বুধবার, ২৭ এপ্রিল ২০১১, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য প্রবেশগম্য অবকাঠামো - নীতি ও প্রকারসমূহ (Accessible Infrastructure for Persons with Disabilities – Issues and Options) শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সেমিনারে প্রবেশগম্যতার উপর বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক জনাব, এস এম নাজমুল ইমাম ও লেকচারার মাতলুবা খান মুল প্রবন্ধ পাঠ করেন।
যে বিল্ডিংগুলো সার্বজনীন প্রবেশগম্যতা তৈরীর ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা মনোভাগ গড়ে তুলতে নজীরস্থাপনকারী বিল্ডিংকে পুরস্কারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
এ্যাকশেন অন ডিসেবিলিটি এ্যান্ড ডেভেলোপমেন্ট (এডিডি) ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে সেমিনারের আয়োজন করেন। সেমিনারটি পরিচালনা করেন এডিডি র কান্ট্রি ডিরেক্ট্রর জনাব, মোশারফ হোসেন। আলোচকদের মাঝে ছিলেন বাংলাদেশ স্থাপত্য বিভাগের প্রধান ডঃ জেবুন নাসরিন আহমেদ ও উপ-উপাচার্য এম হাবিবুর রহমান, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশেনের পরিচালক রীনা রায় প্রমুখ।
প্রবন্ধে যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে -
*২০০৮ সালের ইমারত নির্মান বিধিমালা অনুযায়ী সার্বজনীন প্রবেশগম্যতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে। যেমন – একজন হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীর জন্য র্যাম্প কি মাপের হওয়া উচিত। টয়লেটে কি পরিমান জায়গা ও কি কি সুবিধা থাকা দরকার, করিডোরে কি পরিমান জায়গা থাকা দরকার ইত্যাদি। একইভাবে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য কি কি ব্যবস্থা থাকা দরকার। যেমন – লিফটে ব্রেইল বাটন, অডিওর সাহায্যে ফ্লোর জানানো ইত্যাদি। এছাড়াও সার্বজনীন প্রবেশগম্যতা শুধুমাত্র প্রতিবন্ধী ব্যক্তি নন, বয়স্ক মানুষ, নারী ও শিশুর জন্যও প্রয়োজন।
*প্রবন্ধে খুব চমৎকারভাবে মানুষের একটি জীবনচক্র তুলে ধরা হয়। সেখানে দেখানো হয়েছে – একজন মানুষ যখন জন্মগ্রহন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নানাভাবে প্রতিবন্ধিতার শিকার হোন। একটি শিশু যখন জন্মগ্রহণ করে তখন সে অন্যের উপর নির্ভরশীল থাকে। পরবর্তীতে তার জীবনে অসুখ, দুর্ঘটনা, যুদ্ধ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি কারণে প্রতিবন্ধিতা আসতে পারে। এছাড়াও বৃদ্ধ বয়সে প্রতিবন্ধিতার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করতে হয়।
*প্রতিবন্ধিতা বিষয়টিকে আপেক্ষিকভাবে উল্ল্যেখ করা হয় – যেমন যদি কোন কারণে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে কোন শহরে ইলেক্ট্রিসিটি বাঁচানোর উদ্দেশ্যে ব্ল্যাকাউট করা হবে তাহলে একমাত্র দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ছাড়া আর কেউই নির্বিঘ্নে চলতে পারবেন না। তখন যারা চোখে দেখতে পান তারাই হয়ে যাবেন প্রতিবন্ধী।
আমাদের ইমারত নির্মান বিধিমালাটি আমেরিকার ডিজেবিলিটি এ্যাক্ট অনুযায়ী তৈরী করা। কিন্তু ওদের শারীরিক কাঠামোর সাথে আমাদের অনেক পার্থক্য। যেমন – ওদের গড় উচ্চতা ৫ ফিট ৯ ইঞ্চি আর আমাদের গড় উচ্চতা মাত্র ৫ ফিট পৌনে ৪ ইঞ্চি। সুতরাং ওদের দেশের হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী চেয়ার বসা অবস্থায় যে উচ্চতার জিনিসের নাগাল পাবেন আমাদের ক্ষেত্রে সে উচ্চতায় বানালে চলবে না। তাই এক্ষেত্রে কিছু গবেষণার ব্যাপার রয়েছে যেখান থেকে আমাদের শারীরিক অবকাঠামো অনুযায়ী একটি বিধিমালা তৈরী করতে হবে যাতে সব জায়গায় সেই নিয়মটি অনুসরন করা হয়।
যে বিল্ডিংগুলো সার্বজনীন প্রবেশগম্যতা তৈরীর ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা মনোভাগ গড়ে তুলতে নজীরস্থাপনকারী বিল্ডিংকে পুরস্কারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্ট, বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান জনাব, মোবাশের হোসেইন বলেন, কোন বিল্ডিং যদি সার্বজনীন প্রবেশগম্যতার বিষয়টি নামেন তাহলে সেই কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে রীট পিটিশেন করা যেতে পারে। সেই ক্ষেত্রে ঐ বিল্ডিংয়ের স্থপতির ৭ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে।
গণপূর্ত ও গৃহায়ন মন্ত্রী জনাব, আব্দুল মান্নান খান বলেন, আমাদের উপর চাপ তৈরী করুণ যেন আমরা এ ব্যাপারে আরো বেশী কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারি। তিনি সবাইকে সচেতন হবারও আহ্বান জানান। সরকারী সেবামূলক অফিসগুলো প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য নীচতলায় নামিয়ে আনা হবে বলে ঘোষণা দেন তিনি।
এ্যাকশেন অন ডিসেবিলিটি এ্যান্ড ডেভেলোপমেন্ট (এডিডি) ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে সেমিনারের আয়োজন করেন। সেমিনারটি পরিচালনা করেন এডিডি র কান্ট্রি ডিরেক্ট্রর জনাব, মোশারফ হোসেন। আলোচকদের মাঝে ছিলেন বাংলাদেশ স্থাপত্য বিভাগের প্রধান ডঃ জেবুন নাসরিন আহমেদ ও উপ-উপাচার্য এম হাবিবুর রহমান, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশেনের পরিচালক রীনা রায় প্রমুখ।
বি-স্ক্যান এর পক্ষ থেকে তাঁদের তৈরী পোর্টেবল র্যাম্পটি নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। যেটি সেখানে হুইলচেয়ার ব্যবহারীদের বেশ কাজে লাগে। বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের আমন্ত্রণে, তাঁদের পুরকৌশল ভবনের সেমিনার কক্ষে আয়োজিত এই সেমিনারে বি-স্ক্যান এর পক্ষ থেকে সালমা মাহবুব, সামিউল আলম রিচি ও এস. কে. টিনা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।