা নয় এটি আমাদের জীবনের অংশ। প্রত্যেক শিক্ষিত ব্যক্তিরই এগিয়ে আসা উচিৎ সমাজের সর্বস্তরের প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকারের বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে।

বি-স্ক্যান সাধারণ সম্পাদকের হাতে শুভেচ্ছা স্মারক তুলে দিচ্ছেন কিন সভাপতি তানজিদ হাসান ও শিক্ষকবৃন্দ।

উপাচার্য ড. মোঃ সালেহ উদ্দিন বলেন, ২০১০ সাল থেকে শাবি’তে ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্যে কোটা রাখা হয়েছে। কয়েকজন শিক্ষার্থী ভর্তিও হয়েছে। তিনি তার বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে চাকুরী দিয়েছেন যোগ্যতার ভিত্তিতে এবং ভবিষ্যতেও দেওয়ার ইচ্ছে পোষণ করেন।

সেমিনারের আয়োজক কিন সদস্যদের সাথে বি-স্ক্যান।

অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন, নৃ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এ কে এম মাজহারুল ইসলাম, কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের  অধ্যাপক রুহুল আমিন সজিব, পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক জায়েদা শারমিন স্বাতী, কিন সভাপতি তানজীদ হাসান প্রমুখ। 

লেখকঃ সাবরিনা সুলতানা

সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প

একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে বি-স্ক্যান এর পক্ষ থেকে এবারই প্রথম সুদমুক্ত ক্ষুদ্র ঋণ দেয়া হলো। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মাঝে অনেকেই আছেন যাঁদের অবস্থা এতো খারাপ নয় যে তারা আর্থিক সহযোগিতা নেবেন, কিন্তু কিছু টাকা সুদমুক্ত ঋণ পেলে তারা একটা শুরু কিছু করতে পারেন। সাভারের মৃদু বাক প্রতিবন্ধী এ এম রিয়াদ তাঁদেরই একজন যিনি মাশরুমের ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছেন এবং তার মাশরুম চাষের প্রতি রয়েছে অদম্য আগ্রহ। এমনিতে সে সাভারের সিআরপি (সেন্টার ফর দ্যা রিহেবিলিটেশেন ফর দ্যা প্যারালাইজড) ও তার আশেপাশের এলাকায় মাশরুম সরবরাহ করে থাকেন। পাইকারী দামে মাশরুম কিনে কিছু লাভে বিক্রি করেন। মাশরুম চাষের ট্রেনিংও নিয়েছেন এবং এডব্লিউডিপি (এসোসিয়েশেন অর দ্যা ওয়েলফেয়ার ফর দ্যা ডিজেবেল্ড পিপল) থেকে একটি ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে পার্টনারশিপে ব্যবসা শুরু করেন। পরবর্তীতে তাঁর ব্যবসা সম্প্রসারনের জন্য মূলধনের অভাব হলে তিনি বি-স্ক্যান এর কাছে আবেদন জানালে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নেয়া হয়। 





গত ৮ জুন, ২০১১, মাশরুম চাষ জোরদার প্রকল্পের পরিচালক জনাব, সালেহ মুহাম্মদ এর অফিসে বিশ হাজার টাকার একটি চেক রিয়াদের হাতে তুলে দেয়া হয়। আগামী বছর জুনের মাঝে সকল টাকা তিনি মাসিক ১৬৬৬.৬৬ টাকা হারে পরিশোধ করে দেবেন বলে বি-স্ক্যান এর সাথে একটি চুক্তি সাক্ষর হয়। মাশরুম প্রকল্পের অফিস,  সিআরপি ও আশেপাশের এলাকায় রিয়াদের বেশ সুনাম রয়েছে । আমরা তার সাফল্য কামনা করছি। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুজন বি-স্ক্যান সদস্য আমাদের ঋণটি দিতে সহযোগিতা করেছেন।

একটি সুসংবাদ এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ

আমরা বিভিন্ন স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ক্যাম্পেইন করার আগ্রহ প্রকাশ করছিলাম বেশ কিছুদিন ধরেই। সাড়াও পাচ্ছিলাম বেশ। অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে এগিয়ে এসেছিলেন তাদের পরিচিত স্কুল কলেজে সেমিনারের আয়োজন করে দিতে। খুশি মনেই সাড়া দিলাম আমরাও। কিন্তু প্রথম স্কুলে ক্যাম্পেইন করতে গিয়ে যে সমস্যার মুখোমুখি  হলাম তা হলো কয়েকটি প্রাইভেট ইউনিভারসিটি ছাড়া বেশিরভাগ স্কুল, কলেজেই প্রেজেন্টেশনের কোন ব্যবস্থা নেই।  প্রতিবন্ধী শিশুদের একীভূত শিক্ষার আওতায় আনার প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব বোঝাতে যে প্রেজেন্টেশনটি করা প্রয়োজন তার জন্যে প্রতিবার প্রজেক্টর, সাউন্ড সিস্টেম ভাড়া করার মতো অবস্থা আমাদের এই ছোট্ট সংগঠনের নেই। এই পোষ্টের  মাধ্যমে সহযোগীতা চেয়েছিলাম আমরা।




 


অত্যন্ত আনন্দের সাথে জানাচ্ছি, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে এই প্রচারণা সফল করার লক্ষ্যে আমার ব্লগ ডট কমের আমার ফাউন্ডেশন বি-স্ক্যানকে একটি প্রজেক্টর উপহার দিয়েছে। অশেষ কৃতজ্ঞতা সুশান্ত দাস গুপ্তকে, যিনি সুদূর লন্ডন থেকে এই প্রজেক্টরটি বি-স্ক্যানের জন্যে পাঠিয়েছেন। গত ৬ই জুন"২০১১ তারিখে বি-স্ক্যান সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুবের বাসভবনে সদস্যদের উপস্থিতিতে গতকাল এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে এই প্রজেক্টরটি হস্তান্তর করেন  মাহমুদ হাসান রুবেল।

নীলফামারীর শফিউলকে হুইলচেয়ার প্রদান



শফিউল ইসলাম, জন্ম থেকেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, পরে ধীরে ধীরে চলন ও বাক প্রতিবন্ধিতা দেখা দেয় তার মাঝে। প্রথমে জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরামের মোশারফ সাহেব, পরে তার মাধ্যমে নীলফামারী জেলার 'রঙপুর সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা (RDSS)' কাছে থেকে আমরা ছেলেটির কথা জানতে পারি। ছেলেটির পরিবার খুবই গরীব, বাবা দিনমুজুরী করে সংসার চালান, নিজেদের থাকার কোন জায়গাও নেই। শফিউলের চলাচলের জন্য একটি হুইলচেয়ার ভীষণ প্রয়োজন যা কেনার সাধ্য তার পরিবারের নেই। রোটারি ক্লাব অব ঢাকা সেন্টালের সাথে যোগাযোগ করা হলে ১৬ এপ্রিল, ২০১১ তাঁরা আমাদের একটি হুইলচেয়ার কেনার জন্য  অর্থ প্রদান করেন। আমরা চেয়ারটি কিনে এস এ পরিবহনের মাধ্যমে RDSS এর কাছে পাঠিয়ে দেই, তাঁরা গত ২৩ মে, ২০১১ তারিখে চেয়ারটি শফিউলের পরিবারের হাতে হস্তান্তর করেন। শফিউলের পাশে দাঁড়াতে পেরে আমরা আনন্দিত।





দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর জন্য প্রযুক্তি



দৃষ্টিহীনের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে তৈরি হয়েছে নানা প্রযুক্তি। প্রযুক্তির সহায়তায় এখন অনেক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নিজেকে আলোকিত করতে সমর্থ হচ্ছেন। লিখেছেন তুহিন মাহমুদ।    

প্রতিবন্ধীদের সামাজিকভাবে স্বাবলম্বী করতে বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে ব্যক্তি এবং প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে কাজ হচ্ছে। আর এরই ফলশ্রুতিতে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য তৈরি হয়েছে ব্রেইল সফটওয়্যার, স্ক্রিনরিডিং সফটওয়্যার মঙ্গলদীপ, টেক্সট টু স্পিচ সফটওয়্যার সুবচন, এসএমএস রিডার প্রভৃতি।  

ব্রেইল :ব্রেইল হলো অন্ধ ও যারা চোখে কম দেখে তাদের জন্য পড়ালেখার একটি মাধ্যম। ১৮২১ সালে লুই ব্রেইল নামের ফ্রান্সের একজন প্রতিবন্ধী এটি উদ্ভাবন করেন। ব্রেইলকে পরবর্তী সময় কম্পিউটারে বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহার করে ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় লেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাংলা ভাষায়ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল সফটওয়্যার রয়েছে।  

মঙ্গলদীপ ও সুবচন :মঙ্গলদীপ হচ্ছে স্ক্রিনরিডিং সফটওয়্যার ও 'সুবচন' হলো টেক্সট টু স্পিচ সফটওয়্যার। সফটওয়্যার দুটি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক তৈরি করেছেন। মঙ্গলদীপ ইংলিশে ও সুবচন বাংলায় কাজ করতে সক্ষম। সফটওয়্যার দুটির মাধ্যমে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা বাংলা-ইংরেজি উভয় ভাষায় সহজেই কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারছেন। 

বাংলা টেক্সট টু ব্রেইল ট্রান্সলেশন সিস্টেম :বাংলা ভাষায় লেখা যে কোনো ডকুমেন্টকে ব্রেইলে অনুবাদ করতে সক্ষম এই সফটওয়্যার। এফএম মাহবুব-উল-ইসলামের নেতৃত্বে ৪ উদ্ভাবক মিলে ডেভেলপ করেন সফটওয়্যারটি। মাহবুব বলেন, সাধারণ এবং অন্ধ মানুষের মাঝে শিক্ষার ব্যবধান কমাতে ব্রেইল সিস্টেমের বিকল্প নেই। সফটওয়্যারটি ব্যবহার সহজ, স্বাধীন ও ইউনিকোড সমর্থিত। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাংলা ই-বুককে বাংলা ব্রেইলে অনুবাদ করতে পারে। সম্প্রতি সরকার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের বইগুলোকে ই-বুক আকারে ইন্টারনেটে প্রকাশ করেছে। ফলে এখন থেকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী তার পাঠ্যবই সহজেই ইন্টারনেট থেকে পড়তে পারবে।  

কথা :'কথা' হলো ইউনিকোডভিত্তিক ভাষাকে মানুষের বোধগম্য ভাষায় রূপান্তর করার প্রথম বাংলা ভাষাভিত্তিক সফটওয়্যার। একে টেক্সট টু স্পিচ সফটওয়্যার বলা হয়। সফটওয়্যারটি যে কোনো স্ক্রিনরিডার সফটওয়্যারের সঙ্গে কাজ করতে পারে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের 'সেন্টার ফর রিসার্চ অব বাংলা ল্যাংগুয়েজ প্রসেসিং' এটি তৈরি করেছে। যার নেতৃত্বে ছিলেন ফিরোজ আলম। 'কথা'র ব্যবহার একটু জটিল হলেও এটি দিয়ে ভয়েস রেসপন্স, টকিং বুক, টেলিসেন্টারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনায়াসে ব্যবহার করা যাবে।   

ডাস্কবেরি বাংলা ব্রেইল সফটওয়্যার : ডাস্কবেরি হলো পৃথিবীর একটি অন্যতম জনপ্রিয় ব্রেইল সফটওয়্যার। বর্তমানে বিশ্বের ১৩০ ভাষায় এটি কাজ করতে সক্ষম। মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের বিভিন্ন সংস্করণসহ এটি অন্যান্য অফিস প্রোগ্রামগুলো থেকে ডাটা কনভার্ট করতে পারে। সফটওয়্যারটি ব্রেইলের বিভিন্ন বই, মেটেরিয়ালস, মেমো ইত্যাদি তৈরি করা সহজ। সম্প্রতি বাংলায় ব্রেইল কনভার্টার হিসেবে কাজ করছে ডাস্কবেরি। এটি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। যে কেউ ডাস্কবেরি সিস্টেমের ওয়েবসাইট থেকে এটি পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করার জন্য ডাইনলোড করতে পারবেন। তবে নিয়মিত ব্যবহার করতে কোম্পানির কাছ থেকে লাইসেন্স কিনতে হবে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই ডাস্কবেরি বাংলা ব্রেইল সফটওয়্যার হিসেবে বাজারে আসবে।  

আমসি বাংলা : অ্যাডাপটিভ মাল্টিমিডিয়া সিস্টেমের সংক্ষিপ্ত রূপ হলো আমসি। এটি একটি মাল্টিমিডিয়া ওপেন সোর্স সফটওয়্যার। সাধারণত ডেইজি সংস্করণের বই পড়ার জন্য আমসি ব্যবহার করা হয়। এতে রয়েছে স্বনিয়ন্ত্রিত ভয়েসিং সিস্টেম, যার ফলে কোনো স্ক্রিন রিডার ছাড়াই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা সহজে এটি পড়তে পারবে। বর্তমানে আমসির ৩.১ সংস্করণ রয়েছে। আমসির নেভিগেশন, সাবসেকশন, পেজ, বুকমার্কসহ বিভিন্ন ফিচার প্রতিবন্ধীদের দারুণ সহায়ক। সিডি, হার্ড ড্রাইভসহ বিভিন্ন লোকেশন থেকে বই পড়ার জন্য রয়েছে ব্যবহারকারীবান্ধব সুবিধা। www.daisy.org ওয়েবসাইটটি থেকে এটি বিনামূল্যে ডাউনলোড করে ব্যবহার করা যাবে।  

ব্রেইল লিখন সহায়ক যন্ত্র :ব্রেইলে ৬টি ডট রয়েছে, যে কারণে নতুন শিক্ষার্থীরা এটি ব্যবহারে বিভ্রান্তিতে পড়েন। এই বিভ্রান্তি দূর করতে উদ্ভাবন করা হয়েছে ব্রেইল লিখন সহায়ক যন্ত্র। যন্ত্রটি কম্পিউটারের সঙ্গে সংযুক্ত করে চালাতে হয়। এতে রয়েছে অডিও সিস্টেম, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে সব ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। 

এসএমএস রিডার : দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা যাতে তাদের সেলফোনে আসা এসএমএস অনায়াসে পড়তে পারে তার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে টেক্সট টু স্পিচ এসএমএস রিডার মোবাইল সফটওয়্যার। এটি এসএমএসের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। সফটওয়্যারটি চালু করলে এটি মোবাইলে আসা এসএমএসটি তৎক্ষণাৎ পড়ে শোনাবে। এছাড়া পরবর্তী সময় শোনারও ব্যবস্থা রয়েছে। সফটওয়্যার সমর্থন করে এমন মোবাইলে এটি ব্যবহার করা সম্ভব। এসএমএসটি জোরে কিংবা ধীরে শোনার এবং ভয়েস পাল্টানোর ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে কাজ করা সংগঠন 'ইপসা' এ সফটওয়্যারটি ব্যবহার করছে। 

থাক আলোয় ভুবন ভরা : দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের ভুবন আলোয় ভরে দিতে নানা প্রযুক্তি তৈরি হলেও বাংলা ভাষায় এসব প্রযুক্তি ব্যবহারে রয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা। ডিজিটাল এক্সেসিবল ইনফরমেশন সিস্টেম ডিইসির আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষক ভাস্কর ভট্টাচার্য বলেন, বিভিন্ন দেশে প্রতিবন্ধীদের জন্য নানা সফটওয়্যার ও পণ্য তৈরি করা হলেও আমাদের দেশে এখনও তেমন বড় উদ্যোগ নেই। প্রতিবন্ধীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন প্রযুক্তি পণ্যের দামও অপেক্ষাকৃত বেশি। যেমন বাংলা ব্রেইলের প্রিন্টারের দাম দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা। ফলে ইচ্ছে থাকলেও সমস্যায় পড়েন প্রতিবন্ধীরা। সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে এসব পণ্য বাংলা ভাষায় রূপান্তরের ব্যবস্থা করলে প্রতিবন্ধীদের জন্য সহায়ক হবে। 


নীরব স্তবনে তারুণ্যের বন্দনাগান ছড়ায় প্রভাত পবনে


"বেজে উঠো - ফড়িঙের রঙে, দোয়েলের জীবনে...দুর্জয় তারুণ্যে দুর্নীতি প্রতিরোধে" এই স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছিলো চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গন। গত ১২, ১৩, ১৪ই মে১১ আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সাথে নিয়ে জমজমাট এক তারুণ্য উৎসবের আয়োজন করেছিলো চুয়েট ডিবেটিং সোসাইটি। জীবনে কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনা মাড়ানো হবে ভাবিনি। নিতান্ত কাকতালীয়ভাবেই সেদিন চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে তারুণ্যের এই উৎসবে যাওয়ার আমন্ত্রণ পেয়ে গেলাম।


                                    


ইদানিং ব্যস্ততার চাপ এতো বেড়েছে যে ব্লগে ব্লগে ঘুরে বেড়ানোর সময় একেবারেই হয়ে উঠছে না। কম্পিউটারে বসা মানেই ইমেইলের ভিড়ে হারিয়ে ফেলি নিজেকে, এরি ফাঁকে টুকটাক- অল্পস্বল্প... চতুর্মাত্রিক ব্লগে দেখলাম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করছে চুয়েট ডিবেটিং সোসাইটি। এই সংগঠনের কথা আগেই শুনেছিলাম ছোটভাই অন্তুর কাছে। ছেলেটা বেশ ভালো। ডাকসাইটে পরিবারের ছেলেরা কিছুটা অহংকারী হয়। তার মধ্যে সেসবের কিছুই নেই। তারচেবড় কথা সে করতে পারে না এমন কিছুই বোধহয় নেই। চুয়েটেই পড়াশোনা করেছে। ফোন দিলাম তাকে...বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র না হয়েও যদি এ আয়োজনে অংশ নেওয়া যায় তাহলে বি-স্ক্যান নির্মিত তথ্যচিত্র র‍্যাম্পপ্রদর্শন করার অনুরোধ জানালাম তার মাধ্যমে। কদিন পরেই অন্তু জানালো তারা আপনাকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে তথ্যচিত্রটি প্রদর্শন করবে তারা এবং তাদের সাংস্কৃতিক আয়োজনে আমি উপস্থিত হলে তারা খুব খুশি হবে। একটু বেকায়দায় পড়লাম বটে। কারণ আমার সহযোগী মেয়েটি তখন ছুটিতে। একার পক্ষে বাইরে যাওয়া সম্ভব নয় কিছুতেই। অনুষ্ঠানের আয়োজক তন্ময় ফোন দিলো। ঠিক কথা দিতে পারলাম না। তবে খুব চেষ্টা করবো জানালাম। এমনিতেই শহুরে যান্ত্রিকতার চাপে অতিষ্ঠ প্রায়। তার উপরে প্রকৃতির এতো কাছে যাওয়ার সুযোগ! এমন সুযোগ কে হাতছাড়া করতে চায়...সেদিন যাওয়ার সুযোগ হয়েছিলো আমার! নচেৎ ফড়িঙের ডানায় চড়ে দোয়েলের কুহু কুহু ডাক শুনার অভাবনীয় আনন্দ থেকে সত্যিই বঞ্চিত হতাম আমি! দেখে এলাম এই তরুণেরা যথেষ্ট সচেতন দেশ আর দেশের মানুষগুলো নিয়ে। গান, আবৃত্তি, মুকাভিনয় সব মিলিয়ে সাংস্কৃতিক আয়োজনে স্বল্প যেটুকু সময়ই ছিলাম খুব অনুভব করেছি কিছু উদ্দ্যমী তরুণ এই মতাদর্শে এক হলে কি বিপ্লবই না ঘটিয়ে দিতে পারে। বদলে দিতে পারে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি।



গাড়ি থেকে নামার আগেই ছুটে এলো সহযোগীতার হাত। মৌসুমী, রুমি, তন্ময়, আরিফ নাম না জানা আরো একঝাক টগবগে তরুণের মাঝে কিছুটা গুটিয়ে গেলাম। তাছাড়া জানতাম না মঞ্চে আহ্ববান জানানো হবে আমাকে। তাই কোন প্রস্তুতিও ছিলো না। এমনিতেই মাইক হাতে এলে গলায় কাঁপুনি ছুটে যায় আমার। কিছুটা অস্বস্তিতে ছিলাম বটে। একমানুষ সম এই মঞ্চে এরা আমাকে তুলবে কিভাবে এই ভাবনাও দোলা দিয়ে যাচ্ছিলো ক্ষনে ক্ষনে। মঞ্চের কাছে গিয়ে বুঝলাম ছেলেগুলো সত্যিই কাজের।       
  
         


যাবত যাওয়া যে কোন আয়োজনে অংশগ্রহন করেই অনুভব করেছি আমাদের সহায়ক যাতায়াত ব্যবস্থা কিম্বা শিক্ষার অধিকার নিয়ে নতুন করে বোঝাতে হয় প্রতি পদে পদে। প্রাণপনে নিজের অধিকার আদায়ের যুদ্ধে নামতে হয়। ভিন্নভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের সম্পর্কে অসচেতন মনোভাবই এর প্রধান কারণ। যার ফলে প্রতি পদক্ষেপে নাশুনতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি প্রায়। কিন্তু এই প্রথম অন্য কিছু দেখলাম। মাত্র কিছু সময়ের পরিচিত এই তরুনেরা আমাকে আগে কখনো দেখেনি । কিছুই জানে না আমার সম্পর্কে। শুধু শুনেছে আমি একজন হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী। এইটুকু শোনার ভিত্তিতেই তারা আমার জন্যে অস্থায়ী কাঠের র‍্যাম্প তৈরি করেছে। সত্যিই অভাবনীয়!!! এসবই আমি কিংবা আমাদের অধিকার। তবুও অপ্রাপ্ত এই অধিকার না পেতে পেতে আমাদের কাছে যা হয়ে উঠেছে অনেকটা আদায়ের মতোই প্রতিবাদী সংগ্রাম। অন্তত একটি জায়গায় তো নিজের অধিকার চেয়ে ফিরতে হয়নি আমাকে! আর তাই আমি কৃতজ্ঞ, যারা আমাকে তথা আমাদের অধিকারের যথার্থই সম্মান দিয়েছে। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম রেখেছে ছেলেগুলো। এমন ছেলেই তো আমাদের দেশে চাই, যারা কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে... এই তরুণদের নিয়ে "স্বপ্ন দেখা যায় আগামীর বাংলাদেশ", অবকাঠামোগত উন্নয়নে এই তরুণরাই বিরাট ভূমিকা রাখবে।


লেখকঃ সাবরিনা সুলতানা


 
Design by Oronno Anam | Bloggerized by Salma Mahbub