গুরুত্বপূর্ণ ভবনসমূহে হুইলচেয়ার প্রবেশগম্যতা বৃদ্ধি




বাংলাদেশের বেশীর ভাগ জায়গাই হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের উপযোগী নয়। শিক্ষাংগন থেকে শুরু করে বিনোদন কেন্দ্র, বিভিন্ন সেবামুলক প্রতিষ্টান কোথাও র‌্যাম্পের ব্যবহার তেমন একটা দেখা যায় না। সিঁড়িগুলো তাদের জন্য বিরাট বাঁধা। সেই সাথে আরো বড় একটি সমস্যা হলো টয়লেট। ঘরের বাইরে তাদের টয়লেটে যাবার কোন উপায় নেই বললেই চলে। তাই দূরের যাত্রা বা বাইরের দীর্ঘক্ষণের কোন কাজ বা বিনোদন থেকে তারা থাকেন বিরত বা বঞ্চিত। বি-স্ক্যানের চারটি মুল লক্ষ্যের একটি সর্ব ক্ষেত্রে প্রবেশগম্যতা তৈরী। সেই লক্ষ্যে আমরা যে  কাজটি শুরু করতে চাইছি তাহলো প্রতিটি পাব্লিক বিল্ডিংগুলোর সম্মুখে ভিতরে প্রবেশ করতে বা লিফট পর্যন্ত যেতে যে দুচারটি করে  সিঁড়ি আছে তার পাশাপাশি একটি করে র‌্যাম্প থাকবে ও সেই বিল্ডিং এ একটি হুইলচেয়ার এক্সেসিবেল টয়লেট থাকবে যেখানে একজন হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী সহজে সেটি ব্যবহার করতে পারবেন। ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড ও ঢাকা মহানগরী ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮ অনুযায়ী প্রতিটি ইমারতে হুইলচেয়ার প্রবেশগম্যতা ও (accessible) টয়লেট থাকা আবশ্যকীয় করা হয়েছে (পৃষ্ঠা ৩০০৫ এ সার্বজনীন গম্যতার নকসা এবঙ ৩০৬১তে প্রতিবন্ধীদের জন্য সার্বজনীন গম্যতা সম্পর্কিত বিশেষ বিধান রাখা হয়েছে)। সমাজে অবহেলিত জনগোষ্ঠীর জন্য কোন পরিবর্তন আনতে গেলে সচেতনতা তৈরী করা দরকার। সেই উদ্দেশ্যে আমরা এমন কিছু জায়গাকে প্রবেশগম্য করতে চাই যা অনেক বেশী জনসচেতনতা তৈরী করবে এবং বিভিন্ন বড় বড় প্রতিষ্ঠানও এগিয়ে আসবেন এই কাজে। বাংলাদেশের প্রতিটি জায়গায় হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের জন্য উন্মুক্ত হবে। সেই অনুযায়ী  মার্কেট, সিনেমাহল, যাদুঘর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রবেশগম্যতা (accessibility) তৈরীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে আমরা মনে করছি।  
র‌্যাম্প- এমন একটি ঢালু পথ যা দিয়ে হুইলচেয়ার নিয়ে সহজে উঠা নামা করা যায়। এটা সিঁড়ির বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এইটি স্থায়ী (সিমেন্ট কিংবা কাঠের) এবং অস্থায়ী ( কাঠ, স্টিল ইত্যাদির) দুই ধরণেরই হয়ে থাকে। র‌্যাম্প হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী ছাড়াও ক্রাচ ও ওয়াকার ব্যবহারকারী, বয়োবৃদ্ধ, প্রসুতি নারী, দৃষ্ট প্রতিবন্ধী মানুষের জন্যও উপযোগী। 
আমাদের দেশের পাব্লিক বিল্ডিংগুলোতে যেহেতু র‌্যাম্পের কোন ব্যবস্থা রাখা হয় নি তাই সেই বিল্ডিংগুলোতে র‌্যাম্প বসাতে গেলে সিঁড়ির উচ্চতা অনুযায়ী  র‌্যাম্পের দৈর্ঘ্য নির্ধারিত হবে। সেটা কোথাও ৫ ফিট কোথাও বা ১০ ফিট র‌্যাম্পেরও প্রয়োজন পড়তে পারে। সেই অনুযায়ী খরচও কম বেশী হবে।
র‌্যাম্প এর জন্য আদর্শ মাপ-
·        সার্বজনীন গম্যতার বিধান অনুযায়ী ১ ইঞ্চি উচ্চতার জন্য র‌্যাম্প এর মাপ ১.৬ ফুট থেকে ২.০০ ফুট হয়ে থাকে (তবে স্বল্প উচ্চতার ক্ষেত্রে এর দৈর্ঘ্য অনেক কমও হতে পারে)।
·        র‌্যাম্প সর্বোনিম্ন ৩৬ ইঞ্চি চওড়া হতে হবে।
·        র‌্যাম্পের দুপাশে নিরাপত্তা দেয়াল কিংবা রেলিং থাকতে হবে ইত্যাদি।
হুইলচেয়ার প্রবেশগম্য টয়লেট-
একটি হুইলচেয়ার নিয়ে টয়লেটে প্রবেশ করতে গেলে সবচেয়ে প্রথম যে বাঁধাটির সম্মুখীন হতে হয় তা হলো দরজার অপ্রশস্ততা। বাথরুমের দরজা হুইলচেয়ার ঢোকার জন্য যে  পরিমাণ চওড়া থাকা প্রয়োজন তা নেই। যে সমস্ত জায়গায়  নতুন টয়লেট বানানোর সুযোগ নেই সেখানে যে টয়লেট আছে তাকে  হুইলচেয়ার ব্যবহারের উপযোগী করতে  যা প্রয়োজন পড়বে-
* বাথরুমের দরজার প্রশস্ততা হুইলচেয়ার ঢোকার জন্য কমপক্ষে ৩০ ইঞ্চি উন্মুক্ত থাকা প্রয়োজন।
*টয়লেটের ভিতর নিয়ম অনুযায়ী কিছু বাধামুক্ত জায়গা থাকা প্রয়োজন হুইলচেয়ারটি ঘুরানোর জন্য। টয়লেটে ঢোকার পর সব চেয়ে বড় সমস্যা যেটি হবে তা হলো দরজাটি ভিতর থেকে লাগানো। সেক্ষেত্রে দরজাটি যেন বাইরের দিকে খুলে তার ব্যবস্থা করতে হবে।
* হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী  নিজেকে কমোডের উপর তোলার জন্য হাই কমোডের দু পাশে একটি করে হ্যান্ডরেইল (গ্র্যাব বার) থাকা দরকার যার সাহায্য নিয়ে তিনি নিজে এই কাজটি করতে পারবেন। 
টয়লেট প্রবেশগম্য করতে যে খরচ হবে তা এক এক বিল্ডিং-এ এক এক রকম হতে পারে। তবে আগের দরজাটি পালটে সেখানে একটি নতুন দরজার লাগাতে হলে সবচেয়ে খরচ একটু বাড়তে পারে। তাছাড়া এর ভিতরে কিছু ছোটখাট পরিবর্তন আনতে হবে। যেমন: হ্যান্ডরেইল লাগানো, দরজায় অতিরিক্ত হাতল লাগানো ইত্যাদি। কোন কোন টয়লেটে হয়তো দরজা প্রশস্ত থাকতেও পারে কিন্তু ভিতরে যথেষ্ট জায়গা নেই, সেক্ষেত্রে শুধু দরজাটি বাইরের দিকে খোলার ব্যবস্থা করলেই হয়ে যাবে, খরচও এখানে কম পড়বে ইত্যাদি।
সবশেষে যা বলতে চাই তা হচ্ছে আমাদের স্বপ্ন ও প্রচেষ্টা সফলতার মুখ দেখবে আপনাদের সকলের সহযোগিতায়।
ধন্যবাদ।
সালমা মাহবুব
ছবিগুলো ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত In English    Increasing Wheelchair Accessibility in Different Important  Buildings  
Majority of the places in Bangladesh, including parks and buildings are not accessible by wheelchair users. Ramps are not constructed in educational institutions, offices, recreational and welfare centers.The unfriendly stairs are big obstacles for them. Facilities in toilet is another challenge. Toilet facility outside home is almost non-existent  for them. Therefore they are deprived of long journey and outdoor recreations. They can not undertake time consuming  tasks outside home. One of the 4 priority areas of  B-SCAN is to create access to every where in the community. With this goal in mind, we want to create ramp for wheelchair users in all the public buildings; so that they can easily reach the lift or stairs. There should be at one disabled friendly toilet in each building that can be easily used. According to National Building Code and Dhaka city building-construction guideline 2008, it is mandatory to offer wheelchair access to all those buildings and also to guarantee the provision of  wheelchair accessible-toilet ( page 3005 contains Universal Access plan and also Universal Access law on page 3069).    
Keeping these provisions in mind, we would like to make few places easily accessible by wheelchair users, so that public-awareness is increased and that may encourage large organizations to come forward in these projects.
One day all the places in Bangladesh will be open and accessible to users of 'wheelchair'. Therefore, we passionately think that entry to markets, movie theatres, museums, universities are very crucial. 
 RAMP:  A sloping path that can be easily used to move a wheelchair. It is used as a substitute to stairs. It can be both permanent (made with concrete or timber ) or temporary ( made of Steel / timber ). Other than wheelchair users, ramp is also useful for people with crutch and walker, elderly citizens, pregnant women, sick person and blind people.
Appropriate size of a ramp:
* According to international code of 'universal access', for 1 inch height , the height of a ideal ramp will be 1.6 feet to 2.00 feet ( but height can be less depending on the height ).
* Ramp should be minimum 36 inches wide.
* There should be railing or safety-wall on both sides of the ramp etc.
Wheelchair Accessible Toilets
The first obstacle that we might face while entering into a toilet with a wheelchair is the inadequate width of the door. Those doors in public toilets are not wide enough. Places where new toilet may not be built existing toilet can be modified so that wheelchair users can use them. That will require:
* Doors must be at least 30" wide.
* There should be some spaces inside the toilet to maneuver the wheelchair as required.  It will be very hard task to lock the toilet door. Therefore door should be opened towards the outside.
* There should be hand-rails on each side of the commode, so that the person can shift him / herself properly.
Expense for these modifications will vary building to building according to the size and shape of the toilets. It may be a bit more costly to replace existing doors. Some toilets may have wide door but very little place to maneuver the wheelchair in that case if existing door opens towards outside it may work. We might need to change some minor stuffs, like installing hand-rails and extra door-handle etc to make it accessible.In that case it will not cost that much.
To conclude, I would like to add that we will get our dreams full filled with your assistance and co-operation.
Many thanks.
Salma Mahbub
Translated by: Dr. Maqsood Omar

বাকচিকিৎসা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির আহবান

দেশের ৬০ থেকে ৭০ লাখ মানুষ কথা বলতে পারে না বা তারা ভাষাগত সমস্যায় আক্রান্ত। চিকিৎসা দিয়ে তাদের অনেককে সুস্থ করে তোলা সম্ভব। তবে দেশের অনেকেই এ চিকিৎসার গুরুত্ব সম্পর্কে জানেন না বা সচেতন নন।
গতকাল পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনকেন্দ্র (সিআরপি) আয়োজিত অনুষ্ঠানে আলোচকেরা এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য ছিল বাকপ্রতিবন্ধিতা চিকিৎসায় দেশে কী ধরনের সেবা আছে, তা জানানো এবং এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করে তোলা। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কর্মরত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও চিকিৎসক অংশ নেন। সিআরপির মিরপুর কেন্দ্রে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
আয়োজকেরা বলেন, সেরিব্রাল পালসি, অটিজম, কানে কম শোনা, স্ট্রোক করা, ঠোঁট ও তালুকাটা, মানসিক সমস্যা, মাথায় আঘাত পাওয়াসহ বিভিন্ন জটিলতায় স্পিচ ও লেংগুয়েজ থেরাপি বা বাকচিকিৎসা দেওয়ার প্রয়োজন হয়।
অনুষ্ঠানে সিআরপির স্পিচ অ্যান্ড লেংগুয়েজ থেরাপি বিভাগের প্রতিনিধিরা সিআরপির এ সেবা নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁরা জানান, সিআরপি দেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান, যেখানে এ বিষয়টিতে ২০০৫ সাল থেকে এক বছরের শিক্ষানবিশ কর্মসূচিসহ চার বছরের অনার্স কোর্স চালু রয়েছে।
অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান রওনাক হাফিজ বলেন, মাঠপর্যায়ে এ সেবাকে ছড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন। অপারেশন ক্লেফট অস্ট্রেলিয়ার প্রকল্প ব্যবস্থাপক ডালিয়া দাস বলেন, চিকিৎসকদেরও এ সেবা বিষয়ে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
সিআরপির নির্বাহী পরিচালক এমদাদ মোসলেম বলেন, দেশের জনগণ এখনো জানেই না যে এ সেবা নিতে হয় বা কোথায় এ সেবা পাওয়া যায়।


সুত্রঃ ৬ জুন ২০১০, প্রথম আলো।

চলচ্চিত্র 'কাজলের দিনরাত্রি' সংবাদ সম্মেলনে বি-স্ক্যান




একটি সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেবার হঠাৎ করেই একটা সুযোগ চলে এলো । সেখানে পৌঁছার আগ পর্যন্ত অবশ্য জানা ছিল না আমাকেও কিছু বলতে হবে সেই অনুষ্ঠানে। আমি তো প্রথমে একটু ঘাবড়েই গিয়েছিলাম, পরে আস্তে আস্তে নিজেকে তৈরী করে নিলাম। মুহাম্মদ জাফর ইকবালের কাহিনী নিয়ে সরকারি অনুদানে চলচিত্র নির্মিত হচ্ছে। ছবির নাম কাজলের দিনরাত্রিসেই উপলক্ষ্যে ঢাকা রিপোর্টারস ইউনিটিতে এই আয়োজন। অভিনয় করছেন আফজাল ও রোকেয়া প্রাচী এবং শিশু শিল্পীরা। মুলত এটি ছোটদের চলচিত্র। পরিচালক সজল খালেদকে ফেসবুকের মাধ্যমে আগে থেকেই চিনতাম। তিনি বি-স্ক্যানের কাজের ব্যপারে সবসময় আগ্রহী প্রকাশ করে এসেছেন। তাঁর আমন্ত্রণেই সেখানে যাওয়া।

এই ছবিটির মাধ্যমে প্রাসঙ্গিকভাবে  প্রতিবন্ধী মানুষ সম্পর্কে কোন একটি ম্যাসেজ তিনি শিশু কিশোরদের কাছে পৌঁছে দেয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। আমরা সেইভাবে তাঁকে ধারনা দেয়ার চেষ্টা করেছি। যার ফলশ্রুতিতে তিনি আমাকে এই সংবাদ সম্মেলনে কিছু বলার জন্য অনুরোধ করেন।

আমি বি-স্ক্যানের পক্ষ থেকে মিডিয়াকে এগিয়ে আসার আহবান জানাই। কারণ মানুষের দৃষ্টভঙ্গী না পাল্টালে প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার কোনদিন প্রতিষ্ঠা পাবে না। মিডিয়াই পারে এই বিপুল জনগোষ্টীর ধারণা পাল্টাতে সহযোগিতা করতে। আমি বললাম, ঢাকা রিপোর্টারস ইউনিটিও দোতলায়, কোন লিফটের ব্যবস্থা নেই, আমাকে তিন/চারজন মিলে উপরে তুলেছেন। দোতলায় শুনে প্রথমে আমি সেখানে যেতে চাইনি পরে ভেবেছি আমি যেই কাজে নেমেছি তাতে মানুষকে জানানো দরকার আমরাও আছি এই সমাজে, আমাদের কথাও তাঁদের ভাবতে হবে। তারা আমাদেরকে কম দেখেন বলেই হয়তো আমাদের প্রয়োজনটা কম বুঝেন বা বুঝতেই চান না।  তাই আমাদের ঘর থেকে বের হয়ে আসা দরকার তাহলে হয়তো আমাদের প্রয়োজনগুলো নিয়ে মানুষ ভাববে। অনুষ্ঠান শেষে জাফর ইকবাল স্যার আমাকে বললেন হতাশ না হতে, ধীরে ধীরে সব হবে। পরিবর্তন হচ্ছে, আরো হবে। রোকেয়া প্রাচী বলেন তার একটি নাটকের  স্ক্রিপ্ট পাঠাবেন আমাকে যেখানে হয়তো আমরা কোন ম্যাসেজ দিতে পারবো এই অবহেলিত মানুষগুলো সম্পর্কে।
চোখে দিন বদলের স্বপ্ন নিয়ে বেরিয়ে আসি সেই অনুষ্ঠান থেকে।
লেখকঃ সালমা মাহবুব, ২০ শে মে, ২০১০।

 
Design by Oronno Anam | Bloggerized by Salma Mahbub