যে লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে আঁধার সুরঙ্গের মাঝ দিয়ে বি-স্ক্যান এর পথ চলা শুরু হয়েছিল, সেই পথের যাত্রী আজ আমরা একা নই, আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন বেশ কিছু সমমনা মানুষ যারা আমাদের সহযাত্রী হয়ে প্রেরণা যোগাচ্ছেন প্রতি নিয়ত। যদিও সুরঙ্গের শেষে কোন আলোর দিশা আজও আমরা পাই নি তবু আমরা আশাহত নই, আমাদের এই পথ চলা অব্যাহত থাকবে।
এই চলার পথে আমরা হারিয়েছি আমাদের প্রাণ প্রিয় উপদেষ্টা জনাব মোঃ মাহবুবুল আশরাফ ভাইকে। আমরা তার বিদেহী আত্নার শান্তি কামনা করছি। এ বছর থেকে তাঁর নামে একটি এককালীন বৃত্তি (১০ হাজার টাকা) চালু করেছি আমরা যা প্রতি বছর একজন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে দেয়া হবে, এ বছর বৃত্তিটি পেয়েছেন সাভারের শারীরিক প্রতিবন্ধী সাজ্জাদ হোসেন।
দু'বছরে বি-স্ক্যান এর উল্লেখ্যযোগ্য কিছু কার্যক্রম-
অনলাইন থেকে বেড়িয়ে খোলা মাঠে - ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের রমনা কালী মন্দির প্রাঙ্গণে বসেছিল বি-স্ক্যান এর প্রথম মিলনমেলা। বি-স্ক্যান অনলাইন গ্র“পের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এতে বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী ও উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, শিক্ষক, সাংবাদিক, ছাত্রসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ জড়ো হন।
প্রত্যেকের সম্মিলিত ইচ্ছেতে একমত পোষণ করে বি-স্ক্যান’র সদস্যরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, ‘প্রতিবন্ধী মানুষের সর্বত্র প্রবেশগম্যতা এবং শিক্ষায় ব্যাপক অংশগ্রহণ নিশ্চিত’ করা তথা প্রতিবন্ধী ব্যক্তির মৌলিক-মানবিক ও নাগরিক অধিকার আদায়ে জনসচেতনতা তৈরি করতে স্কুল পর্যায়ে ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সমন্বয়ে একাধিক মতবিনিময় সভা ও সেমিনারের আয়োজন করার। এরই অংশ হিসেবে লিফলেট ও স্টিকার বিলি এবং গণমাধ্যমে প্রচারণা চালানোরও সিদ্ধান্ত হয়।
রোটারি ক্লাবের সাথে বি-স্ক্যানকে যুক্ত করা - ২৪ এপ্রিল,২০১০ ঢাকা ক্লাবে আয়োজিত রোটারী ক্লাব অব ঢাকা সেন্ট্রালের মিটিং এ কমোডর(অবঃ) আতাউর রহমান সাহেবের আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে যোগ দেয়।বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নিয়ে বি-স্ক্যান রোটারি ক্লাবকে নিজেদের কাজের সাথে যুক্ত করতে সমর্থ হয়। তারমধ্যে হুইলচেয়ারের পাশাপাশি র্যাটম্প তৈরীতে বা বিতরণে আহবান জানানো ছিল অন্যতম।
সম্মাননা - দূরারোগ্য “মাসকুলার ডিসট্রফি”তে আক্রান্ত অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী তাসনিন সুলতানার পক্ষে স্কুলের সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় ক্লাস করা সম্ভব ছিল না। শিক্ষাঙ্গনের মহানুভব অধ্যক্ষ তাসনিনের শিক্ষাজীবন মসৃণ রাখতে প্রথমে ২০০৯ সাল থেকে প্রতিবছর তার জন্য শ্রেণীকক্ষ দোতলা থেকে নিচতলায় টয়লেট সংলগ্ন একটি শ্রেণীকক্ষে নামিয়ে আনছেন। ২২ জুলাই ২০১০ একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর শিক্ষা উপযোগী পরিবেশ গড়ে তোলায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য ‘চট্টগ্রাম রেসিডেন্সিয়াল স্কুল ও কলেজ’ কে সম্মননা প্রদান করা হয়।
জাতীয় যাদুঘরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ - জাতীয় যাদুঘরের ৯৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ৬ আগস্ট ২০১০ এবারই প্রথম প্রতিবন্ধীদের নিয়ে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বি-স্ক্যান এর কয়েকজন প্রতিবন্ধী সদস্য সেখানে প্রথমবারের মত অংশগ্রহণ করেন।
যাদুঘরে তথ্যমন্ত্রীর সাথে বৈঠক - সার্বজনীন প্রবেশগম্যতার তৈরীর অংশ হিসেবে বি-স্ক্যান এর পক্ষ থেকে রোটারি ক্লাবের সহযোগিতায় ‘গুরুত্বপূর্ণ ভবনসমূহে হুইলচেয়ার প্রবেশগম্যতা’ নামে একটি প্রজেক্ট হাতে নেয়া হয়। যার মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের ভবনসমূহে হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের জন্য একটি র্যাম্প ও একটি টয়লেট নিশ্চিত করতে চাই। প্রথম কাজ হিসেবে আমরা শাহবাগস্থ জাতীয় যাদুঘরকে বেছে নেই। যাদুঘরের মহা পরিচালক, বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগ, রোটারি ক্লাব এবং শেষ পর্যায় ৬ আগস্ট ২০১০ তথ্যমন্ত্রী জনাব আবুল কালাম আজাদ সাহেবের সাথে আমাদের যাদুঘরের মহাপরিচালক জনাব প্রকাশ চন্দ্র সাহার অফিসে বৈঠক করা হয়। বুয়েটের স্থাপত্যবিভাগ জাতীয় যাদুঘরের জন্য সার্বজনীন প্রবেশগম্যতার ডিজাইনটি তৈরী করে দেন। যদিও পরে যাদুঘর কর্তৃপক্ষ কাজটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে দিয়ে করাচ্ছেন। বর্তমানে এইটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
সেমিনার
তথ্যপ্রযুক্তিতে প্রতিবন্ধী মানুষের সম্পৃত্তকরণঃ প্রেক্ষিত বাংলাদেশ - ২ নভেম্বর ২০১০ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশী সিস্টেমস চেঞ্জ এ্যাডভোকেসি নেটওয়ার্ক (বি-স্ক্যান) এর উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি ও ব্লগার্স ফোরাম এর সহযোগিতায় তথ্যপ্রযুক্তিতে প্রতিবন্ধী মানুষের সম্পৃত্তকরণঃ প্রেক্ষিত বাংলাদেশ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তথ্যপ্রযুক্তিখাতে প্রতিবন্ধী মানুষের সম্পৃক্তকরণ বিষয়ে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার কথা আলোচনা করা হয়। উক্ত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতি জনাব মোস্তফা জব্বার,বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বি-স্ক্যান এর প্রধান উপদেষ্ঠা ডা: শুভাগত চৌধুরী,পরিচালক লেবরেটারি সার্ভিসেস,বারডেম।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার নিশ্চিতকরতে গণসচেতনতা - ১২ ফেব্রুয়ারী ২০১১, এফআরইপিডি মিলনায়তনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির ব্যাপারে সমাজে নেতিবাচক ভাবনা বদলে ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলতে সচেতনতা তৈরীর লক্ষ্যে ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার নিশ্চিত করতে গণসচেতনতা’ শীর্ষক এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। প্রধান অতিথি ছিলেন বি-স্ক্যান উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী। এছাড়াও জাতিসংঘ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবর্গের অধিকার আইন কমিটির সদস্য জনাব মনসুর আহমেদ, সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ন সচিব জনাব বদিউল আলম, কবি ও স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রবক্তা জনাব বেলাল মুহাম্মদ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
একীভূত শিক্ষার জন্য প্রচারণা
যে জীবন এতদিন এদেশের প্রতিবন্ধী মানুষেরা কাটিয়ে এসেছেন আমরা জন সচেতনতার মাধ্যমে তার পরিবর্তন আনতে চাই । কারণ আমরা মনে করি সমাজের ব্যক্তির আচরণই আমাদের প্রথম প্রতিবন্ধকতা, যার আশু পরিবর্তন প্রয়োজন। ২১ এপ্রিল, ২০১১ থেকে শুরু হয়েছে আমাদের প্রতিবন্ধী শিশুদের সাধারণ শিক্ষায় একীভূত করণের জন্য ক্যাম্পেইন। সরকারের মহাপরিকল্পনা ২০১৫ সালের মাঝে প্রতিবন্ধী শিশুসহ সকল শিশুকে শিক্ষার আওতায় আনার কথা মাথায় রেখে আমরা বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সচেতনতামূলক প্রচারণা কাজ হাতে নিয়েছি। এ পর্যায়ে ঢাকার ইউনিভার্সাল টিউটোরিয়াল এবং সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পেইন করা হয়েছে।
টক শো
তৃতীয় মাত্রা - ৬ মার্চ, ২০১১ প্রথমবারের মত বি-স্ক্যান চ্যানেল আই এর জনপ্রিয় টকশো তৃতীয়মাত্রায় অংশগ্রহণ করে। মূলত সাবরিনা সুলতানার প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিটি তৃতীয়মাত্রার পরিচালক জিল্লুর রহমান সাহেবের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, পরে সাবরিনা ঢাকা এলে তিনি তাঁর অনুষ্ঠানে বি-স্ক্যানকে আমন্ত্রণ জানান।বি-স্ক্যান এর পক্ষ থেকে সাবরিনা ছাড়াও সালমা মাহবুব এবং আরো যারা সেই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন তাঁরা হলেন এসোসিয়েশেন ফর দ্যা ওয়েলফেয়ার অব দ্যা পিপল উইথ ডিসেবেলিটিজ (এডব্লিউডিপি)এর প্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক এবং জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরামের ভাইস প্রেসিডেন্ট মরহুম মাহবুবুল আশরাফ এবং সেন্টার ফর দ্যা রিহেবিলিটেশেন অব দ্যা প্যারালাইজড (সিআরপি) এর প্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক মিস ভ্যালেরী টেইলর।
মুন্নী সাহা - ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১১ আমাদের কার্যক্রমকে তুলে ধরার লক্ষ্যে মুন্নী সাহার আমন্ত্রণে এটিএন ‘নিউজ আওয়ার এক্সট্রা’ তে অংশগ্রহণ করা হয়।
হুইলচেয়ার প্রদান
বেলাল ও রাইসুলঃ ২৩ অক্টোবর,২০১০ রোটারি ক্লাব অব ঢাকা সেন্ট্রালের আর্থিক সহযোগিতায় বি-স্ক্যান এর পক্ষ থেকে ডেইলি স্টারে প্রকাশিত একজন সফল শারীরিক প্রতিবন্ধী কৃষক বেলাল হোসেন ও মগবাজার বস্তি এলাকাবাসী রাইসুল ইসলামকে দুটি হুইলচেয়ার প্রদান করা হয়।
সুমি ও জর্জিনাঃ ২৭ নভেম্বর, ২০১০ রোটারি ক্লাবের সহযোগিতায় নিগার সুলতানা সুমি ও জর্জিনা বেগম নামে দুজন শারীরিক প্রতিবন্ধী নারীকে দুটি হুইলচেয়ার প্রদান করা হয়।
শফিকুল ইসলামঃ নীলফামারীর বাক, দৃষ্টি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী শফিউল ইসলামকে রোটারি ক্লাব অব ঢাকা সেন্ট্রালের আর্থিক সহযোগিতায় একটি হুইলচেয়ার প্রদান করা হয়েছে।
আর্থিক সহযোগিতা
কোহিনুর বেগমঃ প্রথম আলোর ছুটির দিনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, টাইফয়েডে পঙ্গু হয়ে যাওয়া এক অসহায় মা তাঁর দুটি সন্তানকে নিয়ে ভালভাবে বেঁচে থাকার জন্য ভিক্ষা নয়, কাজ চাইছেন। ২২ জুলাই, ২০১০ আমরা তাঁর হাতে দশ হাজার টাকা তুলে দিতে সক্ষম হই। কোহিনুর বেগমের এখন একটি নিজের দোকান হয়েছে।
সেলাই মেশিন প্রদানঃ ২১ নভেম্বর ২০১০ ডেমরার সাত বছর বয়সী একজন বুদ্ধি প্রতিবন্ধীর মাতা খায়রুন্নেসা ও ১৩ বছর বয়সী শারীরিক প্রতিবন্ধী হুসেন মিয়ার মাতা রুবিকে রোটারি সদস্যের দেয়া সেলাই মেশিন যাকাত হিসেবে প্রদান করা হয়।
চোখের অপারেশেনঃ আকমল হোসেন এর দু’চোখে যথাক্রমে ২৭ জানুয়ারী,২০১১ ও ২৩ ফেব্রুয়ারী,২০১১ দুটি অপারেশেন করা হয়েছে। খুব ছোট্ট একটি অপারেশেনের দরকার ছিল কিন্তু টাকার অভাবে করতে পারছিলেন না। বি-স্ক্যান আমার ব্লগ ডটকম এর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্লগারের সহযোগিতায় এই কাজটি সম্পন্ন করেছে। এখানে উল্লেখ্য আকমল হোসেনের ঘরে একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশু রয়েছে।
লেখাপড়ার খরচ – ফাল্গুনি, শাহিন ও বাপ্পীঃ এ বছর জানুয়ারী ২০১১ থেকে পটুয়াখালীর গলাচিপা শহর নিবাসী শারীরিক প্রতিবন্ধী ফাল্গুনি সাহা এবং বাক প্রতিবন্ধী শাহিন ও বাপ্পী দুই ভাইসহ মোট তিনজন শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার দায়িত্ব নেয়া হয়েছে, যাদের মধ্যে ফাল্গুনি সাহা এবার এসএসসি তে জিপিএ ৫ পেয়েছে। এক্ষেত্রে আমাদের আর্থিক সহযোগিতা দিচ্ছেন কানাডার, টরেন্টো বাংলাদেশী এসোসিয়েশেন ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বি-স্ক্যান সদস্য।
মালেক শেখঃ ২৪ মার্চ, ২০১১ নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বি-স্ক্যান সদস্যের সহায়তায় বইপত্র কেনার জন্য ছয় হাজার টাকা প্রদান করা হয় মুজিব নগর নিবাসী মেধাবী ছাত্র মালেক শেখ এর হাতে। শারীরিক প্রতিবন্ধিতাকে জয় করে যিনি এগিয়ে চলেছেন।
সুদমুক্ত ঋণ
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মাঝে অনেকেই আছেন যাঁদের অবস্থা এতো খারাপ নয় যে তারা আর্থিক সহযোগিতা নেবেন, কিন্তু কিছু টাকা সুদমুক্ত ঋণ পেলে তারা একটা কিছু ব্যবসা শুরু করতে পারেন। সে কথা মাথায় রেখেই বি-স্ক্যান থেকে সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে । এ পর্যায়ে সাভারের মৃদু বাক প্রতিবন্ধী এ এম রিয়াদকে তার মাশরুম ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এক বছরের ঋণ দেয়া হয়েছে।
সচেতনতা তৈরীতে
আমার ব্লগ ডটকম এর সহযোগিতায় ‘প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার রক্ষায় এগিয়ে আসুন’ শীর্ষক ৭০০০ স্টিকার ও এবং প্রতিবন্ধী মানুষের শিক্ষার সম অধিকার চাই’ শীর্ষক ৬০০০ হাজার লিফলেট বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিতরণের উদ্দেশ্যে ছাপানো হয়েছে। ডাঃ মাকসুদ ওমরের আর্থিক সহায়তায় সার্বজনীন প্রবেশগম্যতা বিষয়ে গণসচেতনতা তৈরীতে ‘সর্বক্ষেত্রে প্রবেশগম্যতা চাই’ স্লোগান যুক্ত ১০০ টি-শার্ট তৈরী করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে জনসচেতনতামূলক কিছু ফেস্টুনও তৈরী করা হয়েছে।
র্যাম্পের উপর তৈরী তথ্যচিত্র - বাংলাদেশে র্যাম্প শব্দটির সাথে মানুষ খুব একটা পরিচিত নয়। যেহেতু আমাদের মূল লক্ষ্য মানুষকে সচেতন করা তাই সীমিত ক্ষমতায় র্যাম্প এর উপর একটি তথ্যচিত্র নির্মান করেছি। যেটা অনলাইনের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। আমরা মনে করি এই ধরণের তথ্যচিত্র আরো অনেক তৈরী হওয়া দরকার।
সবশেষে ১৫ জুলাই ২০১১ বি-স্ক্যান এর ২য় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে জাতীয় যাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় এবং অরুণোদয় নামে একটি স্মারক বের করা হয়।
বি-স্ক্যান হোক প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার আদায়ের প্ল্যাটফর্ম।
সকল প্রতিবন্ধী মানুষের জয় হোক।
এই চলার পথে আমরা হারিয়েছি আমাদের প্রাণ প্রিয় উপদেষ্টা জনাব মোঃ মাহবুবুল আশরাফ ভাইকে। আমরা তার বিদেহী আত্নার শান্তি কামনা করছি। এ বছর থেকে তাঁর নামে একটি এককালীন বৃত্তি (১০ হাজার টাকা) চালু করেছি আমরা যা প্রতি বছর একজন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে দেয়া হবে, এ বছর বৃত্তিটি পেয়েছেন সাভারের শারীরিক প্রতিবন্ধী সাজ্জাদ হোসেন।
আমরা শ্রদ্ধা জানাচ্ছি আমাদের উপদেষ্টামন্ডলীকে যারা আমাদের মাথার উপর ছায়া হয়ে আছেন। সেই সাথে সকল বি-স্ক্যান সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবী সদস্যদেরকে আমাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি তাদের আন্তরিক সহযোগিতার জন্য । কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি যারা আর্থিকভাবে সহায়তা দিয়ে বি-স্ক্যান এর কাজকে এগিয়ে নিয়েছেন।
দু'বছরে বি-স্ক্যান এর উল্লেখ্যযোগ্য কিছু কার্যক্রম-
অনলাইন থেকে বেড়িয়ে খোলা মাঠে - ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের রমনা কালী মন্দির প্রাঙ্গণে বসেছিল বি-স্ক্যান এর প্রথম মিলনমেলা। বি-স্ক্যান অনলাইন গ্র“পের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এতে বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী ও উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, শিক্ষক, সাংবাদিক, ছাত্রসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ জড়ো হন।
প্রত্যেকের সম্মিলিত ইচ্ছেতে একমত পোষণ করে বি-স্ক্যান’র সদস্যরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, ‘প্রতিবন্ধী মানুষের সর্বত্র প্রবেশগম্যতা এবং শিক্ষায় ব্যাপক অংশগ্রহণ নিশ্চিত’ করা তথা প্রতিবন্ধী ব্যক্তির মৌলিক-মানবিক ও নাগরিক অধিকার আদায়ে জনসচেতনতা তৈরি করতে স্কুল পর্যায়ে ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সমন্বয়ে একাধিক মতবিনিময় সভা ও সেমিনারের আয়োজন করার। এরই অংশ হিসেবে লিফলেট ও স্টিকার বিলি এবং গণমাধ্যমে প্রচারণা চালানোরও সিদ্ধান্ত হয়।
রোটারি ক্লাবের সাথে বি-স্ক্যানকে যুক্ত করা - ২৪ এপ্রিল,২০১০ ঢাকা ক্লাবে আয়োজিত রোটারী ক্লাব অব ঢাকা সেন্ট্রালের মিটিং এ কমোডর(অবঃ) আতাউর রহমান সাহেবের আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে যোগ দেয়।বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নিয়ে বি-স্ক্যান রোটারি ক্লাবকে নিজেদের কাজের সাথে যুক্ত করতে সমর্থ হয়। তারমধ্যে হুইলচেয়ারের পাশাপাশি র্যাটম্প তৈরীতে বা বিতরণে আহবান জানানো ছিল অন্যতম।
সম্মাননা - দূরারোগ্য “মাসকুলার ডিসট্রফি”তে আক্রান্ত অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী তাসনিন সুলতানার পক্ষে স্কুলের সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় ক্লাস করা সম্ভব ছিল না। শিক্ষাঙ্গনের মহানুভব অধ্যক্ষ তাসনিনের শিক্ষাজীবন মসৃণ রাখতে প্রথমে ২০০৯ সাল থেকে প্রতিবছর তার জন্য শ্রেণীকক্ষ দোতলা থেকে নিচতলায় টয়লেট সংলগ্ন একটি শ্রেণীকক্ষে নামিয়ে আনছেন। ২২ জুলাই ২০১০ একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর শিক্ষা উপযোগী পরিবেশ গড়ে তোলায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য ‘চট্টগ্রাম রেসিডেন্সিয়াল স্কুল ও কলেজ’ কে সম্মননা প্রদান করা হয়।
জাতীয় যাদুঘরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ - জাতীয় যাদুঘরের ৯৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ৬ আগস্ট ২০১০ এবারই প্রথম প্রতিবন্ধীদের নিয়ে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বি-স্ক্যান এর কয়েকজন প্রতিবন্ধী সদস্য সেখানে প্রথমবারের মত অংশগ্রহণ করেন।
যাদুঘরে তথ্যমন্ত্রীর সাথে বৈঠক - সার্বজনীন প্রবেশগম্যতার তৈরীর অংশ হিসেবে বি-স্ক্যান এর পক্ষ থেকে রোটারি ক্লাবের সহযোগিতায় ‘গুরুত্বপূর্ণ ভবনসমূহে হুইলচেয়ার প্রবেশগম্যতা’ নামে একটি প্রজেক্ট হাতে নেয়া হয়। যার মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের ভবনসমূহে হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের জন্য একটি র্যাম্প ও একটি টয়লেট নিশ্চিত করতে চাই। প্রথম কাজ হিসেবে আমরা শাহবাগস্থ জাতীয় যাদুঘরকে বেছে নেই। যাদুঘরের মহা পরিচালক, বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগ, রোটারি ক্লাব এবং শেষ পর্যায় ৬ আগস্ট ২০১০ তথ্যমন্ত্রী জনাব আবুল কালাম আজাদ সাহেবের সাথে আমাদের যাদুঘরের মহাপরিচালক জনাব প্রকাশ চন্দ্র সাহার অফিসে বৈঠক করা হয়। বুয়েটের স্থাপত্যবিভাগ জাতীয় যাদুঘরের জন্য সার্বজনীন প্রবেশগম্যতার ডিজাইনটি তৈরী করে দেন। যদিও পরে যাদুঘর কর্তৃপক্ষ কাজটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে দিয়ে করাচ্ছেন। বর্তমানে এইটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
সেমিনার
তথ্যপ্রযুক্তিতে প্রতিবন্ধী মানুষের সম্পৃত্তকরণঃ প্রেক্ষিত বাংলাদেশ - ২ নভেম্বর ২০১০ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশী সিস্টেমস চেঞ্জ এ্যাডভোকেসি নেটওয়ার্ক (বি-স্ক্যান) এর উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি ও ব্লগার্স ফোরাম এর সহযোগিতায় তথ্যপ্রযুক্তিতে প্রতিবন্ধী মানুষের সম্পৃত্তকরণঃ প্রেক্ষিত বাংলাদেশ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তথ্যপ্রযুক্তিখাতে প্রতিবন্ধী মানুষের সম্পৃক্তকরণ বিষয়ে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার কথা আলোচনা করা হয়। উক্ত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতি জনাব মোস্তফা জব্বার,বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বি-স্ক্যান এর প্রধান উপদেষ্ঠা ডা: শুভাগত চৌধুরী,পরিচালক লেবরেটারি সার্ভিসেস,বারডেম।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার নিশ্চিতকরতে গণসচেতনতা - ১২ ফেব্রুয়ারী ২০১১, এফআরইপিডি মিলনায়তনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির ব্যাপারে সমাজে নেতিবাচক ভাবনা বদলে ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলতে সচেতনতা তৈরীর লক্ষ্যে ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার নিশ্চিত করতে গণসচেতনতা’ শীর্ষক এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। প্রধান অতিথি ছিলেন বি-স্ক্যান উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী। এছাড়াও জাতিসংঘ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবর্গের অধিকার আইন কমিটির সদস্য জনাব মনসুর আহমেদ, সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ন সচিব জনাব বদিউল আলম, কবি ও স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রবক্তা জনাব বেলাল মুহাম্মদ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
একীভূত শিক্ষার জন্য প্রচারণা
যে জীবন এতদিন এদেশের প্রতিবন্ধী মানুষেরা কাটিয়ে এসেছেন আমরা জন সচেতনতার মাধ্যমে তার পরিবর্তন আনতে চাই । কারণ আমরা মনে করি সমাজের ব্যক্তির আচরণই আমাদের প্রথম প্রতিবন্ধকতা, যার আশু পরিবর্তন প্রয়োজন। ২১ এপ্রিল, ২০১১ থেকে শুরু হয়েছে আমাদের প্রতিবন্ধী শিশুদের সাধারণ শিক্ষায় একীভূত করণের জন্য ক্যাম্পেইন। সরকারের মহাপরিকল্পনা ২০১৫ সালের মাঝে প্রতিবন্ধী শিশুসহ সকল শিশুকে শিক্ষার আওতায় আনার কথা মাথায় রেখে আমরা বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সচেতনতামূলক প্রচারণা কাজ হাতে নিয়েছি। এ পর্যায়ে ঢাকার ইউনিভার্সাল টিউটোরিয়াল এবং সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পেইন করা হয়েছে।
টক শো
তৃতীয় মাত্রা - ৬ মার্চ, ২০১১ প্রথমবারের মত বি-স্ক্যান চ্যানেল আই এর জনপ্রিয় টকশো তৃতীয়মাত্রায় অংশগ্রহণ করে। মূলত সাবরিনা সুলতানার প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিটি তৃতীয়মাত্রার পরিচালক জিল্লুর রহমান সাহেবের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, পরে সাবরিনা ঢাকা এলে তিনি তাঁর অনুষ্ঠানে বি-স্ক্যানকে আমন্ত্রণ জানান।বি-স্ক্যান এর পক্ষ থেকে সাবরিনা ছাড়াও সালমা মাহবুব এবং আরো যারা সেই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন তাঁরা হলেন এসোসিয়েশেন ফর দ্যা ওয়েলফেয়ার অব দ্যা পিপল উইথ ডিসেবেলিটিজ (এডব্লিউডিপি)এর প্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক এবং জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরামের ভাইস প্রেসিডেন্ট মরহুম মাহবুবুল আশরাফ এবং সেন্টার ফর দ্যা রিহেবিলিটেশেন অব দ্যা প্যারালাইজড (সিআরপি) এর প্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক মিস ভ্যালেরী টেইলর।
মুন্নী সাহা - ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১১ আমাদের কার্যক্রমকে তুলে ধরার লক্ষ্যে মুন্নী সাহার আমন্ত্রণে এটিএন ‘নিউজ আওয়ার এক্সট্রা’ তে অংশগ্রহণ করা হয়।
হুইলচেয়ার প্রদান
বেলাল ও রাইসুলঃ ২৩ অক্টোবর,২০১০ রোটারি ক্লাব অব ঢাকা সেন্ট্রালের আর্থিক সহযোগিতায় বি-স্ক্যান এর পক্ষ থেকে ডেইলি স্টারে প্রকাশিত একজন সফল শারীরিক প্রতিবন্ধী কৃষক বেলাল হোসেন ও মগবাজার বস্তি এলাকাবাসী রাইসুল ইসলামকে দুটি হুইলচেয়ার প্রদান করা হয়।
সুমি ও জর্জিনাঃ ২৭ নভেম্বর, ২০১০ রোটারি ক্লাবের সহযোগিতায় নিগার সুলতানা সুমি ও জর্জিনা বেগম নামে দুজন শারীরিক প্রতিবন্ধী নারীকে দুটি হুইলচেয়ার প্রদান করা হয়।
শফিকুল ইসলামঃ নীলফামারীর বাক, দৃষ্টি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী শফিউল ইসলামকে রোটারি ক্লাব অব ঢাকা সেন্ট্রালের আর্থিক সহযোগিতায় একটি হুইলচেয়ার প্রদান করা হয়েছে।
আর্থিক সহযোগিতা
কোহিনুর বেগমঃ প্রথম আলোর ছুটির দিনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, টাইফয়েডে পঙ্গু হয়ে যাওয়া এক অসহায় মা তাঁর দুটি সন্তানকে নিয়ে ভালভাবে বেঁচে থাকার জন্য ভিক্ষা নয়, কাজ চাইছেন। ২২ জুলাই, ২০১০ আমরা তাঁর হাতে দশ হাজার টাকা তুলে দিতে সক্ষম হই। কোহিনুর বেগমের এখন একটি নিজের দোকান হয়েছে।
সেলাই মেশিন প্রদানঃ ২১ নভেম্বর ২০১০ ডেমরার সাত বছর বয়সী একজন বুদ্ধি প্রতিবন্ধীর মাতা খায়রুন্নেসা ও ১৩ বছর বয়সী শারীরিক প্রতিবন্ধী হুসেন মিয়ার মাতা রুবিকে রোটারি সদস্যের দেয়া সেলাই মেশিন যাকাত হিসেবে প্রদান করা হয়।
চোখের অপারেশেনঃ আকমল হোসেন এর দু’চোখে যথাক্রমে ২৭ জানুয়ারী,২০১১ ও ২৩ ফেব্রুয়ারী,২০১১ দুটি অপারেশেন করা হয়েছে। খুব ছোট্ট একটি অপারেশেনের দরকার ছিল কিন্তু টাকার অভাবে করতে পারছিলেন না। বি-স্ক্যান আমার ব্লগ ডটকম এর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্লগারের সহযোগিতায় এই কাজটি সম্পন্ন করেছে। এখানে উল্লেখ্য আকমল হোসেনের ঘরে একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশু রয়েছে।
লেখাপড়ার খরচ – ফাল্গুনি, শাহিন ও বাপ্পীঃ এ বছর জানুয়ারী ২০১১ থেকে পটুয়াখালীর গলাচিপা শহর নিবাসী শারীরিক প্রতিবন্ধী ফাল্গুনি সাহা এবং বাক প্রতিবন্ধী শাহিন ও বাপ্পী দুই ভাইসহ মোট তিনজন শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার দায়িত্ব নেয়া হয়েছে, যাদের মধ্যে ফাল্গুনি সাহা এবার এসএসসি তে জিপিএ ৫ পেয়েছে। এক্ষেত্রে আমাদের আর্থিক সহযোগিতা দিচ্ছেন কানাডার, টরেন্টো বাংলাদেশী এসোসিয়েশেন ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বি-স্ক্যান সদস্য।
মালেক শেখঃ ২৪ মার্চ, ২০১১ নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বি-স্ক্যান সদস্যের সহায়তায় বইপত্র কেনার জন্য ছয় হাজার টাকা প্রদান করা হয় মুজিব নগর নিবাসী মেধাবী ছাত্র মালেক শেখ এর হাতে। শারীরিক প্রতিবন্ধিতাকে জয় করে যিনি এগিয়ে চলেছেন।
সুদমুক্ত ঋণ
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মাঝে অনেকেই আছেন যাঁদের অবস্থা এতো খারাপ নয় যে তারা আর্থিক সহযোগিতা নেবেন, কিন্তু কিছু টাকা সুদমুক্ত ঋণ পেলে তারা একটা কিছু ব্যবসা শুরু করতে পারেন। সে কথা মাথায় রেখেই বি-স্ক্যান থেকে সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে । এ পর্যায়ে সাভারের মৃদু বাক প্রতিবন্ধী এ এম রিয়াদকে তার মাশরুম ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এক বছরের ঋণ দেয়া হয়েছে।
সচেতনতা তৈরীতে
আমার ব্লগ ডটকম এর সহযোগিতায় ‘প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার রক্ষায় এগিয়ে আসুন’ শীর্ষক ৭০০০ স্টিকার ও এবং প্রতিবন্ধী মানুষের শিক্ষার সম অধিকার চাই’ শীর্ষক ৬০০০ হাজার লিফলেট বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিতরণের উদ্দেশ্যে ছাপানো হয়েছে। ডাঃ মাকসুদ ওমরের আর্থিক সহায়তায় সার্বজনীন প্রবেশগম্যতা বিষয়ে গণসচেতনতা তৈরীতে ‘সর্বক্ষেত্রে প্রবেশগম্যতা চাই’ স্লোগান যুক্ত ১০০ টি-শার্ট তৈরী করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে জনসচেতনতামূলক কিছু ফেস্টুনও তৈরী করা হয়েছে।
র্যাম্পের উপর তৈরী তথ্যচিত্র - বাংলাদেশে র্যাম্প শব্দটির সাথে মানুষ খুব একটা পরিচিত নয়। যেহেতু আমাদের মূল লক্ষ্য মানুষকে সচেতন করা তাই সীমিত ক্ষমতায় র্যাম্প এর উপর একটি তথ্যচিত্র নির্মান করেছি। যেটা অনলাইনের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। আমরা মনে করি এই ধরণের তথ্যচিত্র আরো অনেক তৈরী হওয়া দরকার।
সবশেষে ১৫ জুলাই ২০১১ বি-স্ক্যান এর ২য় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে জাতীয় যাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় এবং অরুণোদয় নামে একটি স্মারক বের করা হয়।
বি-স্ক্যান হোক প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার আদায়ের প্ল্যাটফর্ম।
সকল প্রতিবন্ধী মানুষের জয় হোক।