শিশুতোষ চলচ্চিত্র 'কাজলের দিনরাত্রি'


২০০৯-২০১০ সালের সরকারী অনুদানপ্রাপ্ত শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘কাজলের দিনরাত্রি’ এর মহরত উপলক্ষে ২০ মে বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির ভিআইপি লাউঞ্জে বেলা ১২টায় এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে ছবির শিল্পী ও কলাকুশলীদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।


জানা গেছে, শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘কাজলের দিনরাত্রি’র মধ্য দিয়ে দীর্ঘ সময় পর চলচ্চিত্রে অভিনয় করবেন অভিনেতা আফজাল হোসেন। রোকেয়া প্রাচী, ইরেশ যাকের সহ বেশ কিছু শিশু কিশোরও চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করবেন বলেই জানা গেছে।


সংবাদ সম্মেলনে ড. জাফর ইকবাল তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমাদের দেশে সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠী হলো শিশুরা। অথচ তাদের জন্য বিনোদনের কোন ব্যবস্থা নেই। বিনোদন মাধ্যমে তারাই সবচেয়ে বেশি অবহেলিত।’ শিশুতোষ ছবির ক্ষেত্রে সরকারী অনুদানের বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শিশুদের জন্য চলচ্চিত্র হচ্ছে এটা খুবই ভালো একটা উদ্যোগ। এটা যেন নিয়মিত ভাবেই করা হয়।’


পরিচালক সজল খালেদ বলেন, ‘আমি প্রথম যখন কাজলের দিনরাত্রি গল্পটি পড়ি, তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, এই গল্প থেকেই ছবি বানাবো। আজ এটা আর স্বপ্ন নয়। স্বপ্নটি বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে এবার।’  


তিনি ছবির ইউনিটের সদস্যদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আমার ছবিটির জন্য দেশে আসছেন ফ্রান্স প্রবাসী সিনেমাটোগ্রাফার আনোয়ার হোসেন। ছবিটির জন্য গান লিখবেন লাকী আখন্দ ও কবির বকুল। শব্দ পরিকল্পনা ও চিত্র সম্পাদনা করবেন সুজন মাহমুদ।


সংবাদ সম্মেলনে শিল্পী ও কলা-কুশলীদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন লাকী আখন্দ, রোকেয়া প্রাচী, সালমা মাহবুব প্রমুখ।


ছবিটির পরিচালক এর বাজেট প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ‘এই ছবির জন্য সরকার উনিশ লাখ ২০ হাজার টাকা দিচ্ছে। এছাড়াও আমরা এফডিসি’র দশ লাখ টাকার টেকনিক্যাল সুবিধা নিতে পারবো। ছবিটি নির্মাণ করতে মোট ষাট লাখ টাকা লাগবে বলেই তিনি জানিয়েছেন।




বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকম/রাশেদ শাওন/তানভীর/এইচআর/মে ২০/১০

রহস্যময়ী এক নারী হেলেন কেলার

মানুষ বিধাতার সৃষ্টির সেরা জীব। তাই যুগে যুগে কিছু মানুষ জন্মগ্রহণ করেন যাদের দেখে খুবই বিস্মিত হতে হয়। চোখ দিয়ে সুন্দর পৃথিবী দেখেনি, কান দিয়ে শোনেনি কোনো বাক্য, পারেনি মুখ দিয়ে কথা বলতে। এই জগত্ তাদের কাছে অদৃশ্য, মানুষের কথা তাদের কাছে নিঃশব্দ, বাক্যহীন, নীরব, নিস্তব্ধ। পৃথিবীতে এ ধরনের মানুষের সংখ্যা অতি নগণ্য। উনিশ শতকের দিকে এরকমের একজন নারী হচ্ছেন ‘হেলেন কেলার’। গত ১ জুলাই ছিল তার ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী। বাক-শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা নিয়ে ১৮৮০ সালের ২৭ জুন উত্তর আমেরিকার টুস্কুমরিয়া নামের ছোট শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আথার কেলার এবং মা’র নাম ক্যাথরিন। হেলেন কেলারের বয়স যখন মাত্র দেড় বছর তখন তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাবা-মা প্রাণের প্রিয় কন্যার জীবনের আশা-ভরসা ছেড়ে দিলেও ভেঙে পড়েননি। চিকিত্সা শুরু করেন। তত্কালীন সময়ে আমেরিকা পৃথিবীর একটি উন্নত দেশ হলেও আজকের মতো চ্যালেঞ্জিং চিকিত্সা ব্যবস্থা ছিল না। বহু চিকিত্সার পর জীবন রক্ষা পায়। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! কথা বলা, শোনা এবং দেখার শক্তি চিরদিনের জন্য হারিয়ে যায়। অন্ধকার, আলোহীন আর নিস্তব্ধে ছেয়ে যায় মায়ার জীবন ও জগত্।


ফলে শিশুকালেই হেলেন কেলার একাধারে বাক-শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়ে বহুমুখী প্রতিবন্ধিতা নিয়েই বড় হতে থাকে। তার বয়স যখন মাত্র ৬ বছর তখন বাবা-মা তাকে ওয়াশিংটনের এক প্রসিদ্ধ বিজ্ঞানী, টেলিফোন আবিষ্কারক ড. আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলের কাছে পরামর্শ গ্রহণের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। কারণ আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল দীর্ঘদিন ধরে বাক-শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নের লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করছিলেন। তিনি হেলেন কেলারকে প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেন, হেলেন আর কোনোদিন চোখে দেখতে পারবে না এবং কানেও শুনতে পাবে না। তবুও হতাশ হওয়ার কিছু নেই। কারণ হেলেন কেলারের বুদ্ধিমত্তা তীক্ষষ্ট। সেজন্য গুরুত্বের সঙ্গে পরিকল্পনা অনুযায়ী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলে স্বাভাবিক জীবনের কাছাকাছি একটি সুন্দর জীবন ফিরে পেতে পারে।


পরিবারের উত্কণ্ঠা ও হতাশা কিছুটা হলেও কমে যায়। এরপর শুরু হয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ। মাত্র ৮ বছর বয়সেই হেলেন কেলার হাতে আঙুল দিয়ে দাগ কেটে কেটে লেখা, ব্রেইল পদ্ধতিতে লেখাপড়াসহ শব্দ ও বাক্য উচ্চারণ পর্যন্ত শিখে ফেলে। এতে পরিবারের লোকজন ও আত্মীয়স্বজন অবাক হয়ে যান। সবচেয়ে আশ্চর্য বিষয় ছিল তার কথা শেখা। চোখে না দেখা ও কানে না শোনার দরুন প্রথমে একটি শব্দ ব্রেইলের মাধ্যমে জানত। শিক্ষকের মুখের কম্পন, ঠোঁট ও জিহ্বার নড়াচড়া হাত দিয়ে অনুভব করে তা বোঝা ও অনুসরণ করার চেষ্টা করত। প্রথম প্রথম যেসব শব্দ বলত তা অদ্ভুত ধরনের বিকট শব্দের মতো উচ্চারিত হতো। তবুও নিরলস সাধনা করে অসাধ্যকে সাধন করেছে, অসম্ভবকে সম্ভব করেছে।
১৪ বছর বয়সে হেলেন আমেরিকার নিউইয়র্কের ‘রাইট হুমাসন’ নামক একটি স্কুলে ভর্তি হন। এখানে বিশ্ববিখ্যাত লেখক মার্ক টোয়েনের সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে। স্কুল ফাইনাল পাস করার আগেই তার পিতা দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করেন। ১৯০৪ সালে হেলেন র্যাডক্লিফ কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি লাভ করেন।
যদিও তিনি সম্পূর্ণ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছিলেন, কিন্তু তিনি দৃষ্টিসম্পন্ন বহু জ্ঞানী লোকের চেয়েও বেশি বই পড়েছেন। শুধু বই পড়েনইনি, বই লিখেছেনও। তার রচিত বইয়ের সংখ্যা ১১। প্রধান বই হচ্ছে—দি স্টোরি অব মাই লাইফ, লেট আস হ্যাভ কেইথ, দি ওয়ার্ল্ড আই লিভ ইন, ওপেন ডোর ইত্যাদি। এছাড়াও তিনি বাক-শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অভিশপ্ত বিড়ম্বনা জীবনের বিষাদের ওপর একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। চলচ্চিত্রে তার নিজের ভূমিকায় তিনি নিজেই অভিনয় করেছেন। তিনি বাক-শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নারী ছিলেন অথচ স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে বেশি সঙ্গীত উপভোগ করতে পারতেন। তার সঙ্গীত উপভোগ করার আশ্চর্য পদ্ধতি ছিল। তিনি বাদ্যযন্ত্রের ওপর হাত রেখেই বলে দিতে পারতেন তাতে কি ধরনের সুর বাজছে। হাতের স্পর্শ দিয়ে তিনি শ্রবণের কাজ করতেন আশ্চর্য বুদ্ধিমত্তা দ্বারা। গায়ক-গায়িকার কণ্ঠে হাত দিয়ে অনায়াসে বলতে পারতেন কি সঙ্গীত গাইছে। তার এমন আশ্চর্য ক্ষমতা ছিল যে, বহুদিনের পরিচিত মানুষের সঙ্গে করমর্দন করে বলে দিতে পারতেন তার পরিচয়। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়ে তিনি নৌকা চালাতে পারতেন। নদীতে সাঁতার কাটতে পারতেন, নৌকা বাইতে পারতেন, দাবা ও তাস খেলতে পারতেন। ঘরে বসে সেলাই করতে পারতেন।


১৯৪১ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের অনুরোধে হেলেন কেলার বিভিন্ন হাসপাতালে যুদ্ধাহত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নাবিক ও সৈনিকদের দেখতে যেতেন এবং শান্তি ও আশার বাণী শোনাতেন। যুদ্ধ শেষ হলে বাক-শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বিশ্বব্যাপী এক আন্দোলন গড়ে তোলার প্রয়াস পান। ১৯৫৯ সালে হেলেন কেলার জাতিসংঘ কর্তৃক বিশেষ সম্মানে ভূষিত হন।


১৯৬৮ সালের ১ জুন হৃদয়ের আলোতে আলোকিত এই মহিয়সী প্রতিবন্ধী নারী দুনিয়ার মায়া ছেড়ে চলে  যান। বিশ্বব্যাপী বাক-শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নারীর স্মৃতিকে চির অম্লান করে রাখার জন্য এবং অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৭ সালে ‘আমেরিকান এসোসিয়েশন ফর দি ওভারসিজ ব্লাইন্ড’ গঠন করা হয়েছে। পরে নাম পরিবর্তন করে ‘হেলেন কেলার ইন্টারন্যাশনাল’ করা হয়েছে।
                                         
আজমাল হোসেন মামুন,  বৃহস্পতিবার ১৩ মে ২০১০, আমারদেশ।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/05/13/31604

উন্নয়ন ব্যয়ের আধা শতাংশও পান না দেড় কোটি প্রতিবন্ধী

প্রতিবন্ধীরা সমাজে অচ্ছুৎ বলে চিহ্নিত হয়ে আসছেন। প্রতিবন্ধীদের দেখলে সবার মধ্যে একটু এড়িয়ে চলার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু এসব অসহায় মানুষের যে সহানুভূতি পাওয়ার অধিকার রয়েছে সে খোঁজ কেউ রাখেন না। এসব মানুষকে পরিবার যেমন দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করে, তেমনি রাষ্ট্রযন্ত্রও। দেশের দেড় কোটি প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য বাজেটে বরাদ্দ চাহিদার আধা শতাংশও নয়। নৈতিক, মানবিক, ন্যায়বোধ ও সৌন্দর্যবোধ_ কোনো দিক থেকেই এ অবস্থা কাম্য হতে পারে না। রাষ্ট্র যদি প্রতিবন্ধীদের প্রতি তার দায়-দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয় তাহলে প্রতিবন্ধিতা বাড়বে। এর ফলে দারিদ্র্যও বাড়বে।


অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ড. আবুল বারকাত সম্প্রতি প্রতিবন্ধী ও দারিদ্র্য চক্র নিয়ে গবেষণা করেছেন। গবেষণায় তিনি এ চিত্রটি তুলে ধরেছেন। দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে বের হতে উন্নয়ন বাজেটের ১০ শতাংশ প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে ব্যয় করার সুপারিশ করেছেন তিনি।


১৫ কোটি মানুষের বাংলাদেশে দেড় কোটি লোকই কোনো না কোনোভাবে প্রতিবন্ধী। প্রতি দুই খানার মধ্যে একটি খানায় প্রতিবন্ধী রয়েছেন। এই দেড় কোটি প্রতিবন্ধী মোটামুটি পাঁচ ধরনের প্রতিবন্ধিতার শিকার। এর মধ্যে ৫২ দশমিক ৫ শতাংশ (৭৯ লাখ) শারীরিক প্রতিবন্ধী, ১৫ দশমিক ১ শতাংশ (সাড়ে ২২ লাখ) দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ (২২ লাখ) বাক্-শ্রবণ প্রতিবন্ধী, ১৪ শতাংশ (১৬ লাখ) বুদ্ধি প্রতিবন্ধী এবং ৬ দশমিক ৭ শতাংশ (১০ লাখ) বহুমুখী প্রতিবন্ধী। ড. আবুল বারকাতের হিসাবমতে, মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণ জয়ন্তীতে প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা দাঁড়াবে ৫ কোটি ২০ লাখ। অন্যান্য অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে আগামী ১১ বছরে মোট প্রতিবন্ধীর সংখ্যা বর্তমানের তুলনায় প্রায় তিনগুণ হবে। দারিদ্র্যের চক্রে আটকে গেছে দেশের প্রতিবন্ধীদের জীবন। প্রতিবন্ধিতা আর্থ-সামাজিক নিরপেক্ষ বিষয় নয়। ধনীদের তুলনায় দরিদ্ররা অধিক হারে প্রতিবন্ধিতার শিকার। দারিদ্র্য নিজেই প্রতিবন্ধিতা সৃষ্টির অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। রাষ্ট্র যদি প্রতিবন্ধীদের দায়িত্ব নিতে ব্যর্থ হয় তখন নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের ওপর প্রতিবন্ধিতার 'বোঝা' আরও নিবিড়ভাবে জড়িয়ে পড়বে। উত্তরোত্তর পরিবারটির আর্থিক বুনিয়াদ দুর্বল হবে।


ড. আবুল বারকাত তার গবেষণায় বিশ্লেষণ করেছেন, দেশের প্রায় ৯৯ লাখ প্রতিবন্ধী মানুষ অতিদরিদ্র পরিবারের সদস্য। অন্যদিকে প্রায় ৪ লাখ প্রতিবন্ধী রয়েছেন ধনী পরিবারের সদস্য হিসেবে।


আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে প্রায় ৪৭ লাখ প্রতিবন্ধী মধ্যবিত্ত পরিবারে রয়েছেন। মধ্যবিত্ত পরিবারের মধ্যে ২৫ লাখ নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য। দ্রবমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মধ্যবিত্তের জীবনযাপনই যেখানে কষ্টকর, সেখানে পরিবারের প্রতিবন্ধী সদস্যের জন্য বাড়তি কিছু করার সাধ থাকলেও সাধ্যে কুলায় না।
প্রতিবন্ধীদের নিয়ে প্রতিটি সরকারই উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে। ২০০৭-০৮ সালের উন্নয়ন বাজেট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সে বছর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ১ হাজার ৩২টি প্রকল্প নেওয়া হলেও প্রতিবন্ধীদের জন্য পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে মাত্র ৫টি প্রকল্প নেওয়া হয়। অথচ দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ প্রতিবন্ধী।


উন্নয়ন ব্যয়ের আধা শতাংশও ব্যয় হয় না প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে। ২০০৭-০৮ অর্থবছরের এডিপির সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকার বিপরীতে মাত্র ১৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা রাখা হয়েছে প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে।
ড. আবুল বারকাত তার গবেষণায় বলেছেন, দেড় কোটি প্রতিবন্ধীর কল্যাণে সরকারের বার্ষিক বরাদ্দ থাকা উচিত ১৩ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা। এ হিসাবের মধ্যে সহায়ক উপকরণ বাবদ ২ হাজার ৯৬৩ কোটি, চিকিৎসা ব্যয় ১ হাজার ৩৬৮ কোটি, কর্মসংস্থান ব্যয় ২ হাজার ৫০০ কোটি, খাদ্য অনুদান ৪ হাজার ৫৬২ কোটি এবং প্রতিবন্ধিতা রোধ সহায়ক ব্যয় ২ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। কিন্তু সরকারের কাছে এটা অবাস্তব হতে পারে। তাই মোট উন্নয়ন ব্যয়ের ১০ শতাংশ প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে ব্যয় করার সুপারিশ করেছেন ড. আবুল বারকাত।
-জাহাঙ্গীর শাহ কাজল




সুত্রঃ ১৮ এপ্রিল, ২০১০, সমকাল।

ঘোড়াঘাটের প্রতিবন্ধী দুই বোনকে হুইলচেয়ার প্রদান

গত ৬ এপ্রিল দৈনিক আমারদশে পত্রিকায় দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের প্রতিবন্ধী দুই বোন রিমা ও রিম্পার সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ায় তাদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন বি-স্ক্যান (বাংলাদেশি সিস্টেমস চেঞ্জ এ্যাডভোকেসি নেটওয়ার্ক) নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ঢাকা রোটারী ক্লাব। গত বৃহস্পতিবার বিকালে মিরপুর রোডে মহানগর সার্জিকেল স্টোরে তাদের পিতা ওয়াজেদ আলীর হাতে হুইল চেয়ার তুলে দেয়া হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন বি-স্ক্যানের সহযোগী প্রশাসক সালমা মাহবুব, ঢাকা রোটারী ক্লাবের প্রেসিডেন্ট আবরার হোসাইন খান, রোটারীয়ান রাশেদুল আহসান, রোটারীয়ান আতাউর রহমান ও এম কাশেম প্রমুখ।


সুত্রঃ রবিবার, ৯ মে ২০১০, আমারদেশ।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/05/09/30934

Physically challenged, he knows no defeat

Belal Hossain, left physically challenged by polio during early childhood, has become a successful farmer through diligence and will power.
Struggling against all odds, Belal, 35, son of late Mozahar Ali of Zamalganj-Pirpara village of Joypurhat Sadar upazila, is now known as an ideal farmer in the area.
"Belal, sixth of my seven children, was affected with polio when he was only one year old. He read up to class III at the local primary school but could not continue study after his father's death. He got about 20 decimal land from his father and started farming. He looks after everything of his land," said Belal's mother Rokeya Begum.
Recently Belal built a brick-built house where he lives with his mother. He also purchased a colour television.
Belal has been cultivating cash crops for long and people know him as a good farmer in the area, said local farmer Reazul Alam.
"Defying physical challenge, Belal has set an example of success for farmers in the area. To invest for farming, he received loan on a few occasions and refunded it timely," said Joypurhat Sadar upazila Social Welfare Officer Nurun Nahar Begum.


Source: Friday, May 7, 2010, The Daily Star. http://www.thedailystar.net/newDesign/news-details.php?nid=136851

স্বপ্ন ছুঁতে ওদের পথচলা

ওদের স্বপ্নের জানালার পরিধি কতটুকুই বা বিস্তৃত? তবে আর দশটা শিশুর মতো ওদেরও স্বপ্ন আছে। ওরা তো স্বপ্ন দেখতেই পারে। কিন্তু ওদের স্বপ্নের জানালার ফুটো দিয়ে আর কতটুকু আলোই বা পৌঁছায়? কতটুকু আলো ওদের স্পর্শ করতে পারে?
তবে ভালো লাগল এই ভেবে—যেটুকু আলো ওদের কাছে পৌঁছাতে পারে, সেই আলোর সহযাত্রী হয়ে নিরন্তর প্রচেষ্টায় শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে মাড়িয়ে ছোট্ট দুটি শিশু অমিত আর তান্নি এগিয়ে যাচ্ছে।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভুনবীর ইউনিয়নের রাজপাড়া গ্রামের মো. লেবু মিয়ার ছেলে অমিত মিয়া। সে এবার পাত্রীকূল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। আর দশটা শিশুর মতো সে হাঁটতে পারে না। গ্রামে ধাত্রীর হাতে জন্মের সময় অমিতের ডান পা ভেঙে যায়। আর জোড়া লাগেনি।
অমিতের মনে কষ্টের পাহাড়। সে সহপাঠীদের সঙ্গে একসঙ্গে হেঁটে বিদ্যালয়ে যেতে পারে না। দৌড়াতে পারে না। খেলতে পারে না। তার অন্য সব সহপাঠী, গ্রামের প্রতিবেশী শিশুরা যখন মাঠে খেলা করে, সে তখন চেয়ে চেয়ে দেখে। তার চোখের কোণে তখন বিন্দু বিন্দু নোনাপানি এসে জমা হয়। কয়েক ফোঁটা গড়িয়েও পড়ে মাটিতে। অমিতের খু-উ-ব রাগ হয়। রাগে সে নিজের মাথার চুল ধরে টানে। এক সময় আর পারে না।
বুকভরা দম নিয়ে দুই হাতের ওপর ভর দিয়ে নেমে পড়ে মাঠে। অন্যদের পেছনে পেছনে বল ধরার জন্য ছুটে যায়। শুধুই ছুটে যায়। কদাচিত্ বল হাতের কাছে পায়। তবু সে দমে না। অমিত সম্পর্কে এসব কথা তারই সহপাঠী, প্রতিবেশী শিশুদের কাছে শোনা।
অমিতের বাবা মো. লেবু মিয়া জানান, অমিত পাত্রীকূল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে। ২০০৭ সালে অমিতকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর ঢাকা থেকে কয়েকজন এসেছিলেন। অমিতের জন্য এক দম্পতি স্থানীয় এক সাংবাদিকের মাধ্যমে হুইলচেয়ার পাঠিয়েছিলেন। চেয়ারটা এখন ভেঙে গেছে। তখন আরও কয়েকজন এসেছিলেন। তাঁরা ক্র্যাচ, বই-খাতা, শার্ট-প্যান্ট দিয়েছিলেন। অমিত তখন তৃতীয়
শ্রেণীতে পড়ত।
সম্প্রতি বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে অমিতের সঙ্গে রাস্তায় দেখা। দুই হাতের ওপর ভর দিয়ে হাঁটুতে ঠেক দিয়ে অমিত সহপাঠীদের সঙ্গে যাচ্ছে। পড়ালেখা কেমন চলছে প্রশ্নের জবাবে ভিতু স্বভাবের অমিত নিরুত্তর থাকে। তার তীক্ষ� দৃষ্টি আমার চোখের দিকে। স্থির তার চোখের পাতা। পড়ালেখা শিখে কী হবে? এ প্রশ্নের উত্তরে অমিতের জবাব, ‘মাস্টর অইমু’ (শিক্ষক হব)। ২০০৭ সালে অমিতের সঙ্গে প্রথম দেখায় ওই প্রশ্নের সে একই উত্তর দিয়েছিল। দেখলাম তার চোখে স্বপ্নের দ্যুতিময়তা। আর মনে আছে প্রতিজ্ঞা পূরণের প্রত্যয়।
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালাপুর ইউনিয়নের কালাপুর গ্রামের আরেক শিশু তান্নি। সেও শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তুচ্ছ মনে করে স্বপ্নকে ছুঁতে পথ চলছে। জন্মের পর থেকেই অসুস্থতা তান্নির স্বাভাবিক চলার শক্তি কেড়ে নিয়েছে। তার ডান হাতটি সম্পূর্ণ অবশ। ডান পা ও বাঁ হাতও আংশিক অচল। তবু শারীরিক এই প্রতিবন্ধকতা তাকে দমাতে পারেনি। একটি সচল পা আর একটি অর্ধসচল হাত নিয়েই স্বপ্ন ছোঁয়ার যুদ্ধে নেমেছে সে। রং-তুলি নিয়ে ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলছে তার প্রতিভা। বিভিন্ন চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অন্যসব স্বাভাবিক শিশুর সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে। পুরস্কার ছিনিয়ে আনছে।
তান্নি চিকিৎসক হতে চায়। পড়ালেখা করে কী হবে প্রশ্নের উত্তরে তার ছোট্ট জবাব, ‘ডাক্তর অইমু’ (চিকিৎসক হব)।
তান্নির দিনমজুর বাবা মো. আলা মিয়া জানান, ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচির কালাপুর প্রি-প্রাইমারি স্কুলে তাকে ভর্তি করিয়েছেন। ওই স্কুল থেকে পরে কাছাকাছি একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দেবেন। আলা মিয়ার দুঃখ, আর দশটা শিশুর মতো তান্নি চলতে পারবে না। এই দুশ্চিন্তা তাঁকে প্রতিনিয়ত তাড়া করছে।
তান্নির মা সাফিয়া আক্তার জানান, জন্মের পরপরই তান্নি হাত-পা নাড়াতে পারেনি। স্থানীয় চিকিৎসক ও বিভিন্ন হাসপাতালে মেয়েকে নিয়ে গেছেন। চিকিৎসকেরা আশ্বাস দিয়েছিলেন যে আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু হয়নি। আর্থিক সংগতি না থাকায় ভালো চিকিৎসা করানো কখনোই সম্ভব হয়নি। তান্নি এখন বাঁ হাত দিয়ে কোনোমতে লেখাপড়া করতে পারে। বাঁ পায়ের সহায়তায় অর্ধসচল বাঁ হাত দিয়ে ছবি আঁকে।
অমিত, তান্নিরা বোঝে না ওদের স্বপ্নের পরিধি কতটা বিশাল। জানে না বাস্তবতার সীমাবদ্ধতায় ওদের স্বপ্নের প্রজাপতি কতটা ডানা মেলতে পারবে। কতটা উঁচুতে উড়তে পারবে। তবু ওরা স্বপ্ন দেখবে। স্বপ্ন দেখাবে। ওদের বিশাল সব স্বপ্নের পাশে চাই মানবিক মূল্যবোধের ছোঁয়া। চাই সহযোগিতা, সহমর্মিতা আর ভালোবাসার স্পর্শ।


সুত্রঃ  ৭ মে ২০১০, শুক্রবার, প্রথম আলো।

 
Design by Oronno Anam | Bloggerized by Salma Mahbub